সংজ্ঞা : আবৃতবীজী উদ্ভিদে দেহ অঙ্গের মাধ্যমে অযৌন প্রজনন হয়ে থাকে। এরূপ জননকে অঙ্গজ প্রজনন বলা হয়।
অঙ্গজ প্রজনন প্রকারভেদ :
অঙ্গজ প্রজনন প্রক্রিয়াকে প্রধানত দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা :
১. প্রাকৃতিক অঙ্গজ প্রজনন :
সংজ্ঞা : উদ্ভিদের কোনো অঙ্গজ অংশ মাতৃ উদ্ভিদ থেকে বিচ্যুত হয়ে প্রাকৃতিক নিয়মে নতুন উদ্ভিদের জন্ম হওয়ার যে প্রক্রিয়া, তাকে প্রাকৃতিক অঙ্গজ প্রজনন বলে ।
প্রাকৃতিক অঙ্গজ প্রজনন প্রক্রিয়া নিম্নলিখিত কয়েকটি শ্রেণিতে ভাগ করা যায় :
মৃদগত বা ভূনিম্নস্থ কাণ্ডের সাহায্যে : মাটির নিচের বর্ধিত সকল কাণ্ডের কোনো অংশ থেকে অনেক উদ্ভিদের বংশবিস্তার ঘটে। যেমন— রাইজোম, স্ফীত কন্দ, কন্দ ইত্যাদি ।
অর্ধ-বায়বীয় কাণ্ডের সাহায্যে : কিছু কিছু উদ্ভিদে ধাবক, খর্ব ধাবক, বক্র ধাবক ইত্যাদির সাহায্যে অঙ্গজ বংশবিস্তার হয়ে থাকে । যেমন- আমরুল, স্ট্রবেরি, কচুরিপানা, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি ।
আরও পড়ুন : প্রজনন, যৌন ও অযৌন জনন সংজ্ঞা, প্রকারভেদ, পার্থক্য
মুকুলের সাহায্যে : মূলজ, কাণ্ডজ ও পত্রাশ্রয়ী মুকুলের সাহায্যেও কিছু উদ্ভিদের অঙ্গজ বংশবিস্তার হয় ।
বুলবিলের সাহায্যে : অনেক সময় খাবার জমা হবার ফলে চুপড়ি আলু, শতাব্দীসহ অনেক উদ্ভিদে কাক্ষিক মুকুল বড় হয় ফুলে-ফেঁপে ওঠে। পরিবর্তিত কাক্ষিক মুকুলই হলো বুলবিল। এরাই মাতৃ উদ্ভিদ থেকে বিচ্যুত হয়ে, প্রাকৃতিক অনুকূল পরিবেশে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করে।
পাতার সাহায্যে : অনেক সময় উদ্ভিদের পাতা উর্বর মাটিতে ফেলে রাখলে পাতার কিনারা হতে বেশ কয়েকটি নতুন চারাগাছের জন্ম হয়। যেমন— পাথরকুচি।
মূলের সাহায্যে : ডালিয়া, শতমূলী, কাঁকরোল, মিষ্টি আলু প্রভৃতি উদ্ভিদের মূল হতে নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয় ।
খণ্ডায়ন : Chlamydomonous, Spirogyra প্রভৃতি এককোষী উদ্ভিদের মাতৃকোষ কোনো কারণে বিভাজিত হলে প্রতিটি খণ্ড থেকে নতুন উদ্ভিদ জন্মায় ।
২. কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন :
সংজ্ঞা : মাতৃ উদ্ভিদ থেকে এক বা একাধিক অংশ কেটে সরাসরি বা সেই অংশকে অন্য আরেকটি উদ্ভিদে স্থাপন করার মাধ্যমে নতুন উদ্ভিদ জাত সৃষ্টি করার প্রক্রিয়া কে কৃত্রিম অঙ্গজ প্রজনন বলা হয় ।
আরও পড়ুন : কৃত্রিম প্রজনন সংজ্ঞা, পদ্ধতি, গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য
কৃত্রিম জনন প্রক্রিয়ায় ফুল ও ফলের গুণ মান বজায় রেখে একটি উদ্ভিদের কোনো অংশ আরেকটি উদ্ভিদে স্থানান্তর করে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি করা যায় । মানুষ বিভিন্নভাবে কৃত্রিম উপায়ে এই জনন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে থাকে। নিচে কয়েক প্রকার কৃত্রিম অঙ্গজ জনন পদ্ধতি উল্লেখ করা হলো :
শাখা কলম (Cutting) : মাতৃ উদ্ভিদ থেকে একটি অংশ কেটে নিয়ে সেই অংশটা আবার লাগালে নতুন উদ্ভিদ সৃষ্টি হয়। গোলাপ, জবা প্রভৃতি উদ্ভিদে এটা করা সম্ভব।
দাবা কলম (Layering) : পেয়ারা, পাতিলেবু, কমলালেবু, রঙ্গন প্রভৃতি গাছের শাখাকে মাটির নিচে বাঁকাভাবে পোঁতা হয় । কয়েক সপ্তাহের মধ্যে বাঁকানো অংশ থেকে অস্থানিক মূল নির্গত হয় ও দাবা কলমকে মাতৃ উদ্ভিদ থেকে আলাদা করা হয় এবং কলম স্বাধীনভাবে বৃদ্ধি পায় ।
চোখ কলম (Budding) : চোখ কলম প্রস্তুতের জন্য একটি গাছের চোখ বা মুকুল আরেকটি গাছের কাণ্ড বা শাখার যেকোনো অংশের বাকলের নিচে বেঁধে দিতে হয়। অল্প কিছুদিনের মধ্যে সেখান থেকে নতুন শাখার জন্ম হবে। এই প্রক্রিয়াটি হলো চোখ কলম ।
আরও পড়ুন : নিষেক সংজ্ঞা,প্রকারভেদ,প্রক্রিয়া ব্যাখ্যা, তাৎপর্য,গুরুত্ব
জোড় কলম (Grafting) : জোড় কলম তৈরির জন্য নির্বাচিত একটি উচ্চমানের উদ্ভিদের কোনো অংশকে কেটে পৃথক করতে হবে। এই পৃথককৃত অংশটিকে সায়ন বলে। এই সায়নটিকে টবে লাগানো আরেকটি উদ্ভিদের সাথে যুক্ত করে জোড় কলম প্রস্তুত করা হয়।
টবে লাগানো উদ্ভিদকে স্টক বলে। স্টক যেকোনো নিম্নমানের উদ্ভিদ হতে পারে। এ পদ্ধতিতে প্রাপ্ত উদ্ভিদের ফল বা ফুলের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য সিয়নের উপর নির্ভর করে। সফেদা, আতা, কাঁঠাল ইত্যাদির এ পদ্ধতিতে কলমের চারা তৈরি করা হয় ।