প্রজনন জীবের একটি প্রধান বৈশিষ্ট্য। একটি গাছের তারই অনুরূপ আর একটি গাছ জন্ম দেওয়ার প্রক্রিয়াকে প্রজনন বলে । উদ্ভিদের এ প্রজনন যৌন ও অযৌন প্রক্রিয়ায় সম্পন্ন হয়। এদের মধ্যে অযৌন প্রজনন অণুবীজ ও দেহ অঙ্গের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়।
আবার দেহ অঙ্গজ প্রজনন স্বাভাবিক ও কৃত্রিম দুভাবেই সম্পন্ন হয়। কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতিও উদ্ভিদের বংশবিস্তারে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
প্রজনন কাকে বলে ?
যে প্রক্রিয়ায় কোনো জীব তার বংশধর সৃষ্টি করে ঐ প্রক্রিয়াকে প্রজনন বলা হয় । এটি এমন একটি শারীরবৃত্তীয় কার্যক্রম যার মাধ্যমে জীব তার প্রতিরূপ সৃষ্টি করে ভবিষ্যৎ বংশধর রেখে যায় ।
আরও পড়ুন : অঙ্গজ প্রজনন কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ
প্রজননের প্রকারভেদ :
উদ্ভিদে সাধারণত দুই ধরণের প্রজনন পরিলক্ষিত হয় , যথা-
১। যৌন জনন এবং ।
২। অযৌন জনন ।
এছাড়া কোনো কোনো উদ্ভিদে অন্য এক ধরনের প্রজনন দেখা যায় যা পারথেনোজেনেসিস বা অপুংজনি নামে পরিচিত।
১। যৌন জনন (Sexual Reproduction):
সংজ্ঞা : যে জনন কার্য বীজ তথা পুং জননকোষ ও স্ত্রী জননকোষের মিলনের মাধ্যমে সংঘটিত হয়, তাকে যৌন জনন বলে।
যৌন জনন আবার দুই প্রকার। যথা : আইসোগ্যামী (Isogamy) ও (ii) হেটারোগ্যামী (Heterogamy)।
আইসোগ্যামী (Isogamy) : যৌন জননে অংশগ্রহণকারী গ্যামেটদ্বয় যদি আকার ও আকৃতিতে একই রকমের হয় তখন এ ধরনের গ্যামেটকে আইসোগ্যামেট বলে এবং গ্যামেটদ্বয়ের মিলনের প্রক্রিয়াকে আইসোগ্যামী বলে । যেমন : Mucor, Spirogyra ইত্যাদি ।
হেটারোগ্যামী (Heterogamy) : উচ্চশ্রেণির উদ্ভিদের গ্যামেট আকৃতি ও প্রকৃতির দিক থেকে ভিন্ন বলে এদেরকে হেটারোগ্যামেট বলে। আর এ ধরনের গ্যামেটদ্বয়ের মিলনের প্রক্রিয়াকে হেটারোগ্যামী বলে ।
আরও পড়ুন : কৃত্রিম প্রজনন সংজ্ঞা, পদ্ধতি, গুরুত্ব ও উদ্দেশ্য
(খ) অযৌন জনন (Asexual Reproduction):
সংজ্ঞা : পুং ও স্ত্রীগ্যামেটোফাইটের মিলন ব্যতীত উদ্ভিদে যে প্রজনন ঘটে তাকে অযৌন জনন বলে। এ প্রজনন দুইভাবে সম্পন্ন হতে পারে । যথা- (i) স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে ও (ii) দেহ অঙ্গের মাধ্যমে ।
স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে : নিম্নশ্রেণির উদ্ভিদ, যেমন- শৈবাল, ছত্রাক, মস, ফার্ন প্রভৃতিতে স্পোর সৃষ্টির মাধ্যমে অযৌন জনন ঘটে। এক্ষেত্রে এদের দেহের স্পোর বহনকারী অযৌন অঙ্গকে স্পোরাঞ্জিয়াম বলে। প্রতিটি স্পোর অঙ্কুরিত হয়ে নতুন উদ্ভিদের জন্ম হয়।
দেহ অঙ্গের মাধ্যমে : উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন অঙ্গের মাধ্যমে অযৌন প্রজনন হয়ে থাকে। উদ্ভিদদেহের কোনো অঙ্গ বা অঙ্গাংশ (যেমন— মূল, কাণ্ড, পাতা)-এর সাহায্যে সম্পন্ন এ জনন প্রক্রিয়াকে অঙ্গজ জনন বলে।
আরও পড়ুন : অঙ্গজ প্রজনন কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ
যৌন জনন ও অযৌন জননের মধ্যে পার্থক্য :
অযৌন জনন | যৌন জনন |
---|---|
এটি নিম্নশ্রেণীর উদ্ভিদে ঘটে থাকে। | এটি উচ্চশ্রেণীর উদ্ভিদে ঘটে থাকে। |
উৎপন্ন জীবের বৈচিত্র্য দেখা যায় না। | উৎপন্ন জীবের বৈচিত্র্য দেখা যায়। |
কোন রকম গ্যামিট সৃষ্টি হয় না। | পুং ও স্ত্রী গ্যামিট উৎপন্ন হয়। |
উৎপন্ন জীবের সংখ্যা বহু। | উৎপন্ন জীবের সংখ্যা স্বল্প। |
এটি কোষ বিভাজনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। | পুং ও স্ত্রী গ্যামিটের মিলনের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। |
উদ্ভিদের আকার বড় হয় না। | উদ্ভিদের আকার বড় হয়। |
উদ্ভিদের জীবনকাল দীর্ঘস্থায়ী হয় না। | উদ্ভিদের জীবনকাল দীর্ঘস্থায়ী হয়। |
দ্রুত ফল উৎপন্ন হয়। | বিলম্বে ফল উৎপন্ন হয়। |
অভিযোজন ক্ষমতা কম। | সহজেই অভিযোজন হতে পারে। |
একটি মাত্র জীব থেকেই অযৌন জনন সম্ভব। | সাধারণত দুটি গ্যামিট (পুং ও স্ত্রী) যৌনজনে অংশ নেয়। |