হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

ওলির: অর্থ, সংজ্ঞা, মর্যাদা, মূল কাজ, বৈশিষ্ট্য, হাকীকত

মহান আল্লাহ মানুষকে সৃষ্টি করেছেন তাঁর ইবাদতের জন্য । আর মানুষ ইবাদত বন্দেগী করে আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য। আর যথাযথ ইবাদতের মাধ্যমে বান্দার মর্যাদা এতটুকু বেড়ে যায় যে, সে আল্লাহর বন্ধুতে পরিণত হয়। এরূপ যথাযথ ইবাদত বন্দেগীতে লিপ্ত বান্দাকে ওলি বলা হয়।

ওলি শব্দের অর্থ কি ?

وَلِيٌّ শব্দটি আরবি الوِلَايَةُ বা الوَلَاء শব্দ থেকে গৃহীত। এর বহুবচন হলো أَوْلِيَاءُ;

আভিধানিক অর্থ : বন্ধু, নৈকট্য, অভিভাবক, প্রিয়, প্রতিবেশী, অনুগত, নিকটবর্তী, সাহায্যকারী ইত্যাদি।

ওলি কাকে বলে ?

ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায়—যিনি আল্লাহর তাআলার নাম ও গুণাবলী সম্পর্কে যথাসম্ভব জ্ঞান রাখেন, আনুগত্যমূলক কাজে সর্বদা নিয়োজিত থাকেন, পাপ কাজ থেকে দূরে থাকেন এবং বিলাসিতা ও কুরুচিপূর্ন কাজে মগ্ন হওয়া থেকে বিমুখ থাকেন, তাকে ওলি বলা হয়।

আরও পড়ুন : নবী ও রাসূল: অর্থ কি, সংজ্ঞা, পার্থক্য ৫টি, চরিত্র

ওলির মর্যাদা:

ওলিগন ইমান ও তাকওয়ার গুনে বিভূষিত আল্লাহর নৈকট্যেপ্রাপ্ত বান্দা। আল্লাহর নিকট তাদের অনেক মর্যাদা ও সম্মান রয়েছে। যেমন আল্লাহ তাআলা বলেন—

أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

অর্থাৎ, “জেনে রাখো! আল্লাহর অলিগনের কোনো ভয় ও দুশ্চিন্তা নেই।”

অলীদের মর্যাদা সম্পর্কে হাদীসে কুদসীতে আল্লাহ তাআলা বলেন, সে যদি আমার কাছে কিছু চায়, তবে আমি তাকে তা অবশ্যই দিয়ে থাকি।

অলিদের মর্যাদা সম্পর্কে একটি আয়াত :

أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ، الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ، لَهُمُ الْبُشْرَى فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ۔

অর্থ : নিশ্চয়ই আল্লাহর ওলীগণের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তাগ্রস্তও হবে না। যারা ঈমান এনেছে এবং আল্লাহকে ভয় করেছে, তাদের জন্য দুনিয়ার জীবনে এবং আখেরাতের জীবনে সুসংবাদ রয়েছে।

আরও পড়ুন : সাহাবা অর্থ কি?সংজ্ঞা, আখলাক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য

ওলিদের মূল কাজ :

ওলিদের মূল কাজ হলো, ইসলামী শরীয়তকে সমাজের সর্বস্তরে প্রতিষ্ঠা করার চেষ্টা করা। ওলিদের মৌলিক কাজ সম্পর্কে মুহাক্কিকগণ বলেন-

১. অলীদের কাজ হলো আল্লাহর কিতাব ও রাসূল (স)-এর সুন্নাতকে বাস্তবায়ন করা।

২. সৎকাজের আদেশ দেয়া ।

৩. অন্যায় ও মন্দকাজে নিষেধ করা ও বাধা দেয়া।

৪. নিন্দুকের নিন্দাকে ভয় না করা।

৫. একমাত্র আল্লাহকে ভয় করা।

ওলিদের বৈশিষ্ট্য :

১. কুরআন ও সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত : অলীগণ মহান আল্লাহর প্রিয় বান্দা। সত্যিকারের অলীগণ কুরআন সুন্নাহর ওপর প্রতিষ্ঠিত ।

২. তাদের দর্শনে আল্লাহকে স্মরণ হয় : তারা আল্লাহর এমন প্রিয়বান্দা যে, তাদেরকে দেখলে মহান আল্লাহর কথা স্মরণ হয়। হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, এক সাহাবী জিজ্ঞেস করলেন, ইয়া রাসূলাল্লাহ (স) আল্লাহর অলী কারা? জবাবে তিনি বললেন-তারা এমন সম্প্রদায় যাদেরকে দেখলে আল্লাহর কথা মনে পড়ে।

আরও পড়ুন : নেককার আল্লাহওয়ালাদের সোহবতে থাকার গুরুত্ব বা উপকারিতা

৩. দুর্বল ও জীর্ণশীর্ণ : প্রকৃত অলীগণ মহান আল্লাহর ইবাদত করতে করতে শারীরিকভাবে দুর্বল ও জীর্ণশীর্ণ হয়ে পড়েন। যেমন হযরত আলী (রা) বলেন, আল্লাহর অলী হলেন ঐ সমস্ত লোক, রাত জাগরণের কারণে যাদের চেহারা হলুদবর্ণ হয়ে গেছে, অধিক অশ্রু ফেলার কারণে যাদের চক্ষু দৃষ্টিহীন হয়ে গেছে, ক্ষুধা সহ্য করতে করতে যাদের পেট শুকিয়ে চিকন হয়ে গেছে, অধিক যিকির করায় লালা বা থুতু না লাগার কারণে যাদের ঠোঁট শুকিয়ে গেছে। (তাফসীরে কুরতবী)

৪. তাদের সংস্পর্শে অন্তর প্রশান্ত হয় : আল্লাহর যিকিরে যাদের গা শিওরে ওঠে, চক্ষু ক্রন্দন করে, অন্তর প্রশান্ত হয় তারাই প্রকৃত অলী । (ইবনে কাসীর)

৫. আল্লাহভীরু : প্রকৃত অলীগণ অধিক আল্লাহভীরু হন। তারা বিশুদ্ধ ঈমান তথা বিশ্বাসের অধিকারী এবং সর্বদা মহান আল্লাহকে ভয় করে থাকে। যেমন মহান আল্লাহর বাণী- وَالَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ অর্থাৎ, যারা ঈমান এনে আল্লাহকে ভয় করে থাকে ।

ওলির হাকীকত :

পবিত্র কুরআনের বক্তব্য থেকে বোঝা যায়, দুটি গুণের মধ্যে অলীর পরিচয় সীমাবদ্ধ। আর সে দুটি হলো ঈমান ও তাকওয়া। এ দুটি গুণ যার মধ্যে যত বেশি এবং যত পরিপূর্ণ হবে তিনি বেলায়াত তথা কর্তৃত্ব ও নেতৃত্বের পথে তত বেশি অগ্রসর ও আল্লাহর তত বড় অলী তথা প্রিয় বলে বিবেচিত হবেন।

এ থেকে আমরা বুঝতে পারি, প্রত্যেক মুমিনই আল্লাহর অলী। যেমন পবিত্র কুরআনে এসেছে- اللهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُمْ مِنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ প্রসিদ্ধ ফকীহ ইমাম তাহাবী, ইমাম আযম আবু হানীফা, মুহাম্মদ ও আবু ইউসুফ (র) আহলুস সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের আকিদা বর্ণনাপূর্বক বলেন-

অর্থাৎ, সকল মুমিন করুণাময় আল্লাহর অলী। তাঁদের মধ্য থেকে যে যত বেশি আল্লাহর অনুগত ও পবিত্র কুরআনের অনুসরণকারী সে তত বেশি আল্লাহর নিকট সম্মানিত তথা তত বেশি বেলায়াতের অধিকারী।

রাসূলুল্লাহ (স) অলীর পথের কর্মকে দু’ভাগে ভাগ করেছেন। যথা- ফরয ও নফল। সকল ফরয পালনের পর অনবরত নফল ইবাদত পালনের মাধ্যমে বান্দা বেলায়াত অর্জন করেন।

আরও পড়ুন : আসমানী কিতাব কি?কাকে বলে ও কয়টি। কুরআন বিকৃতি থেকে মুক্ত ব্যাখ্যা

Leave a Comment

error: Content is protected !!