ঈমানের তৃতীয় রোকন হলো, আল্লাহর পক্ষ থেকে প্রেরিত গ্রন্থসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা। কুরআন ও হাদীসের বিভিন্ন স্থানে তথা আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের ব্যাপারে গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। পূর্ববর্তী সকল আসমানী কিতাব এবং মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআনের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা আবশ্যক। নিম্নে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো।
কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস-এর পরিচিতি :
আল্লাহর কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপনের সাধারণ অর্থ হলো, মুমিনকে দৃঢ় প্রত্যয়ের সাথে বিশ্বাস করতে হবে যে, মহান আল্লাহ যুগে যুগে নবী রাসূলগণের নিকট অহীর মাধ্যমে কিতাব প্রেরণ করেছেন, যেগুলো সন্দেহাতীতভাবে আল্লাহর বাণী, সত্য হেদায়াত ও মানবজাতির পথ নির্দেশক নূর।
আরও জানতে দেখুন : আসমানী কিতাব কি?কাকে বলে ও কয়টি। কুরআন বিকৃতি থেকে মুক্ত ব্যাখ্যা
কালক্রমে সেগুলো বিকৃত ও বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার পর মহান আল্লাহ সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ (স)-এর ওপর সর্বশেষ কিতাব আল কুরআন অবতীর্ণ করেন, যা পূর্ববর্তী সকল কিতাবের সত্যায়নকারী ও সারনির্যাস ।
যেমন আল্লাহ তায়ালার বাণী-
قُولُوا آمَنَّا بِاللَّهِ وَمَا أُنزِلَ إِلَيْنَا وَمَا أُنزِلَ إِلَىٰ إِبْرَاهِيمَ وَإِسْمَاعِيلَ وَإِسْحَاقَ وَيَعْقُوبَ وَالْأَسْبَاطِ وَمَا أُوتِيَ مُوسَىٰ وَعِيسَىٰ وَمَا أُوتِيَ النَّبِيُّونَ مِن رَّبِّهِمْ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّنْهُمْ وَنَحْنُ لَهُ مُسْلِمُونَ
তবে সেগুলো বিকৃতি তথা বিলুপ্ত হয়ে গিয়েছে। তাই আল্লাহ তায়ালা উক্ত কিতাবসমূহ রহিত করে তার সত্যতা প্রমাণের জন্য মানবজাতির হেদায়াতের জন্য পবিত্র কুরআন অবতীর্ণ করেছেন। এ সর্বশেষ কিতাব মহাগ্রন্থ পবিত্র কুরআনেই সকল কিতাবের নির্যাস ও মানবজাতির মুক্তির পথ বিদ্যমান।
আসমানী কিতাবসমূহে বিশ্বাস স্থাপনের উপকারিতাসমূহ :
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করার বহুবিধ উপকারিতা রয়েছে । যেমন-
১. কল্যাণ বা অকল্যাণ সম্পর্কে জ্ঞান লাভ : আসমানী কিতাবসমূহে বিশ্বাস করা আমাদের জীবনের জন্য অফুরন্ত কল্যাণের উৎস। কারণ এর মাধ্যমে আমরা মানবতার কল্যাণ অকল্যাণ ও বিভিন্ন যুগে মহান আল্লাহ ও স্বীয় নবী রাসূলের প্রতি ধৃষ্টতা প্রদর্শনকারীদের পরিণতি এবং প্রত্যেক নবীর সমসাময়িক অবস্থাও আমরা এর মাধ্যমে জানতে পারি।
২. বিশ্বাসের দৃঢ়তা আনয়ন : এ বিশ্বাস আমাদের প্রতিপালকের সাথে আমাদের মনের সম্পর্ক আরো সুদৃঢ় করে এবং তাঁর প্রতি গভীর কৃতজ্ঞতায় আমাদের মন ভরে ওঠে। যিনি আমাদের সৃষ্টি করেছেন এবং এ কিতাব দ্বারা হেদায়াত দিয়েছেন।
আরও জানতে দেখুন : আসমানী কিতাবসমূহের প্রতি ঈমান কত প্রকার ও কি কি বিস্তারিত
৩. সঠিক পথের জ্ঞান লাভ : মানবীয় জ্ঞানের সীমাবদ্ধতার কারণে মানুষ যেসব বিষয় বুঝতে পারে না বা শুধু মানবীয় জ্ঞানের ওপর নির্ভর করে বুঝতে গেলে বিভ্রান্তির মধ্যে নিপতিত হওয়ার আশঙ্কা থাকে এবং যে সকল বিষয়ে মানুষ ভালোমন্দ বুঝলেও পার্থিব স্বার্থ বা কামনা বাসনার বশবর্তী হয়ে ভুল সিদ্ধান্ত বা ভুল মত দান করতে পারে,
সে সকল বিষয়ে সঠিক পথ ও মতের জ্ঞান দানের জন্য আল্লাহ তায়ালা তাঁর বাণী প্রেরণ করেছেন, যেন মানুষ সর্বদা কল্যাণ ও মঙ্গলের পথে থাকতে পারে। মানুষের প্রতি স্রষ্টার এ এক অপরিসীম করুণা। এ করুণার উপলব্ধি তাঁর প্রতি আমাদের কৃতজ্ঞতার অনুভূতি গভীর করে ।
৪. জীবন পরিচালনায় উদ্বুদ্ধকরণ : এ বিশ্বাস আমাদেরকে আল্লাহর গ্রন্থের অনুসরণ এবং তাঁর শিক্ষায় জীবন পরিচালনায় উদ্বুদ্ধ করে।
৫. পূর্ববর্তী জাতিদের সাথে পরিচয় : এর দ্বারা আমরা বিভিন্ন যুগে বিভিন্ন সমাজের ধর্মীয় আচার আচরণে বিভিন্নতার কারণ জানতে পারি। কারণ মহান আল্লাহর বাণীর অনুসরণের মধ্যেই ইহকালীন কল্যাণ ও পরকালীন মুক্তি নিহিত। মূলত সর্বশেষ গ্রন্থ আল কুরআন সকল আসমানী কিতাবের সংক্ষিপ্ত সার ও পরিপূর্ণ কিতাব।
সর্বশেষ : মহান আল্লাহপ্রদত্ত সকল গ্রন্থসমূহে বিশ্বাস রেখে সর্বশেষ মহাগ্রন্থ আল কুরআনের জ্ঞানবিজ্ঞান অনুধাবন করে এর বিধিবিধানসমূহ আমলে বাস্তবায়ন করাই ঈমানের দাবি ও মুক্তির একমাত্র সোপান।