اِتِّصَالُ السَّنَدِ হিসেবে যে সকল হাদীস এসেছে তন্মধ্যে হাদীসে মুতাওয়াতির সর্বশ্রেষ্ঠ। রাবীর আধিক্যতার কারণে এ হাদীসকে মিথ্যা বলার কোনো অবকাশ নেই। এ হাদীস অস্বীকারকারী কাফের হবে। নিম্নে প্রশ্নালোকে এ হাদীসের পরিচয়, হুকুম, শর্ত ও প্রকারভেদ আলোচনা করা হলো-
মুতাওয়াতির অর্থ কি ও কাকে বলে ?
আভিধানিক অর্থ : مُتَوَاتِرٌ শব্দটি বাবে تَفَاعُل থেকে اِسْمُ فَاعِلٍ-এর সীগাহ, এটাتَوَاتُر মাসদার থেকে এসেছে। এর আভিধানিক অর্থ হলো –
১। التَّعاقُبُ তথা ধারাবাহিকতা।
২। أَتْيَانُ أَحَدٍ بَعْدَ أَحَدٍ তথা একের পর এক আসা।
৩। تَتَابُعُ وَاحِدٍ بَعْدَ وَاحِدٍ তথা একের পর এক অনুগামী হওয়া ।
পারিভাষিক সংজ্ঞা :
১। যে সমস্ত হাদিসের বর্ণনাকারীদের সংখ্যা এত বেশি হবে যে যাদের সংখ্যা নিদিষ্টভাবে গণনা করা সম্ভব নয় এবং মিথ্যার উপর এতগুলো লোকের ঐকমত্য হওয়ার ধারণা করা যায় না। আর এই বর্ণনার ধারাবাহিকতা সর্বদাই বহাল থাকবে। এ সমস্ত হাদিসকে মুতাওয়াতির হাদীস বলা হয়।
২। ইবনে হাজার আসকালানী (র) বলেন-
أَنْ يَكُونَ لَهُ طُرُقٌ بِلا عَدَدٍ مُعَيَّنٍ فَهُوَ المُتَوَاتِرُ
৩। মোল্লাজিউন (র) বলেন-
هُوَ مَا يَكُونُ اتِّصَالًا شَبَّهَتْهُ صُورَتُهُ وَلَا مَعْنًى
উদাহরণ : রাসূল (স)-এর বাণী- مَنْ كَذَبَ عَلَيَّ مُتَعَمِّدًا فَلْيَتَبَوَّأْ مَقْعَدَهُ مِنَ النَّارِ এ হাদীসটি ৬০ জনের অধিক সাহাবী বর্ণনা করেন এবং প্রত্যেক যুগে অসংখ্য রাবী হাদীসটি বর্ণনা করেন।
আরও জানো : হাদিস(حَدِيثٌ) অর্থ, সংজ্ঞা, প্রকারভেদ,উদ্দেশ্য ও আলোচ্য বিষয়
মুতাওয়াতির হাদিসের হুকুম :
মুতাওয়াতির হাদীসের হুকুম নিয়ে মতভেদ রয়েছে। যেমন-
প্রথমত : আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে-
১. এটা عِلْمُ يَقِينٍ তথা অকাট্যজ্ঞানের ফায়দা দেবে ।
২. এ হাদীসের ওপর আমল করা ওয়াজিব।
৩. এ হাদীস অস্বীকারকারীকে কাফের বলা যাবে।
৪. এর দ্বারা কুরআনের ওপর زِيَادَة করা বৈধ।
৫. প্রয়োজনে এর দ্বারা কুরআনের সংশ্লিষ্ট আয়াত রহিত করা যাবে ।
দ্বিতীয়ত : মুতাযিলা সম্প্রদায়ের মতে—
১. এটা عِلْمُ الطَّعَانِيَّة তথা প্রশান্তিমূলক জ্ঞানের উপকারিতা দেবে। যাতে সত্যের দিক প্রাধান্য পাবে।
২. এর অস্বীকারকারী কাফের হবে না ।
৩. এর দ্বারা কুরআনের আয়াত রহিতকরণ বৈধ।
তৃতীয়ত : আবু বকর দাককাক (র) বলেন-
১. এ হাদীস দ্বারা عِلْم اسْتِدْلَالِي এক অর্জিত হয়; এভাবে যে, এটা একদল সত্যপন্থি জামায়াতের সংবাদ ।
২. এর অস্বীকারকারীকে কাফের বলা যাবে ।
আরও জানো : কুরআন ও হাদীসের : অর্থ , সংজ্ঞা ও পার্থক্য
মুতাওয়াতির হাদিসের শর্তাবলি :
উসূলে হাদীসবিদগণ মুতাওয়াতির হাদিসের জন্য কতিপয় শর্ত নির্ধারণ করেছেন। যেমন-
১. বর্ণনাকারীদের সংখ্যা অধিক হওয়া। তবে বর্ণনাকারীর সংখ্যা নিয়ে ইমামগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে। যেমন-
ক. কারো মতে, বর্ণনাকারীর সংখ্যা ৭০ জন।
খ. কেউ বলেন, ৪০ জন।
গ. কারো মতে, ১০ জন ।
ঘ. কারো মতে, ৭ জন।
ঙ. কেউ বলেন, ৫ জন ।
চ. কারো মতে, ৪ জন।
২. মিথ্যার ওপর বর্ণনাকারীদের ঐকমত্য পোষণ করা অসম্ভব হওয়া ।
৩. হাদীসের সনদ মুত্তাসিল হওয়া। অর্থাৎ সনদের কোনো পর্যায়ে বর্ণনাকারীর নাম বাদ না পড়া ।
৪. সনদের ধারাবাহিকতা বজায় রাখা ।
৫. খবরটি অনুভূতিসূচক হওয়া। অর্থাৎ বর্ণনাকারী হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে سَمِعْتُ বা رَأَيْتُ শব্দ ব্যবহার করা।
এ সকল শর্ত কোনো হাদীসে পাওয়া গেলে ঐ হাদীস মুতাওয়াতির হিসেবে গণ্য হবে ।
মুতাওয়াতির হাদিস এর প্রকারভেদ :
মুতাওয়াতির হাদীসের প্রকারভেদ সম্পর্কে উসুলে হাদীসবিদগণের মাঝে মতভেদ রয়েছে। যেমন-
১। ইবনে হাজারের অভিমত : আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (র)-এর মতে, হাদীসে মুতাওয়াতির দু’প্রকার । যথা- ক. مُتَوَاتِرٌ فِي الْخَبَرِ খ. مُتَوَاتِرٌ فِي الْإِسْنَادِ
২। জমহুর মুহাদ্দিসীনের অভিমত : জমহুর মুহাদ্দিসীনের মতে, হাদীসে মুতাওয়াতির দু’প্রকার। যথা- ক. مُتَوَاتِرٌ مَعْنَوِيٌّ খ. مُتَوَاتِرٌ لَفْظِي
৩। কতিপয়ের অভিমত : কতিপয় মুহাদ্দিসের মতে, মুতাওয়াতির চার প্রকার। যথা-
ক. تَوَاَتُرُ الْعَمَلِ
খ. تَوَاتُرُ الْإِسْنَادِ
গ. تَوَاتُرُ الطَّبَقَةِ
ঘ. تَوَاتُرُ قَدْرِ الْمُشْتَرَكِ