হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী সাহাবী- নাম, হাদিস সংখ্যা ও অবদান

স্মৃতিশক্তির প্রখরতা, পরিবেশ পরিস্থিতির আনুকূল্য, মহানবী (স)- এর সর্বাধিক সান্নিধ্যলাভ ইত্যাদি বিভিন্ন সুযোগসুবিধার ফলে কতিপয় সাহাবী অধিক হাদীস বর্ণনা করার সৌভাগ্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছেন। এজন্য হাদীস বর্ণনার ক্ষেত্রে সকল সাহাবী সমপর্যায়ের নন।

সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারীগণ :

مُكْثِرُونَ সীগাহ جَمْعُ مُذَكَّرٍ বাহাস اِسْمُ فَاعِلٍ; শব্দটি كَثُرَ মূলধাতু থেকে নিষ্পন্ন। অর্থ- অধিক সংখ্যক ব্যক্তিবর্গ। হাদীসশাস্ত্রের পরিভাষায়- যেসব সাহাবীর বর্ণিত হাদীস সংখ্যা এক হাজারের ঊর্ধ্বে তাঁদেরকে মুকসিরূন বলা হয় ।

সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারীগণের সংখ্যা :

মুকসিরূন তথা এক হাজারের ঊর্ধ্বে হাদীস বর্ণনাকারীগণের সংখ্যা মোট সাতজন। নিম্নে তাঁদের নাম প্রদত্ত হলো-

বর্ণনাকারী বর্ণিত হাদীস মৃত্যু জীবনকাল
ক. হযরত আবু হোরায়রা (রা) ৫৩৭৪টি ৫৮ হিজরী ৭৮ বছর
খ. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) ২৬৩০টি ৭৩ হিজরী ৮৫ বছর
গ. হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) ২২৮৬টি ৯১/৯৩ হিজরী ১০৩ বছর
ঘ. উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) ২২১০টি ৫৭ হিজরী ৬৫ বছর
ঙ. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) ১৬৬০টি ৬৮ হিজরী ৭১ বছর
চ. হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ (রা) ১৫৪০টি ৭৪ হিজরী ৯৪ বছর
ছ. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) ১১৭০টি ৭০ হিজরী ৮৪ বছর

আরো জানো : হাদিস বর্ণনাকারীর স্তর কয়টি ?বেশি হাদিস বর্ণনাকারী ৭ সাহাবী

হাদীসশাস্ত্রে সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারীগণের অবদান :

ক. হযরত আবু হোরায়রা (রা) :

১. নাম ও পরিচিতি : তাঁর আসল নাম আদুর রহমান। সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী হিসেবে তিনি সুপরিচিত।

২. ইসলামগ্রহণ : ৬২৯ খ্রিস্টাব্দ মোতাবেক সপ্তম হিজরী সনে খায়বার যুদ্ধের পর ৩৪ বছর বয়সে তিনি ইসলামগ্রহণ করেন।

৩. মহানবী (স)-এর সাহচর্য : তিনি ইলম হাসিলের উদ্দেশ্যে সর্বদা মহানবী (স)-এর সান্নিধ্যে উপস্থিত থাকতেন। অধিক হাদীস বর্ণনা ও সংগ্রহ করার নিমিত্ত তিনি ‘আসহাবে সুফফার’ অন্তর্ভুক্ত হন। তিনি নিয়মিতভাবে মহানবী (স)-এর সফরসঙ্গী হতেন।

৪. তাঁর স্মরণশক্তিবৃদ্ধিতে মহানবী (স)-এর দোয়া : তিনি সাহাবায়ে কেরামের মধ্যে সবচেয়ে বেশি স্মরণশক্তির অধিকারী ছিলেন। তিনি বলেন, আমি মহানবী (স)-এর খেদমতে আরজ করলাম, “হে আল্লাহর রাসূল! আমি আপনার মুখনিঃসৃত অনেক কিছু শুনি, কিন্তু সবগুলো মনে রাখতে পারি না।”

নবী করীম (স) বললেন, তোমার চাদর বিছিয়ে দাও। আমি চাদর বিছিয়ে দিলাম। তিনি ঐ চাদরে ফুঁ দিয়ে দোয়া করে দেন। তখন থেকে তাঁর হাদীসগুলো আমি আর ভুলতাম না ।

আরো জানো : ইসলামে হাদিসের গুরুত্ব ও কুরআনের সাথে হাদিসের সম্পর্ক

৫. হাদীসশাস্ত্রে অবদান : শীর্ষস্থানীয় সাহাবীগণের নিকট থেকেও তিনি হাদীস বর্ণনা করেছেন। বহু তাবেয়ী তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। আল্লামা বদরুদ্দীন আইনী (র)-এর মতে, তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ৫৩৭৪টি।

৬. ইন্তেকাল : ৫৮ হিজরী সনে তিনি ইন্তেকাল করেন। সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারী হিসেবে তিনি হাদীসপ্রেমিদের কাছে চির অমর হয়ে থাকবেন ।

খ. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা) :

১. নাম ও পরিচিতি : তাঁর নাম আবদুল্লাহ। উপনাম আবু আবদুর রহমান। পিতার নাম ওমর ইবনুল খাত্তাব (রা) । মাতার নাম যয়নব বিনতে মাযউন।

২. জন্মগ্রহণ : তিনি নবুয়তের দ্বিতীয় বছর মক্কায় জন্মগ্রহণ করেন।

৩. ইসলামগ্রহণ : নবুয়তের ষষ্ঠ বছর পিতা ওমরের ইসলামগ্রহণের সাথে সাথে তাঁকেও মুসলিম হিসেবে গণ্য করা হয় ।

আরো জানো : হাদিস কাকে বলে? হাদিসের গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা বর্ণনা

৪. হিজরত : ১১ বছর বয়সে স্বীয় পিতার সাথে নবুয়তের ত্রয়োদশ বছরে মদিনায় হিজরত করেন।

৫. জেহাদে অংশগ্রহণ : তিনি খন্দকসহ পরবর্তী সকল যুদ্ধে রাসূল (স)-এর সাথে অংশগ্রহণ করেছিলেন ।

৬. গুণাবলি : তিনি মহানবী (স)-এর শিক্ষার একনিষ্ঠ অনুসারী ছিলেন। তিনি একজন উঁচুমানের আবেদ, যাহেদ ও দাতা ছিলেন। জনসাধারণের অনুরোধ সত্ত্বেও তিনি খেলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণে আগ্রহী হননি ।

৭. হাদীসশাস্ত্রে অবদান : তিনি মহানবী (স) থেকে ২৬৩০টি হাদীস বর্ণনা করেছেন । তিনি সাহাবায়ে কেরাম থেকেও হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর থেকে তাবেয়ীগণ হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁদের মধ্যে সর্বাধিক হাদিস বর্ণনা করেছেন সালেম ও তাঁর ক্রীতদাস নাফে ।

৮. ইন্তেকাল : তিনি ৭৩ মতান্তরে ৭৪ হিজরীতে ৮৩/৮৪ বছর বয়সে মক্কায় ইন্তেকাল করেন। মহানবী (স)-এর ইন্তেকালের পর তিনি ষাট বছর জীবিত ছিলেন।

গ. হযরত আনাস ইবনে মালেক (রা) :

১. নাম ও পরিচিতি : তাঁর নাম আনাস। উপনাম আবু হামযা, আবু উমাইয়া, আবু উমামা, আবু উমায়মা। উপাধি খাদেমুর রাসূল। পিতার নাম মালেক। মাতার নাম উম্মে সুলাইম বিনতে মিলহান ।

২. ইসলামগ্রহণ : তিনি দশ বছর বয়স থেকে ইসলামী পরিবেশে রাসূল (স)-এর নিকট প্রতিপালিত হন।

৩. রাসুলের খেদমত : তিনি দশ বছর মহানবী (স)-এর সান্নিধ্যে থেকে তাঁর খেদমত করেন।

৪. হাদীসশাস্ত্রে অবদান : আল্লামা আইনী (র)-এর মতে, ২২৮৬টি হাদীস বর্ণনাকারী হিসেবে তিনি স্মরণীয় হয়ে আছেন। বুখারী ও মুসলিম শরীফে তাঁর বর্ণিত ১২৮টি হাদীস রয়েছে।

৫. ইন্তেকাল : তিনি সর্বশেষ সাহাবী হিসেবে ৯১ মতান্তরে ৯৩ হিজরী সনে বসরায় ইন্তেকাল করেন।

ঘ. উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা (রা) :

১. নাম ও পরিচিতি : তার নাম আয়েশা। উপনাম উম্মে আবদুল্লাহ। উপাধি সিদ্দীকা, হোমায়রা। খেতাব উম্মুল মুমিনীন। পিতার নাম আবু বকর। মাতার নাম উম্মে রূমান।

২. হাদীসশাস্ত্রে অবদান : হাদীসশাস্ত্রে হযরত আয়েশা (রা)-এর অবদান প্রশংসার দাবিদার। তিনি অত্যন্ত জ্ঞানবর্তী ও মহতী ছিলেন। মহানবী (স)-এর জীবনের বহু ঘটনা ও যুদ্ধবিগ্রহ বিষয়ে তিনি ওয়াকিফহাল ছিলেন। তিনি কবিতা চর্চাও করতেন।

মুসনাদে আহমদে তাঁর রেওয়ায়াতসমূহ ২৫৩ পৃষ্ঠাব্যাপী লিপিবদ্ধ রয়েছে। মহানবী (স) গৃহাভ্যন্তরে যা কিছু করতেন, সে সম্পর্কে হযরত আয়েশা (রা)-এর বর্ণনার ওপর বেশি নির্ভর করা হয়। অনেক সাহাবী ও তাবেয়ী তাঁর সূত্রে হাদীস বর্ণনা করেছেন।

তার বোনের ছেলে ওরওয়া ইবনে যোবায়ের (র) এবং ভাইয়ের ছেলে কাসেম ইবনে মুহাম্মদ (র) তাঁর থেকে অধিক সংখ্যক হাদীস বর্ণনা করেছেন। তাঁর বর্ণিত হাদীসের সংখ্যা ২২১০টি।

৩. ইন্তেকাল : তিনি ৫৭ মতান্তরে ৫৮ হিজরীতে ৬৬/৬৭ বছর বয়সে হযরত মুয়াবিয়ার খেলাফতকালে ১৭ রমযান মদিনায় ইন্তেকাল করেন।

ঙ. হযরত আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) :

১. নাম ও পরিচয় : তাঁর নাম আবদুল্লাহ। উপনাম আবুল আব্বাস। উপাধি হিবরুল উম্মাহ। পিতার নাম হযরত আব্বাস (রা)। মাতার নাম উম্মুল ফাদল লুবাবা বিনতে হারেস। তিনি আবাদালা চতুষ্টয়ের অন্যতম ব্যক্তিত্ব ছিলেন।

২. জন্মগ্রহণ : হিজরতের তিন বছর পূর্বে “শিয়াবে আবি তালীবে” জন্মগ্রহণ করেন।

৩. ইসলামগ্রহণ : তিনি তাঁর মাতা লুবাবা বিনতে হারেসের সাথে হিজরতের পূর্বেই ইসলামগ্রহণ করেন।

৪. তাঁর ফযিলত ও অন্যান্য তথ্য : তিনি একজন শীর্ষস্থানীয় মুফাসসির ও মুহাদ্দিস ছিলেন। মহানবী (স) হিকমাহ, ফিকহ ও তাবীলে কুরআনের জন্য তাঁকে দোয়া করেছিলেন । তিনি অত্যন্ত সুন্দর ও সুশ্রী পুরুষ ছিলেন।

৫. শূরার সদস্য হিসেবে দায়িত্ব পালন : তিনি কম বয়সী হওয়া সত্ত্বেও হযরত ওমর (রা)-এর মজলিসে শূরার সদস্য ছিলেন। তিনি তিনজন মহান ব্যক্তির নিকট থেকে জ্ঞান অর্জন করেন। তাঁরা হলেন হযরত ওমর (রা), হযরত আলী (রা), হযরত উবাই ইবনে কাব (রা)।

৬. হাদীসের খেদমত : আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রা) বলেন, আমি যখন শুনতাম যে, অমুক ব্যক্তির নিকট হাদীস সংরক্ষিত আছে, আমি তাঁর কাছে যেতাম, তাঁর নিকট বসতাম। এমনকি যখন তিনি বের হতেন, তখনো আমি হাদীস জিজ্ঞেস করতে থাকতাম।

তাঁর মারফু অধিকাংশ হাদীস মুরসাল। কিন্তু তা গৃহীত। হাদীসশাস্ত্রে তাঁর অবদান ছিল প্রশংসনীয়। তাঁর ৭১ বছর জীবনে তিনি ১৬৬০টি হাদীস বর্ণনা করে হাদীসশাস্ত্রে বিরাট অবদান রেখে গেছেন ।

৭. তাঁর উপাধি : তাঁকে হিবরুল উম্মাহ বা উম্মতের মধ্যে সর্বাধিক জ্ঞানী হিসেবে উপাধি দেয়া হয়।

৮. ইন্তেকাল : তিনি আবদুল্লাহ ইবনে যোবায়েরের শাসনামলে ৬৮ মতান্তরে ৭০/৭১ হিজরীতে তায়েফে ইন্তেকাল করেন।

চ. হযরত জাবের ইবনে আবদুল্লাহ :

১. নাম ও পরিচয় : তাঁর নাম জাবের। উপনাম আবু আবদুল্লাহ, আবু আবদুর রহমান। পিতার নাম আবদুল্লাহ ইবনে আমর । মাতার নাম নাসীবাহ।

২. জন্মগ্রহণ : তিনি হিজরতের পূর্বে জন্মগ্রহণ করেন।

৩. ইসলামগ্রহণ : তিনি ১৮ বছর বয়সে তাঁর পিতাসহ দ্বিতীয় আকাবায় ইসলামগ্রহণ করেন।

৪. জেহাদে অংশগ্রহণ : তিনি সর্বমোট ১৭টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন ।

৫. হাদীসশাস্ত্রে অবদান : তিনি মহানবী (স)-এর বহু হাদীস বর্ণনা করেন। হাদীস বর্ণনাকারীদের একটি বড় দল তাঁর থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ১৫৪০টি হাদীস বর্ণনা করে হাদীসশাস্ত্রে বিরাট অবদান রেখে গেছেন।

৬. ইন্তেকাল : তিনি ৭৪ মতান্তরে ৭৭ হিজরীতে ৯৪ বছর বয়সে শেষনিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। মদিনায় তাঁকে সমাহিত করা হয়।

ছ. হযরত আবু সাঈদ খুদরী (রা) :

১. নাম ও পরিচিতি : তাঁর নাম সাদ। পিতার নাম মালেক। মাতার নাম আনীসা বিনতে আবিল হারেস।

২. জন্মগ্রহণ : হিজরতের দশ বছর পূর্বে আবু সাঈদ খুদরী (রা) জন্মগ্রহণ করেন।

৩. ইসলামগ্রহণ : তিনি ৬২২ খ্রিস্টাব্দে তাঁর পিতার সাথে ইসলামে দীক্ষিত হন।

৪. জেহাদে অংশগ্রহণ : তিনি বনি মুস্তালিকের যুদ্ধসহ পরবর্তী ১২টি যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

৫. হাদীসশাস্ত্রে অবদান : তিনি ছিলেন একজন হাফেযে হাদীস ও শীর্ষস্থানীয় আলেম। অসংখ্য সাহাবী ও তাবেয়ী তাঁর নিকট থেকে হাদীস বর্ণনা করেছেন। তিনি ১১৭০টি হাদীস বর্ণনা করে ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন ৷

৬. ইন্তেকাল : তিনি হিজরী ৭৪ সালে জুমাবাদ ৮৪ বছর বয়সে মদিনায় ইন্তেকাল করেন। তাঁকে জান্নাতুল বাকীতে দাফন করা হয় ।

উপসংহার : সর্বাধিক হাদিস বর্ণনাকারীগণ সর্বমোট ১৬,৮৭০টি হাদীস বর্ণনা করেছেন। এ সাতজন সাহাবী হাদীসশাস্ত্রে তাঁদের এ বিরাট অবদানের জন্য কেয়ামত পর্যন্ত চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবেন।

শিক্ষাগার

প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে

মাহমুদুল হাসান

শিক্ষাগত যোগ্যতা
গণিতে অনার্স ও মাস্টার্স

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ফাজিল সম্পন্ন

গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা

বিশেষ দক্ষতা

বাংলা সাহিত্য • গণিত • ইসলামিক শিক্ষা

অভিজ্ঞতা

শিক্ষকতা ও ৫+ বছর কন্টেন্ট রাইটিং

আমাদের লক্ষ্য

শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করা। ২০২৩ সাল থেকে লাখো শিক্ষার্থী শিক্ষাগার থেকে উপকৃত হচ্ছে।

Leave a Comment