হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

পাদটীকা গল্পের মূলভাব/বিষয়বস্তু/ মূল বক্তব্য/ সার-সংক্ষেপ

প্রশ্ন : ॥ সৈয়দ মুজতবা আলী বিরচিত পাদটীকা গল্পের মূলভাব / বিষয়বস্তু / মূল বক্তব্য /  সার-সংক্ষেপ তোমার নিজের ভাষায় লেখ।

অথবা, ‘পাদটীকা’ গল্পের মর্মকথা তোমার নিজের ভাষায় বর্ণনা কর।

উপস্থাপনা : ‘পাদটীকা’ নামক অসাধারণ গল্পটি বাংলা সাহিত্যের স্বনামধন্য রম্যলেখক ও সুসাহিত্যিক সৈয়দ মুজতবা আলী বিরচিত ‘চাচাকাহিনী’ নামক গ্রন্থের অন্তর্গত।

এ গল্পে লেখক তার সমকালীন শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষক জীবনের করুণ পরিচয় বিধৃত করেছেন। হাস্যরসাত্মকভাবে তিনি একটি নির্মম সত্য এ গল্পে উপস্থাপন করেছেন।

স্কুলের পণ্ডিত মশাই : গল্পকার যে স্কুলে পড়তেন সে স্কুলের পণ্ডিত মশাই ছিলেন সংস্কৃত ভাষার একনিষ্ঠ সাধক। তিনি বাংলা ভাষাকে অবজ্ঞার চোখে দেখতেন। স্কুলে বাংলা ব্যাকরণের শুধু সংস্কৃত অংশটুকুই পড়াতেন। পড়ানোর চেয়ে বকতেন বেশি এবং তার চেয়েও বেশি টেবিলের ওপর পা রেখে ঘুমাতেন ।

আরও জানো : পাদটীকা গল্পের নামকরণের সার্থকতা

পণ্ডিত মশাইয়ের ব্যবহার : লেখককে পণ্ডিত মশাই খুবই স্নেহ করতেন। তাই সর্বদা তার প্রতি কটুবাক্য বর্ষণ করতেন। অনার্য, শাখামৃগ, দ্রাবিড়সম্ভূত ইত্যাদি ছাড়া তিনি সম্বোধন করতেন না লেখককে। পণ্ডিত মশাইয়ের গায়ের রং ছিল শ্যাম।

মাসে একদিন দাড়ি-গোঁফ কামাতেন। হাঁটুজোকা ধুতি পরতেন। তিনি গায়ে যে চাদর ব্যবহার করতেন তা দড়ি বলে ভ্রম হতো। ক্লাসে এসে একটা অজুহাত নিয়ে বকতে শুরু করতেন। আর যেদিন অজুহাত খুঁজে পেতেন না সেদিন কৃৎ-তদ্ধিত আলোচনা করতেন।

পণ্ডিত মশাইয়ের চলাফেরা : পণ্ডিত মশাই সব সময় খালি গায়ে স্কুলে আসতেন। সেবার লাট সাহেব স্কুল পরিদর্শনে এলে তিনি একটি ফুল হাতা গেঞ্জি পরেন এবং অনভ্যাসের কারণে নানা বিপত্তির শিকার হন। লাট সাহেব ক্লাসে এসে পণ্ডিত মশাইয়ের সাথে করমর্দন করায় তিনি বিগলিত হয়ে যান ।

আরও জানো : পথ জানা নাই গল্পের মূলভাব/ বিষয়বস্তু/সার-সংক্ষেপ

শিক্ষক জীবনের নির্মমতা : তিনদিন ছুটির পর পণ্ডিত মশাই ক্লাসে এসে লেখককে বললেন, লাট সাহেবের সাথে যে কুকুরটি এসেছিল সেটির তিনটি ঠ্যাং ছিল। কুকুরটির জন্য মাসিক খরচ হতো পঁচাত্তর টাকা। পণ্ডিত মশাইয়ের আট সদস্যবিশিষ্ট পরিবার চলে মাসিক পঁচিশ টাকা বেতনে।

পণ্ডিত মশাই জানতে চান, তার পরিবার লাট সাহেবের কুকুরের কয়টি ঠ্যাংয়ের সমান? এ প্রশ্নের জবাব দেওয়ার ক্ষমতা কারো ছিল না । সমগ্র ক্লাস নিস্তব্ধ । পণ্ডিত মশাইয়ের মুখ ঘৃণা, লজ্জা ও তিক্ততায় বিকৃত হয়ে ওঠে। ছাত্ররা বুঝতে পারে, তিনি তাদের সাক্ষী রেখে আত্মঅবমাননার নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে মাখছেন।

‘পাদটীকা’ গল্পে সমকালীন শিক্ষাব্যবস্থা : ব্রিটিশ শাসনামলে ইংরেজি শিক্ষার প্রভাবে সংস্কৃত শিক্ষা প্রায় বিলুপ্ত হতে থাকে। এ দেশের অভিভাবকরা বাস্তব জীবনের প্রয়োজনে সংস্কৃত বাদ দিয়ে সন্তানদের ইংরেজি শিখতে উৎসাহিত করে। ইংরেজির প্রতি মানুষের এ প্রবণতার কারণে পণ্ডিতদের কদর কমতে থাকে। আলোচ্য গল্প ‘পাদটীকা’য় এমনই একজন পণ্ডিত মশাইয়ের করুণ জীবনচিত্র অঙ্কিত হয়েছে।

শিক্ষক জীবনের বাস্তব চিত্র : পণ্ডিত মশাইয়ের জীবনের করুণ চিত্র শিক্ষক জীবনের চিরন্তন সত্য। অতীতকাল থেকে শুরু করে বর্তমানেও শিক্ষকসমাজ সবার নিকট অবহেলিত, উপেক্ষিত। পণ্ডিত মশাইয়ের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করে অনেকেই সমাজের উঁচুস্তরে প্রতিষ্ঠিত, কিন্তু পণ্ডিত মশাইয়ের জীবনযাত্রার কোনো উন্নয়ন ঘটেনি।

বর্তমানেও অন্যান্য চাকরিজীবীদের তুলনায় শিক্ষকরা বেতন ও অন্যান্য সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে অবহেলিত। ‘পাদটীকা’ গল্পটি শিক্ষক জীবনের দুরবস্থার জীবন্ত ভাষাচিত্র।

নির্মম সত্যের প্রকাশ : সংস্কৃতের প্রতি অগাধ আস্থা ছিল পণ্ডিত মশাইয়ের। বাংলা ভাষার প্রতি ছিল তার তীব্র অনীহা। টোলপ্রথা বন্ধ হওয়ার পর অনিচ্ছা সত্ত্বেও স্কুলে বাংলা ব্যাকরণের সংস্কৃত অংশ পড়াতেন তিনি।

শিক্ষাব্যবস্থার প্রতি তীব্র ক্ষোভের কারণে ক্লাসে যতটা পড়াতেন, তার চেয়ে বেশি বকতেন আর ঘুমাতেন দুই পা টেবিলের ওপর তুলে জীবনের ওপর প্রবল বিতৃষ্ণা নিয়ে বেঁচে ছিলেন মানুষ গড়ার কারিগর শিক্ষক পণ্ডিত মশাই ।

তার মাসিক বেতন ছিল মাত্র পঁচিশ টাকা, যা কিনা লাট সাহেবের কুকুরের একটি পায়ের খরচের সমান। কুকুরের একটি পায়ের সাথে নিজেকে তুলনা করে তিনি আত্ম-অবমাননার নির্মম পরিহাস সর্বাঙ্গে মাখলেন। এভাবে গল্পকার ‘পাদটীকা’ গল্পে লেখক রসাত্মক বর্ণনাভঙ্গিতে এক নির্মম সত্য উদ্ঘাটন করেছেন।

উপসংহার : সুলেখক সৈয়দ মুজতবা আলী ‘পাদটীকা’ গল্পে সমকালীন শিক্ষাব্যবস্থা ও শিক্ষকসমাজের দুর্দশার সুস্পষ্ট চিত্র তুলে ধরেছেন। লঘু পরিহাসের আড়ালে যে নির্মম সত্য তিনি প্রকাশ করেছেন তা সত্যিই মর্মান্তিক ।

আরও জানো : বাঙ্গালা ভাষা প্রবন্ধের মূল বক্তব্য/মূলভাব/বিষয়বস্তু

শিক্ষাগার

প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে

মাহমুদুল হাসান

শিক্ষাগত যোগ্যতা
গণিতে অনার্স ও মাস্টার্স

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ফাজিল সম্পন্ন

গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা

বিশেষ দক্ষতা

বাংলা সাহিত্য • গণিত • ইসলামিক শিক্ষা

অভিজ্ঞতা

শিক্ষকতা ও ৫+ বছর কন্টেন্ট রাইটিং

আমাদের লক্ষ্য

শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করা। ২০২৩ সাল থেকে লাখো শিক্ষার্থী শিক্ষাগার থেকে উপকৃত হচ্ছে।

Leave a Comment