মুসলিম শরীফের বৈশিষ্ট্য :
হাদীসশাস্ত্রে ইমাম মুসলিম (র)-এর সর্বশ্রেষ্ঠ অবদান আস সহীহ লি মুসলিম। সুদীর্ঘ পনেরো বছরের অক্লান্ত পরিশ্রম ও সাধনার ফসল ‘আস সহীহ লি ‘মুসলিম’ স্বকীয় বৈশিষ্ট্যের অমর ছোঁয়ায় বাস্তবেই হিরন্ময়।
১. সিহাহ সিত্তার দ্বিতীয় শ্রেষ্ঠ গ্রন্থ : বিশুদ্ধতার নিরিখে বিচার্য ছয়টি হাদীস গ্রন্থের মধ্যে ইমাম মুসলিমের অনবদ্য সৃষ্টি ‘সহীহ লি মুসলিম’ সর্বজনের স্বীকৃতিতে দ্বিতীয় ।
২. সহীহ হিসেবে প্রমাণিত : সহীহ মুসলিম গ্রন্থটি সহীহ হাদীসগ্রন্থেরই সংকলন। কেননা এর হাদীসগুলো মুত্তাসিল সনদে বর্ণিত। এগুলো মুয়াল্লাল ও শায হওয়া থেকে মুক্ত এবং এ গ্রন্থের রাবীদের আদালত ও যবত বৈশিষ্ট্য শতভাগ সংরক্ষিত ও অক্ষুণ্ণ ।
৩. শ্রুত সংকলন : ইমাম মুসলিম (র) সরাসরি তাঁর উস্তাদদের থেকে শ্রুত তিন লক্ষ হাদীস থেকে যাচাইবাছাই করে গ্রন্থটি রচনা করেন ।
৪. তাকরারের আধিক্য : সহীহ মুসলিমে ব্যাপক পরিমাণে হাদীসের তাকরার করা হয়েছে। তাকরার ছাড়া যেখানে এ গ্রন্থে মাত্র চার হাজার হাদীস রয়েছে, সেখানে তাকরারসহ হাদীসের সংখ্যা প্রায় বারো হাজার ।
আরো জানো : ইমাম মুসলিম রহ এর জীবনী (পয়েন্ট ভিত্তিক)- pdf
৫. হাদীস লিখন পদ্ধতি : ইমাম মুসলিম (র) শুধু নিজের জ্ঞানবুদ্ধির বিবেচনার ওপর হাদীসের বিশুদ্ধতা যাচাই করেননি; বরং প্রতিটি হাদীসের বিশুদ্ধতার ব্যাপারে সমসাময়িক মুহাদ্দিসগণের সাথে পরামর্শ করেছেন। সমসাময়িক মুহাদ্দিসগণ যে হাদীসটি বিশুদ্ধ বলে একমত হয়েছেন, তিনি কেবল সে হাদীসটি গ্রহণ করেছেন ।
৬. হাদীস গ্রহণ পদ্ধতি : হাদীস গ্রহণের ক্ষেত্রে মুহাদ্দিসগণের প্রবর্তিত চারটি রাবী শ্রেণির মধ্যে ইমাম মুসলিম (র) প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির বর্ণনা নির্বিচারে গ্রহণ করেছেন এবং যাচাইবাছাই সাপেক্ষে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির হাদীস গ্রহণ করেছেন ।
৭. সনদের ধারাবাহিকতা : বয়সের দিক থেকে শাগরিদ ও উস্তাদের মধ্যে সমসাময়িকতা নিশ্চিত হলেই ইমাম মুসলিম তাঁদের হাদীস গ্রহণ করেছেন। এক্ষেত্রে তিনি বর্ণনাকারী ও যার থেকে বর্ণনা করা হয়েছে, তাদের মধ্যে সম্মুখ সাক্ষাৎ হওয়াকে অনিবার্য শর্ত করেননি।
৮. রাবীদের গুণাবলি : সহীহ মুসলিমে রাবীদের সংরক্ষণ ক্ষমতা ও ন্যায়নীতির ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। যেজন্য এ গ্রন্থে উল্লিখিত ৬২০ জন রাবীর মধ্যে মাত্র ১৬০ জন সমালোচিত ।
৯. রুবাইয়াত : সহীহ মুসলিমে রুবাইয়াত ধারায় বর্ণিত হাদীসও বিদ্যমান ৷
আরো জানো : বুখারী শরীফের বৈশিষ্ট্য, প্রেক্ষাপট ও তার অবদান বিস্তারিত
১০. বিন্যাস পদ্ধতি : গ্রন্থের বিশুদ্ধতায় ইমাম মুসলিম (র) সবচেয়ে সতর্ক ছিলেন। সে কারণে সনদ ও মতন ছাড়া অন্য কোনো কিছুই সন্নিবেশিত করেননি।
১১. শায়খের নাম উল্লেখ : ইমাম মুসলিম (র) একাধিক মুহাদ্দিসের নিকট থেকে বিভিন্ন শব্দে একই অর্থবোধক হাদীস বর্ণনা করার ক্ষেত্রে সনদগুলো একত্রিত করে বর্ণনা করেন এবং যে শায়খ থেকে হুবহু শব্দ গ্রহণ করেছেন তা তিনি নির্দিষ্ট করেছেন ।
১২. একই শব্দে বর্ণিত হাদীস একত্রীকরণ : তিনি হাদীসসমূহকে যথাস্থানে সংস্থাপন করেছেন এবং একটি বিষয়ের ওপর বিভিন্ন শব্দে বর্ণিত বিভিন্ন হাদীসকে একত্র করেছেন। ফলে গবেষকদের জন্য এ থেকে উপকৃত হওয়া অত্যন্ত সহজ।
১৩. শব্দের প্রয়োগিক পার্থক্য : এ গ্রন্থে ও শব্দদ্বয়ের মধ্যে প্রয়োগিক পার্থক্যের বিবরণ দেয়া হয়েছে।
পরিশেষে : ফাতহুল বারীর ভূমিকায় হাফেয মুসলিম ইবনে কুরতুবী (র) সহীহ মুসলিম সম্পর্কে বলেন, ইসলামে এরূপ আর একটি গ্রন্থ কেউ রচনা করতে পারেনি। বাস্তবেই মুসলিম শরীফ যুগজিজ্ঞাসার চাহিদা পূরণসহ শরীয়তের দাবি পূরণে অতুলনীয় হাদীস সংকলন।