প্রশ্ন : ১ ৷৷ “কবি জীবনানন্দ দাশ ‘বনলতা সেন’ কবিতায় নারীর সৌন্দর্য বর্ণনার মাধ্যমে স্বদেশপ্রেমেরই পরিচয় দিয়েছেন।” বিশ্লেষণ কর।
অথবা, “কবি জীবনানন্দ দাশ বনলতা সেন’ কবিতায় নারীকে সৌন্দর্যের প্রতীক বর্ণনার মাধ্যমে তাঁর স্বদেশের রূপ বর্ণনা করেছেন।”-বিশ্লেষণ কর।
অথবা, “কবি জীবনানন্দ দাশ ‘বনলতা সেন’ কবিতায় নারী ও প্রকৃতি প্রেমের মাধ্যমে স্বদেশপ্রেমের সন্নিবেশ ঘটিয়েছেন”- যুক্তির আলোকে প্রমাণ কর।
উপস্থাপনা: ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি স্বদেশ ও প্রকৃতিপ্রেমী কবি জীবনানন্দ দাশের অনবদ্য সৃষ্টি। এ কবিতায় নারীর চিরাচরিত সৌন্দর্য ও মাধুর্যের মহিমাকীর্তন করা হলেও নারীর সৌন্দর্য ও প্রকৃতির মধ্য দিয়ে রূপকভাবে লাল-সবুজ বাংলার রূপ-প্রকৃতির বর্ণনার মাধ্যমে স্বদেশপ্রেমেরও পরিচয় দিয়েছেন রূপসী বাংলার এই কবি। কবি তার স্বদেশপ্রেমের স্বরূপ যেভাবে চিত্রিত করেছেন তা নিচে উপস্থাপন করা হলো-
বাংলার প্রকৃতিতে ইতিহাস : ‘বনলতা সেন’ কবিতায় কবির ইতিহাস-চেতনা দৃঢ় প্রত্যয়ীপূর্ণ। বনলতা সেনের বর্ণনায় তিনি ‘বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগতে’ উপনীত হয়েছেন। শ্রাবন্তীর কারুকাজে আত্মতৃপ্তি পেয়েছেন। দারুচিনি দ্বীপ, সিংহল সমুদ্র, মালয় সাগর তাঁর চোখে ভেসে উঠেছে। তরীর হাল ভেঙে যে নাবিক দিগভ্রান্ত হয়ে হঠাৎ দ্বীপের সন্ধান পেয়ে উজ্জ্বল আলোক চোখে ধারণ করে বলে ওঠেন-
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিতর
আরো পড়ো : বনলতা সেন কবিতার মূলভাব ও নামকরণের সার্থকতা – pdf
প্রেমানুভূতিতে রূপসী বাংলা : প্রেমের শাশ্বত অনুভূতির স্পন্দনে কবিতাটি সমৃদ্ধ। আর প্রেমানুভূতির সাথে চমৎকারভাবে মিশে আছে কবির প্রকৃতিগত চেতনা। প্রকৃতির নিবিড় সান্নিধ্য ব্যতীত প্রেম কখনো পূর্ণতা অর্জন করতে পারে না। কবি প্রেমকে পরিপূর্ণতা দানের লক্ষ্যে ইতিহাস ও ভূগোলাশ্রয়ী প্রকৃতি এবং নিসর্গকে টেনে এনেছেন তাঁর ‘বনলতা সেন’ কবিতায়, যা কবির উক্তিতে প্রকাশ পায়-
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন,
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
বাঙালি নারীহৃদয়ের অব্যক্ত ভালোলাগা : প্রকৃতিগতভাবে পৃথিবীতে প্রেম-ভালোবাসা নারী ও পুরুষকে ঘিরে আবর্তিত হয়। পুরুষ যেমন নারীকে খুঁজে খুঁজে ক্লান্ত ও পরিশ্রান্ত, তেমনি নারীও তার স্বপ্নপুরুষকে কামনা করে হৃদয় আলোড়িত করে। একদিন হঠাৎ করে তার স্বপ্নপুরুষটি সামনে এসে দাঁড়ায়, তখন তার বিস্ময়ের বাঁধ ভেঙে যায়।
প্রেমপিয়াসী নারীর হৃদয় তখন অব্যক্ত ভালোবাসায় রোমাঞ্চিত হয়ে ওঠে। কবিকে দেখে বনলতা সেনের বিস্ময়মাখা আবেগাপ্লুত প্রশ্ন- ‘এতদিন কোথায় ছিলেন বাঙালি নারীর যথার্থতার পরিচয় দেয় এবং এভাবেই বনলতা সেন চরিত্রের মাধ্যমে কবি নারীর সৌন্দর্য বর্ণনার পাশাপাশি স্বদেশপ্রেমের পরিচয় দিয়েছেন-
বলেছে সে, ‘এতদিন কোথায় ছিলেন?
পাখির নীড়ের মতো চোখ তুলে নাটোরের বনলতা সেন ।
আরো পড়ো : সাত সাগরের মাঝি কবিতার মূলভাব- তোমার নিজের ভাষায় লেখ
নারীসৌন্দর্যে বাংলার রূপ : প্রেম-ভালোবাসার ক্ষেত্রে নারীর অবস্থান এবং তার দেহ-মনের সৌন্দর্য একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ। কবির মানস-প্রতিমা বনলতা সেনের সৌন্দর্যে নিসর্গের স্নিগ্ধতা ও প্রকৃতির নিষ্কলুষতার ছোঁয়া সুস্পষ্ট। কবি নারীর সৌন্দর্যকে ইতিহাস-ঐতিহ্যঘনিষ্ঠ বলেই বিবেচনা করেছেন।
হারিয়ে যাওয়া প্রাচীন নগরী বিদিশার অন্ধকারকে কবি প্রেয়সীর ঘন কালো চুলের সৌন্দর্যের সাথে তুলনা করেছেন। অপরূপ প্রাচীন মূর্তি শ্রাবন্তীর কারুকার্যের সাথে নিখুঁত সাদৃশ্য খুঁজে পেয়েছেন বাংলার বনলতা সেনের মুখাবয়বের।
এ নিখুঁত সৌন্দর্যের আড়ালে নারীর আসল সৌন্দর্য তাঁর হৃদয় ও মনে ধরা দিয়েছে পাখির নীড়ের মতো শান্তির নীড় হিসেবে। যে সৌন্দর্যের গভীরেও রয়েছে বাংলার বৈচিত্র্যময় প্রকৃতি। কবির ভাষায়-
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবস্তীর কারুকার্য।
প্রকৃতি ও নারীসৌন্দর্যে স্বদেশ : সৌন্দর্যবোধ থেকেই প্রেমের সৃষ্টি। জীবনানন্দ দাশ নারীর সৌন্দর্যের যে বোধ জাগ্রত করেছেন তা তাঁর একান্ত মানসকামনা। ‘বনলতা সেন’ কবিতায় কবি তার স্বদেশপ্রেম ও প্রকৃতি চেতনা নারী চরিত্রের মাধ্যমে তুলে ধরেছেন।
কবিতায় সবুজ ঘাস, সমুদ্র সফেন, ঘাসের দেশ, দারুচিনি দ্বীপ, রৌদ্রের গন্ধ, ধূসর জগৎ, পাখির নীড়, বিদিশার রাত, শিশিরের শব্দ, বাংলার চির চেনা চিল ইত্যাদির মাধ্যমে কবি নিজ জন্মভূমির প্রকৃতি ও সৌন্দর্যকে নারীর সৌন্দর্যে রূপ দিয়ে তার প্রকৃত স্বদেশপ্রেম তুলে ধরেছেন। তাই কবি কাব্যিক ভাষায় ব্যক্ত করেন-
সমস্ত দিনের শেষে শিশিরের শব্দের মতন
সন্ধ্যা আসে; ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল ।
আরো পড়ো : বঙ্গভাষা কবিতার প্রশ্ন ও উত্তর – রচনামূলক
রূপসী বাংলায় প্রেমের অমরত্ব : বিশ্বজগতের গতিশীল ও পরিবর্তনশীল জীবনধারায় টিকে আছে মানুষের প্রেম ও ভালোবাসা। প্রেমের অমরত্বের কারণেই নারী-পুরুষের পারস্পরিক আকর্ষণের মধ্য দিয়ে জীবনের গতিধারা প্রবাহিত হচ্ছে। সবকিছু নিঃশেষ হওয়ার পরও প্রেম ও ভালোবাসা বেঁচে থাকে অনন্তকাল।
সৌন্দর্যবোধের মধ্য দিয়ে এ প্রেমের জাগরণ। আর নারী এ সৌন্দর্যেরই অন্যতম প্রতীক । যে সৌন্দর্যের আভায় প্রকৃতি সিক্ত হয়। সিক্ততায় ফুটে ওঠে দেশ-কালের ইতিহাস। প্রেমাতি নিয়ে মুখোমুখি বসে থাকে নারী আর পুরুষ। কবিও বনলতা সেনকে নিয়ে প্রেমের এ চিরন্তন বাণী প্রচার করেছেন-
সব পাখি ঘরে আসে – সব নদী – ফুরায় এ জীবনের সব লেনদেন;
থাকে শুধু অন্ধকার, মুখোমুখি বসিবার বনলতা সেন ।
বনলতা সেনের মধ্যে কবি বাংলার প্রকৃতির যে সৌন্দর্য অবলোকন করেছেন, সে সৌন্দর্যকে সমালোচকগণ মূলত তার স্বদেশপ্রেমের চেতনায় ব্যক্ত করেছেন। এখানে নারী ও প্রকৃতির সৌন্দর্য বর্ণনা তার স্বদেশপ্রেমেরই পরিচায়ক।
উপসংহার : ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি কবির প্রেম ও প্রকৃতি চেতনার সমন্বিত রূপ। এটি সর্বকালের শ্রেষ্ঠ প্রেমের কবিতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা লাভ করেছে। পুরুষ সত্তা এখানে খুঁজে পেয়েছে শাশ্বত নারী সত্তাকে।
প্রেম ও সৌন্দর্যের অনিঃশেষ দীপ্তিতে মহীয়ান হয়ে উঠেছে সেই শাশ্বত নারী, যাকে পাওয়া যে-কোনো পুরুষের জন্য সৌভাগ্যের বিষয়। কবি সেই সৌভাগ্যবানদের একজন হয়ে নারী চরিত্র, ইতিহাস এবং প্রকৃতির সৌন্দর্যের বর্ণনার মধ্য দিয়ে তাঁর স্বদেশপ্রেমের অকৃত্রিম পরিচয় দিয়েছেন।
প্রশ্ন : ২ ৷৷ ‘বনলতা সেন’ কবিতার মূলভাব ও কাব্যসৌন্দর্য বিচার কর।
অথবা, ‘বনলতা সেন’ একটি অসামান্য আধুনিক বাংলা কবিতা – উক্তিটির যথার্থতা বিচার কর।
অথবা, কবি জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কবিতার কাব্যসৌন্দর্য বিশ্লেষণ কর।
অথবা, কবি জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কবিতার বিশিষ্টতা নিরূপণ কর।
উপস্থাপনা : ‘বনলতা সেন’ বাংলা সাহিত্যের স্বনামধন্য আধুনিক কবি জীবনানন্দ দাশের এক অনন্য সৃষ্টি। ত্রিশোত্তর কবি হিসেবে আধুনিক কাব্যরীতি আর স্বদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের প্রেরণা জীবনানন্দ দাশকে বাংলা কাব্যে একটি স্বতন্ত্র স্থান নির্ধারণ করে দেয়।
তাঁর সেই স্বতন্ত্র চিন্তা-চেতনার বহিঃপ্রকাশ হলো বনলতা সেন। গভীর প্রেমানুভূতি, ভৌগোলিক বিস্তৃতি, ইতিহাস চেতনা, উপমার প্রয়োগ, ছন্দের কারুকার্য প্রভৃতির এক অপূর্ব মেলবন্ধন ঘটেছে এ কবিতায়
কবিতার মূল ভাব
প্রেমানুভূতির প্রকাশ : ‘বনলতা সেন’ কবিতায় কবি জীবনানন্দ দাশ যে প্রেমানুভূতির প্রকাশ ঘটিয়েছেন তা সমগ্র পুরুষ জাতির অনুভূতিকে স্পর্শ করেছে। জীবনের ঘাত-প্রতিঘাতে ক্লান্ত মানুষ প্রতিনিয়ত শান্তির অন্বেষণ করে চলে।
কাঙ্ক্ষিত শান্তির জন্য সে দীর্ঘপথ অতিক্রম করে ফেরে, কিন্তু শান্তির ঠিকানা সে পায় না। অনন্তকালের পথপরিক্রমায় কবিজীবনে যেসব অশান্তি সমুদ্রের সফেন হয়ে জমেছিল, তা আজ তাঁর মানসপ্রতিমা বনলতা সেনরূপী প্রেয়সী নারীর ভালোবাসার পরশ স্পর্শে নির্মল হয়ে ওঠে।
ভৌগোলিক ধারণা : ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি ভৌগোলিক ধ্যান-ধারণায় সমৃদ্ধ, কবির বিশ্বমনঙ্ক বিদগ্ধজারিত ঐতিহ্যমণ্ডিত এক অনন্যধর্মী কবিতা। তিনি পৃথিবীর পথে হাজার বছর ধরে হেঁটেছেন ।
তাই এ কবিতায় স্থান পেয়েছে সিংহল সমুদ্র, মালয় সাগর, বিম্বিসার অশোকের ধূসর জগৎ, বিদর্ভ নগর (ভারতের মধ্য প্রদেশের বিদর রাজ্যের পূর্ব নাম), নাটোর, বিদিশা (বৌদ্ধ যুগের প্রাচীন এক সমৃদ্ধ নগরী), শ্রাবন্তী, সবুজ ঘাসের দেশ, দারুচিনি দ্বীপ ইত্যাদি স্থানের নাম উল্লেখে কবিতাটি বৈশ্বিক রূপধারণ করেছে।
ইতিহাস চেতনা : ইতিহাস চেতনা ‘বনলতা সেন’ কবিতাটিকে এক স্বতন্ত্র মহিমায় মহীয়ান করে তুলেছে। কবি নিজেই বলেছেন, কবির পক্ষে সমাজকে বোঝা দরকার। কবির অস্থিমজ্জায় মিশে থাকবে ইতিহাস চেতনা, চিত্তে থাকবে পরিচ্ছন্ন কাণ্ডজ্ঞান। ‘বনলতা সেন’ কবিতায় তাঁর সার্থক প্রতিফলন পরিলক্ষিত হয় এভাবে-
সেখানে ছিলাম আমি; আরো দূর অন্ধকারে বিদর্ভ নগরে,
আমি ক্লান্ত প্রাণ এক, চারিদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন।
মানসপ্রতিমার পরম শান্তির সন্ধান লাভ : দিনের শেষে নিঃশব্দ চরণে সন্ধ্যা নামে। দিনের সব কোলাহল থেমে যায়। শিশিরের পতন বৃষ্টির মতো মৃদু শব্দ করে, চিলের ডানায় রোদের গন্ধ মুছে যায়, মুছে যায় পৃথিবীর সব রং, চারদিকে নেমে আসে ধূসরতা।
পৃথিবীর সব আলো তখন দৃষ্টির অগোচরে চলে যায়। জোনাকিরা আলো ঝিলমিল করে নতুন গল্পকাহিনি রচনার জন্য পাণ্ডুলিপির আয়োজন করে। আরম্ভ হয় সময়ের নতুন পর্যায়। পাখিরা তাদের নীড় খুঁজে বেড়ায়। স্তব্ধ হয়ে যায় নদীতীরের গুঞ্জন।
কবিতার কাব্যসৌন্দর্য
শাব্দিক সুষমা : কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর ‘বনলতা সেন’ কবিতায় এমনসব শব্দের প্রয়োগ করেছেন, যার জন্য একে শাব্দিক সুষমায় ভূষিত কবিতা বলে অভিহিত করা যায়।
এ কবিতায় বিম্বিসা, অশোক, বিদিশা, শ্রাবন্তী ও বিদর্ভ ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার আমাদের কয়েক হাজার বছরের পুরোনো ইতিহাসের সাথে পরিচিত করে তোলে। ‘পাখির নীড়’, ‘শিশিরের শব্দ’, ‘ক্লান্ত প্রাণ’, ‘দারুচিনি দ্বীপ’, ‘রৌদ্রের গন্ধ’, ‘সবুজ ঘাস’ ইত্যাদি শব্দের সমন্বিত রূপ কবিতাটিকে কাব্যিক সুধায় সমৃদ্ধ করেছে।
উপমার শৈল্পিক প্রয়োগ : আঠারো পঙ্ক্তিতে রচিত এ ছোট্ট কবিতায় কবি শব্দের যথার্থ প্রয়োগে যেমন স্বতন্ত্র বৈশিষ্ট্যের পরিচয় দিয়েছেন, তেমনি উপমার শৈল্পিক বিন্যাসে বিস্ময়কর প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। এতে তিনি অসাধারণ দক্ষতায় পাঁচটি উপমার প্রয়োগ করেছেন।
বনলতা সেনকে তিনি তুলনা করেছেন অন্ধকার বিদিশা নগরীর রাতের সাথে, তার মুখকে তুলনা করেছেন শ্রাবস্তীর কারুকার্যের সাথে এবং চোখকে তুলনা করেছেন পাখির নীড়ের সাথে। কবির ভাষায়-
চুল তার কবেকার অন্ধকার বিদিশার নিশা,
মুখ তার শ্রাবন্তীর কারুকার্য।
আলোচ্য কবিতায় সন্ধ্যা নেমেছে শিশিরের মতো নিঃশব্দে, হাল ভাঙা দিশেহারা নাবিক স্বস্তি পেয়েছে যেমন সবুজ ঘাসে ঘেরা দারুচিনি দ্বীপ দেখে, কবির অশান্ত মনও তেমনি স্বস্তি পেয়েছে বনলতা সেনকে দেখে।
ভাব-সম্পদ : ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি ভাব-সম্পদের দিক থেকে ঋদ্ধ আকর্ষণীয়। প্রেম মানবসত্তার এক শাশ্বত অনুভূতি। শাশ্বত কালের এ মধুর অনুভূতি নিয়েই গড়ে উঠেছে এ কবিতাটি। নীড়সন্ধানী পথিক হৃদয়ের গভীর অন্তঃপুরে প্রেমের যে ব্যাকুলতা, কবি অসাধারণ শিল্প চাতুর্যে তার প্রকাশ ঘটিয়েছেন।
তিনি তাকে দাঁড় করিয়েছেন এক শাশ্বত কল্যাণী নারীর নীড়ের মুখোমুখি। প্রেম-প্রীতিদাত্রী এ দুই সত্তা পরস্পরের মুখোমুখি হয়েছে প্রেমের মিষ্টি-মধুর অনুভূতি নিয়ে। এ অমূল্য ভাব-সম্পদে পরিপুষ্ট জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ কবিতাটি।
চিত্রকল্প : শৈল্পিক শব্দচয়নে সংযত ‘বনলতা সেন’ কবিতায় কবি যে চিত্রকল্পের জন্ম দিয়েছেন, তা বাংলা সাহিত্যে অনন্য। কবি বহু ভাষণে কবিতাটিকে দীর্ঘায়িত না করে খুব অল্প কথায়, নির্বাচিত শব্দ ও উপমার ঝঙ্কারে তার ভাব প্রকাশ করেছেন। রূপক ও অলঙ্কার প্রয়োগের স্থলে কবি নিপুণভাবে প্রতীক ও চিত্রকল্প সমৃদ্ধ করেছেন, যা বক্তব্য অপেক্ষা ব্যঞ্জনা সৃষ্টিতে অধিকতর ক্রিয়াশীল। যেমন-
হাল ভেঙে যে নাবিক হারায়েছে দিশা
সবুজ ঘাসের দেশ যখন সে চোখে দেখে দারুচিনি-দ্বীপের ভিত।
এ চিত্রকল্প যেন পাঠককে উপনীত করে এক মোহনীয় ব্যঞ্জনার সেই স্বপ্নময় দারুচিনি দ্বীপে। ছবিগুলো শুধু দৃশ্যের নয়, গন্ধের এবং স্পর্শেরও বটে।
প্রাকৃতিক উপাদানের ব্যবহার : প্রাকৃতিক উপাদান নিয়ে কবি জীবনানন্দ দাশ তাঁর কাব্যের ডালি পূর্ণ করেছেন। ‘বনলতা সেন’ কবিতা প্রাকৃতিক উপাদানের অনুপম ব্যবহার ও নান্দনিক বিন্যাসে অপরূপ হয়ে উঠেছে। কবিতাটিতে পাখীর নীড়, বিদিশার রাত, শিশিরের শব্দ, দারুচিনি দ্বীপ, ঘাসের দেশ, রৌদ্রের গন্ধ, সমুদ্র সফেন, ধূসর জগৎ ইত্যাদি প্রাকৃতিক বিষয়াবলির চমৎকার সম্মিলন ঘটেছে।
এছাড়া কবিতাটিতে এসেছে চিল, জোনাকি এবং নদীর প্রসঙ্গ। যার সবকটি বাংলা বা কবির স্বদেশের প্রকৃতির অংশ। সবশেষে কবিতার নামটিও প্রকৃতির উপাদানে কল্পিত বনলতা অর্থাৎ বনের লতা। তাই হাজার বছরের পথপরিক্রমায় ক্লান্ত কবি যে প্রকৃতির সমগ্রতায় লীনতা প্রত্যাশী, তা সুস্পষ্ট। ফলে ভাবের সঙ্গে ভাষা, শব্দ ও উপমা প্রয়োগের সামজস্য এবং প্রাকৃতিক উপাদানের নিপুণ ব্যবহারে কবিতাটি হয়ে উঠেছে অনন্য ।
কবিতার অনন্য ভঙ্গি : ‘বনলতা সেন’ জীবনানন্দ দাশের এক অসামান্য কবিতা, যা বাংলা সাহিত্যে বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছে। যুগ যুগ ধরে সাহিত্য অনুরাগীদের চিত্তে এক অনাবিল ভাব- কল্পনার উদ্রেক করে চলেছে। তাঁর কবিতার অনন্যতা তাঁকে বাংলা কাব্যজগতে স্বতন্ত্র আসনে আসীন করে।
আধুনিক কবিতা হিসেবে মূল্যায়ন : প্রকৃতিপ্রেমী কবি জীবনানন্দ দাশের ‘বনলতা সেন’ একটি উৎকৃষ্ট আধুনিক কবিতা। এ কবিতার ভাব, ভাষা, শব্দচয়ন, অলঙ্কার, ছন্দ সবই আধুনিক। কিন্তু আধুনিক কবিতার যে অন্যতম উপাদান দুর্বোধ্যতা ও অশ্লীলতা; তা এ কবিতায় নেই। সমিল অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত এ কবিতায় অন্ত্যানুপ্রাস বিদ্যমান।
একজন শান্তিপ্রত্যাশী মানুষ সভ্যতার সুদীর্ঘ পথ বেয়ে আধুনিক সভ্যজগতে পৌঁছে শান্তির অন্বেষণে বিভোর। পথ চলতে চলতে সে প্রত্যাশিত মানবীর সন্ধান পেয়েছে নাটোরে এসে। কল্পিত সে মানবীর নাম বনলতা সেন। এ বনলতা সেন সৌন্দর্য ও শান্তির প্রতীক। কবিহৃদয়ের সুখ ও স্বস্তির জন্য প্রয়োজন বনলতা সেন-এর সান্নিধ্য। কবির অন্বেষী মনের এ ভাব ও চিন্তা আধুনিক। এ কবিতায় কবি অনন্য উপমা ব্যবহার করেছেন।
অপলক চোখ বোঝাতে তিনি ‘পাখির নীড়’ এবং নিঃশব্দতা বোঝাতে ‘শিশিরের শব্দ’ ব্যবহার করেছেন। এমন সুন্দর উপমা আধুনিক কাব্য সাহিত্যে একান্তই বিরল। তাই ভাব, ভাষা, ছন্দ, অলঙ্কার, উপমা, শব্দচয়ন, প্রাকৃতিক উপাদান ব্যবহার- যে-কোনো দিক থেকেই ‘বনলতা সেন’ একটি রসোত্তীর্ণ আধুনিক কবিতা। প্রেম, সৌন্দর্য, আনন্দ, রোমান্টিক ব্যঞ্জনা আর আত্মোপলব্ধিতে কবিতাটি আধুনিক কবিতার এক অনুপম নমুনা ।
উপসংহার : প্রাকৃতিক উপাদানের শৈল্পিক ব্যবহারে, চিত্রকর নির্মাণে, ভাষা ও ছন্দের বিচিত্র প্রয়োগে, ইতিহাস চেতনার প্রবাহ সৃষ্টিতে ‘বনলতা সেন’ বাংলা সাহিত্যে একটি বহুমাত্রিক অসাধারণ আধুনিক কবিতা। এ কবিতার মাধ্যমে কবির ব্যক্তিমানসের রোমান্টিক অনুভূতির সার্থক, প্রকাশ আর মৃত্যুঞ্জয়ী প্রেমের অনিন্দ্য সৌন্দর্যের দিকটি শৈল্পিকভাবে কাব্যিক ব্যঞ্জনায় ফুটে উঠেছে
প্রশ্ন: ৩॥ ‘বনলতা সেন’ কবিতার কবি জীবনানন্দ দাশ প্রকৃতিপ্রেমের যে মানসচিত্র অঙ্কন করেছেন, তা তোমার নিজের ভাষায় লেখ।
অথবা, “কবি জীবনানন্দ দাশ অত্যন্ত প্রকৃতি-সংলগ্ন কবি”- ‘বনলতা সেন’ কবিতা অবলম্বনে আলোচনা কর।
উপস্থাপনা : বাংলা সাহিত্যের স্বনামধন্য কবি, রূপসী বাংলার কবি জীবনানন্দ দাশ আধুনিক বাংলা সাহিত্যে ব্যতিক্রমী প্রতিভা। প্রকৃতিপ্রেমে বিভোর হয়ে প্রকৃতিকে উপজীব্য করে তিনি তাঁর কাব্যের ডালি পরিপূর্ণ করেছেন। প্রকৃতির সোঁদামাটি, ঘাসফুল, সমুদ্র, নদী আর সবুজ চত্বর প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদানের দিকে তিনি বারবার ছুটে গেছেন।
তাঁর অমর সৃষ্টি, ‘বনলতা সেন’ কবিতায় তিনি প্রকৃতি প্রেমের এক অনন্য মানসচিত্র অঙ্কন করেছেন এবং প্রকৃতিবিনাশী সভ্যতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে প্রকৃতি-সংলগ্ন জীবনের আকাঙ্ক্ষাই উচ্চকিত করেছেন।
প্রকৃতিপ্রেমের স্বরূপ : কবি জীবনানন্দ দাশ ছিলেন প্রকৃতিপ্রেমিক কবি। প্রকৃতিকে খুব আপন মনে করে তিনি জীবনতরীকে সফলতার বন্দরে নিয়ে যান। প্রকৃতির মাধুর্যে মুগ্ধ হয়ে জীবন ও জগতের সকল অশান্তি, ক্লান্তি আর অবসাদ ভুলতে শিখেছেন তিনি। প্রাকৃতিক উপাদানকে উপজীব্য করে তিনি তাঁর কাব্যদেহকে সুষমামণ্ডিত করেছেন।
‘বনলতা সেন’ কবিতায় তিনি প্রাকৃতিক উপাদানের অনুপম ব্যবহার ও নান্দনিক বিন্যাস করে তার প্রকৃতিপ্রেমের স্বরূপ তুলে ধরেছেন। কবিতাটিতে তিনি খুব দরদমাখা হৃদয়ে, কলমের শৈল্পিক ছোঁয়ায় নিশীথের অন্ধকার, ধূসর জগৎ, সমুদ্র সফেন, বিদিশার রাত, শ্রাবন্তীর কারুকার্য, সবুজ ঘাসের দেশ, দারুচিনি দ্বীপ, পাখির নীড়, শিশিরের শব্দ, রৌদ্রের গন্ধ, সন্ধ্যার আগমন প্রভৃতি প্রাকৃতিক উপাদানের অপূর্ব সম্মিলন ঘটিয়েছেন।
এছাড়াও কবিতাটিতে এসেছে চিল, জোনাকি এবং নদীর প্রসঙ্গ, যার প্রতিটি প্রকৃতির অংশ। সবশেষে কবিতার নামটিও প্রকৃতির উপাদানে কল্পিত বনলতা, অর্থাৎ বনের লতা। তাই ভাবের সঙ্গে ভাষা, শব্দ ও উপমা প্রয়োগের সামাঞ্জস্যে এবং প্রাকৃতিক উপাদানের নিপুণ ব্যবহারে কবিতাটিতে কবির প্রকৃতিপ্রেমের অনন্য স্বরূপ ফুটে উঠেছে।
প্রকৃতির সমগ্রতায় লীন : ‘বনলতা সেন’ কবিতায় প্রকৃতির সমগ্রতায় লীনতা প্রত্যাশী কবি হাজার বছর ধরে প্রকৃতির বুকের ওপর দিয়ে পথপরিক্রমায় ক্লান্ত। সিংহল সমুদ্র, মালয় সাগর, বিম্বিস্তার অশোকের ধূসর জগৎ, বিদর্ভ নগর সবখানে ঘুরেছেন তিনি, কিন্তু কোথাও শান্তি নেই। অতীতের দিকে চোখ মেলেও দেখেছেন, সেখানেও কোনো শান্তি ছিল না।
ইতিহাসের বিভিন্ন সভ্যতার কাছেও আশ্রয় নিয়েছেন, কিন্তু সেখানেও কোনো শান্তি পাননি। অবশেষে ক্লান্ত-শ্রান্ত কবিকে প্রকৃতিই এনে দিয়েছে শান্তি-সুখ। তাই কবি প্রকৃতিকে মানবীয় রূপ দিয়ে তার জন্য রচনা করেছেন প্রশস্তি গান। কবির ভাষায়-
আমারে দুদণ্ড শান্তি দিয়েছিল নাটোরের বনলতা সেন।
হাজার বছরের পথপরিক্রমায় কবির ‘ক্লান্তপ্রাণ’ দেখছে চারদিকে জীবনের সমুদ্র সফেন, এ জীবন প্রকৃতি-সংলগ্ন জীবন।
প্রকৃতির আশ্রয় : গভীর সমুদ্রে প্রকৃতির সর্বনাশা ঝড়ে হাল ভেঙে নাবিক দিশেহারা হয়ে পড়ে। অনিশ্চিত পথের যাত্রী হয়ে সে প্রকৃতির অকূল সাগরে ভাসতে থাকে। এ অবস্থায় নাবিক যখন সবুজ ঘাসের দেশ দারুচিনি দ্বীপ আবিষ্কার করে, তখন সে নতুন করে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে বাঁচার জন্য। সব হতাশা দূর করে সেই দ্বীপ তখন তার মনে শান্তি ও স্বস্তি বিলায় প্রকৃতিরূপ নারী বনলতা সেন কবির সেই দ্বীপ, যাকে দেখে কবি শান্তি ও সুখনীড়ের আশ্রয় অনুভব করেছেন।
প্রাকৃতিক উপাদানে উপমার প্রয়োগ : প্রকৃতিপ্রেমী কবি আঠারো পদ্ধতিতে রচিত ‘বনলতা সেন’ কবিতায় পাঁচটি উপমার প্রয়োগ করেছেন। প্রত্যেকটিতে তিনি প্রাকৃতিক উপাদানের শৈল্পিক ব্যবহার করেছেন। কবিতায় বনলতা সেনের চোখ উপনিত হয়েছে পাখির নীড়ের সঙ্গে, চুল বিদিশার রাতের সঙ্গে, মুখ শ্রাবস্তীর কারুকার্যের সঙ্গে, সন্ধ্যা নেমেছে শিশিরের শব্দের মতো। বনলতা সেন দেখা দিয়েছে সমুদ্রে দিশাহারা নাবিকের চোখে চারুচিনি দ্বীপের ভেতর সবুজ ঘাসের দেশের অপার শান্তি নিয়ে। এভাবে কবি উপমাতে তাঁর প্রকৃতিপ্রেমের হৃদয় নিংড়ানো প্রতিচ্ছবি তুলে ধরেছেন।
নারী প্রকৃতিরই অপর নাম : যুগে যুগে পুরুষ তার সংকট, সমস্যা, বিক্ষুব্ধতা ও বিপর্যস্ততায় প্রকৃতির কোলে শান্তি খোঁজে। নারীই পুরুষের প্রেরণা, যাত্রাপথে নারীর জয়ধ্বনিই পুরুষের পাথেয়। কর্মক্লান্ত পুরুষ নারীপ্রেমের আঁচলে শান্তির পরশ পায়। নারীর প্রেরণা পেয়েই পুরুষ সাগর পাড়ি দেয়, পাহাড় ডিঙ্গায়। জীবনে শক্তি, সাহস ও সাধনার প্রেরণা আসে নারী থেকেই।
ঝঞ্ঝাবিক্ষুব্ধ জটিল অশান্ত জীবনে বনলতা সেন গভীর আশ্বাসে কবির খোঁজ নিয়েছেন; বিশ্বাসে, আশ্রয়ভরা মমতায় নিবিড় সান্নিধ্যে এসেছেন। এভাবে নারীর কোমল নীড়ে কৰি আশ্রয় নেন। নিকষ কালো অন্ধকার বিদিশার রাতের মতো ঘন দীঘল কালো চুল, শ্রাবন্তী নগরীর ভাস্কর্যের মতো অপরূপ মুখাবয়ব নিয়ে বনলতা সেন কবিকে দিয়েছে পরম প্রশান্তি।
জীবনের সব আলো নিভে গেলে, জীবনসংগ্রামে নেতিয়ে পড়া পুরুষের জীবনে ক্লান্তি নেমে “এলে নারীকে নিয়ে শান্তির নীড় রচনার নিরন্তর প্রত্যাশা রয়েই যায়। যুদ্ধোত্তর সংকটময় জীবনে কবি বনলতাকে চিত্রিত করেছেন তৃপ্তির উপাদান হিসেবে, অনাবিল ও অবর্ণনীয় শান্তির প্রতীক এবং চিরন্তন মানসপ্রতিমারূপে।
বনলতা সেন কেবল পুরুষের বিশেষ নারীরূপে মূর্ত নয়; বরং যুগ যুগান্তরের ক্লান্ত পুরুষের স্বস্তির যমীন। তার পাখির নীড়ের মতো সৌম্য শান্ত চোখে মায়ার প্রীতির অঞ্জন জীবনচলা শেষে রাতের অন্ধকারে বনলতা সেনরূপ নারীর মুখোমুখি ঠাঁই নিয়েছে।
কবির সর্বৈর চপলতা শান্ত-শীতল হয়ে এসেছে। শাশ্বত পুরুষ শাশ্বত নারীর হৃদয়-যমীনে বেঁধেছে শান্তির নীড়। প্রকৃতির কোলে মুখ লুকানো আর নারীর চোখে শান্তির পরশ খোঁজা উভয়ই প্রকৃতিতে আত্মসুখ খোঁজা। এক অপরূপ মমতা আর অনন্যধর্মী দৃষ্টিভঙ্গিতে কবি প্রকৃতির রূপমাধুর্য চিত্রিত করেছেন।
প্রকৃতির বিবর্ণতা : একসময় দিনের আলো নিভে যায়। ধীর পায়ে সন্ধ্যা নেমে আসে শিশিরের মতো নিঃশব্দে। ডানার রৌদ্রের গন্ধ মুছে ফেলে চিল । পৃথিবীর সব রং মুছে যায়। সব পাখি ঘরে ফেরে, চারদিকে নেমে আসে ধূসরতা।
এভাবে পৃথিবীর সবরকম দৃষ্টিগোচর দৃশ্য আঁধারে ঢেকে যায়। তখন জোনাকির আলো ঝিলমিল করে নতুন গল্প শুরু করে। আরম্ভ হয় সময়ের নতুন পর্যায়। রজনীর গভীরতায় পিনপতন নীরবতায় প্রকৃতিতে সৃষ্টি হয় এক অপূর্ব দ্যোতনা, এক অনন্য রোমান্টিক পরিবেশ।
উপসংহার : প্রকৃতির উদার আকাশের নিচে, সবুজ বিস্তীর্ণ চত্বরে, সবুজের কোলে লালিত- পালিত হন কবি জীবনানন্দ দাশ। তাই প্রকৃতিকে উপজীব্য করে তিনি নিজের কাব্যের ডালিকে সমৃদ্ধ করেছেন। প্রশস্তি গেয়েছেন দৃষ্টিনন্দন রূপময় প্রকৃতির লাবণ্যের।
প্রেয়সীর সাথে নিবিড়ভাবে মিলিত হওয়ার জন্য খুঁজেছেন প্রকৃতির নির্জনতা। বনলতা সেন’ কবিতার মধ্য দিয়ে কবির প্রকৃতি-সংলগ্নতা মূর্ত হয়ে উঠেছে। আলোচ্য কবিতায় অপূর্ব শব্দচয়ন, অনন্য ভাষাশৈলী, অকল্পনীয় চিত্রকল্প নির্মাণ, অনুপম উপমা প্রয়োগ ও ইতিহাস-ঐতিহ্যের ভাবনায় কবির প্রকৃতি-প্রেমের মানসচিত্র ফুটে উঠেছে।