বাংলাদেশের পুরাকীর্তি – প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা  

প্রাচীন ও ঐতিহাসিক নিদর্শনের সমৃদ্ধভূমি হিসেবে বাংলাদেশের পরিচিতি রয়েছে বিশ্বে। পুরাকীর্তিগুলো আবিষ্কৃত হওয়ার পর বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যগতভাবে উন্নত হয়েছে। বর্তমানে বাংলাদেশে যেসব পুরাকীর্তি আবিষ্কৃত হয়েছে তার মধ্যে মহাস্থানগড়, পাহাড়পুর বিহার এবং ময়নামতির শালবন বৌদ্ধ বিহার অন্যতম। পুরাকীর্তি ও নিদর্শনের অতীত ইতিহাস জানানোর জন্য জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। যেখানে আমাদের নতুন প্রজন্ম ইতিহাস থেকে জ্ঞান অর্জন করতে পারবে।

ঐতিহাসিক স্থাপনা  

বাংলাদেশ হিন্দু ও বৌদ্ধধর্মের পুরাকীর্তি অঞ্চল হিসেবে সমৃদ্ধ। যার মধ্যে নওগাঁ জেলার পাহাড়পুর, বগুড়ার মহাস্থানগড় এবং কুমিল্লার ময়নামতি উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে খননকাজ চলছে বেশ কিছু পুরাকীর্তি অঞ্চলে। উয়ারী-বটেশ্বর তার মধ্যে অন্যতম। পাহাড়পুর হচ্ছে সবচেয়ে বড়ো আশ্রম, মঠ এবং মন্দির। 

অন্যদিকে মহাস্থানগড় শুধু একটি শহর নয়, ধর্মীয় দিক থেকে এটির গুরুত্ব অনেক। ময়নামতি বৌদ্ধ বিহার অষ্টম শতাব্দীতে বৌদ্ধধর্মের আশ্রম ও মন্দির হিসেবে নির্মিত হয়। এছাড়া বেশকিছু পুরাকীর্তি অঞ্চল আবিষ্কৃত হয়েছে। ভাসুবিহার, হলুদ বিহার, সীতাকোট এবং জগদ্দল তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য।

আরও পড়ুন :- পাহাড়পুর – ঐতিহাসিক স্থান বা দর্শনীয় স্থান : রচনা

বাংলাদেশের পুরাকীর্তি  

স্যার আলেকজান্ডার কানিংহাম ১৮৭৯ সালে এই দেশ পরিদর্শনে আসেন। এ সময় তিনি প্রত্নতাত্ত্বিক খননকাজ করে মহাস্থানগড় ও পাহাড়পুর বিহার আবিষ্কার করেন। এছাড়া তিনি ভাসুবিহার, যা মহাস্থানগড়ের কাছে অবস্থিত এবং পাহাড়পুরের কাছে যোগীগুফা, ঘটিনগর ও বিদারদিঘি আবিষ্কার করেন ।

পাহাড়পুর মহাবিহার  

প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি নওগাঁ জেলার বদলগাছী থানার অন্তর্গত পাহাড়পুর গ্রামে অবস্থিত। পাহাড়পুর মহাবিহার খননকাজে ভারতীয় প্রত্নতাত্ত্বিক জরিপ বিভাগ বরেন্দ্র রিসার্চ সোসাইটি এবং কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় যৌথভাবে অংশগ্রহণ করে। ১৯২৩ সালে এর খননকাজ শুরু হয়। এই খননকাজ প্রথম দিঘাপতিয়ার জমিদারসহ অনেকের আর্থিক সাহায্যে পরিচালিত হয়েছে। 

দেশ স্বাধীন হওয়ার পরে বাংলাদেশ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ কর্তৃক পুনরায় খননকাজ পরিচালনা করা হয়। ২৭৪.৪০ মিটার পরিমাপবিশিষ্ট এই বিহারের চতুর্দিকে ১৭৭টি বাসযোগ্য কক্ষ আছে। অসংখ্য মন্দির, পুকুর, বিস্তৃত প্রবেশপথ এবং বিভিন্ন নিদর্শন ছড়িয়ে রয়েছে এখানে । এটি ৭৮৮ খ্রিষ্টাব্দের নিদর্শন।

মহাস্থানগড়  

মহাস্থানগড় বগুড়া শহর থেকে ৮ কি.মি. উত্তরে অবস্থিত। এই প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনটি প্রাচীর দিয়ে ঘেরা। এখানে একটি প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর আছে। এ নগরের প্রাচীন নাম পুণ্ড্রবর্ধন, যাকে এখন পুণ্ড্রনগরও বলা হয় । প্রাচীরের ভেতরে দুটি ধ্বংসপ্রায় মন্দির আছে, যা বৈরাগী ভিটা নামে পরিচিত। ধ্বংসাবশেষ খনন করে এখানে জৈন, হিন্দু, বৌদ্ধধর্মের পাশাপাশি ইসলাম ধর্মের নিদর্শনও পাওয়া গেছে।

আরও পড়ুন :- মহাস্থানগড় – বাংলা রচনা

ময়নামতি  

ময়নামতির প্রত্নস্থল কুমিল্লা জেলার কোটবাড়িতে অবস্থিত। আনন্দবিহার ময়নামতিতে আবিষ্কৃত সর্ববৃহৎ সৌধমালা । অষ্টম শতাব্দীতে প্রথম দেব বংশের তৃতীয় শাসক কর্তৃক এটি নির্মিত। ১৯৫৫ সালে এখানে শালবন বিহারের ধ্বংসাবশেষ পাওয়া যায় । এ মন্দিরের চতুর্দিকে সন্ন্যাসীদের কক্ষ অবস্থিত এবং বিহারের উত্তর দিকে রয়েছে একটি মনোরম প্রবেশদ্বার। আনন্দবিহারের বিশাল আকার এবং এখানে আবিষ্কৃত অসংখ্য রৌপ্যমুদ্রা, ব্রোঞ্জমূর্তি, পোড়ামাটির ভাস্কর্য ও ফলক রয়েছে।

পুরাকীর্তি সংরক্ষণ  

বাংলাদেশের পুরাকীর্তি সংরক্ষণের জন্য সরকারি ও বেসরকারিভাবে প্রত্নতাত্ত্বিক জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। পাহাড়পুর, ময়নামতি ও মহাস্থানগড়ে এ ধরনের জাদুঘর প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। প্রত্নতত্ত্ব নিদর্শন থেকে নতুন প্রজন্মকে জ্ঞান অর্জনে সহায়তা করে এই জাদুঘর ।

উপসংহার  

বিখ্যাত পুরাকীর্তির পাশাপাশি ছোটো ছোটো প্রত্নস্থল যেগুলো আছে তা থেকেও অনেক প্রাচীন ইতিহাস জানা যায়। মহাস্থানগড় থেকে একটু দূরে ভাসুবিহার অবস্থিত, পাহাড়পুরের কাছে হলুদ বিহার, দিনাজপুরের সীতাকোট এবং নওগাঁর জগদ্দল অবস্থিত। সর্বোপরি বলা যায় বাংলাদেশ পুরাকীর্তিসমৃদ্ধ একটি দেশ। সেখান থেকে আমাদের ইতিহাস জানা এবং জ্ঞান অর্জন করার অপরিসীম সুযোগ রয়েছে।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment