প্রশ্ন : ১। রেশম কি ?
উত্তর : রেশম : আমরা যে সিল্ক বা রেশমি কাপড় ব্যবহার করি তা রেশম মথ নামে এক ধরনের মথের লার্ভার লালাগ্রন্থি বা রেশমগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রসের তৈরি তন্তু বা রেশমি সুতা থেকে তৈরি হয়। রেশম মথের লালাগ্রন্থি থেকে নিঃসৃত রস বাতাসের সংস্পর্শে এসে শুকিয়ে রেশম সুতায় পরিণত হয়। রেশম সুতা অত্যন্ত সূক্ষ্ম, লম্বা, স্থিতিস্থাপক এবং উজ্জ্বল।
রেশম চাষ কি
রেশমি বস্ত্র তৈরির জন্য বিজ্ঞানসম্মতভাবে রেশম মথ পালন করা এবং তার গুটি বা কোকুন থেকে রেশমি সুতা সংগ্রহ করার সার্বিক প্রক্রিয়াকে রেশম চাষ বলে । রেশম চাষকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. তুঁত গাছের চাষ ও ২. রেশম মথ প্রতিপালন ।
প্রশ্ন : ২। বাংলাদেশের রেশম চাষের সংক্ষিপ্ত বিবরণ দাও ।
উত্তর : ভূমিকা : বাংলাদেশের বৃহত্তর রাজশাহী জেলায় সরকারি পর্যায়ে রেশম চাষের গবেষণা কেন্দ্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। এই গবেষণা কেন্দ্র ‘বিপুল’ এবং ‘সোনালী’ নামে দুটো উন্নত জাতের রেশম পোকা উদ্ভাবন করেছে। তুঁতজাত রেশম পোকার শূককীট তুঁতগাছের কঁচিপাতা খেয়ে বাঁচে বলে এই রেশম মথের চাষ করার জন্য প্রচুর তুঁতগাছ প্রয়োজন । ১৯৭৮ সালে বাংলাদেশ রেশম উন্নয়ন বোর্ড স্থাপিত হয়েছে। এই বোর্ড তুঁতপাতার চাষ, গুটি উৎপাদন এবং বস্ত্র বুনন এই তিন ধরনের কাজের উন্নয়নের দায়িত্ব পালন করে।
আরো পড়ুন : মৎস্য চাষ ও মৎস্য সম্পদ কাকে বলে? মৎস্য চাষের গুরুত্ব কি?
বাংলাদেশে রেশম চাষ :
রেশমি বস্ত্র তৈরির জন্য বিজ্ঞানসম্মতভাবে রেশম মথ পালন করা এবং তার গুটি বা কোকুন থেকে রেশমি সুতা সংগ্রহ করার সার্বিক প্রক্রিয়াকে রেশম চাষ বলে । রেশম চাষকে দুটি প্রধান ভাগে ভাগ করা যায়। যথা- ১. তুঁত গাছের চাষ ও ২. রেশম মথ প্রতিপালন ।
তুঁত গাছের চাষ : রেশম মথের লার্ভা তুঁত গাছের পাতা খেয়ে বেঁচে থাকে। তাই রেশম চাষের সাথে তুঁত গাছের চাষ ও প্রয়োজন । তুঁত গাছ চাষ করা যায় দুই উপায়ে । যথা-
(ক) গ্রীষ্মকালে বীজ সংগ্রহ ও বপনের মাধ্যমে নতুন গাছ জন্মানো ।
(খ) সঠিক ফলনশীল তুঁত গাছের ডাল কেটে রোপন করে তুঁত গাছের সংখ্যা বৃদ্ধি করা যায় । গাছের বয়স ৬ মাস হলেই তা থেকে পাতা সংগ্রহ করা যায় ।
রেশম মথ প্রতিপালন :
রেশম মথ প্রতিপালনের তিনটি ধাপ রয়েছে। যথা –
১. প্রথম পর্যায় : স্ত্রী ও পুরুষ মথকে গোল কাগজের বোর্ডের উপর স্থাপন করে একটি ফানেল দ্বারা ঢেকে দেওয়া হয়। স্ত্রী মথ কাগজের বোর্ডের উপর ডিম পাড়ে। এ বোর্ডগুলোকে সে সময় বাঁশের তৈরি গোলাকার ট্রেতে স্থানান্তরিত করা হয় ।
২. দ্বিতীয় পর্যায় : ট্রের ডিম থেকে লার্ভা বা শূককীট বের হয়। এসব লার্ভাকে চিকন করে কাটা তুঁত পাতা খেতে দিতে হয় । মোটামুটি ঠাণ্ডা এবং বায়ু চলাচল আছে এমন একটি পরিচ্ছন্ন ঘরে র্যাকের উপর ট্রেগুলো সাজিয়ে রাখতে হয় ।
আরো পড়ুন : কার্প জাতীয় মাছের চাষ পদ্ধতি বর্ণনা কর
৩. তৃতীয় পর্যায় : তুঁত গাছের পাতা খেয়ে লার্ভারা বড় হয়। তারা মোট চারবার খোলস বদলানোর পর খাওয়া বন্ধ করে । তারপর তাদের রেশম গ্রন্থি থেকে রেশম লালা নিঃসৃত করে ৩ থেকে ৫ দিনে তাদের দেহকে একটি গুটিতে আবদ্ধ করে ফেলে । নিঃসৃত লালার এ গুটি থেকেই রেশম সুতা সংগ্রহ করা হয় ।
রেশম সংগ্রহ পদ্ধতি :
গুটিগুলো ফুটন্ত পানিতে ডুবানো হয়। ফলে মূককীট মারা যায়। যে সব আঠালো পদার্থ তন্তুগুলোকে একত্রে সন্নিবেশিত করে গুটি তৈরি করে সেগুলোকে ছাড়ানোর জন্য গুটিগুলোকে গরম পানিতে বেশ কিছু সময় ভিজিয়ে রাখতে হয় । পরে সুতা ছাড়ানোর ব্যবস্থা করতে হয়।
প্রশ্ন : ৩। বাংলাদেশের কোথায় কোথায় রেশম চাষ হয়?
উত্তর : বাংলাদেশের ময়মনসিংহ, টাঙ্গাইল, রাজশাহী, রংপুর, দিনাজপুর এবং বগুড়া জেলায় রেশম পোকার চাষ করা হয়। তবে আবহাওয়া ও উর্বর মাটির অনুকূলতার জন্য রাজশাহী জেলাই রেশম পোকা উৎপাদন ও তুঁতগাছের চাষাবাদের জন্য উৎকৃষ্ট স্থান ।
প্রশ্ন : ৪। রেশম গুটি কিভাবে তৈরি হয়?
উত্তর : পুণর্গঠিত লার্ভার ৪-৮ম দেহখণ্ড পর্যন্ত বিস্তৃত রেশম গ্রন্থি হতে নিঃসৃত রেশম স্পিনারেট দ্বারা সরু ছিদ্রপথে বাইরে আসামাত্র শুকিয়ে সরু সুতায় পরিণত হয়। এ সুতার সাহায্যে নিজদেহ বেষ্টন করে যে আবরণী গঠন করে তাকেই রেশম গুটি বলে ।
আরো পড়ুন : কৃত্রিমভাবে মৌমাছির চাষ,মধু সংগ্রহ।মৌমাছির অর্থনৈতিক গুরুত্ব