সংজ্ঞা : যে পুকুরে মাছ চাষের জন্য সব ধরনের অনুকূল পরিবেশ বিদ্যমান থাকে তাকে আদর্শ পুকুর বলে ।
একটি আদর্শ পুকুরের বৈশিষ্ট্য সমূহ :
(১) আদর্শ পুকুরের চারপাশ খোলামেলা এবং পরিস্কার-পরিচ্ছন্ন ও আলো-বাতাসযুক্ত হবে।
(২) আদর্শ পুকুরে প্রচুর পরিমাণে প্ল্যাঙ্কটন জাতীয় খাদ্য থাকতে হবে ।
(৩) পুকুরের পাড় দিয়ে যাতে বর্ষার পানি ঢুকতে না পারে এজন্য পাড় উঁচু রাখতে হবে
(৪) পুকুরে পর্যাপ্ত পানি থাকতে হবে ও প্রয়োজনমত পানি বদলানোর ব্যবস্থা থাকতে হবে।
(৫) পুকুরের আগাছা এবং রাক্ষুসে মাছ সরিয়ে ফেলতে হবে।
(৬) পানি ঠাণ্ডা রাখার জন্য গ্রীষ্মে জলাশয়ে কলমী লতা, হেলেঞ্চা প্রভৃতি জলজ উদ্ভিদ থাকা দরকার।
(৭) আদর্শ পুকুরে কাপড় কাচা ও সাবান মেখে গোসল করা যাবে না।
একটা আদর্শ পুকুরের প্রস্তুতি বর্ণনা কর :
কয়েকটি ধাপে আদর্শ পুকুর তৈরি করা হয় । যথা-
(১) প্রয়োজনমত নতুন পুকুর কেটে বা পুরনো পুকুর সংস্কার করে আদর্শ পুকুর তৈরি করতে হবে।
(২) শ্রমিক দ্বারা অথবা বিজ্ঞানসম্মত ভাবে রাসায়নিক দ্রব্য প্রয়োগ করে পুকুরকে সম্পূর্ণ আগাছামুক্ত করতে হবে।
(৩) পুকুর থেকে রাক্ষুসে মাছ বা অন্যান্য ক্ষতিকর জলজ প্রাণী অপসারণ করতে হবে ।
(৪) পুকুরে চুন দিয়ে জীবাণু ধ্বংস করতে হবে এবং জৈব সার দিয়ে পুকুরকে উর্বর করতে হবে। ফলে প্রচুর প্ল্যাঙ্কটন উৎপাদন হবে।
(৫) পুকুর তৈরি হয়ে গেলে কাঙ্খিত মাছের পোনা ছাড়তে হবে। কাতল মাছ পানির উপরের স্তরের খাদ্য খায়। অপরপক্ষে রুই মাছ মধ্যস্তরের এবং মৃগেল ও কালিবাউশ নিচের স্তরের খাদ্য খায়। এ জন্য একই পুকুরে একসাথে এই ৪টি প্রজাতির মাছের চাষ অধিকতর লাভজনক এবং এতে কোন স্তরের খাদ্যেরই অপচয় হয় না।
আরো পড়ুন : মৎস্য চাষ ও মৎস্য সম্পদ কাকে বলে? মৎস্য চাষের গুরুত্ব কি?
গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন সমূহ
প্রশ্ন – ১ : একটি আদর্শ পুকুরের গভীরতা কত মিটার ?
উত্তর: আদর্শ পুকুরের গভীরতা হলো ০.৭৫-২ মিটার পর্যন্ত ।
প্রশ্ন – ২ : পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা থাকা উচিত নয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
উত্তর : পুকুরের তলায় অতিরিক্ত কাদা থাকলে গভীরতা কমে যায়। ফলে গ্রীষ্মকালে পুকুরের পানি গরম হয়ে যায়। এতে করে মাছের উৎপাদন ব্যাহত হয়। তাছাড়া অতিরিক্ত কাদায় বিষাক্ত গ্যাস ও নানা ধরনের ক্ষতিকর ব্যাক্টেরিয়া থাকে যা মাছের উৎপাদনে বাধার সৃষ্টি করে । এর জন্য পুকুরের তলায় ২০-২৫ সে.মি. এর বেশি কাদা রাখা যাবে না ।
প্রশ্ন – ৩ : পুকুরের পাড় ও তলদেশ মেরামত করা প্রয়োজন কেন ?
উত্তর: পাড় ও তলদেশ মেরামতের প্রয়োজনীয়তা নিচে দেওয়া হলো-
১. অতিরিক্ত বৃষ্টি বা বন্যায় মাছ ভেসে যেতে কিংবা রাক্ষুসে মাছ ঢুকতে বাধা দেয় ।
2. পুকুরের পাড়ের গাছ কেটে বা ছেঁটে দিলে সূর্যালোক পড়তে সহযোগিতা করে।
৩. পুকুরের তলদেশের কাদা শুকিয়ে বিষাক্ত গ্যাস, ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ রোধ করা যায় ।
৪. পুকুরের তলদেশ ঢালু থাকলে মাছ ধরতে ও জাল টানতে সুবিধা হয়।
প্রশ্ন – ৪ : পুকুরের বিভিন্ন স্তরগুলোর নাম লিখ।
উত্তর : পুকুরের বিভিন্ন স্তরগুলোর নাম নিম্নরূপ-
১. উপরের স্তর বা উপরিভাগ,
২. মধ্যস্তর বা মধ্যভাগ ও
৩. নিচের স্তর বা তলদেশ ।
প্রশ্ন – ৫ : পুকুরে মাছ মারার বিষ প্রয়োগ করা হয় কেন ?
উত্তর : সাধারণত রাক্ষুসে মাছ নিধনে পুকুরে বিষ প্রয়োগ করা হয়ে থাকে। এক্ষেত্রে রোটেনন বা মহুয়ার খৈল ব্যবহার করা হয়। এতে মৃত মাছ খাওয়া যায় এবং পরবর্তীতে জৈব সার হিসেবেও কাজ করে । এছাড়া রাক্ষুসে মাছ মারার জন্য রাসায়নিক বিষ ফসটক্সিন টেবলেট ব্যবহার করা হয় তবে এতে মৃত মাছ খাওয়া যায় না। সাধারণত পুকুরে নতুন মাছ ছাড়ার আগে পুকুরে বিষ দিয়ে ক্ষতিকর প্রাণীগুলোকে মারা হয়ে থাকে।
প্রশ্ন – ৬ : পুকুরে সার প্রয়োগ প্রয়োজন কেন?
উত্তর : পুকুরে সার প্রয়োগের ফলে পানিতে মাছের প্রাকৃতিক খাদ্য অর্থাৎ ফাইটোপ্ল্যাঙ্কটন ও জুওপ্ল্যাঙ্কটন তৈরি হয়। যা মাছের খাদ্যের অভাব দূর করে এবং মাছের উৎপাদন বৃদ্ধি করে। সার প্রয়োগে বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান পানিতে মেশে। যেমন— ফসফরাস, পটাসিয়াম ইত্যাদি। সুতরাং মাছ চাষের অনুকূল পরিবেশ তৈরিতে সার প্রয়োগের প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য ।