এক বা একাধিক বর্ণের সমন্বয়ে গঠিত হয় অর্থ পূর্ণ একেকটি শব্দ। শব্দ হলো ভাষার মৌলিক সম্পদ। বাংলা ভাষার শব্দগুলো কয়েকটি শ্রেণির অধীনে গঠিত হয়ে থাকে।
শব্দের সংজ্ঞা
মানুষের মুখনিঃসৃত এক বা একাধিক বর্ণের সমন্বয়ে গঠিত অর্থপূর্ণ ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিকে শব্দ বলে। অর্থবোধক ধ্বনি বা ধ্বনিসমষ্টিই হলো শব্দ। যেমন- রফিক, শফিক, বাড়ি, গাড়ি, খেলা ইত্যাদি।
গঠন অনুসারে শব্দ কত প্রকার ও কী কী ?
গঠন অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহ দুই প্রকার। যথা-
১। মৌলিক শব্দ ও
২। সাধিত শব্দ।
মৌলিক শব্দ : যেসব শব্দ একেবারেই স্বকীয়, যাকে বিশ্লেষণ করা যায় না অর্থাৎ উৎপত্তিগতভাবে মৌলিক এবং যার সাথে কোনো প্রত্যয়, বিভক্তি বা উপসর্গ যুক্ত থাকে না, তাকে মৌলিক শব্দ বলে। যেমন- হাত, পা, আলো, নদী ইত্যাদি।
২। সাধিত শব্দ : যেসব শব্দকে বিশ্লেষণ করা যায় অর্থাৎ উৎপত্তিগতভাবে যা মৌলিক নয়; বরং মৌলিক শব্দ বা ধাতুর সাথে উপসর্গ, প্রত্যয় অথবা সমাসনিম্পন্ন হয়ে যেসব শব্দ গঠিত হয়, তাদের সাধিত শব্দ বলে। যেমন- স্বাগত (সু + আগত), বিদ্যালয় (বিদ্যা + আলয়) ইত্যাদি সাধিত শব্দ।
শব্দ সাধারণত তিন ভাবে সাধিত হয়ে থাকে। যথা:
ক. প্রত্যয়যোগে সাধিত শব্দ। যেমন- বাঘ + আ = বাঘা; অতি + অন্ত = অত্যন্ত ইত্যাদি।
খ. উপসর্গযোগে নিষ্পন্ন শব্দ। যেমন- পরা + জয় = পরাজয়; অধি + কার = অধিকার ইত্যাদি।
গ. সমাসসাধিত শব্দ। যেমন- মহৎ যে জন = মহাজন; সমানউদর যার = সহোদর ইত্যাদি।
আরো পড়ুন : উৎপত্তি বা উৎস অনুসারে শব্দ কত প্রকার ও কী কী ? উদাহরণ সহ
অর্থ অনুসারে শব্দ কত প্রকার ও কী কী ?
অর্থ অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহ তিন প্রকার। যথা-
১. যৌগিক শব্দ,
২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ ও
৩. যোগরূঢ় শব্দ ।
১. যৌগিক শব্দ : যেসব শব্দ তাদের গঠন প্রকৃতির অর্থ প্রকাশ করে, সেগুলোকে যৌগিক শব্দ বলে। যেমন- শতাব্দী। ব্যাকরণের নিয়মানুসারে এ শব্দটিকে ভাঙ্গলে পাই, শত অব্দের সমাহার = শতাব্দী, কিংবা শত + অব্দী = শতাব্দী। অর্থাৎ যেভাবেই শব্দটিকে বিশ্লেষণ করি না কেন, এর গঠনগত এবং উৎপত্তিগত অর্থ একই থাকে। এরূপ শব্দই যৌগিক শব্দ ।
২. রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ : বাংলা ভাষার যেসব শব্দ তাদের গঠন প্রকৃতির অর্থ প্রকাশ না করে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে, সেগুলোকে রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ বলে। যেমন-হাতি। এই হাতি শব্দটির উৎপত্তি হাত + ই প্রত্যয় থেকে। কিন্তু এখানে হাতি বলতে এক প্রকার জন্তুকে বুঝিয়েছে। এরূপ যেসব শব্দ গঠন প্রকৃতির অর্থ প্রকাশ না করে ভিন্ন অর্থ প্রকাশ করে, তাই রূঢ় বা রূঢ়ি শব্দ ।
৩. যোগরূঢ় শব্দ : যেসব শব্দ সম্পূর্ণ উৎপত্তিগত অর্থ প্রকাশ করে না কিংবা সম্পূর্ণ ভিন্ন অর্থও প্রকাশ করে না, তবে উৎপত্তি জাতীয় বিশেষ একটি অর্থ প্রকাশ করে, সেসব শব্দকে যোগরূঢ় শব্দ বলে। যেমন- ‘কাঁচকলা’ শব্দটি কাঁচা কলাকে বোঝাতে গঠিত হয়েছে। কিন্তু প্রকৃত পক্ষে সব কাঁচা কলাকে ‘কাঁচকলা’ বোঝায় না, একটি বিশেষ জাতের কলাকে ‘কাঁচকলা’ বোঝায় ৷