নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে পত্রিকায় প্রকাশের নিমিত্ত একটি প্রতিবেদন রচনা কর।
অথবা,নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির কারণ ও এর প্রতিকার সম্বন্ধে একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন রচনা কর।
অথবা, দ্রব্যমূল্যবৃদ্ধির ওপর একটি প্রতিবেদন রচনা কর।
৫ই জুন, ২০২…
বরাবর
সম্পাদক,
দৈনিক ইনকিলাব,
২/১, আর কে মিশন ব্রোড, ঢাকা।
বিষয়: নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে পত্রিকায় প্রকাশের নিমিত্তে প্রতিবেদন।
জনাব,
আসসালামু আলাইকুম। অনুগ্রহপূর্বক নিম্নোক্ত প্রতিবেদনটি আপনার পত্রিকায় প্রকাশ করে বাধিত করবেন।
বিনীত
নকিব রাইয়্যান
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি: জনজীবন বিপর্যস্ত
নিজষ প্রতিবেদন, ঢাকা: সম্প্রতি যে বিষয়টি আমাদের ভাবিত করছে তা হচ্ছে দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি। এ অস্বাভাবিক ও আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির ফলে জনসাধারণের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পেয়েছে। ফলে দৈনন্দিন জীবনে নেমে এসেছে অপ্রত্যাশিত দুর্ভোগ। এর নেপথ্যের কারণ অনুসন্ধান করবে অর্থনীতিবিদগণ। বিশেষজ্ঞের মতে, এ আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির কারণ একাধিক। প্রথমত, মুনাফালোভী ব্যবসায়ীরা প্রায়ই মুনাফা অর্জনের লোভে দ্রব্যের দাম বাড়িয়ে দেয়। দ্বিতীয়ত, বহির্বিশ্বে খাদাদ্রব্যের সংকট ও মূল্যের ঊর্ধ্বগতির সুযোগে মজুতদাররা খাদ্যদ্রব্য মজুত করে কৃত্রিম সংকটের সৃষ্টি করে।
তৃতীয়ত, সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ্য ভাতা বৃদ্ধি এবং মূল্যবৃদ্ধির সম্ভাবনায় অতিরিক্ত খাদাদ্রব্য ক্রয় করা। দেশের একটি ক্ষুদ্রতম অংশ এরূপ ভাতা পেলেও অসুবিধার দায়ভার বহন করে সমাজের বৃহত্তম অংশ। এমনকি চাকরিজীবীদের মধ্যেও কেউ কেউ এই পরিস্থিতির শিকার হয়েছে। লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে, সরকার কর্তৃক মহার্ঘ্য ভাতা ঘোষণার পরক্ষণেই অজ্ঞাত কারণে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেতে থাকে। সরকারি কর্মচারীগণ যে হারে মহার্ঘ্য ভাতা পেয়েছেন, দ্রব্যের মূল্য বৃদ্ধি পেয়েছে তার চেয়ে অনেক বেশি। ফলে সরকারি কর্মচারীরাও সমস্যামুক্ত হতে পারেননি। তাই অনতিবিলম্বে এ অনাকাঙ্ক্ষিত মূল্য বৃদ্ধি প্রতিরোধকল্পেযথাযোগ্য ব্যবস্থা গ্রহণ একান্ত আবশ্যক।
মূল্য বৃদ্ধি এ দেশে এটাই প্রথম তা নয়। এ দেশে এটি একটি অনিবার্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। পৃথিবীর অন্যান্য দেশে মূল্য বৃদ্ধিজনিত এমন নাজুক পরিস্থিতি সৃষ্টির ঘটনা বিরল। অন্য দেশে এমনটি ঘটলে বিক্ষোভ দানা বাঁধে, সরকারকে জবাবদিহিতা করতে হয়। কিন্তু এ দেশের সরলপ্রাণ মানুষ এরূপ কোনো ঘটনা নিয়ে বেশি মাতামাতি পছন্দ করে না। দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি তারা এ দেশের জাতীয় সমস্যা বলে ধরে নিয়েছে এবং তাদের ধারণা, এ বিষয়ে সরকারের কোনো দায় নেই।
এ পরিস্থিতিতে সাধারণ মানুষের দুর্ভোগ হলেও সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ের দূর্নীতিবাজ কর্মচারী ও মুনাফাখোর ব্যবসায়ীদের পোয়াবারো। এর ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে আমাদের টাকার অবমূল্যায়ন হচ্ছে বারবার। আমাদের উৎপাদিত পণ্য বিশ্ববাজারে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারছে না। এসব ঘটনায় কেউ কেউ রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ফায়দা লুটে নিচ্ছে। দেশের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীকে এমন অমানবিক সমস্যায় ফেলে যারা নিজেদের সুখ-সম্পদ আহরণের চেষ্টায় মত্ত, তারা দেশের শত্রু, জনগণের শত্রু। এসব অসৎ ও দুর্নীতিবাজরা আমাদের আশেপাশেই রয়েছে, তাদের উৎখাত এখন সময়ের দাবি। এ বিষয়ে সরকারি, বেসরকারি অভিজ্ঞ মহলের দৃষ্টিদান অপরিহার্য।
নিবেদক
নকিব রাইয়্যান
শৈলকুপা, ঝিনাইদহ
আরো দেখুন : বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগিতা সম্পর্কে প্রতিবেদন-স্কুল ও মাদ্রাসা
বর্তমানে নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বৃদ্ধি সম্পর্কে দৈনিক পত্রিকায় একটি প্রতিবেদন লেখ।
অথবা, দ্রব্যমূল্যের উর্ধ্বগতি সম্পর্কে পত্রিকায় প্রকাশের জন্য একটি প্রতিবেদন রচনা কর।
দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি : জনজীবন বিপর্যস্ত
শাহরিয়ার জাহিদ- ঢাকা থেকে, ৩ জানুয়ারি, ২০২…। ইদানীং নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের অস্বাভাবিক মূল্য বৃদ্ধিতে জনজীবনে নানা দুর্ভোগ নেমে এসেছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যসামগ্রী এখন জনসাধারণের ক্রয় ক্ষমতার বাইরে। অস্বাভাবিক ও আকস্মিক মূল্য বৃদ্ধির অনেক কারণ যা অর্থশাস্ত্র নির্ণয় করতে সক্ষম। তবে দুটি কারণ সহজেই নির্ণেয়। প্রথমত, মজুতদারদের মুনাফালোভী মনোভাব এবং দ্বিতীয়ত, সরকারি কর্মচারীদের মহার্ঘ ভাতা বৃদ্ধি। প্রথমটি এ দেশে চিরন্তন, দ্বিতীয়টি সাময়িক। দেশের মোট জনসংখ্যার একটি ক্ষুদ্রাংশ চাকরি সূত্রে মহার্ঘ ভাতার সুবিধা পেলেও অসুবিধার দায় বহন করে বৃহত্তম অংশ।
এমনকি চাকরিজীবীদের মধ্যে বেসরকারি অংশটি এই আর্থিক সুযোগ থেকে বঞ্চিত। অথচ লক্ষণীয় ব্যাপার এই যে, সরকার কর্তৃক মহার্ঘ ভাতা ঘোষণার পর মুহূর্ত থেকে অজ্ঞাত কারণে দ্রব্যমূল্যের বৃদ্ধি ঘটতে থাকে। সরকারি কর্মচারিগণ যে হারে মহার্ঘ ভাতা পান, মূল্য বৃদ্ধির হার তার চেয়ে অনেক বেশি হওয়ায় প্রকৃতপক্ষে তারাও সমস্যামুক্ত হতে পারেননি। তাই অবিলম্বে মূল্য বৃদ্ধিকে জাতীয় সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে এর প্রতিরোধকল্পে দৃঢ় ও যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ একান্ত আবশ্যক।
দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি এ দেশে নতুন কিছু নয়। এ দেশে এটি একটি অনিবার্য সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশ্বের অন্যান্য দেশে এমনটি ঘটলে বিক্ষোভ দানা বাঁধে, সরকারকে জনগণের কাছে জবাবদিহি করতে হয়। কিন্তু বাংলাদেশের জনগণ যেন বিষয়টিকে স্বতঃসিদ্ধ হিসেবে ধরে নিয়েছে এবং সরকারেরও কোনো দায় নেই। মাঝখান থেকে মুনাফাখোর ব্যবসায়ী ও দুর্নীতিবাজ কর্মচারীদের পোয়াবারো। এছাড়া আন্তর্জাতিক বাজারে ক্রমশ আমাদের মুদ্রার মূল্যমান হ্রাস পাচ্ছে। বিশ্ববাজারে আমাদের উৎপাদিত পণ্য প্রতিযোগিতায় মার খাচ্ছে।
এসব সমস্যার ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করছে নীতিজ্ঞানহীন ব্যবসায়ী সম্প্রদায়। নিত্য প্রয়োজনীয় সামগ্রীর কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি করছে, আবার কখনো কখনো চোরাকারবারের মাধ্যমে সে কৃত্রিম সংকটের শূন্যতা পূর্ণ করছে। এ দুটি পথেই দেশি মুদ্রা ও পণ্য মার খাচ্ছে, সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতা হ্রাস পাচ্ছে। সরকারি কর্মচারীদের বেতন বাড়িয়ে সরকার দায়িত্ব শেষ করতে চাইছে, অথচ এ চিহ্নিত মহলটিকে আদৌ স্পর্শ করতে পারছে না। অপ্রিয় হলেও সত্য যে, সরকারের একটি মহলের আশীর্বাদপুষ্ট হয়েই ব্যবসায় ক্ষেত্রে দুর্নীতির আখড়া গড়ে ওঠে।
মূল্যবৃদ্ধির চাপে জনগণের নাভিশ্বাস উঠেছে, দেয়ালে পিঠ ঠেকেছে তাদের। ঘনীভূত হচ্ছে হতাশা ও ক্ষোভ। জীবনযাপনে সততার অভাব ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে। শায়েস্তা খানের আমলে ফিরে যাওয়ার বাসনা জনগণের নেই; কিন্তু যুক্তিযুক্ত স্থিতিশীল একটি বাজার সৃষ্টি হোক- এ প্রত্যাশা সকলের। গড়পড়তা আয়ের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ একটি বাজার ব্যবস্থা এ দেশে বিরাজ করুক, সরকার এ ব্যাপারে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করুন— এটিই সবার কামনা।