অলীগণ মহান আল্লাহর প্রিয়বান্দা। তাঁরা বিশেষ বৈশিষ্ট্যে বৈশিষ্ট্যমণ্ডিত। তাঁরা সর্বদা আল্লাহর ইবাদতে মশগুল থাকেন এবং আল্লাহর ভয়ে অশ্রু বিসর্জন করেন। তাঁরা এক মুহূর্তও আল্লাহর যিকির হতে অমনোযোগী থাকেন না। তাঁদের প্রধান বৈশিষ্ট্য হলো, তাঁরা জীবনের সর্বক্ষেত্রে আল্লাহকে ভয় করেন।
আল্লাহওয়ালা কাদের কে বলা হয় ?
আল্লাহওয়ালা বলা হয় ওই সকল ব্যক্তিকে, যারা আল্লাহ তায়ালা ও তার গুনাহবলির পরিচয় লাভ করেছে, সাধ্যমতো আনুগত্য প্রদর্শন করে, পাপের কাজ হতে বিরত থাকে এবং প্রকৃতিগত বিষয়াদি ও প্রবৃত্তির অনুসরণ থেকে বিরত থাকে। ইসলামের দৃষ্টিতে তারাই অলী নামে খ্যাত ।
মোটকথা, আল্লাহর নৈকট্য লাভকারী ও নেতৃত্বের গুণাবলিসম্পন্ন ব্যক্তিই ইসলামের দৃষ্টিতে অলী নামে খ্যাত।
আরও পড়ুন : ওলির: অর্থ, সংজ্ঞা, মর্যাদা, মূল কাজ, বৈশিষ্ট্য, হাকীকত
বুযুর্গ আল্লাহওয়ালাদের সোহবতে থাকার গুরুত্ব বা উপকারিতা :
১. আদর্শবান মানুষে পরিণত হওয়া যায় : অলীদের সোহবত অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় । কোনো বান্দা হক্কানী অলীর সোহবত তথা সাহচর্যে আসলে তার চরিত্রের মধ্যে ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয় এবং সে একজন উত্তম চরিত্র ও আদর্শবান মানুষে পরিণত হয় ।
২. শরীয়ত সম্পর্কে জ্ঞান লাভ হয় : শরীয়ত, তরীকত, হাকীকত ও মারেফতের সকল স্তর অতিক্রম করে আমল, আখলাক, নম্রতা, ভদ্রতা, দানশীলতা, ইবাদত বন্দেগিতে যিনি পরীক্ষিত, যাদেরকে দেখলে আল্লাহর কথা স্মরণ হয় এবং আকিদা ও আমলে যারা সত্যের প্রতিবিম্ব, তাদের সোহবত তথা সাহচর্যের মাধ্যমে ইসলাম ও শরীয়ত সম্পর্কে সঠিক জ্ঞান লাভ করা যায় ।
আরও পড়ুন : মুজিযা ও কারামতের সংজ্ঞা, অর্থ ও পার্থক্য
৩. আল্লাহর নির্দেশ পালন হয় : বুযুর্গদের সোহবত তথা সাহচর্যে আসলে মহান আল্লাহর নির্দেশ পালন হয়। কেননা বুযুর্গদের সাথি হওয়ার জন্য আল্লাহ তায়ালা নির্দেশ দিয়েছেন। যেমন আল্লাহ তায়ালার বাণী-
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللهَ وَكُونُوا مَعَ الصَّادِقِينَ
অর্থাৎ, ওহে যারা ঈমান এনেছ! আল্লাহকে ভয় কর এবং সত্যবাদীদের সাথি হয়ে যাও। (সূরা তাওবা : আয়াত- ১৯)
৪. ভালো আমলের প্রতি আগ্রহ সৃষ্টি হয় : বুযুর্গ বা প্রকৃত অলীগণের সাহচর্যে থাকলে তার পরিচর্যায় খারাপ আমল দূর হয়ে ভালো আমল করার অভ্যাস গড়ে উঠে । যেমন রাসূল (স) বলেন-
مَثَلُ الجَلِيسِ الصَّالِحِ كَمَثَلِ صَاحِبِ المِسْكِ، إِنْ لَمْ يُصِبْكَ مِنْهُ شَيْءٌ أَصَابَكَ مِنْ رِيحِهِ۔
অর্থাৎ, সৎসঙ্গীর উদাহরণ আতরওয়ালার মতো। তার সাথে থাকলে আতর পাওয়া না গেলেও আতরের সুগন্ধি পাওয়া যাবে (আবু দাউদ)।
৫. তাদের ভালোগুণ অর্জিত হয় : মাওলানা রূমী (র) তাই তো বলেছেন- “সৎ লোকের সাহচর্য তোমাকে “সৎ মানুষে পরিণত করবে, অসৎ লোকের সাহচর্য তোমাকে অসৎ বানাবে।” যেমন কবি বলেছেন- সৎসঙ্গে স্বর্গবাস, অসৎ সঙ্গে সর্বনাশ।” সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনার মাধ্যমে প্রতীয়মান হয় যে, মুমিন জীবনে অলীর সোহবত তথা সাহচর্য অত্যধিক গুরুত্বপূর্ণ ও কার্যকরী বিষয়।
পরিশেষে : সৎমানুষের সাহচর্যে থাকলে সৎ এবং আল্লাহর প্রিয়বন্ধু হওয়া যায়। যেহেতু খাঁটি অলীগণ জগতের সৎমানুষ, তাই তাঁদের সাহচর্য লাভে জীবন ধন্য করা প্রত্যেকের কর্তব্য।