রচনা: বাংলাদেশের কৃষক [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]

উপস্থাপনা

বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ কৃষি প্রধান দেশ হিসেবে পরিচিত। সুজলা-সুফলা, শস্য-শ্যামলা বাংলাদেশ কৃষির উপর নির্ভরশীল । কারণ, এদেশের জনসংখ্যার শতকরা ৮০ জনই কৃষক। তাই 'কৃষক' এদেশের আপামর জনসাধারণের কাছে একটি অতি পরিচিত নাম ।

জাতীয় জীবনে কৃষকের গুরুত্ব : 

বাংলাদেশের জাতীয় জীবনে কৃষকের গুরুত্ব অপরিসীম। কৃষক অহর্নিশি কঠোর পরিশ্রম করে যে সোনার ফসল উৎপাদন করে; তা গলাধঃকরণ করে এদেশের প্রায় ১৮ কোটি মানুষ ক্ষুধার কঠিন জ্বালা থেকে মুক্তি লাভ করে । তাই কৃষক সকলের নমস্য।

পূর্বকালে কৃষকের অবস্থা : 

আগের দিনে কৃষকের অবস্থা খুব ভাল ছিল। তখন দেশের জনসংখ্যা কম থাকায় কৃষকের জমির পরিমাণ ছিল বেশি। তখন কৃষকের গোলাভরা ধান, গোয়াল ভরা গরু এবং পুকুর ভরা মাছ ছিল। বিশ্ববিখ্যাত পর্যটক ইবনে বতুতার বিবরণ থেকে জানা যায় যে, প্রাচীনকালে বাংলার কৃষকের ঘরে কোন অভাব ছিল না ।

আরও পড়ুন :-  বাংলাদেশের পাখি : রচনা [ ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ]

কৃষকের বর্তমান অবস্থা : 

বর্তমানে বাংলাদেশের কৃষকের কথা মনে পড়লে আমাদের সামনে ভেসে উঠে এক রোগজীর্ণ, অস্থি- কঙ্কালসার দৈন্যের চরম প্রতিমূর্তি। পরনে বস্ত্র নেই, মুখে চরম হতাশা ও নৈরাজ্যের ছাপ, দারিদ্র্য, ব্যাধি, কুসংস্কার, অশিক্ষা তাকে ঘিরে রাজত্ব করছে । এটাই হচ্ছে এ দেশের অর্থনীতির নিয়ন্তা কৃষকের বর্তমান অবস্থা ।

কৃষকের দূরবস্থার কারণ : 

বাংলাদেশের কৃষকের এ করুণ অবস্থার পেছনে ঐতিহাসিক কারণ রয়েছে। আমাদের কৃষিতে এখনও বিজ্ঞানের ছোঁয়া ভালোভাবে  লাগেনি। তারা মান্ধাতার আমলের পদ্ধতিতে জমি চাষাবাদ করে থাকে । ফলে উৎপাদন হয় অত্যন্ত কম । 

নিম্নে কৃষকের দূরবস্থার কারণগুলো তুলে ধরা হল-

ক. অবৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে কৃষিকাজ : আমাদের কৃষি এখনও হাল-গরুর উপর নির্ভরশীল। এখানে উন্নত পদ্ধতিতে চাষাবাদ হয় না। ফলে কৃষক আশানুরূপ ফসল পায় না ।

খ. উৎপাদিত ফসলের ন্যায় মূল্য পায় না : ফসল উৎপাদনের পর কৃষিঋণ ও মহাজনের দেনা পরিশোধ করতে কম দামে কৃষককে ফসল বিক্রি করে দিতে হয়। ফলে কৃষক প্রকৃত মূল্য থেকে বঞ্চিত হয়।

গ. নিজস্ব জমির অভাব : বাংলাদেশের কৃষকদের এক বিরাট অংশ ভূমিহীন। তারা অন্যের জমি চাষ করে। আর উৎপাদিত ফসলের বেশির ভাগই মালিকের নিকট চলে যায় । ফলে কৃষক দরিদ্রই থেকে যায় ।

ঘ. সেচ ব্যবস্থার অভাব : বাংলাদেশে শুষ্ক মৌসুমে বৃষ্টিপাত হয় না। এ সময় সেচের জন্য গভীর নলকূপ বসানোর সামর্থ্যও কৃষকের থাকে না । যার জন্য কৃষকরা এ সময় ফসল পায় না ।

ঙ. প্রাকৃতিক দুর্যোগ : বন্যা, খরা, জলোচ্ছ্বাস ইত্যাদি প্রাকৃতিক দুর্যোগ প্রতি বছর হাজার হাজার একর জমির ফসল ভাসিয়ে নিয়ে যায় বা নষ্ট করে দেয়। ফলে কৃষকের দৈন্যতা আরও বাড়ে।

চ. সার ও কীটনাশক ঔষধের অভাব : বাংলাদেশের কৃষকেরা সময়মত সার ও কীটনাশক ঔষধ পায় না। আর পেলেও তা চড়ামূল্যে কিনতে হয়। এতে জমির ফলন হয় নিম্নমানের।

আরও পড়ুন :- বাংলাদেশের জাতীয় ফুল রচনা : শাপলা - ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০

প্রতিকারের উপায় : 

কৃষকের অবস্থার উন্নতির জন্য আমাদের বাস্তবভিত্তিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে । নিম্নবর্ণিত ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করে কৃষকের ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব :

১. কৃষকের নিজস্ব জমির ব্যবস্থা করতে হবে।

২. প্রয়োজনের সময় কমদামে কৃষকদের সার ও কীটনাশক ঔষধ সরবরাহ করতে হবে 

৩. কৃষকের উৎপাদিত ফসলের সঠিক মূল্য দিতে হবে।

৪. প্রয়োজনের সময় কৃষকদের কৃষিঋণ দিতে হবে ।

৫. পচনশীল ফসল সংরক্ষণের জন্য কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে ।

৬. বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে চাষের সুযোগ করে দিতে হবে।

৭. কৃষকেরা যাতে কম মূল্যে সেচ যন্ত্র ও অন্যান্য কৃষি যন্ত্রপাতি পায় তার ব্যবস্থা করতে হবে । 

৮. আধুনিক চাষ পদ্ধতি সম্বন্ধে কৃষকদের প্রশিক্ষণ দিতে হবে ।

৯. কৃষিখাতে অধিকহারে ভর্তুকি দিতে হবে ইত্যাদি ।

উপসংহার : 

দেশে রাজনৈতিক দলসমূহের উত্থান-পতন হল, কত তৃতীয় শ্রেণীর রাজনীতিকের গুলশানে বাড়ি হল, কিন্তু হতভাগ্য কৃষকের অবস্থার কোন পরিবর্তন হল না । মনে রাখা দরকার যে কৃষকের যদি উন্নতি না হয় তবে কোনদিন এ জাতির উন্নতি হবে না ।

Post a Comment

0 Comments