বর্ষাকাল অথবা, বাংলার বর্ষা রচনা [ ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ]

“নীল নব ঘনে আষাঢ় গগনে,

তিল ঠাঁই আর নাহিরে,
ওগো আজ তোরা যাসনে ঘরের বাহিরে।"

উপস্থাপনা : 

বাংলাদেশ ঋতু বৈচিত্র্যের এক বিচিত্র লীলাভূমি। ষড়ঋতুর নীলাচক্রে বাংলাদেশের অবারিত বুকে গ্রীষ্মের পরই কাজল কালো মেঘের ভেলায় চড়ে আবির্ভূত হয় নব যৌবনা বর্ষা । গ্রীষ্মের দুরন্ত দাবদাহের মাঝে স্নিগ্ধ সমীরণ আর সজল নয়ন নিয়ে বর্ষা ধীরে ধীরে আত্মপ্রকাশ করে গ্রামবাংলায় । বর্ষার অনুপম সৌন্দর্য ও পূর্ণ সম্ভার লক্ষ্য করে কবিচিত্র বর্ষাকে ‘ঋতুকুল রাণী' বলে অভিহিত করেছেন।

বর্ষার আগমন : 

ঋতুচক্রের আবর্তনে গ্রীষ্মের পরেই আসে বর্ষা। বর্ষা আসে বিধাতার আশীর্বাদরূপে শীতলতার মায়াবী পরশ ছড়িয়ে বুকে। কবির ভাষায়-

“গ্রীষ্ম নিঃশেষ! জাগছে আশ্বাস ! 
লাগচে গায়-কার গৈরী নিঃশ্বাস।”

বর্ষা আসে “দিগ্বিজয়ী যোদ্ধার বেশে, মেঘের পৃষ্ঠে আরোহণ করিয়া করুণ অশ্রু বর্ষণ করিয়া বিদ্যুতের নিশান উড়াইয়া।” বর্ষাগমে প্রকৃতি সাজে এক অপরূপ সাজে। পল্লীতে পল্লীতে পড়ে যায় আনন্দের মহাউল্লাস ।

বর্ষার বৈশিষ্ট্য :

বর্ষার আগমনে নদী-নালা, খাল-বিল, মাঠ-ঘাট পানিতে ভরপুর থাকে । আকাশ সারাদিন কালমেঘে আচ্ছন্ন থাকে । অনেক সময় দিনের পর দিন মেঘাচ্ছন্ন আকাশে সূর্যের দেখা মেলে না। সারাদিন অঝোর ধারায় বৃষ্টি পড়ে। কখনও বর্ষার গর্জনে মুকরিত হয়ে শুরু হয় প্রচণ্ড ঝড় ও বৃষ্টি, দেখা দেয় বন্যা। নদীর দু'কুল চাপিয়া পানি ছলছল শব্দে এগিয়ে চলে । 

বর্ষায় আকাশের দৃশ্য : 

বর্ষার আকাশ খুব ব্যস্ত, সারাদিন মেঘের দৌড়ের পাল্লা, সমস্ত আকাশটা মনে হয় পাখির পালক দিয়ে মুড়ে দেয়া হয়েছে । মেঘের আড়ালে সূর্য লুকোচুরি খেলে, বিদ্যুৎ চমকায়। বর্ষার আকাশে কোন কোন দিন সূর্যের অস্তিত্বও টের পাওয়া যায় না।

বর্ষায় গ্রাম : 

বর্ষাকালে গ্রামের অবস্থা খুব করুণ। গ্রামের আনাচে-কানাচে পানি আর পানি। রাতে গ্রামগুলো মনে হয় সমুদ্রের মাঝে জেগে উঠা কোন দ্বীপ। বর্ষার দিনে গাঁয়ের রাস্তাঘাট সব ডুবে যায়। বর্ষার পানিতে গ্রামে মাছ ধরার প্রতিযোগিতা নামে। বর্ষায় টিনের চালে একটানা রিম ঝিম বৃষ্টি পড়ার শব্দ শোনা যায় ৷

বর্ষায় শহরের অবস্থা ঃ

বৃষ্টির পানিতে প্রায়ই শহরের নিম্নাঞ্চল ডুবে যায়। উন্নত পয়ঃপ্রণালীর অভাবে বৃষ্টির পানি শহরের রাস্তা ডুবিয়ে দেয় । পায়ে হেঁটে অফিসে, স্কুল-কলেজে ও হাট-বাজারে যাওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ে। সুযোগ বুঝে রিক্সা চালকরা ভাড়া বাড়ীয়ে দেয় । একই সাথে জিনিসপত্রের দামও বাড়ে, মোট কথায় বর্ষা শহরবাসীদের কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়ায় ।

বর্ষায় উপকারিতা : 

বর্ষার পানিতে কৃষকের জমিতে পলিজমে, বর্ষাকালে একস্থান থেকে আরেক স্থানে নৌকায় করে বেড়াতে যাওয়া যায় । বর্ষার ফলে নানা প্রকার ফলমূল যেমন- পেয়ারা, আনারস, শশা, কলা, ঝিঙা, মিষ্টিকুমড়া, চালকুমড়া চিচিঙ্গা ইত্যাদি পাওয়া যায় । বর্ষার নতুন পানিতে হরেক রকমের মাছের আগমন ঘটে । বর্ষাকালে কদম, কেয়া, কামিনী, জুঁই, বেলী, টগর, চাঁপা প্রভৃতি বিচিত্র ফুল ফোটে।

বর্ষার অপকারিতা : 

বর্ষার মাঠ-ঘাট প্রান্তর ডুবে সব যায়, চারদিকের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। রাস্তাঘাট কর্দমাক্ত পিচ্ছিল হয়ে পড়ে। বর্ষাকালে দেখা দেয় ডায়রিয়া।

উপসংহার : 

বর্ষা বাংলাদেশের জন্য আশীর্বাদ। সারা বছরের জর্মে থাকা নোংরা আর গ্লানিকে ধুয়ে মুছে এক শুচি-শুভ্র পবিত্রতা দান করে বর্ষা বাংলাদেশকে এক অপূর্ব সৌন্দর্যে রমনীয় করে তোলে। বর্ষা বাংলাদেশের জন্য সুখ ও দুঃখ অথবা প্রাপ্তি ও ত্যাগ উভয়বিধ অবদানের উর্বর উৎস।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad