উপস্থাপনা :
মানব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, নিবিড় বৃক্ষ শোভিত অরণ্যের শ্যাম-স্নিগ্ধ সৌন্দর্যের পটভূমিতে উন্মেষ ঘটেছিল মানুষের আদিম সভ্যতার। আদিম যুগে মানুষ ছিল সম্পূর্ণরূপে প্রকৃতি নির্ভর। মানুষের সার্বিক চাহিদা পূরণের একমাত্র উৎস ছিল প্রকৃতির সুপরিসর অঙ্গন তথা বৃক্ষরাজি।
প্রাচীনকাল থেকে অরণ্যের বিভিন্ন গাছ-পালার সাথে মানুষের জীবন ও জীবিকার একটি অবিচ্ছেদ্য সম্পর্ক গড়ে উঠছে।
বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা :
মানবজীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম। বৃক্ষ মানুষ তথা প্রাণী মাত্রেরই অন্যতম মৌলিক চাহিদা খাদ্যের প্রধান উৎস। বৃক্ষ প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করে, পরিবেশ দূষণ প্রক্রিয়াকে প্রতিরোধ করে এবং তার অনিষ্টকর প্রভাব থেকে জীবজগৎকে রক্ষা করে। মানবজীবনে বৃক্ষ এবং তার উপযোগিতার কথা অনস্বীকার্য।
বৃক্ষ মানুষের খাদ্য সরবরাহ করে, বস্ত্রের জন্য প্রয়োজনীয় কাঁচামাল সরবরাহ করে। রোগ নিবারণকারী এবং স্বাস্থ্য গঠন ও রক্ষাকারী ঔষধের মূল উপাদান আসে বৃক্ষ থেকে । মানুষের বাসগৃহ ও আসবাসপত্র নির্মাণের জন্যে বৃক্ষের কোন বিকল্প নেই। বৃক্ষ মানুষের পরিত্যাগকৃত বিষাক্ত কার্বন ডাই-অক্সাইড গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন বর্জন করে।
অর্থাৎ মানুষের বেঁচে থাকবার অবলম্বন হল বৃক্ষ। কাজেই মানবজীবনে বৃক্ষের প্রয়োজনীয়তার কথা কোনক্রমেই অস্বীকার করার উপায় নেই।
আরও পড়ুন :- রচনা : বৃক্ষরোপণ ( ২০ পয়েন্ট )
বাংলাদেশে বনভূমির পরিমাণ ও বৃক্ষ নিধন :
যে কোন দেশের জন্য মূল ভূ-খণ্ডের শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা বাঞ্ছনীয় । কিন্তু সে তুলনায় বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ মোট আয়তনের মাত্র শতকরা ১৬ ভাগ। বাংলাদেশের ৫৫,৫৯৮ বর্গমাইল এলাকায় বনভূমি মাত্র ৮,৫৯৪ বর্গমাইল ।
কিন্তু দুঃখের বিষয়, বাংলাদেশের বনভূমির পরিমাণ প্রয়োজনের তুলনায় দুই-তৃতীয়াংশ হলেও তা বৃদ্ধির জন্য উদ্যোগের অভাব প্রকট । বরং অহরহ আমরা কারণে-অকারণে আমাদের আশপাশ থেকে নির্বিচারে বৃক্ষরাজি নিধন করে চলেছি ৷ অতিরিক্ত জনসংখ্যার চাপে ও অভাব-অনটনের কারণে দেশের বৃক্ষরাজি উজাড় হয়ে যাচ্ছে।
বৃক্ষরোপণ অভিযানের প্রয়োজনীয়তা :
ভয়াবহ পরিণতির হাত থেকে রক্ষা পাবার জন্য একটি পথ খোলা আছে। আর তা হল অধিকহারে বৃক্ষরোপণ করা। সরকার বৃক্ষরোপণকে সামাজিক আন্দোলনে পরিণত করতে সচেষ্ট। বৃক্ষনিধন জনিত অনিবার্য মারাত্মক পরিণতির হাত থেকে রেহাই পেতে স্বাধীনতার পর থেকেই বাংলাদেশে প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ সপ্তাহ পালিত হয়ে আসছে।
আরও পড়ুন :- বাংলা প্রবন্ধ রচনা - সুন্দরবন
সাধারণত এ অভিযানে শিশু, মেহগনি, সেগুন, ইউক্যালিপটাস, ইপিল-ইপিল, আম, জাম, পেয়ারা, জামরুল প্রভৃতি নানা জাতের বৃক্ষের চারা রোপণের জন্য সরকারি নার্সারি থেকে সরবরাহ করা হয়। সরকারি উদ্যোগের সাথে ব্যক্তিগত উদ্যোগের সমন্বয়ে ঘটালে এ অভিযান সফল হবে ।
বর্তমান সরকারের পদক্ষেপ :
বৃক্ষরোপণ অভিযানকে সফল করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার এক বিরাট পদক্ষেপ গ্রহণ করেছেন। প্রতিটি উপজেলা, ইউনিয়ন, ওয়ার্ড এবং গ্রাম পর্যায়ে এই অভিযানকে সফল করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। দেশের সর্বত্র অনাবাদি জায়গায়, বাঁধের ওপর, রাস্তার পাশে, স্কুল-কলেজে, অফিস-আদালতে এবং বাড়ি-ঘরের আশেপাশে বৃক্ষরোপণের সর্বাত্মক প্রচেষ্টা চালানো হচ্ছে ।
উপসংহার :
বৃক্ষরাজি মানুষের সুখ-দুঃখের সাথী। কাজেই বৃক্ষরোপণের মাধ্যমে আমাদের চারপাশের পরিবেশকে সাজাতে হবে সবুজ-শ্যামলিমায় । নতুন প্রাণের স্পন্দনে মাতিয়ে তুলতে হবে প্রকৃতিকে। বৃক্ষ আমাদের অকৃত্রিম বন্ধু এবং রক্ষক ।