ভূমিকা :
সুজলা-সুফলা-শস্যশ্যামলা আমাদের বাংলাদেশ আজ বুভুক্ষুর, হা-অন্ন চিৎকারের হিমসিম খাচ্ছে। প্রাচুর্যের এ দেশের শত শত ক্ষুধার্ত লোক আজ এক মুঠো ভাতের জন্যে দ্বারে দ্বারে হন্যে হয়ে ঘুরছে। এমন একদিন ছিল যখন এদেশে ছিল গোলাভরা ধান, গোয়ালভরা গরু, পুকুর ভরা মাছ- সেদিন সকল লোকের ছিল মুখভরা হাসি।
আগের দিনের সেই বিপুল পরিমাণ ফসলের কথা এখন কল্পনায়ও চিন্তা করা যায় না।সে শুধু বুড়োদের গল্পের মধ্য দিয়ে আমাদের বিস্ময় উৎপাদন করে। দেশে জনসংখ্যা বেড়েছে; বাস করবার বাড়ি বেড়েছে। ফলে চাষের জমি কমে যাচ্ছে। তাই খাদ্যশস্যের উৎপাদন বাড়ানো দূরের কথা বরং তা আরো হ্রাস পেয়েছে। এটাকেই এদেশের বর্তমান খাদ্যভাবের অন্যতম কারণ বলে চিহ্নিত করা হয়েছে।
তবে বিশেষজ্ঞরা পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে নির্ণয় করেছেন, উন্নত উপায়ে চাষাবাদ করলে আমাদের দেশের উৎপাদন বহুগুণে বেড়ে যেতে পারে। সেজন্যে আজ সরকার দেশে উন্নত ধরনের চাষাবাদের জন্যে উঠে পড়ে লেগেছেন এবং দেশের লোকদের সব সময় উপদেশ দিচ্ছেন ‘অধিক খাদ্য ফলাও'।
বর্ণনা :
ধানই আমাদের দেশের প্রধান খাদ্যশস্য । ডাল, শাকসব্জি, ফলমূল প্রভৃতি আমরা খেয়ে থাকি। কিন্তু এগুলোকে ধানের মত তত গুরুত্বপূর্ণ বলে ধরা হয় না । আমাদের দেশের বেশির ভাগ লোকেরই জীবনযাত্রার মান উন্নত নয়, শুধু ডাল-ভাতেই তারা দু'চার বেলা চালিয়ে দিতে পারে। ডাল না জুটলে লঙ্কা (মরিচ) ও লবণ দিয়ে ভাত খেয়েও পেট ভরতে পারে ।
আরও পড়ুন :- বাংলা প্রবন্ধ রচনা : বাংলাদেশের কৃষক - ১৫ প্যারা
কিন্তু ভাত না হলে তাদের একদিন চলে না, কাজেই আমাদের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হবে এ প্রধান খাদ্যশস্য ধানের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলা । সেজন্যে যাতে দেশের সব জমিতে উন্নত ধানের চাষাবাদ চালু হয়, সেদিকে আমাদের সকলের দৃষ্টি দিতে হবে। দেশে যাতে কোন জমি পতিত না থাকে এবং বেশির ভাগ জমিতে যাতে ধানের চাষ হয় সেদিকেও আমাদের অবশ্যই লক্ষ্য রাখতে হবে।
ধানের উৎপাদনই বাংলাদেশের কৃষি কাজের প্রধান দিক । এখানে যে পরিমাণ জমিতে চাষাবাদ হয়ে থাকে, তার তিন-চতুর্থাংশ জমিতে ধান জন্মে। বর্তমানে সরকারের উন্নয়ন পরিকল্পনায় কিছু পরিমাণ ধানের জমি সরকারের হাতে চলে গিয়েছে। এছাড়া দেশের জনসংখ্যাও বহু বেড়ে গিয়েছে। তাই দেশে খাদ্য শস্যের ঘাটতি দেখা দিয়েছে।
এ ঘাটতি পূরণ করার জন্যে বিদেশের ওপর নির্ভর করলে দেশের বহু উন্নয়ন কাজ ব্যাহত হবে। তাই দেশের জমিতে উন্নত ধানের চাষাবাদ চালু করে খাদ্য শস্যের উৎপাদন বাড়িয়ে তোলাই আমাদের একমাত্র লক্ষ্য হওয়া উচিত।
এখানে একথা বললে অপ্রাসংগিক হবে না, বিগত কয়েক বছর আগে পাটের মূল্য খুব বেড়ে যাওয়ায় কৃষকেরা অধিক লাভের আশায় ধানের চাষ কমিয়ে পাটের চাষ বাড়িয়ে দেয়। ফলে দানের উৎপাদন কমে যায় এবং দেশে খাদ্যভাব দেখা দেয় ও খাদ্যশস্য দুর্মূল্য হয়ে ওঠে। বিদেশ থেকে খাদ্য-শস্য আমদানি করে অভুক্ত লোকদের দু'বেলা পেটের ভাতের সংস্থান করতে গিয়ে সরকারকে বহু উন্নয়ন কাজ স্থগিত রাখতে হয়েছে।
তাই সরকার পাটের চাষ নিয়ন্ত্রিত করে দিয়ে বর্তমানে বলেছেন, ‘খাদ্য শস্য ফলাও’। দেশের কোন জমি অনাবাদী ফেলে না রেখে যদি বেশির ভাগ জমিতে উন্নত উপায়ে চাষ করা যায় তবে দেশের খাদ্যাভাব অনেকটা দূর হবে। শুধু টাকা- পয়সা থাকলেই খাদ্য জোটে না, গত কয়েকটা দুর্ভিক্ষের সময় আমরা হাড়ে হাড়ে অনুভব করেছি।
আরও পড়ুন :- শ্রমের মর্যাদা- বাংলা রচনা[ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]- PDF ৩টি
প্রচুর টাকা-পয়সা থাকতেও সে সময় ধনী লোকও আবশ্যক মত খাবার সংগ্রহ করতে পারেননি। এ বিষয়ে সরকারের বিরাট কর্তব্য রয়েছে। কৃষিকেরা যাতে কৃষির উপযোগী উন্নত ধরনের যন্ত্রপাতি, উৎকৃষ্ট বলদ ও ভাল বীজ সংগ্রহ করতে পারে, সরকারকে তার ব্যবস্থা করতে হবে। প্রয়োজন হলে সরকারকে কৃষিঋণের মারফত এগুলো সরবরাহ করতে হবে।
খরার সময় পানির অভাবে যাতে কৃষিকাজ বন্ধ হয়ে না যায় কিংবা ফসলের ক্ষতি না হয় সেজন্যে পানি সেচের উদ্দেশ্যে সরকারকে দেশের সবখানে বহু সংখ্যক নতুন খাল কেটে দিতে হবে, পুরানো খালগুলোর সংস্কার করতে হবে । সাথে সাথে সেচের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি সরবারাহ করতে হবে।
বাংলাদেশের বেশির ভাগ কৃষকই গরীব। তারা অনেক সময় টাকা-পয়সার অভাবে ভালভাবে চাষাবাদ করতে পারে না। এ অবস্থায় সরকারকে আর্থিক সহায়তা দিয়ে তাদেরকে সাহায্য করতে হবে। আমাদের দেশের কৃষকেরা নিরক্ষর ও অজ্ঞ ।
আধুনিক বিজ্ঞানসম্মত কৃষিপ্রাণালী সম্বন্ধে তারা মোটেই ওয়াকেবহাল নয় । তারা যাতে সহজে এ বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে অধিক উৎপাদন সম্ভব করে তুলতে পারে সরকারকে সেদিকে সজাগ দৃষ্টি দিতে হবে ।
এ সম্বন্ধে দেশবাসীর কর্তব্যও কম নয়। আমাদের দেশে এখনও বহু জমি অনাবাদী পড়ে রয়েছে। এসব অনাবাদী জায়গাকে যাতে চাষের আওতায় আনা যায় সে সম্পর্কে যত্নবান হতে হবে। গ্রামের প্রত্যেক বাড়ির চারপাশে কিছু পরিমাণ জমি পতিত পড়ে থাকে।
এগুলোকে অনাবাদী ফেলে না রেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করলে সব্জি ক্ষেতে পরিণত করা যায় এবং যথেষ্ট পরিমাণে কলা, মূলা, শাকসব্জি ও তরিতরকারি উৎপাদন করা যায়। এতে গৃহস্থেরা দৈনন্দিন প্রয়োজন মিটিয়েও কিছু পরিমাণ কাঁচা পয়সার সংস্থান করতে পারে।
উপসংহার :
এভাবে সরকার ও দেশবাসী সম্মিলিতভাবে চেষ্টা চালালে দেশে খাদ্যোৎপাদন বাড়াতে মোটেই বেগ পেতে হবে না। এ বিষয়ে আমাদের জাতীয় সরকার বিশেষ যত্নবান হয়েছেন । আশা করা যায় আমাদের দেশ শীঘ্রই খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠবে । তবে আমাদের পণ করতে হবে, আমরা এ ব্যাপারে সরকারকে সক্রিয় সহযোগিতা দিয়ে যাব ।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা