উপস্থাপনা :
প্রতি বছর ৮ সেপ্টেম্বর সারা বিশ্বে আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস হিসেবে পালিত হয় । জাতিসংঘের আহবানে এ দিবসটি পালিত হয় । বর্তমানে উন্নত বিশ্বে শিক্ষিতের হার ব্যাপক বলে সেসব দেশে দিবসটির তাৎপর্য গুরুত্বপূর্ণ নয় । তবে তৃতীয় বিশ্বের গরিব দেশগুলোতে সাক্ষরতার অভিশাপ জাতিকে তিলে তিলে দগ্ধ করছে; আহত করছে সচেতন মানবতাবাদী শিক্ষিত জানতাকে । সারা বিশ্বে নিরক্ষর লোকের সংখ্যা প্রায় একশ কোটি। এর মধ্যে ৬৭ কোটি নিরক্ষর লোক বাস করে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ায় ।
বাংলাদেশের সাক্ষরতা :
বাংলাদেশ নিরক্ষর অঞ্চলের আওতায় অবস্থিত। মোট জনসংখ্যার প্রায় ৫ কোটি নিরক্ষর। এসব নিরক্ষর জনগোষ্ঠীকে শিক্ষিত করে গড়ে তোলার জন্যে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে প্রচেষ্টা চলছে। এডিবি এবং বিশ্ব ব্যাংকসহ অন্যান্য সংগঠনসমূহ এ ব্যাপারে সোচ্চার। শিক্ষার আলো থেকে বঞ্চিত জনগোষ্ঠী উন্নত জীবন যাপন থেকে বঞ্চিত। জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য তারা ভোগ করতে পারে না।
উন্নত জীবন যাপনের জন্যে আধুনিকভাবে যে আহবান তা পেতে হলে প্রয়োজন শিক্ষার । কিন্তু অশিক্ষিত নিরক্ষর জাতি যে তিমিরে ছিল এখানো তিমিরেই অবস্থান করছে। বাংলাদেশের মতো অবস্থান ছিল প্রতিবেশী দেশগুলোর, কিন্তু শিক্ষা-দীক্ষা ও সাক্ষরতায় তারা সফলতা অর্জন করে জীবন মান উন্নত করেছে। কিন্তু বাংলাদেশে সাক্ষরতা অভিযান চলছিল দীর্ঘ দিন ধরে। তবে তা যথার্থ সমন্বিত না হওয়ায় তার অগ্রগতি সাধিত হয়নি ।
আরও পড়ুন :- নিরক্ষরতা দূরীকরণ - বাংলা রচনা | Sikkhagar
গৃহীত ব্যবস্থা :
দু'হাজার সাল নাগাদ সবার জন্যে শিক্ষার শ্লোগান তোলা হয়েছিল। পাঁচ বছরের মাথায় শিক্ষিতের হার শতকরা ৬২ ভাগে উন্নীত করার লক্ষ্যে প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক করে গণশিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয় । প্রথম শ্রেণী থেকে দশম শ্রেণী ও পরে দ্বাদশ শ্রেণী পর্যন্ত মেয়েদের শিক্ষা অবৈতনিক করায় তা নিরক্ষরতা ও অশিক্ষার ওপর গুরুত্বপূর্ণ প্রভাব ফেলে।
বর্তমানে বয়স্ক শিক্ষাকে আরো শক্তিশালী ও বৃত্তিমূলক করা হলে নিরক্ষরতা অচিরেই দূর হবে । বিদ্যালয়ে না যাওয়া ও বিদ্যালয় ত্যাগী শিশুরা নিরক্ষরতার হার বৃদ্ধি করবে বলে অভিজ্ঞ মহল অভিমত ব্যক্ত করেছেন । সেজন্যে গণশিক্ষা, বয়স্ক শিক্ষার পথ আরো সহজ ও প্রশস্ত করে আকর্ষণীয় করতে হবে এবং প্রাথমিক শিক্ষা বাধ্যতামূলক আইনের বাস্তবায়নকে নিশ্চিত করে কঠোরতা অবলম্বন করতে হবে।
জীবিকা :
সাক্ষরতার সাথে জীবিকার সম্পর্ক। যে শিক্ষা-ব্যবস্থা জীবনধারণের কোন কাজে লাগে না, সে শিক্ষার কোন লাভ নেই। নিরক্ষর লোকদের সাক্ষর করানো হলে তারা বিদেশে কর্মী হিসেবে গেলে আর্থিক লেনদেন করতে পারে অনায়াসে। তবে সাক্ষরতা বলতে শুধু স্বাক্ষর জানাকে বর্তমানে বুঝায় না ।
আরও পড়ুন :- সাক্ষরতা অভিযান - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8, 9, 10 ]
লেনদেন, হিসাব-নিকাশসহ দৈনন্দিন নিত্য প্রয়োজনীয় জ্ঞানকে বুঝায় । এ জ্ঞান অর্জন করতে না পারলে সাক্ষরতা পূর্ণাঙ্গ হয় না। সাক্ষরতা প্রকল্পে বাস্তবধর্মী এমন কিছু রাখা চাই যা দৈনন্দিন জীবনের প্রয়োজন মেটাতে সাহায্য করে । সাক্ষরতা আন্দোলনকে সফল করা সম্ভব হলে কারিগরি দক্ষতা অর্জনের পথ হবে প্রশস্ত ।
গুরুত্ব :
প্রতি বছর ৮ সেপ্টেম্বর সারা বিশ্বে পালিত হয় সাক্ষরতা দিবস। এ দিবসটি পালনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে সচেনতা বৃদ্ধি করা হয় । এ দিবসে দেশে দেশে অনুষ্ঠিত হয় বিভিন্ন সভা, সেমিনার, সিম্পোজিয়াম । এসব অনুষ্ঠানে দিবসটির তাৎপর্য তুলে ধরা হয় । ফলে মানুষ লাভ করে বিভিন্ন দিক নির্দেশনা। সরকারি ও বেসরকারি পর্যায়ে নেয়া উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়ন হয় । পত্র-পত্রিকা ও রেডিও-টিভিতে প্রচারের ফলে জনগণের মধ্যে আত্ম সচেতনতা সৃষ্টি হয় ।
উপসংহার :
উক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, আন্তর্জাতিক সাক্ষরতা দিবস পালনের মাধ্যমে গণসচেতনতা বৃদ্ধি পায় । এ দিবসটি শুধু শিক্ষিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে শিক্ষিত অশিক্ষিত ছোট-বড়, নর-নারী সকলের মধ্যে সাক্ষরতার ফলাফল, লাভ- ক্ষতি পৌঁছে দেয়ার ব্যবস্থা থাকতে হবে। শুধু সরকারের ওপর নির্ভর না করে বেসরকারিভাবে সমাজ সেবক ও ত্যাগী পুরুষগণ সাক্ষরতা অভিযানকে সফল করতে পারেন।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা