মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদান- রচনা [Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]এবং hsc

উপস্থাপনা : 

আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। বাংলা ভাষায় আমরা কথা বলি। শৈশবে এ ভাষায় আমাদের প্রথম বাক্য স্ফূর্ত হয়েছে। এ ভাষায় আমরা মনের ভাব প্রকাশ করতে পেরেছি। এ ভাষা লিখে, পড়ে ও কথা বলে আমরা যত আনন্দ লাভ করি, এমন আর অন্য কোন ভাষায় সম্ভব নয় ।

সর্বাগ্রে মাতৃভাষা শিক্ষা : 

শৈশব থেকে যে ভাষায় সর্বপ্রথম মানব শিশু কথা বলে, সে ভাষার বর্ণের সাথে পরিচিত হওয়া সর্বাগ্রে প্রয়োজন । অতঃপর সে ভাষাকে ভিত্তি করে তারই মাধ্যমে উচ্চতর শিক্ষা গ্রহণে অগ্রসর হতে হবে। তা না হয়ে যদি অন্য কোন ভাষায় কেউ বিদ্যাশিক্ষা করতে চায়, তাহলে তার বিদ্যাশিক্ষা অসম্পূর্ণ থেকে যাবে। নিজের মাতৃভাষা সম্পূর্ণরূপে আয়ত্ত করতে না পারলে তার সম্যক জ্ঞানার্জন সম্ভব হবে না ।

আমাদের মাতৃভাষা : 

আমাদের মাতৃভাষা বাংলা। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে আমরা বাংলা ভাষাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছি। কিন্তু আমাদের উচ্চ শিক্ষায়তনগুলোর দিকে তাকালে দেখতে পাই, ইংরেজির প্রতি মোহ আমাদের আদৌ কমেনি। এখনও শিক্ষার উঁচুস্তরে ইংরেজি ভাষা চালু রয়েছে। চিকিৎসা, প্রকৌশল, কৃষি এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ পর্যায়ে শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে ইংরেজিরই প্রাধান্য রয়েছে।

আরও পড়ুন :- বৃত্তিমূলক শিক্ষা : বাংলা  রচনা । Sikkhagar

মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের সুবিধা : 

মাতৃভাষায় শিক্ষাদানের যতটা সুবিধা, অন্য কোন ভাষায় শিক্ষা দানে ততটা সুবিধা নেই। এ ব্যাপারটা অনুধাবন করেই সাহিত্য সম্রাট কবিগুরু রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে বাংলা ভাষার সুপারিশ করেছেন । মাতৃভাষার মাধ্যমে গাঁথুনিটা বেশ শক্তিশালী করে দিতে পারলে যে কোন ভাষায় শিক্ষার্থী খুব সহজে পারদর্শিতা অর্জন করতে পারে । 

কঠোর সাধনা ও কষ্ট করে যেখানে অন্য ভাষায় সম্পূর্ণ জ্ঞান লাভ করা যায় না, সে ক্ষেত্রে মাতৃভাষার প্রতি সামান্য আকর্ষণ থাকলে সেটা সহজে আয়ত্ত্ব করা সম্ভব ।

মাতৃভাষার প্রতি উদাসীনতা : 

মাতৃভাষার প্রতি উদাসীনতা এবং অবহেলা আমাদের জাতীয় জীবনের অপমৃত্য বলে মনে করতে হবে। আমাদের মাতৃভাষা কখনই দীন নয়। পৃথিবীর অন্যান্য শক্তিশালী ভাষার মত বাংলা ভাষাও বিশ্বসাহিত্যে স্থান লাভের গৌরব অর্জন করেছে। এ ভাষার প্রতি যারা অবজ্ঞার ভাব পোষণ করেন তাদের বৃদ্ধিহীনতা সত্যিই অনুকম্পার যোগ্য। 

এক শতাব্দীর অধিককাল হতে এ দেশিয় মনষীবৃন্দ বাংলা ভাষার উন্নতিকল্পে লেখনি ধারণ করেছেন। তাদের অক্লান্ত পরিশ্রমের বদৌলতে বাংলা ভাষা আজ বিদেশি যে কোন ভাষার সাথে প্রতিযোগিতা করতে প্রস্তুতি ।

আরও পড়ুন :- কর্মমুখী শিক্ষা বা কারিগরি শিক্ষা -রচনা [Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]

মানসিক বিকাশে মাতৃভাষা : 

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষাদানের উপযোগিতা অনস্বীকার্য। মাতৃভাষা মাতৃদুগ্ধের সাথে তুলনীয় শিশুর দৈহিক বৃদ্ধি ও পুষ্টির জন্য যেমন মাতৃদুগ্ধের প্রয়োজন, তেমনি তার সূষ্ঠু মানসিক বিকাশের জন্য মাতৃভাষার প্রয়োজন। মাতৃভাষাতেই শিশু প্রথম কথা বলতে শেখে, তার মনের সুখ-দুঃখ, আনন্দ-বেদনাকে প্রকাশ করে। তাই কেবল শিশু নয়, সকল মানুষের জন্যই এ কথা প্রযোজ্য ।

শিক্ষার সর্বস্তরে মাতৃভাষা :  

আমাদের দেশে শিক্ষার সর্বস্তরে বাংলা ভাষাকে যত শীঘ্র সম্ভব কার্যকর মাধ্যমে পরিণত করতে হবে। সার্বজনীন শিক্ষার স্বার্থে এবং শিক্ষার্থীদের মেধা ও শক্তির বিকাশের জন্য এটা একান্ত প্রয়োজন। ইতোমধ্যে বাংলা একাডেমী বাংলার মাধ্যমে উচ্চস্তরে শিক্ষাদানের উপযোগী বেশ কিছু পাঠ্যপুস্তক প্রকাশ করেছে ।

উপসংহার : 

মাতৃভাষার মাধ্যমে শিক্ষা গ্রহণ সম্পর্কে আজ পৃথিবীর মনীষীবৃন্দ একমত। যাদের মনে দেশাত্ববোধ আছে- তাঁরা সকলেই মাতৃভাষাকে যথোচিত সম্মান প্রদান করেন। তা না করলে অদূর ভবিষ্যতে আমাদের জাতীয় জীবনের মৃত্যু অনিবার্য।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad