রোযার শিক্ষা - বাংলা প্রবন্ধ রচনা

উপস্থাপনা : 

রোযা সকল মুসলমানদের জন্য ফরয । ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে তিন নাম্বার স্তম্ভের নাম রোযা। খোদাভীতির উপযুক্ত পরীক্ষা রোযা। রোযার মাধ্যমে মানুষ আত্মসংযম, আধ্যাত্মিক উন্নতি, খোদাভীতির পরীক্ষাগুলো দিয়ে থাকে ।

রোযার পরিচয় : 

রোযা ফারসী শব্দ, রোযার আরবী শব্দ হচ্ছে সিয়াম । রোযার আভিধানিক অর্থ হচ্ছে-বিরত থাকা । ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় আল্লাহ তায়ালার উদ্দেশ্যে সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত যাবতীয় ইন্দ্রিয় তৃপ্তি ও পানাহার হতে বিরত থাকার নামই রোযা।

রোযা মুসলিমের ঢালস্বরূপ : 

রোযা মানুষকে যাবতীয় অপকর্ম হতে দূরে রাখে। মানুষ লোভ-লালসা ক্রোধ ইত্যাদির তাড়নায় বিপদগামী হয় । রোযা মানুষের মন থেকে এসব লালসা দূর করে। তাই হযরত মুহাম্মদ (সঃ) বলেছেন, “রোযা মুসলিমের ঢালস্বরূপ।”

আরও পড়ুন :- ঈদ উৎসব - বাংলা রচনা | ক্লাস 6, 7, 8, 9, 10

রোযা আল্লাহ প্রেমের শিক্ষা দেয় : 

রোযার মাধ্যমে মানুষের মনে আল্লাহর জন্য গভীর প্রেমের অনুভূতি সৃষ্টি হয়। এটি লোক দেখানো কোনো পরীক্ষা নয় । সম্পূর্ণ মনের ব্যাপার। তাইতো আল্লাহ তায়ালা রোযাদারদের গভীর ভালবাসেন। রোযা সম্পর্কে আল্লাহ বলেন- “রোযা আমার জন্য, আর আমিই এর প্রতিদান দেব।”

আত্মিক উৎকর্ষ সাধন : 

রোযার অন্যতম দিক হচ্ছে মানুষের আত্মার উৎকর্ষ সাধন। রোযা মানুষের অন্তরকে পরিষ্কার করে পবিত্রতা দান করে । রোযার প্রতিদান অসীম, এর প্রতিদান আল্লাহ নিজ হাতে দান করবেন । অন্যান্য ইবাদতের প্রতিদান সম্বন্ধে কোরআন- হাদিসে উল্লেখ আছে। শুধু রোযার প্রতিদান সম্বন্ধে বলা আছে— “রোযার প্রতিদান আমার নিজ হাতে দেবো।”

রোযা চরিত্র গঠন করে : 

রোযার মাধ্যমে মানুষ চরিত্র গঠন করতে পারে । রোযাদার ব্যক্তি আল্লাহর প্রতি অধিক মনোনিবেশ করে যার ফলে সে যাবতীয় গুনাহর কাজে আল্লাহকে ভয় পায় । রোযাদার ব্যক্তি কোনো পাপ কাজ করতে পারে না । মানুষের চরিত্র গঠনে রোযা কল্যাণধর্মী ।

আরও পড়ুন :- বাংলা রচনা : বাংলা রচনা : ঈদে মিলাদুন্নবী ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ 

রোযা নিয়মানুবর্তিতা শিক্ষা দেয় : 

রোযার মাধ্যমে মানুষ কঠিন নিয়মানুবর্তিতা পালন করে । নির্দিষ্ট সময়ে ঘুমকে নষ্ট রে সেহরী খায় এবং সারা দিন উপুস থেকে সূর্যাস্তের পর পরম আনন্দ ভরে ইফতার করে । এতে কোনো নিয়মের হেরফের হয় না।

রোযা ভ্রাতৃত্ববোধের উদাহরণ : 

রোযার মাধ্যমে মানুষের ভ্রাতৃত্ববোধ জাগ্রত হয় । ধনী ব্যক্তি উপবাসের মাধ্যমে গরিবের দুঃখ-কষ্ট অনাহারের কষ্ট উপলব্ধি করতে পারে। এতে একে অপরের সুখ-দুঃখ উপলব্ধি করে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের সৃষ্টি হয় ।

রোযা আদর্শ সমাজ গঠনে সাহায্য করে : 

রোযা মানব সমাজ থেকে পাপাচার, অনাচার, ব্যভিচার, মিথ্যা, হটকারিতা, সুদ, ঘুষ, কালোবাজারী দূর করে একটি আদর্শ সমাজ গঠনের শিক্ষা দেয় । একমাত্র রোযাই মানুষের মন থেকে ক্রোধ, লোভ-লালসা, হিংসা, মিথ্যা, প্রতারণা দূর করতে পারে। রোযার শিক্ষা পালন করলে মুসলিম বিশ্বে আবার শান্তি ফিরে আসবে তাতে সন্দেহ নেই । 

উপসংহার : 

রোযা জীবনকে সুন্দর ও কল্যাণময়ী করার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । তাই রোযা আমাদের ধর্মীয় ও সামাজিক জীবনে অপরিহার্য । প্রতিটি মানুষ রোযার শিক্ষাকে কাজে লাগিয়ে অনাবিল শান্তিতে বসবাস করতে পারে । মুসলমানদের রোযার শিক্ষা যথাযথ পালন করলে মুসলিম বিশ্বে আবার শান্তি ফিরে আসতে বাধ্য ।

Post a Comment

0 Comments