উপস্থাপনা :
নিজ স্বার্থসিদ্ধির উদ্দেশ্যে সহিংস, অবৈধ শক্তি প্রয়োগে কাউকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করে পর্যুদস্ত বা কাবু করাকে সন্ত্রাস বলে । বর্তমানকালে সারা বিশ্বেই টেরোরিজন বা সন্ত্রাসের দৌরাত্ম্য প্রবল । পৃথিবীর সর্বত্রই সন্ত্রাসী ব্যক্তি বা সন্ত্রাসী দলের উপস্থিতি বিদ্যমান। এরা জোর জবরদস্তি করে অস্ত্রের মুখে নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করে। আবার বহু মানুষ বা বহু দল সন্ত্রাসীদের সাহায্যে তাদের শত্রুপক্ষকে ঘায়েল করে। এভাবে সন্ত্রাসের চর্চা দিন দিন বেড়েই চলছে।
সন্ত্রাস একটি জঘন্য অপরাধ :
সন্ত্রাস একটি জঘন্য অপরাধ এ কথা সর্বজনস্বীকৃত। এর দ্বারা মহৎ কিছু সাধন করা যায় না; বরং মহত্ত্ব ও মানবতার গলা টিপে হত্যা করা হয় । সমাজের নিম্ন পর্যায়ে সন্ত্রাস দ্বারা জঘন্য অমানবিক ঘটনা ঘটে। সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের মাধ্যমেই সমাজে হত্যা, ছিনতাই, রাহাজানি ইত্যাদি সংঘটিত হয়। আবার উচ্চ পর্যায়ে বড় বড় হত্যাকাণ্ড বিশেষত রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড সন্ত্রাসীদের দ্বারাই সংঘটিত হয় ।
যে কারণে সন্ত্রাস বাড়ছে :
সন্ত্রাস বৃদ্ধি পাওয়ার মূলে রয়েছে কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির অদৃশ্য কালো হাত। সমাজে এমন কিছু ক্রিমিনাল টাইপের প্রভাবশালী ব্যক্তি থাকে, যারা অর্থ কিংবা নানা প্রকার সুযোগ-সুবিধা দিয়ে সন্ত্রাসীদের লালন করে এবং তাদের দ্বারা নিজেদের হীন স্বার্থ চরিতার্থ করে। এছাড়া পরস্পরবিরোধী রাজনৈতিক দলসমূহ সন্ত্রাসী-চক্র তৈরি করে রাখে এবং প্রয়োজনে তাদের কাজে লাগায়।
বর্তমান সময়ে মানুষের জীবনে যেমন সুখস্বাচ্ছন্দ্য বৃদ্ধি পেয়েছে, তেমনি অভাব এবং হতাশাও বৃদ্ধি পেয়েছে। হতাশা এবং অভাবের কারণেও মানুষ মনুষ্যত্বের পথ থেকে সরে গিয়ে জীবন সংগ্রামের বলি হয়ে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিচ্ছে। বেকারত্বের কারণে যুবকশ্রেণী হতাশার শিকার হয়ে সন্ত্রাসের পথ বেছে নিতে বাধ্য হচ্ছে ।
আরও পড়ুন :- বাংলা প্রবন্ধ রচনা: বিজ্ঞান মেলা - 2024
সন্ত্রাসী ঘটনাবলী :
পৃথিবীতে এ পর্যন্ত বহু সন্ত্রাসী ঘটনা ঘটেছে। এসব ঘটনার শিকার হয়েছেন বহু দেশের বহু রাষ্ট্রনায়ক ও বহু নেতাও। মিসরের আনোয়ার সাদাত, আমেরিকার জন এফ, কেনেডি, আব্রাহামলিংকন, ভারতের মহাত্মা গান্ধী, রাজীব গান্ধী, শ্রীংকার সলোমান বন্দরনায়েক, শ্রীজয়বর্ধন, পাকিস্তানের লিয়াকত আলী খান, জিয়াউল হক, বাংলাদেশের শেখ মুজিবুর রহমান ও জিয়াউর রহমান প্রভৃতি বহু সুযোগ্য ব্যক্তি সন্ত্রাসীদের হাতে নিহত হয়েছেন। এসব উল্লেখযোগ্য ব্যক্তিত্ব ছাড়াও বিভিন্ন দেশে অহরহ সন্ত্রাসের শিকার হয়ে বহু মানুষ প্রাণ হারাচ্ছেন।
সন্ত্রাস দমনের উপায় :
বর্তমানে সন্ত্রাস দমন কিভাবে হবে, তা নিয়ে সারা বিশ্বে চিন্তা ভাবনা চলছে । তবে নিম্ন পর্যায়ে সন্ত্রাস দমন করতে হলে দেশের আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোকে বিশেষভাবে সক্রিয় হতে হবে এবং কঠোর হস্তে দমনে আত্মনিয়োগ করতে হবে। এক্ষেত্রে সন্ত্রাসীকে 'সন্ত্রাস' বলেই চিহ্নিত করতে হবে। মনে রাখতে হবে সন্ত্রাসীর কোন জাতপাত নেই, নেই ধর্ম বর্ণ গোত্র । অন্য কোনভাবে ভাবলে চলবে না। কারণ সন্ত্রাসীরা দেশের শত্রু, দশের শত্রু ও জাতির শত্রু ।
সন্ত্রাসের কবলে বাংলাদেশ :
আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী চক্র এবং দেশীয় বড় বড় সন্ত্রাসী চক্রের কথা বাদ দিলেও আমাদের সমাজের আনাচে-কানাচে আজ সন্ত্রাসীদের অবাধ বিচরণ লক্ষ্য করা যায় । আজ মানুষ সন্ত্রাসীদের অব্যাহত দাপটে ঘর থেকে বের হতে ভয় পায় । মাদ্রাসা-স্কুল-কলেজের ছাত্র-ছাত্রী প্রায়ই সন্ত্রাসীদের কবলে পড়ে। এ জঘন্য অবস্থা বেশিদিন চলতে দেয়া উচিত নয় । এভাবে চলতে দিলে জাতি পঙ্গু হয়ে যাবে । তাই সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে সকলকে সোচ্চার হতে হবে এবং আইন প্রয়োগকারী সংস্থাগুলোর পাশাপাশি জনসাধারণকে সজাগ হতে হবে ।
উপসংহার :
সন্ত্রাসের দৌরাত্মকে কোনভাবেই প্রশ্রয় দেয়া উচিত নয়। কঠোর হস্তে সন্ত্রাস দমন করে সমাজকে সুস্থ করে তুলতে পারলেই শান্তি প্রতিষ্ঠা হবে এবং জাতীয় জীবনে সার্বিক উন্নতি দেখা দিবে। সন্ত্রাস দমনের সাথে সাথে আমাদের দেশের বেকার কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করে তাদের সৎ পথে ফিরিয়ে এনে মানব সম্পদে রূপান্তরিত করতে হবে। বিপুল বেকার যুব-শক্তি যদি জাতীয় উন্নয়নে সহায়ক হয়, তাহলে জীবনের সুস্থতার সঙ্গে ক্রমান্বয়ে সমাজেও শান্তি-স্বস্তি ফিরে আসবে এবং দেশের উত্তরোত্তর শ্রীবৃদ্ধি সাধিত হবে।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা