বাংলা প্রবন্ধ রচনা : বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান | PDF

উপস্থাপনা : 

ইতিহাস সাক্ষ্য জাতির ক্রান্তিকালে Hero বা নায়ক-এর প্রয়োজন হয়ে থাকে । তিনি তখন সাধারণের স্বপ্নের আশার প্রতিনিধিত্ব করেন । জাতির আপন সত্তা অর্জনের সংগ্রামে তিনি নেতৃত্ব দেন এবং জনকের অভিধা লাভ করেন । আমরা প্রত্যক্ষ করেছি আমাদের দেশের সেই মানুষটি, জাতির জনক বন্ধুবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ।

জন্ম : 

জাতির জনক বন্ধুবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ১৯২০ সালের ১৭ই মার্চ গোপালগঞ্জ জেলার টুঙ্গিপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । বাল্যকালে তিনি গ্রামের বাড়িতে লালিত-পালিত হন । তাঁর পিতার নাম শেখ লুৎফর রহমান এবং মাতার নাম সাহেরা বেগম 

শিক্ষা : 

গোপালগঞ্জ মিশন স্কুল হতে তিনি মেট্রিক পাস করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি কলিকাতা ইসলামিয়া কলেজ হতে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন । ১৯৪৭ সালে ভারত স্বাধীনতা লাভ করে এবং শেখ মুজিব ঢাকায় প্রত্যবর্তন করে আইনের উপর পড়াশোনা করেন ।

আরও পড়ুন :- বিশ্বকবি  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর - রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10] | PDF 

রাজনৈতিক জীবন : 

১৯৪৮ সালের ১১ই মার্চ তিনি ভাষা আন্দোলনের অন্যতম ছাত্রনেতা হিসেবে প্রথম গ্রেফতার বরণ করেন। ১৯৫০ সালে পূর্ব বাংলায় দুর্ভিক্ষের করাল গ্রাস হতে রক্ষায় তিনি পরিচালকের মূখ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৫৪ সালের যুক্তফ্রন্টের মাধ্যমে নির্বাচনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। 

১৯৬৬ সালের ১৩ই ফেব্রুয়ারি লাহোরে গোল টেবিল বৈঠকে তিনি ঐতিহাসিক ‘৬ দফা' কর্মসূচী পেশ করেন। ১৯৬৮ সালে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় তাঁকে ফাসানো হয়। ১৯৬৯ সালের গণ- অভ্যত্থানের ফলে ঐ বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি তিনি মুক্ত হলেন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা হতে। ১৯৬৯ সালের ২৩শে ফেব্রুয়ারি জনসাধারণ তাকে ‘বঙ্গবন্ধু' উপাধি দিয়ে বাংলার অবিসাংবাদিত নেতা হিসেবে ভূষিত করেন। 

তিনি ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ ডাক দিলেন “এবারের সংগ্রাম, আমাদের মুক্তির সংগ্রাম, এবারের সংগ্রাম আমাদের স্বাধীনতার সংগ্রাম'। তাঁর এ ডাক বাঙ্গীলী জাতির হৃদয়তন্ত্রীতে রণিত হল । তারা স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ল এবং প্রিয় মাতৃভূমি স্বাধীন করল ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলেন স্বাধীন সার্বভৌম বাংলাদেশে রাষ্ট্রের স্থাপয়িতা (Founder)। দীর্ঘ ১২ বছরের উপরে জেল- জুলুম, অত্যাচার-নির্যাতন সহ্য করেন এবং অনেক চিন্তা-ভাবনা করে ধাপে ধাপে সংগ্রামে সাফল্য লাভ করেই 'জাতির জনক' সম্মানের অভিধা অর্জন করেছিলেন তিনি।

আরও পড়ুন :-তোমার প্রিয় কবি - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10] 

তাঁর সাধনায় কোন ফাঁক -ফোকর ছিল না। বঙ্গবন্ধুর অসামান্য রাজনৈতিক সাফল্য, দূরদৃষ্টি ও রাষ্ট্রীয় চিন্তার একটি তাঁকে জাতির জনকের মর্যাদায় অধিষ্ঠিত করেছে। এরপর ১৯৭০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের প্রধান ছিলেন এবং সংসদে শতকরা ৯৮টি আসন লাভ করেন। কিন্তু ইয়াহিয়া সরকার ক্ষমতা ছেড়ে দেননি। 

দায়িত্ব গ্রহণ করেন। একটি যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ গড়ার কাজে তিনি আত্মনিয়োগ করেন । তিনি কিছু দিন রাষ্ট্রপতির দায়িত্বও পালন করেন। কিন্তু আমাদের চরম দুভার্গ্য যে, তিনি সে সময় দেশী-বিদেশী চক্রান্তের স্বীকার হয়ে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্টে সপরিবারে নির্মমভাবে নিহত হন। এভাবেই একজন অন্যতম শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালীকে আমরা হারিয়েছিলাম।

বিশ্বস্বীকৃতি : 

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের শান্তি প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে বিশ্ব শান্তি পরিষদ তাঁকে ‘জুলিও কুড়ি' পদকে ভূষিত করেন।

উপসংহার : 

বিশ্বের অন্যান্য মহান নেতাদের মতোই এই বঙ্গ শার্দুলের তেজোদ্দীপ্ত বজ্রকণ্ঠের নির্ঘোষে জাতি এক সময় হয় উঠেছিল একলব্য সৈনিক, সেই মহান নেতা এখন নীরব-নিথর শুয়ে আছেন টুঙ্গিপাড়ার মাটিতে পিতা-মাতার কবরের পাশেই। দেশের প্রতি ও এদেশের মানুষের প্রতি তাঁর অনুরাগ ছিল অপরিসীম । তাই তিনি বাংলার ইতিহাস তথা বিশ্বের ইতিহাসে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন । তাঁর অবদানের জন্য তিনি আমাদের প্রাতঃস্মরণীয়।




Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad