ক্রোমোজোম কাকে বলে? কয় প্রকার। ক্রোমোজোমের গঠন, কাজ

সংজ্ঞা : নিউক্লিয়াসের অভ্যন্তরীন গাঢ় বর্ণ ধারণকারী ক্রোমাটিন তন্তুটি কোষ বিভাজনের শুরুতে ভেঙ্গে যখন নির্দিষ্ট সংখ্যক খণ্ডে বিভক্ত হয়, তখন তাকে ক্রোমোজোম বলে।

ক্রোমোজোমের উৎপত্তি :- 

গ্রীক শব্দ Chromos (বর্ণ) Soma (বস্তু) থেকে ক্রোমোজোম (Chromosome) শব্দটি এসেছে— যার আভিধানিক অর্থ বর্ণযুক্ত বস্তু। ডব্লিও ওয়েলডেয়ার ১৮৮৮ খ্রিস্টাব্দে ক্রোমোজোম শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।

ক্রোমোজোমের প্রকারভেদঃ 

সেন্ট্রোমিয়ারের সংখ্যা অনুযায়ী ক্রোমোসোম ৫ প্রকার; যথা—

১। মনোসেন্ট্রিক (Monocentric) : 

১ সেন্ট্রোমিয়ার বিশিষ্ট ক্রোমোসোমকে মনোসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম বলে।

২। ডাইসেন্ট্রিক (Dicentric) : 

২ সেন্ট্রোমিয়ার বিশিষ্ট ক্রোমোসোমকে ডাইসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম বলে।

৩। পলিসেন্ট্রিক (Polycentric) : 

২ এর অধিক সেন্ট্রোমিয়ার বিশিষ্ট ক্রোমোসোমকে পলিসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম বলে ।

৪। ডিফিউজড (Diffused) : 

ক্রোমোসোমে সেন্ট্রোমিয়ার নির্দিষ্ট স্থানে সুস্পষ্টভাবে থাকে না।

৫। অ্যাসেন্ট্রিক (Acentric) : 

এক্ষেত্রে ক্রোমোসোমের কোনো সেন্ট্রোমিয়ার থাকে না। তখন তাকে অ্যাসেন্ট্রিক ক্রোমোসোম বলে । 

আরও পড়ুন :- নিউক্লিয়াস কাকে বলে? নিউক্লিয়াসের গঠন, কাজ, চিত্র ও অংশ 

সেন্ট্রোমিয়ারের অবস্থান অনুসারে ক্রোমোজোমকে ৪ প্রকার। যথাঃ 

(i) মেটাসেন্ট্রিক (Metacentric) : 

ক্রোমোজোমের বাহুর মাঝ বরাবর সেন্ট্রোমিয়ার থাকলে তাকে মেটাসেন্ট্রিক বলে । এটি দেখতে ‘V’ আকৃতির।

(ii) সাবমেটাসেন্ট্রিক (Submetacentric) : 

ক্রোমোজোমের বাহুর মাঝ বরাবর অবস্থানের যেকোনো পাশে সামান্য সরে সেন্ট্রোমিয়ার অবস্থান করলে তাকে সাবমেটাসেন্ট্রিক বলে । এটি দেখতে ‘L’ আকৃতির।

(iii) অ্যাক্রোসেন্ট্রিক (Acrocentric) : 

সেন্ট্রোমিয়ার ক্রোমোজোমের বাহুর একদিকে প্রান্তের প্রায় কাছাকাছি অবস্থান করলে তাকে অ্যাক্রোসেন্ট্রিক বলে । একে ‘J’ আকৃতির দেখায়। 

(iv) টেলোসেন্ট্রিক (Telocentric) : 

সেন্ট্রোমিয়ারটি ক্রোমোজোমের বাহুর একেবারে প্রান্তসীমায় থাকলে তাকে টেলোসেন্ট্রিক বলে । একে “I” আকৃতির দেখায়।

ক্রোমোজোমের গঠন :-

ক্রোমোজোমের ভৌত গঠন -

একটি আদর্শ ক্রোমোজোমে প্রধানত নিম্নলিখিত অংশগুলো পরিলক্ষিত হয়; 

১. পেলিকল (Pellicle) : 

ক্রোমোজোমের বাহ্যিক পাতলা আবরণকে পেলিকল বলে।

২. মাতৃকা (Matrix): 

পেলিকলের অভ্যন্তরে ঘন জেলির ন্যায় তরলবস্তুকে মাতৃকা বলে ।

৩. ক্রোমাটিড (Chromatid) : 

প্রতিটি ক্রোমোজোম দু'টি করে সূক্ষ্ম সূতা দ্বারা গঠিত, এদেরকে ক্রোমাটিড বলে।

৪. ক্রোমোনিমা (Chromonema) : 

দুটি ক্রোমোটিডের প্রত্যেকটিকে আলাদা আলাদাভাবে ক্রোমোনিমা বলে ।

৫. ক্রোমোমিয়ার (Chromomere) : 

প্রতিটি ক্রোমোনিয়া অসংখ্য ক্ষুদ্র-ক্ষুদ্র পুতির মতো অংশ নিয়ে গঠিত, এই দানার মত অংশগুলোকে ক্রোমোমিয়ার বলে ।

৬. সেন্ট্রেমিয়ার (Centromere) : 

প্রতিটি ক্রোমোজোমে একটি গোলাকার সংকুচিত স্থান থাকে, তাকে সেন্ট্রেমিয়ার বা মুখ্য সংকোচন বলে।

৭. গৌণ সংকোচন (Secondary Constriction) : 
সেন্ট্রেমিয়ার ছাড়া ক্রোমোজোমের এক বা উভয় বাহুতে আরো একটি সংকোচনকে গৌণ সংকোচন বলে ।

৮. স্যাটেলাইট (Satelite) : 

গৌণ সংকোচন ক্রোমোজোমের একটি ক্ষুদ্র অংশকে যখন একটি সূক্ষ্ম তন্তুর দ্বারা সংযুক্ত করে তখন ক্ষুদ্র অংশটিকে স্যাটেলাইট বলে। স্যাটেলাইট যুক্ত ক্রোমোজোমকে স্যাট (SAT) ক্রোমোজোম বলে ।

৯. টেলোমিয়ার (Telomere) : 

ক্রোমোজোমের দু'বাহুর শেষ প্রান্তকে টেলোমিয়ার বলে ।

১০. ইউক্রোমাটিন (Euchromatine) : 

রঞ্জিত করলে ক্রোমোজোমের যে অংশ হালকা রং ধারণ করে, তাকে ইউক্রোমাটিন বলে ।

১১. হেটারোক্রোমাটিন (Heterochromatine) : 
রঞ্জিত করলে ক্রোমোজোমের যে অংশ গাঢ় রং ধারণ করে, তাকে হেটারোক্রোমাটিন বলে।

আরও পড়ুন :- লাইসোজোম কাকে বলে?লাইসোজোম এর গঠন,কাজ। আত্মঘাতী থলি

ক্রোমোজোমের রাসায়নিক গঠন :-

  • ১। ক্রোমোজোম মূলত নিউক্লিওপ্রোটিনে গঠিত। 
  • ২।  দু'ধরনের নিউক্লিক অ্যাসিড যথা— DNA এবং RNA
  • ৩। দু'ধরনের প্রোটিন যথা- হিস্টোন এবং ক্রোমোজোমিন । DNA ও হিস্টোনের পরিমাণ যথাক্রমে ৩৫% ও ৫৫%।
  • ৪। কয়েক প্রকার ধাতব আয়ন যথা – ক্যালসিয়াম, লৌহ, ম্যাগনেসিয়াম ইত্যাদি।

ক্রোমোজোমের কাজ :-

  • ১. DNA বা জীন অণু ধারণ করা।
  • ২. প্রোটিন সংশ্লেষণ করা ।
  • ৩. প্রকরণ, মিউটেশন ও অভিব্যক্তিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করা ।
  • ৪। সেক্স ক্রোমোজোম লিঙ্গ নির্ধারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ৫। বংশগতির বাহক জিন জীবের জীবনের  ব্লু প্রিন্ট হিসেবে কাজ করে। 

Post a Comment

0 Comments