উপস্থাপনা :
ভালো বইয়ের সন্ধানে মানুষ সবসময় তীব্র আকর্ষণবোধ করে। মানুষের সে আকর্ষণের ফসল হলো বইমেলা। বাংলাদেশের ইতিহাস ঐতিহ্যের এক স্মারক হলো একুশের বইমেলা। '৫২-এর একুশে ফেব্রুয়ারিতে ভাষা আন্দোলনের মাধ্যমে এ দেশের মানুষের চেতনার যে উন্মোষ ঘটেছিল তারই স্মরণে প্রতিবছর ঢাকায় বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী অনুষ্ঠিত হয় একুশের বইমেলা ।
একুশের বইমেলার সূচনা :
একুশে ফেব্রুয়ারির চেতনার বহুমুখী বিকাশের লক্ষ্যে এ দেশের কবি-সাহিত্যিক, বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষিত সমাজ পরিকল্পনা গ্রহণ করে । ১৯৫৫ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় বাংলা একাডেমী । বাংলা একাডেমী প্রতিবছর একুশে ফেব্রুয়ারির সমৃদ্ধ অনুষ্ঠান প্রবর্তন করে ।
১৯৭৫ সালে বাংলা একাডেমীর একুশের অনুষ্ঠানকে ঘিরে কয়েকজন প্রকাশক, সাহিত্যিক এবং বিক্রেতা বই বিক্রির উদ্যোগ গ্রহণ করে । বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে কয়েকটা স্টল খুলে এ প্রয়াস চালায় তারা। সেই থেকে বইমেলা ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে । আজকের বিশাল ব্যাপ্তির বইমেলা এ উদ্যোগেরই ফসল ।
বইমেলার সময়কাল ও স্থান :
প্রতিবছর ১ ফেব্রুয়ারি একুশের বইমেলার উদ্বোধন করা হয় । সারা ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী এ মেলা চলে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সন্নিহিত বাংলা একাডেমী প্রাঙ্গণে একুশের বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। বই মেলায় কয়েকশ প্রকাশক ও বিক্রেতা মেলা প্রাঙ্গণে স্টল স্থাপন করে বইয়ের বিপনন, প্রচার এবং পাঠক সৃষ্টিতে অবদান রাখেন । প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলতে থাকে ক্রেতা-পাঠকদের সমাগম । মেলা প্রাঙ্গণ হয়ে ওঠে জনসমুদ্র।
আরও পড়ুন :- বাংলা প্রবন্ধ রচনা: বিজ্ঞান মেলা - 2024
বইমেলার অন্যান্য দিক :
প্রতিবছর একুশের বইমেলা অনুষ্ঠিত হয়। বইমেলার একদিকে থাকে শত শত বই'র স্টল। অন্যদিকে থাকে একুশের মঞ্চ। মঞ্চে দেশবরেণ্য কবি-সাহিত্যিক, শিক্ষাবিদগণ বিষয়ভিত্তিক আলোচনা উপস্থাপন করেন । গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার প্রতি বছর একুশে পদক ঘোষণা করে।
দেশের খ্যাতনামা কবি সাহিত্যিকগণ তাদের সৃজনশীল কর্মকাণ্ডের স্বীকৃতিপ্রাপ্ত হন। একুশের বইমেলা উপলক্ষে প্রতিবছর কয়েকশ নতুন বই প্রকাশিত হয় । এর ফল নতুন প্রতিভার সন্ধান পায় দেশবাসী । নতুন নতুন সাহিত্যকর্ম প্রকাশ পাওয়ার সুযোগ প্রাপ্ত হয়।
বইমেলা প্রাণের মেলা :
বইমেলা এ দেশের জাতীয় জীবনে অভাবনীয় গুরুত্বের অধিকারী একটি জাতীয় উৎসব। এ দেশের সভ্যতা সংস্কৃতিতে বইমেলা অবিচ্ছেদ্য একটি দিক হিসেবে বিবেচিত হয়। সারা ফেব্রুয়ারি মাসব্যাপী লক্ষ পাঠক লেখক- প্রকাশকের অভূতপূর্ব এক মিলন মেলায় পরিণত হয় বাংলা একাডেমী আয়োজিত একুশের বইমেলা।
কর্মক্লান্ত মানুষেরা এ মেলা উপলক্ষে তাদের পছন্দের লেখক ও তাদের প্রকাশিত বইয়ের সাথে পরিচিতি লাভ করে। পছন্দের বই ক্রয় করে নিজের জ্ঞানের পরিধি বৃদ্ধির সুবর্ণ সুযোগপ্রাপ্ত হয়। সর্বোপরি বইয়ের পঠন ও পাঠনে বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
আরও পড়ুন :- বাংলা নববর্ষ - রচনা [ class 6, 7, 8, 9, 10 ] PDF
বইমেলার গুরুত্ব :
বইমেলা বাংলাদেশের সাহিত্য ও সংস্কৃতির বিকাশে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে । বইমেলা উপলক্ষে লেখকরা তাদের বই প্রকাশে প্রকাশকদের পৃষ্ঠপোষকতা লাভ করে । ফলে প্রতিবছর দেশে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক নতুন লেখক-গবেষক সৃষ্টি হয় । বইমেলার ব্যাপক প্রচারের ফলে অসংখ্য পাঠক মেলায় ভিড় করে এবং বই কেনে।
ফলে প্রকাশকরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়, তাদের নতুন নতুন বই প্রকাশে উৎসাহ লাভ করে । এছাড়া এর ফলে বইপ্রেমিক ও পাঠক শ্রেণী বৃদ্ধি পায় । একুশের বইমেলা জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রচার মাধ্যমসমূহে ব্যাপক কাভারেজ পায়। ফলে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে বাংলা ভাষা ও এর সাহিত্য প্রচার-প্রসার লাভ করে।
উপসংহার :
বাংলাদেশের ইতিহাস ও ঐতিহ্যের সাথে মিলে মিশে একাকার হয়ে গেছে একুশে এবং একুশের বইমেলা । ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বাংলাকে মাতৃভাষা করার দাবিতে যে আন্দোলন হয়েছিল কালক্রমে তা স্বাধীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে প্রেরণার উৎস হিসেবে ভূমিকা পালন করে।
বাংলাদেশের জাতীয় ইতিহাসে এ দিবসকে ঘিরে অনুষ্ঠেয় ‘একুশের বইমেলা' আলোর মশাল হয়ে জাতিকে দিশা দেয় নিজস্ব সংস্কৃতির। ‘একুশে'র অর্জন এবং অবদানকে বিশ্বসভাও স্বীকৃতি দিয়েছে। জাতিসংঘ ২১ ফেব্রুয়ারিকে বিশ্ব মাতৃভাষা দিবস ঘোষণা করেছে। একুশে ফেব্রুয়ারি এবং একুশের বইমেলা তাই বিশ্বব্যাপী আলোচিত এ দশবাসীর এক ঐতিহ্যমণ্ডিত বিষয় ।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা