উপস্থাপনা :
বিশ্বকে আজ হাতের মুঠোয় এনেছে যে প্রক্রিয়া তার নাম ইন্টারনেট। তথ্য প্রযুক্তির এ ক্ষেত্রটি আজ সারাবিশ্বে আলোড়ন সৃষ্টি করেছে। ইন্টারনেট ব্যবস্থা পৃথিবীর সকল কম্পিউটার ব্যবহারকারীকে একটি যোগাযোগ জাল (Communication net)-এ আবদ্ধ করেছে। যোগাযোগ তথা তথ্য আদান-প্রদান, জ্ঞানের প্রসার, ব্যবসায় বাণিজ্যসহ যাবতীয় ক্ষেত্রে এক বৈপ্লবিক পরিবর্তন এনে দিয়েছে এ ইন্টারনেট।
ইন্টারনেটের পরিচয় :
ইন্টারনেট হলো বিশ্বব্যাপী বৃহৎ কম্পিউটারের নেটওয়ার্ক বা Inter-nation Computer Network Service. ব্যক্তিগত এবং প্রাতিষ্ঠানিক সমস্ত কম্পিউটার ইন্টারনেটের মাধ্যমে একে অপরের সাথে অতি দ্রুত যোগাযোগ স্থাপন ও তথ্য আদান - প্রদান করতে পারে। বিশ্বব্যাপী হাজার হাজার কম্পিউটারের বিভিন্ন সামরিক-বেসামরিক ব্যবসায় ও গবেষণার নেটওয়ার্ক পরিচালিত হচ্ছে এবং বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিজ নিজ প্রয়োজনে নেটওয়ার্কিং পদ্ধতির মাধ্যমে কাজ গতিশীল করে তুলেছে।
ইন্টারনেটের প্রযুক্তিকরণ :
ইন্টারনেটে দুটি পদ্ধতিতে কম্পিউটারকে সংযুক্ত করা যায়। যথা-
3. On line Service বা প্রত্যক্ষভাবে সংযুক্তি।
2. Off line Service বা পরোক্ষভাবে সংযুক্তি।
এছাড়া সাধারণত তিন ধরনের নেটওয়ার্কিং সিস্টেম থেকে ইন্টারনেট সংযুক্তি হতে পারে। সেগুলো হলো-
১. LAN (local Area Network) : সাধারণত এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে একটি ছোট নেটওয়ার্ক সিস্টেম।
2. MAN (Metropoliton Area Network) : এটি হচ্ছে কয়েক কিলোমিটার ব্যাপী একটি নেটওয়ার্ক।
3. WAN (Wide Area Network) : এটা বিশ্বব্যাপী একটি বিশাল নেটওয়ার্কিং সিস্টেম। এতে তথ্য প্রবাহের স্বাভাবিক গতি প্রায় ৯.৬ Kbps |
আরও পড়ুন :- কম্পিউটার - প্রবন্ধ রচনা : ৬ষ্ঠ, ৭ম ও ৮ম শ্রেণী | PDF
ইন্টারনেটের ইতিহাস :
১৯৬৯ সালে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা বাহিনী সর্বপ্রথম ইন্টারনেট ব্যবহার শুরু করে, যার উদ্দেশ্য ছিল পারমাণবিক আক্রমণ ঠেকানোর জন্য বৈজ্ঞানিক তথ্য ও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য আদান-প্রদান করা। পেন্টাগন তখন টেলিফোনের বিকল্প হিসেবে ৪টি কম্পিউটারের মাধ্যমে তথ্যের আদান-প্রদান করতো। সেসময়ে এ যোগাযোগের নাম দেয়া হয় 'ডার্পানেট'।
তিন বছর পর এ প্রক্রিয়ার নাম হয় 'অর্পানেট'। আশির দশকের শেষের দিকে স্নায়ুযুদ্ধের অবসান হলে যুক্তরাষ্ট্রের 'ন্যাশনাল সায়েন্স ফাউন্ডেশন' সর্বসাধারণের জন্য নতুন একটি যোগাযোগ ব্যবস্থা চালু করে। এর নাম দেয়া হয় ‘নেস্টেনেট’। পরবর্তীতে বিশ্বব্যাপী এর গ্রাহকসংখ্যা বৃদ্ধি পেলে এর নাম দেয়া হয় ‘ইন্টারনেট” ।
বাংলাদেশে ইন্টারনেট :
বাংলাদেশে ১৯৯৩ সালের ডিসেম্বরে ইন্টারনেট চালু হলেও দীর্ঘদিন বাংলাদেশ অফলাইন ইন্টারনেটের অন্ত র্ভুক্ত ছিল। এর মাধ্যমে শুধুমাত্র E-Mail সার্ভিসের সুবিধা পাওয়া যেত। ১৯৯৬-এর ১৫ জুন থেকে ISN (Information Service Network) নামক একটি ফার্ম একটি সার্ভার স্থাপন করে অনলাইন ইন্টারনেটের সংযোগ দেয়া শুরু করে।
বর্তমানে ১২টি প্রতিষ্ঠান অনলাইনে সংযোগ দিয়ে থাকে। এছাড়াও নানাবিধ সুবিধা পাওয়া যায় ইন্টারনেটের মাধ্যমে। সরকারি উদ্যোগে ইতোমধ্যে তা সাবমেরিন ক্যাবলের সাথে সংযুক্ত হয়েছে। এ তথ্য প্রযুক্তির মহাসড়ক বাংলাদেশের জন্য তথ্য যোগাযোগের ক্ষেত্রে অবারিত সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
আরও পড়ুন :- কম্পিউটার : বাংলা প্রবন্ধ রচনা - Class 8, 9 এবং SSC | PDF
যেভাবে ইন্টারনেটে প্রবেশ করতে হয় :
বাসা বা অফিসে বসে ইন্টারনেট চালাতে হলে যে চারটি জিনিস প্রয়োজন, তা নিম্নরূপ-
কম্পিউটার :
এটা তথ্যাদি টাইপ করতে সাহায্য করে এবং তার নিজস্ব মেমোরিতে রেখে দেয়। এরপর তা নেটওয়ার্কিং সফটওয়্যারের মাধ্যমে প্রাপকের কাছে তথ্যাদি পাঠানোর প্রাথমিক আয়োজন করে।
মডেম :
এর পূর্ণনাম Modulator/Demodulator. সাধারণ টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে তথ্যাদি পাঠানোর উপযোগী করার জন্য এক কম্পিউটার থেকে অপর কম্পিউটারে তথ্যাদিকে ডিজিটাল থেকে এনালগ, আবার এনালগ থেকে ডিজিটালে রূপান্তরিত করার একটি ডিভাইস।
টেলিফোন লাইন :
টেলিফোন বা সেলুলার লাইন ছাড়া ইন্টারনেটের কোনো প্রক্রিয়াই সম্ভব নয়। লাইনের স্পীড-এর ওপর তথ্যাদি দ্রুত স্থানান্তরিত হওয়া নির্ভর করে । এনালগের তুলনায় ডিজিটাল টেলিফোনে তথ্যাদি দ্রুত স্থানান্তরিত হয়।
ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডাল :
এদের কাজ অনেকটা পোস্ট অফিসের মতো। এদের সদস্য হলে মাসিক বা ব্যবহৃত সময়ের ভিত্তিতে নির্দিষ্ট একটি চার্জ নিয়ে তাদের নিজস্ব শক্তিশালী কম্পিউটার ফাইবার অপটিক্স বা স্যাটেলাইটের (VSAT) মাধ্যমে দেশে- বিদেশে অন্যান্য ইন্টারনেট সদস্যদের সাথে যোগাযোগ করিয়ে দেয়। ১৯৯৬ সালে বাংলাদেশে অনলাইন ইন্টারনেট চালু হয়। এর পূর্বে অফলাইন ইন্টারনেট চালু ছিল। মোট ১২টি সংস্থা এখন অনলাইনে সংযোগ দিয়ে থাকে।
আরও পড়ুন :- মানব কল্যাণে বিজ্ঞান - বাংলা রচনা ২০ পয়েন্ট - PDF
ইন্টারনেটের বহুমুখী ব্যবহার :
ইন্টারনেট একটি বিশাল ব্যাপার। একটি Software-এর পক্ষে সকল সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা সম্ভব নয়। প্রত্যেকটি সার্ভিসের জন্য পৃথকভাবে একটি করে Software প্রয়োজন। Software-এর মাধ্যমে পাওয়া যেতে পারে, এমন কয়েকটি বহুল ব্যবহৃত IP (Internet Protocol) সম্পর্কে নিচে আলোচনা করা হলো-
১. Telenet (Telephone Network) : একটি কম্পিউটার যে ইন্টারনেটের মাধ্যমে অপর কম্পিউটারের সাথে সংযুক্ত হয়, এর মাধ্যমে তা ব্যবহার করা যায়। এর জন্য একটি Password প্রয়োজন হয়।
2. FTP Session (File Transfer Protocol) : এ Protocol-এর মাধ্যমে একটি কম্পিউটার থেকে আরেকটি কম্পিউটারের মধ্যে ফাইল আদান-প্রদান করা যায় ।
৩. এটি এমন একটি Protocol, যা অসংখ্য ফাইলের Archive থেকে নির্দিষ্ট ফাইলটি খুঁজে পেতে সাহায্য করে ।
8. IRC (Internet Relay Chat) : এর মাধ্যমে অসংখ্য ইন্টারনেট ব্যবহারকারী একই সাথে নিজেদের মধ্যে আলাপ-আলোচনা করতে পারে।
৫. E-mail (Electronic Mail) : এর মাধ্যমে তাৎক্ষণিকভাবে পৃথিবীর যে কোনো ইন্টারনেট ব্যবহারকারীর সাথে তথ্য আদান- প্রদান করা যায়।
৬. Gophes : এর মাধ্যমে খুব সহজে ফাইল Copy করা যায়। কম্পিউটারে এর জন্য আলাদাভাবে Supporting Software থাকতে হবে।
৭. WWW (World Wide Web) : এটি একটি জনপ্রিয় এবং যুগল ব্যবহৃত Protocol । এখানে তথ্যগুলো Multimedia-এর মাধ্যমে একই সময়ে চিত্র ও শব্দ সহকারে পাওয়া যায়। তবে এর জন্য পৃথক Software প্রয়োজন হয় ।
৮. Net News: এ Protocol এর মাধ্যমে অতি সহজে News group-গুলোর মধ্যে তথ্য আদান-প্রদান করা যায়। সাংবাদিকরা এ ইন্টারনেটের মূল ব্যবহারকারী।
ইন্টারনেটের সুবিধা :
ইন্টারনেটের মাধ্যমে বহুবিধ সুবিধা পাওয়া যায়। আসলে প্রত্যেকটি আবিষ্কারের পেছনে কোনো না কোনো উদ্দেশ্য নিহিত থাকে। তেমনিভাবে ইন্টারনেট আবিষ্কারের মূল যে উদ্দেশ্য নিহিত ছিল, তা হলো দ্রুত তথ্য আদান-প্রদান করা।
ক. নিউজ গ্রুপ : নিউজ গ্রুপ একটি তথ্য বা সংবাদ প্রদানকারী সংস্থা। ইন্টারনেটের News group ব্যবহার করে বিশ্বের খবরাখবর জানা সম্ভব।
খ. বই পড়া : লেখাপড়া ও গবেষণার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন যথার্থ বই, যা সবসময় হাতের কাছে পাওয়া যায় না। ইন্টারনেট প্রযুক্তির ফলে কম্পিউটারের Key Board-এ চাপ দিয়ে বিশ্বের যে কোনো লাইব্রেরির বই পড়া যায় ।
গ. ব্যবসায়-বাণিজ্য : Web browser-এর commerce option-টির মাধ্যমে বিভিন্ন দ্রব্যের কেনাকাটার অর্ডার দেয়া যায়। এক প্রতিষ্ঠানের সাথে আরেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায় বাণিজ্য সম্পর্কিত লেনদেন সম্পাদন করা যায় ।
ঘ. আইন : জটিল মামলার ক্ষেত্রে আইনী পরামর্শের জন্য ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিদেশের আইনজ্ঞের শরণাপন্ন হওয়া যায়। আইনী প্রতিষ্ঠানের ইন্টারনেট কমান্ড করলেই Monitor-এ আইনগত নির্দেশনা ভেসে উঠবে।
ঙ. বিদেশি পত্রিকা পাঠ : ইন্টারনেট প্রযুক্তির কল্যাণে বাড়িতে বসে আমরা বিশ্বের বিভিন্ন দেশের ম্যাগাজিন, পত্রিকা পাঠ করতে পারি।
চ. ভ্রমণ : ভ্রমণ স্থানের আবহাওয়া, থাকার হোটেল, রিজার্ভেশন, রেন্ট-এ-কার, বিমানের টিকিট বুকিং সবই এখন ইন্টারনেটের মাধ্যমে করা যায় ।
ঝ. শিক্ষা : বিদেশি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় সম্পর্কে তথ্য দিতে পারে ইন্টারনেটের Website-এর Education Option-টি।
উপসংহার :
বিংশ শতাব্দীর এক বিস্ময়কর প্রযুক্তি ইন্টারনেট। অচিরেই বিশ্বের সবদেশে এ প্রযুক্তির আরও বিস্তার ঘটবে নিঃসন্দেহে । ফলে তথ্য আদান-প্রদান, ব্যবসায়-বাণিজ্য, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সকল ক্ষেত্রে ইন্টারনেট বিপ্লব ঘটবে।