হোম পদার্থ রসায়ন জীব ইসলামিক

ভূমিকম্প ও বাংলাদেশ – প্রবন্ধ রচনা

উপস্থাপনা :

ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে প্রাকৃতিক দুর্যোগ বাংলাদেশের জন্য একটি নিত্তনৈমিত্তিক ঘটনা। এদেশে প্রতি বছরই কোনো না কোনো দুর্যোগে মানুষের জীবনযাত্রা বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। বারবার সংঘটিত বন্যা, সাইক্লোন, জলোচ্ছ্বাস, টর্নেডো, খরা, নদীভাঙ্গন, ভূমিধসের পাশাপাশি যে প্রাকৃতিক দুর্যোগ আমাদেরকে নতুন করে ভাবিয়ে তুলছে সেটি হলো ভূমিকম্প।

বিগত কয়েক বছর ধরে বারবার মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের ভূমিকম্প এদেশে আঘাত হেনেছে। প্রশমনের উপযুক্ত পন্থা না থাকায় বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হলে সকলের পরিণতি নিয়ে সম্প্রতি আমাদের মনে ভীতির সঞ্চার হয়েছে।ভূমিকম্পের ভয়াবহ বিপর্যয় এড়াতে জরুরিভিত্তিতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গৃহীত না হলে এ দুর্যোগের বিরাট ঝুঁকি নিয়েই আমাদের বাস করতে হবে।

আরও জানুন : বাংলাদেশের প্রাকৃতিক দুর্যোগ রচনা ( ২০ পয়েন্ট ) – pdf

ভূমিকম্প কী :

পৃথিবীর কঠিন ভূত্বকের কিছু অংশ কখনো কখনো স্বল্প সময়ের জন্য হঠাৎ হঠাৎ কেঁপে উঠে, একেই ভূমিকম্প বলে। সাধারণত এরূপ কম্পন মাত্র কয়েক সেকেন্ড স্থায়ী হয় আবার কখনো কিছু সময় পরপর সংঘটিত হয়। কম্পনের মাত্রা কখনো মৃদু আবার কখনো অত্যন্ত প্রবল হয়।

পৃথিবীর অভ্যন্তরে যে স্থানে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয় তা কেন্দ্র নামে অভিহিত। ভূপৃষ্ঠ থেকে ভূকম্পনের এই কেন্দ্র ১৬ কিলোমিটারের মধ্যে অবস্থান করে। আর কেন্দ্রের ঠিক উপরে ভূপৃষ্ঠস্থ বিন্দুকে উপকেন্দ্র বলে। উপকেন্দ্র কেন্দ্রের সবচেয়ে নিকটে অবস্থিত বলে সেখানে কম্পনের বেগ সবচেয়ে বেশি অনুভূত হয়।

এটি এমন একটি শক্তি যা ভূপৃষ্ঠকে প্রবল ঝাঁকুনি দ্বারা আকস্মিক বা দ্রুত পরিবর্তন করতে পারে। ভূমিকম্প নিজে কোনো প্রাণহানি বা জখমের কারণ হয় না। তবে পরোক্ষভাবে পড়ন্ত ভারী বস্তু বা দেয়ালধসের মাধ্যমে জানমালের ব্যাপক ক্ষতি করে।

আরও জানুন : বাংলাদেশের বন্যা ও তার প্রতিকার রচনা (২০ পয়েন্ট)

ভূমিকম্প কেন হয় :

সম্প্রতি আমাদের দেশে পুনঃপুন মৃদু-মাঝারি ভূকম্পন এবং ইন্দোনেশিয়া, হাইতি প্রভৃতি দেশে ঘটে যাওয়া ভয়াবহ ভূমিকম্পের ক্ষয়-ক্ষতি অবলোকনে এর কারণ সম্পর্কে সকলেরই কৌতূহল বাড়ছে।

ভূমিকম্পের কারণ অনুসন্ধানে ভূতত্ত্ববিদগণ লক্ষ করেন, শিলাচ্যুতি, তাপ বিকিরণ, অগ্ন্যুদগম, পানি বাষ্পীভবন, ভূমিধস প্রভৃতি কারণে ভূ-ত্বকের নিচে আন্দোলিত হয় এবং ভূকম্পন অনুষ্ঠিত হয়।ভূমিকম্পের তীব্রতা অনুযায়ী পৃথিবীর একপ্রান্তে অবস্থিত ভূকম্পনকেন্দ্র থেকে সৃষ্ট তরঙ্গমালা অপরপ্রান্ত পর্যন্ত পৌঁছতে পারে।

তবে কেন্দ্র থেকে তরঙ্গগুলো যত দূরে অগ্রসর হবে এর তীব্রতা তত হ্রাস পাবে। মৃদু কিংবা প্রবল ভূমিকম্প মাপার এককের নাম রিখটার স্কেল। পৃথিবীর সব অংশে কমবেশি ভূমিকম্প অনুভূত হলেও ভঙ্গিল পর্বত ও ভূগঠন প্লেটসমূহের সীমান্ত অঞ্চলে এর তীব্রতা বেশি হয়।

বাংলাদেশে ভূমিকম্প ঝুঁকির কারণ :

অতি সম্প্রতি বাংলাদেশকে ভূমিকম্পের ঝুঁকিপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিত্রিত করা হয়েছে। এদেশের বগুড়া, তানোর, ত্রিপুরা, সীতাকুণ্ড, টেকনাফ, হালুয়াঘাট, ধুবরি, চট্টগ্রাম, শাহীবাজার, রাঙামাটি এই মোট ১০টি জুচ্যুতি এলাকার জন্য ভূমিকম্পের ঝুঁকি অত্যন্ত বেশি।

আরও জানুন : জীবন রক্ষায় রক্তদান – প্রবন্ধ রচনা

এছাড়া বাংলাদেশের অবস্থান ভারত, ইউরেশিয়া, বার্মা, টেকটোনিক প্লেটের সীমান্ত বর্তী অঞ্চলে। এই টেকটোনিক প্লেট হিমালয়ে বাধাপ্রাপ্ত হয়ে বন্ধ হয়ে আছে এবং শক্তি সঞ্চয় করছে। আর এই শক্তির প্রবলতার কারণে যখন টেকটোনিক প্লেট খুলে যাবে তখন বড় ধরনের ভূমিকম্পের আশঙ্কা দেখা দেবে।

এদেশের কতিপয় ভয়াবহ ভূমিকম্প :

বাংলাদেশের অতীত রেকর্ড থেকে জানা যায়, ১৮৮৫ ও ১৮৯৭ সালে তৎকালীন বঙ্গদেশে প্রচণ্ড বিধ্বংসী ক্ষমতাসম্পন্ন ভূমিকম্প সংঘটিত হয়েছে। এছাড়া ১৯০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১০০টি মাঝারি ও শক্তিশালী ভূমিকম্প বাংলাদেশ ও বাংলাদেশের পার্শ্ববর্তী এলাকায় আঘাত হেনেছে। তবে ভূমিকম্প সংক্রান্ত ডাটা থেকে এটা স্পষ্টভাবে দেখা যাচ্ছে যে, এদেশে ভূমিকম্পের পরিমাণ ও তীব্রতা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে।

ভূমিকম্পে বাংলাদেশে ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ :

ভূমিকম্পে কী পরিমাণ ক্ষয়ক্ষতি হতে পারে তা অনুমান করা যায় মাত্র। অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের মতো ভূমিকম্প সম্বন্ধে তেমন কোনো পূর্বাভাস দেয়া যায় না। ফলে মানুষ সতর্কতামূলক কোনো পূর্বপ্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে না। তাছাড়া ভূমিকম্পের সময় এবং পরপরই কী করণীয় এ বিষয়ে আমাদের দেশের মানুষের জ্ঞানের যথেষ্ট অভাব রয়েছে।

দালানকোঠা, বহুতল ভবন নির্মাণের সময় ভূমিকম্প প্রতিরোধকারী ব্যবস্থা গ্রহণেও রয়েছে প্রচণ্ড অনীহা। যার ফলে এদেশে বড় ধরনের ভূমিকম্প সংঘটিত হলে ভবনগুলো বাসিন্দাদের প্রাণহানি ঘটিয়ে ধসে পড়বে বা দেয়াল চাপায় লোকজন আটকা পড়ে থাকবে।

কাঁচা ঘর-বাড়ি, রাস্তাঘাট, ব্রীজ উৎপাটিত হবে এবং জীবজন্তু মারা পড়বে। আর ভূমিকম্প-পরবর্তী দুর্ঘটনা আরো ভয়াবহ; বৈদ্যুতিক তারের বিচ্যুতি, গ্যাস-পাইপে ফাটল প্রভৃতির মাধ্যমে আগুনের সূত্রপাত ঘটে, যাতে মানুষ হতভম্ব হয়ে পড়ে এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণে বিলম্ব ঘটায়।

তাছাড়া জীবনধারণের অতিপ্রয়োজনীয় উপায়গুলো বিদ্যুৎ, গ্যাস, রাস্তা, সেতু, টেলিফোন, পানি, পয়ঃপ্রণালি ব্যবস্থার বিরাট ক্ষতি সাধিত হয়। এমনিতেই বাংলাদেশ হাজারো সমস্যায় জর্জরিত একটি দরিদ্র দেশ, তার ওপর সম্পদের স্বল্পতা, আধুনিক প্রযুক্তির অভাব, দুর্বল ব্যবস্থাপনা ইত্যাদি ভূমিকম্পের ধ্বংসলীলার সার্বিক পরিস্থিতিতে বিরাট নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ভূমিকম্প প্রশমনে আমাদের করণীয় :

পূর্ব-সতর্কতা অবলম্বন করলে ভূমিকম্পের ক্ষয়ক্ষতি অনেকট হ্রাস করা যায়। ভূমিকম্প এমন এক ভয়াবহ প্রাকৃতিক দুর্যোগ যার পূর্বাভাস দেয়ার মতো কোনো প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হয়নি। এ কারণে ভূমিকম্প প্রশমনের লক্ষ্যে সবাইকে আরো অধিক বিস্তৃতমুখী পদ্ধতি গ্রহণ করা আবশ্যক।

এ পদ্ধতি কাঠামোগত ও অ-কাঠামোগত দুরকমই হতে পারে। কাঠামোগত পদক্ষেপের মধ্যে রয়েছে— স্থাপনার দৃঢ়তা নিশ্চিত করার মতো সঠিক নির্মাণপদ্ধতি অনুসরণ ও ভূমিকম্প সংক্রান্ত উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার। অ-কাঠামোগত পদক্ষেপগুলোর মধ্যে রয়েছে সচেতনতা বৃদ্ধি ও পূর্বপ্রস্তুতি শক্তিশালীকরণ, ভূমি-ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ ও সরকারি আইন প্রয়োগ।

ভূমিকম্প সম্পর্কে গণসচেতনতা সৃষ্টির মাধ্যম হিসেবে কর্মশালা, সভা, বিশেষজ্ঞের মতামত, পোস্টার, পত্রপত্রিকায় প্রবন্ধ, ইলেকট্রনিক মিডিয়ার কার্যক্রম প্রভৃতি কার্যকর ভূমিকা রাখবে। তাই সরকার, জনগণ, বিভিন্ন দাতাসংস্থা ও এনজিও’র সম্মিলিত প্রচেষ্টায় এ দুর্যোগ মোকাবেলার ক্ষেত্রে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা ও প্রস্তুতি গ্রহণ করা আশু জরুরি ।

উপসংহার :

জীবন ও সম্পদ বিনষ্টকারী প্রাকৃতিক দুর্যোগগুলোর মধ্যে ভূমিকম্প অন্যতম। আর দুর্ভাগ্যবশত পৃথিবীর ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকাগুলোর মধ্যেই বাংলাদেশের অবস্থান। তাই অপ্রত্যাশিত হলেও সত্য যে, বাংলাদেশ বড় ধরনের ভূমিকম্পের ঝুঁকিতে থাকার কারণে ব্যাপক জানমালের ক্ষয়ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।

অথচ শক্তিশালী ভূমিকম্পের বিপর্যয় রোধে যথেষ্ট প্রস্তুতি ও সামর্থ্য বাংলাদেশের নেই। তাই কত প্রাণ, সম্পদ, লোকালয় ভূমিকম্পের কারণে চাপা পড়ে ইতিহাসে পরিণত হবে আমাদের নিকট তার কোনো সদুত্তর নেই ।

কাজেই ভূমিকম্পের প্রতিকার কৌশল নির্ধারণে সরকার, জনগণ ও আন্তর্জাতিকভাবে সম্মিলিত প্রচেষ্টা গ্রহণ এর রোধ ও বিপর্যয় মোকাবেলায় ভিত্তি হিসেবে কাজ করবে।

শিক্ষাগার

প্রতিষ্ঠাতা সম্পর্কে

মাহমুদুল হাসান

শিক্ষাগত যোগ্যতা
গণিতে অনার্স ও মাস্টার্স

যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়

ফাজিল সম্পন্ন

গোপালপুর দারুল উলুম কামিল মাদ্রাসা

বিশেষ দক্ষতা

বাংলা সাহিত্য • গণিত • ইসলামিক শিক্ষা

অভিজ্ঞতা

শিক্ষকতা ও ৫+ বছর কন্টেন্ট রাইটিং

আমাদের লক্ষ্য

শিক্ষার্থীদের জন্য মানসম্মত শিক্ষা সামগ্রী প্রদান করা। ২০২৩ সাল থেকে লাখো শিক্ষার্থী শিক্ষাগার থেকে উপকৃত হচ্ছে।

1 thought on “ভূমিকম্প ও বাংলাদেশ – প্রবন্ধ রচনা”

  1. আসসালামু আলাইকুম। আপনার এই পেজ থেকে কিভাবে সহজেই তথ্য ডাউনলোড করতে পারবো?

    Reply

Leave a Comment