উপস্থাপনা :
বাংলাদেশ ষড়ঋতুর দেশ, নদীমাতৃক দেশ। এর বুক চিরে অসংখ্য নদনদী, শাখা নদী, উপনদী, খাল ইত্যাদি এঁকেবেঁকে বয়ে গেছে। এ সবে আছে বিভিন্ন জাতের ছোট-বড় অসংখ্য মাছ। তাই আবহমানকাল থেকে বাংলাদেশে একটা প্রবাদ প্রচলিত আছে । 'মাছে ভাতে বাঙালি'।
ভাত যেমন বাঙালির প্রধান খাদ্য, মাছও তেমনি প্রধান ব্যঞ্জন । মাছ না হলে বাংলাদেশের মানুষের চলে না । আর মাছই স্মরণাতীতকাল থেকে বাঙালির শরীরে পুষ্টি যুগিয়ে আসছে। আমরা প্রতিদিন যেসব বস্তু খেতে থাকি তাতে মাছ এক অত্যাবশ্যক আইটেম । এখানে সামান্য কয়েকটা মাছের পরিচয় তুলে ধরা হল-
ইলিশ :
ইলিশ রুপোর মতো চকচকে সাদা রঙের মাজারি আকারের মাছ। এরা গভীর ও লোনা পানির মাছ বলে খালেবিলে, ডোবা নালায় সর্বত্র পাওয়া যায় না। কেবল পদ্মা মেঘনা প্রভৃতি নদীতে ও সাগর মোহনায়ই ইলিশ মাছ মেলে । এ মাছ অত্যন্ত সুস্বাদু। ইলিশ আমাদের জাতীয় মাছ। এ মাছ পুকুরে চাষ করা যায় না।
আরও পড়ুন :- পাট - বাংলা প্রবন্ধ রচনা
রুই :
রুই আকারে বেশ বড় হয়। খেতে খুব সুস্বাদু। বর্তমানে অত্যন্ত বেশি দাম দিয়ে কিনতে হয় বলে সাধারণ মানুষ এ মাছ খেতে পারে না । এ মাছও খুব অল্প পানিতে থাকতে পারে না। তবে এটা পুকুরে চাষ করা যায় ।
কাতলা :
এ মাছও বর্তমানে খুব বেশি দামে বিক্রয় হয়। খেতে খুব স্বাদ। রুইয়ের মতো আকারেও বেশ বড়। এ মাছ পুকুরে চাষ করা চলে । চাষও বেশ লাভজনক ।
মৃগেল :
মৃগেল মাছ বেশ বড় হয় । পুকুরে চাষ করা যায়। এগুলো সাধারণত খালে-বিলে থাকে না বললেই চলে ।
পুঁটি :
পুঁটি বাংলাদেশের সর্বত্র প্রচুর পরিমাণে পাওয়া যায়। এটা ছোট আকৃতির মাছ, খেতে বেশ ভালো এবং প্রোটিনসমৃদ্ধ । বাংলাদেশের নদনদী, খালবিল, পুকুর, ডোবা, নালা সর্বত্রই এ মাছ পাওয়া যায় । বলতে গেলে বর্তমানে পুঁটিই সাধারণ মানুষের মাছ। এ পুঁটি দামে সস্তা।
আরও পড়ুন :- চা - বাংলা প্রবন্ধ রচনা
শিং ও মাগুর ঃ
শিং ও মাগুর বিষাক্ত কাঁটাওয়ালা মাছ। বাংলাদেশের সব জায়গায়ই কমবেশি এ মাছ দেখা যায়। খালবিল ও পুকুর থেকে ধরে কোন পাত্রে পানিতে জিইয়ে এসব মাছ অনেকদিন ঘরে রাখা যায় । এ মাছ খেতে খুব স্বাদ এবং খুবই পুষ্টিকর । তাই রোগীর পথ্য হিসেবে ডাক্তাররা এসব মাছ খেতে পরামর্শ দেন। অন্যান্য মাছের তুলনায় এ মাছের দামও অনেক বেশি ।
কৈ :
কৈ বাংলাদেশের আর একটা বহুল পরিচিত মাছ। ডোবা, খালবিল, নালা, পুকুর সবখানেই এ মাছ পাওয়া যায় । খেতে খুব সুস্বাদু। আকারে ছোট, কিন্তু এর প্রাণশক্তি খুব বেশি । ঘরে পানিপূর্ণ পাত্রে অনেক দিন জিইয়ে রাখা যায় । এ মাছ কানে ভর করে চলতে পারে । এর দামও খুব বেশি ।
কাঁচকি:
এটা খুব ছোট জাতের সুস্বাদু এবং প্রচুর প্রোটিনসমৃদ্ধ মাছ । দামেও সস্তা ।
উপসংহার :
এসব মাছ ছাড়া আরো অনেক রকমের মাছ আছে। যেমন- শৈল, গজার, বোয়াল, পাবদা, চিংড়ি, বৈচা, মলা, বাইম ইত্যাদি । কিন্তু দুঃখজনক হলো, বাংলাদেশে মাছ দিন দিন কমে আসায় দুর্মূল্য হয়ে উঠছে। তাই মাছের উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য আমাদের সচেষ্ট হওয়া প্রয়োজন । সরকারের উচিত, মৎস্যচাষীদেরকে আর্থিক সুবিধা প্রদানসহ প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করে মৎস চাষে উৎসাহিত করা।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা