আজ থেকে প্রায় ১৫০০ বছর পূর্বে রাসূল (স) রোযা রাখার উপকারিতা বর্ণনায় বৈজ্ঞানিক তথ্য দিয়েছিলেন। তিনি বলেছিলেন - صوموا تصحوا অর্থাৎ, তোমরা রোযা রাখ তাহলে সুস্থ থাকবে। আজকের আধুনিক চিকিৎসা বিজ্ঞানও এটা স্বীকার করতে বাধ্য হয়েছে।
👉নিম্নে প্রশ্নালোকে চিকিৎসা বিজ্ঞানের দৃষ্টিতে রোযার কতিপয় উপকারিতা বর্ণনা করা হলো। যেমন-
১। রোযার কারণে দিনে শরীরে পানির পরিমাণ কমে যায় বলে চামড়াতেও পানির অংশ কমে যায়। ফলে ব্রনসহ যাবতীয় চর্মরোগ প্রতিরোধে রোযা ভূমিকা পালন করে ।
২। শরীরে বেশি চর্বি থাকলে হজম দেরিতে হয়। রোযা রাখলে আমাদের শরীরের পুঞ্জীভূত চর্বি থেকে শরীর মুক্ত হয়। এছাড়া রোযা কলিজার পাশে জড়ো হওয়া চর্বিগুলোকে দূরীভূত করে। ফলে হজম ও পরিপাক ক্রিয়া দ্রুত হয়।
৩। রোযা দেহের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, শরীরে পরিপাক ও হজম প্রক্রিয়ায় এবং শারীরিক সুস্থতা বিধানে ব্যাপক ভূমিকা পালন করে। এজন্য ইউরোপে শরীরের ভিতরে জমে থাকা ৫০ হাজার কিলোক্যালরি কমানোর জন্য ৩০ দিনে গড়ে ১২ ঘণ্টা করে রোযার মাধ্যমে চিকিৎসা দেয়া হয় ।
৪। শরীরে চর্বি জমে মেদ বাড়লে মানুষ মোটা হয়ে যায়। এর ফলে শরীরে আলঝেইমার্স নামক রোগ হয়। আর এ রোগের ফলে মানুষ জ্ঞানবুদ্ধি, স্মৃতিশক্তি ও উপস্থিত বুদ্ধি হারিয়ে ফেলে। দেখা গেছে কেউ এক সপ্তাহ রোযা রাখলে তার শরীর থেকে দু এক কেজি ওজন কমে যায়। তাই এ রোগ থেকে রক্ষা পেতে রোযার কোনো বিকল্প নেই।
৫। চিকিৎসা বিশ্বকোষে ‘খাদ্যের মাধ্যমে চিকিৎসা' অধ্যায়ে বলা হয়েছে, শারীরিক সুস্থতার জন্য বয়স বাড়ার সাথে সাথে কমপক্ষে সপ্তাহে একদিন, মাসে এক সপ্তাহ এবং বছরে একমাস রোযা রাখা উত্তম ।
৬। চিকিৎসা ও সার্জারিতে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ড. আলেকজিস কারিল বলেছেন, অধিক খাদ্যগ্রহণ মানবজাতির অস্তিত্ব ধ্বংসের একটি বড় কারণ। মানুষের শরীরের গঠন হলো কম খাদ্যগ্রহণের উপযোগী। এজন্য দুর্ভিক্ষ না থাকা সত্ত্বেও মানুষ অতীত ইতিহাসে উপবাসযাপন তথা রোযা রাখত ।
৭। ডায়াবেটিক রোগীদের জন্য রোযা বিরাট একটি নেয়ামত। কম খাদ্যগ্রহণ ও দীর্ঘ সময় খাদ্যগ্রহণ না করার ফলে রক্তে শর্করার পরিমাণ কমে আসে। এতে রোগ নিয়ন্ত্রিত থাকে। দেখা গেছে, অনেক রোগীর ঔষধ সেবনেরও দরকার হয় না।
৮। প্রখ্যাত মুসলিম চিকিৎসা বিজ্ঞানী ইবনে সিনা যে কোনো পুরাতন রোগ থেকে মুক্তির জন্য রোযা রাখার পরামর্শ দিতেন।
৯। মস্কো বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম শিক্ষক ড. পি জি স্পাসকি বলেন, রোযার মাধ্যমে কালাজ্বর এবং শরীরের ভিতরের অন্যান্য পুরাতন রোগ বাইরের হস্তক্ষেপ ছাড়াই ভালো হতে পারে।
১০। নেপোলিয়ন বোনাপর্ট মিসর দখলের পর হাসপাতালগুলোতে যৌন রোগের চিকিৎসার জন্য রোযা রাখার হুকুম দিয়েছিলেন।
১১। দশম ও একাদশ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম চিকিৎসকেরা 'সিফিলিস' রোগের চিকিৎসার জন্য রোযা রাখার পরামর্শ দিয়েছেন এবং বসন্ত রোগ থেকে আরোগ্যলাভের জন্য তিন সপ্তাহ রোযা রাখার কথা বলেছেন।
১২। রোযা রাখার কারণে দাঁতের অবস্থার উন্নতি হয়। কেননা খাদ্য থেকে বিরত থাকার কারণে দাঁতও বিরতি লাভ করে। এছাড়া একদিন খাদ্য গ্রহণ না করায় পাকস্থলী ও পরিপাকতন্ত্র বিশ্রাম লাভ করে এবং স্নায়ুগুলো শীতল হয়ে আসে। ফলে পেটের অসুখসহ মাংসপেশির ব্যথা দূর হয় ।
১৩। ইতালির বিশ্ববিখ্যাত শিল্পী মাইকেল অ্যাংলো সুস্বাস্থ্যের অধিকারী ছিলেন। ৯০ বছর পার হওয়া সত্ত্বেও তিনি কর্মক্ষম ও কর্মঠ ছিলেন। তাকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করলে তিনি বলেন, আমি বহু আগে থেকেই মাঝে মাঝে রোযা রেখে আসছি। আমি প্রতিবছরে কমাস, প্রতিমাসে এক সপ্তাহ এবং দিনে তিন বেলার পরিবর্তে দুই বেলা খাই ।
১৪। মস্কোর মানসিক ইনস্টিটিউটের পরিচালক ড. নিকোলাইডকে জিজ্ঞেস করা হয়, বর্তমান যুগের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আবিস্কার কোনটি? উত্তরে তিনি বলেন, সেটা হলো রোযার মাধ্যমে বয়স্ক লোকদেরকে যুবকের মতো শারীরিক বুদ্ধি, বিবেক ও আত্মিক শক্তি ফিরিয়ে দেয়া ।
১৫। কলাম্বিয়ার সাংবাদিক টার্ন ব্রান্ড বলেন, রোযার শারীরিক উপকারিতা অপেক্ষা আত্মিক উপকারিতা বেশি। তিনি বলেন, রোযা চিন্তার জন্য খুবই উপকারী, এর ফলে নতুন নতুন চিন্তা করা যায় এবং কোনো জিনিসকে ভালোভাবে উপলব্ধি করা যায়।
১৬। পাকিস্তানের প্রবীণ চিকিৎসক ডা. মোহাম্মদ হোসেন ও আমেরিকার চিকিৎসা বিজ্ঞানী ড. ম্যাক ভডেন বলেন, রোযার ফলে বাত রোগের আরোগ্য হয়। এছাড়া রোযা কিডনির পাথর সৃষ্টিতে বাধা দেয় ।