চিকিৎসা ক্ষেত্রে বিজ্ঞান- বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকা  

আধুনিক বিশ্বসভ্যতার ক্রমবিকাশে বিজ্ঞানের দান অপরিসীম। বর্তমান সভ্যতার অগ্রগতিতে চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান এক নতুন আশীর্বাদ হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। একসময়ে যেসব দুরারোগ্য ব্যাধি থেকে মানুষের মুক্তির কোনো উপায় ছিল না, বিজ্ঞান বর্তমানে সেসব ব্যাধি থেকে মুক্তির উপায় উদ্ভাবন করেছে।

আধুনিক চিকিৎসার সূত্রপাত  

আধুনিক বিজ্ঞানের বিভিন্ন আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসাক্ষেত্রে মানুষের ধ্যান-ধারণায় পরিবর্তন এসেছে। বিজ্ঞানের বদৌলতে প্রাচীন পদ্ধতির কবিরাজি চিকিৎসার স্থলে হোমিওপ্যাথিক ও অ্যালোপ্যাথিক চিকিৎসার উদ্ভব হয়েছে। 

পেনিসিলিন, ক্লোরোমাইসিন, স্টেপটোমাইসিন ইত্যাদি ওষুধ আবিষ্কারের ফলে মানুষ গাছগাছালি, তাবিজ-কবচ ও ঝাড়ফুঁকের মতো কুসংস্কারের ওপর নির্ভরশীলতা কমিয়ে দিয়ে আধুনিক বিজ্ঞানভিত্তিক চিকিৎসার প্রতি আকৃষ্ট হয়েছে। এসব চিকিৎসাব্যবস্থা "আধুনিক বিজ্ঞানেরই বিস্ময়কর অবদান ।

বিশ শতক ও চিকিৎসাবিজ্ঞান  

বর্তমান চিকিৎসাশাস্ত্র পুরোপুরি বিজ্ঞানের ওপর নির্ভরশীল। বিংশ শতাব্দীতে চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান অভাবনীয় সাফল্য অর্জন করেছে। ১৯০৩ সালে আবিষ্কৃত হয় জিনের গঠন প্রণালি, ইসিজি মেশিন এবং মরণব্যাধি ক্যান্সার চিকিৎসার রেডিওথেরাপি, ১৯২৮ সালে আবিষ্কৃত হয় পেনিসিলিন। 

১৯৪৩ সালে আবিষ্কৃত হয় কিডনি ডায়ালাইসিস মেশিন, ১৯৭৮ সালে আবিষ্কৃত হয় টেস্টটিউব প্রজনন পদ্ধতি এবং ১৯৯৭ সালে আবিষ্কৃত হয় ক্লোন পদ্ধতি। বিজ্ঞানের এসব আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসাক্ষেত্রে এসেছে অভাবনীয় উন্নতি।

আরও পড়ুন :- রচনা : দৈনন্দিন জীবনে বিজ্ঞান [ Class 6, 7, 8, 9, 10 ]

রোগ নির্ণয়ে বিজ্ঞান  

প্রাচীনকালে মানুষের দেহে কোনো রোগব্যাধি হলে তা নির্ণয়ের ব্যবস্থা ছিল না। চিকিৎসকরা তখন নিজেদের মনগড়া ওষুধপত্র নির্ধারণ করতেন। ফলে অনেক সময় সঠিক চিকিৎসা করা সম্ভব হয়ে উঠত না। 

কিন্তু কালক্রমে রোগ নির্ণয়ের বিভিন্ন যন্ত্রপাতি আবিষ্কারের ফলে চিকিৎসা পদ্ধতি অনেকটা সহজতর হয়েছে। অধ্যাপক রন্টজেন আবিষ্কৃত 'রঞ্জনরশ্মি' বা ‘এক্স- রে’, ‘আলট্রাসনোগ্রাফি'; অধ্যাপক কুরী ও মাদাম কুরীর আবিষ্কৃত 'রেডিয়াম' চিকিৎসাক্ষেত্রে এক যুগান্তকারী পরিবর্তন এনেছে। 

রঞ্জন রশ্মির সাহায্যে শরীরের অভ্যন্তরের প্রত্যঙ্গ দেখার ব্যবস্থা রয়েছে এবং রেডিয়ামের সাহায্যে ক্যান্সারের মতো ভয়ংকর ক্ষতের মারাত্মক বিষক্রিয়াকে প্রতিহত করা অনেকাংশে সম্ভব হয়েছে। এক্স-রে মেশিন না হলে রোগ নির্ণয়ের ক্ষেত্রে মারাত্মক অসুবিধার সৃষ্টি হতো এবং এর ফলে সুচিকিৎসা কোনো দিনই সম্ভব হতো না ।

রোগ প্রতিরোধে বিজ্ঞান  

এমন কিছু রোগব্যাধি আছে যা প্রতিরোধের জন্য বিজ্ঞান পূর্বেই ব্যবস্থা নির্দেশ করেছে। যেমন- শিশুর জন্মের পর বিভিন্ন মেয়াদে ডি.পি.টি, পোলিও, হাম, পুঁটি বসন্ত ইত্যাদি টিকা দেওয়া হচ্ছে। নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পাচ্ছে অগণিত শিশু ।

আরও পড়ুন :- কৃষি কাজে বিজ্ঞান - রচনা [ Class - 6, 7, 8, 9 ,10 ] - PDF

রোগ নিরাময়ে বিজ্ঞান  

রোগ নির্ণয় এবং রোগ প্রতিরোধের ব্যবস্থাই চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞানের সবচেয়ে বড়ো অবদান। এক্ষেত্রে বিজ্ঞানের বড়ো সাফল্য হলো বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের জন্য নানা রকম ওষুধপত্রের আবিষ্কার। একসময় দুরারোগ্য ব্যাধির চিকিৎসার কোনো ব্যবস্থাই ছিল না । বিজ্ঞান সেসব রোগ নিরাময়ের ব্যবস্থা নিশ্চিত করেছে। এখন আর যক্ষ্মা কোনো দুরারোগ্য ব্যাধি নয়। 

তাছাড়া ভয়ংকর জলাতঙ্ক রোগ, কুষ্ঠরোগ ইত্যাদি নিরাময়ের জন্যও বিজ্ঞান কার্যকর ওষুধ ও ইনজেকশন আবিষ্কার করেছে। বর্তমান বিশ্বে যে দুটি রোগ সবচেয়ে দুরারোগ্য বলে গণ্য হচ্ছে তা হলো ক্যান্সার ও এইডস। চিকিৎসাবিজ্ঞানের অগ্রগতির ধারাবাহিকতায় বর্তমানে এটি ক্যান্সার নির্ণয় ছাড়াও এর প্রতিষেধক আবিষ্কারে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে।

উপসংহার  

বিজ্ঞান বিশ্বসভ্যতার জন্য একাধারে আশীর্বাদ ও অভিশাপ দুটোই। তবে চিকিৎসাক্ষেত্রে বিজ্ঞান কেবল আশীর্বাদই নিয়ে এসেছে। প্রবাদ আছে, 'সুস্থ শরীরে সুস্থ মন বিরাজ করে।' মানুষের এ সুস্থ শরীরের নিশ্চয়তা বিধানের জন্য বিজ্ঞান নিঃসন্দেহে মুখ্য ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad