জাতীয় খেলা : হা ডু ডু - রচনা

উপস্থাপনা 

বর্তমানে আমাদের দেশে যে সমস্ত খেলা প্রচলিত রয়েছে সেগুলোকে দেশি ও বিদেশি এ দু'ভাগে ভাগ করা যায় । দেশি খেলার মধ্যে হা-ডু-ডু'র স্থান সকলের উপরে। হা-ডু-ডু খেলা শরীর গঠনে বিশেষ সহায়ক। বাংলাদেশের এমন কোন অঞ্চল নেই যেখানে এ খেলাটির প্রচলন নেই।

নামের তাৎপর্য 

হা-ডু-ডু খেলার উৎপত্তি সম্পর্কে সঠিক কিছু জানা যায়নি। তবে ‘হাডু' শব্দটি এসেছে হাঁটু' আর 'ডু' অনুসার শব্দ । মনে করা হয় হাঁটুতে ভর দিয়ে ‘ডু ডু’ শব্দ করে এ খেলা হয় বলে এ খেলার নাম হয়েছে হা-ডু-ডু।

খেলার মাঠ 

হা-ডু-ডু 'খেলায় ছোট সমতল মাঠ ছাড়া আর কোন উপকরণের দরকার হয় না। মাঠের নির্দিষ্ট কোন মাপ নেই । সাধারণত ২০ হাত লম্বা ও ১২ হাত চওড়া একটি মাঠের চারদিকে দাগ কেটে নেয়া হয়। এরপর মাঠটিকে আড়াআড়ি দু'ভাগে ভাগ করা হয় । প্রতি ভাগকে বলা হয় একটি কোটা ।

আরও পড়ুন :- আমার প্রিয় খেলা ফুটবল - বাংলা রচনা Class 6, 7, 8, 9, 10

দল গঠন 

এ খেলায় দুটো দল থাকে। খেলোয়াড়দের কোন নির্দিষ্ট সংখ্যা নেই, তবে দুটো দলের সমান শক্তি সম্পন্ন ও সমান সংখ্যক লোক নেয়া হয়। সাধারণত ছয় থেকে আটজন খেলোয়াড় নিয়ে প্রতিটি দল গঠিত হয় । খেলা পরিচালনার জন্য থাকেন একজন রেফারি। তিনি বাঁশি বাজিয়ে খেলোয়াড়দের নিয়ন্ত্রণ করেন।

খেলার নিয়ম ও দু'দল খেলোয়াড় দু'কোটে দাঁড়ায়। লটারিতে যে পক্ষ জিতে তাদের একজন খেলোয়াড় মাঠের মাঝের লাইন বরাবর এসে দাঁড়ায়। রেফারির বাঁশি বাজার সাথে সাথে সে লাফিয়ে অন্য কোটে প্রবেশ করে। শ্বাস বন্ধ রেখে সে বিপক্ষের খেলোয়াড়দের ছুঁয়ে ফিরে আসতে চেষ্টা করে। এ সময় নিশ্বাস নিচ্ছে না এটা বুঝাবার জন্য মুখ দিয়ে টিক টিক, ডিগ ডিগ বা ডু-ডু ইত্যাদি জাতীয় শব্দ করে থাকে।

সে বিপক্ষের যাকে ছুয়ে আসে সে 'মরা' হয় অর্থাৎ সে আর খেলতে পারে না- মাঠের বাইরে চলে যায়। কোন খেলোয়াড় যদি বিপক্ষে দলের হাতে পড়ে যায় তাহলে সে 'মরা' হয়। একদলের একজন খেলোয়াড় 'মরা' হলে বিপক্ষের একজন 'মরা' খেলোয়াড় বেঁচে ওঠে। অর্থাৎ সে কোটে নেমে আবার খেলতে পারে। কেউ যদি বিপক্ষের কোটে গিয়ে শ্বাস টানে তাহলে সে পক্ষের খেলোয়াড়রা তাকে ছুঁয়ে দিলে সে নিজেই 'মরা' হয়। 

উভয়পক্ষ খেলোয়াড়ের তাড়া খেয়ে বা অন্য কোন কারণে কেউ যদি কোটের দাগের বাইরে চলে যায় তাহলে সে 'মরা' হয় । এভাবে চলতে চলতে যখন এক পক্ষের সব খেলোয়াড় ‘মরা’ হয় তখন অন্য পক্ষ জয় লাভ করে। এভাবে এক দফা খেলা শেষ হয় । আবার শুরু হয় দ্বিতীয় দফা। নির্দিষ্ট একটা সময় নিয়ে এ খেলা চলতে থাকে। ঐ সময়ের মধ্যে যে পক্ষ বেশি জিততে পারে তারাই বিজয়ী হয়।

আরও পড়ুন :- আমার প্রিয় খেলা : ক্রিকেট - রচনা

খেলার সময় 

সাধারণত বিকেল বেলায়ই এ খেলা অনুষ্ঠিত হয় । গ্রামাঞ্চলে বিকেল বেলা কোথাও কিছু লোক জমা হলে সেখানে এ খেলা জমে ওঠে। কখনো পাড়া, গ্রাম, স্কুল বা মাদরাসাভিত্তিক এ খেলা অনুষ্ঠিত হয় ।

উপকারিতা 

হা-ডু-ডু খেলায় সমস্ত শরীরের ব্যায়াম হয়। শ্বাস বন্ধ করে খেলার ফলে দেহের অন্যান্য অঙ্গ-প্রত্যঙ্গের সাথে ফুসফুসেরও ব্যায়াম হয় । কোন খরচ নেই বলে সহজেই এ খেলার ব্যবস্থা করে শরীরের উন্নতি করা সম্ভব । এর মাধ্যমে দ্রুততা, সাহস ও আত্মরক্ষার কায়দা রপ্ত করা যায়। শৃঙ্খলা, সহযোগিতা, নিয়মানুবর্তিতা প্রভৃতি গুণও শিক্ষা করা যায় ।

অপকারিতা 

অনেক সময় বিপক্ষের খেলোয়াড়দের ধরে রাখার জন্য অনেক অন্যায় কৌশল ও প্যাচ কষা হয় । এর ফলে মারাত্মক দুর্ঘটনাও ঘটতে পারে। কখনো ব্যক্তিগত বা দলগত ঝগড়া বিবাদও সৃষ্টি হয় ।

উপসংহার 

গ্রামাঞ্চলে এ খেলাটি অত্যন্ত জনপ্রিয় ও আনন্দদায়ক। সুখের বিষয় গত কয়েক বছর যাবৎ আমাদের জাতীয় পর্যায়ে হা-ডু-ডু প্রতিযোগিতা শুরু হয়েছে। ১৯৮৭ সালে ভারতের সাফ গেমসে এ খেলা অনুষ্ঠিত হয়। ফলে দেশের নিভৃত অঞ্চল থেকে তরুণ খেলোয়াড়রা শহরে এসে তাদের অপূর্ব ক্রীড়া নৈপুণ্য দেখাবার সুযোগ পাচ্ছে।

আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা

Post a Comment

0 Comments