রচনা : হযরত ওমর রাঃ জীবনী

উপস্থাপনা  

“মোর পর যদি নবী হতো কেউ হতো সেই ওমর”-এ কবিতার পঙক্তি বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামের, আর বক্তব্য হযরত মুহাম্মদ (স)-এর। এ মন্তব্য থেকে সহজেই বলা যায়, ইসলামের প্রাথমিক যুগের ইতিহাসে যেসব মহাপুরুষের আবির্ভাব ঘটেছিল, যাঁদের আত্মত্যাগে ইসলামের মহিমা বৃদ্ধি পেয়েছিল, তাঁদের অন্যতম ছিলেন হযরত ওমর (রা)।

জন্ম ও প্রাথমিক জীবন  

হযরত ওমর (রা) ৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে মক্কানগরীর বিখ্যাত কুরাইশ বংশে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খাত্তাব। তিনি দৈহিক দিক থেকে ছিলেন খুবই শক্তিশালী। কুস্তিতে তৎকালে তাঁর সমকক্ষ কেউ ছিল না। বীরত্বব্যঞ্জক খেলাধুলার প্রতিযোগিতায় কৃতিত্ব দেখিয়ে তিনি আরব দেশে একজন বীর বলে পরিগণিত হন। 

তিনি বাল্যকালেই বিদ্যার্জন করেছিলেন, যদিও তৎকালে কদাচিৎ কেউ লেখাপড়ার সুযোগ পেত। হযরত ওমর (রা)-এর বয়স যখন ২৭ বছর তখন হযরত মুহাম্মদ (স) নবুয়তপ্রাপ্ত হন। কিন্তু হযরত ওমর (রা) তখন ছিলেন ইসলামের ঘোর শত্রু। তিনি কোষমুক্ত তরবারি হাতে নিয়ে রাসূল (স)-কে হত্যা করার জন্য ছুটে যান, কিন্তু পথিমধ্যে শুনতে পান, তাঁর বোন ও ভগ্নিপতি ইসলাম কবুল করেছেন। 

আরও পড়ুন :- রচনা : হযরত আবু বকর রাঃ জীবনী 

তাই তিনি প্রথমে বোনের বাড়িতে যান এবং ঘটনা সত্য জানতে পেরে তাঁদের বেদম প্রহার করেন। বোনের শরীর রক্তাক্ত হয়, তবুও ইসলাম বর্জন করতে অস্বীকার করায় ওমর স্তম্ভিত হন। অতঃপর তিনি বোনের কণ্ঠে পবিত্র কুরআনের আয়াত শোনেন এবং তাঁর হৃদয় বিগলিত হয় । তিনি দ্রুত নবীজীর কাছে গিয়ে ইসলাম কবুল করেন। এ সময় তাঁর বয়স ছিল ৩৪ বছর।

ইসলাম গ্রহণের পরবর্তী জীবন  

ইসলাম গ্রহণের পর থেকে তিনি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে ইসলামের খেদমতে নিয়োজিত করেন। তিনি ছিলেন দৃঢ়চেতা। তাই যা বিশ্বাস করতেন তা প্রতিষ্ঠা করতে দ্বিধা করতেন না। তাঁর মতো বীরকে পেয়ে মুসলমানরা তখন থেকে ইবাদত ও অন্যান্য ইসলামী আচার-প্রথা প্রকাশ্যে পালন করতে শুরু করেন। তাঁর পরামর্শেই নামাযের জন্য প্রথম আযান প্রথা প্রবর্তিত হয়। 

তিনি ইসলামের জন্য তাঁর ধন-সম্পদ নবীজীর হাতে তুলে দেন এবং তাঁর মক্কা ও মদিনা জীবনের সর্বক্ষেত্রে যাবতীয় বাধা-বিপত্তি মোকাবেলা করতে এগিয়ে আসেন। বদরের যুদ্ধ থেকে শুরু করে নবীজীর জীবৎকালের সকল যুদ্ধে তিনি অংশ নেন। হযরত আবু বকরের পর হযরত ওমর (রা) ইসলামের দ্বিতীয় খলিফা মনোনীত হন। তিনি প্রায় ১০ বছর যাবৎ এ দায়িত্ব পালন করেন। 

তাঁর খেলাফতকালে ইসলামের আরো প্রসার ঘটে। খালেদ, আবু ওবায়দা, আমর ইবনে আস, সাদ, মুয়াবিয়া ও সোরাহবিল নামক সেনাপতিদের সুষ্ঠুভাবে চালনার মাধ্যমে তিনি ইসলামী রাষ্ট্রের পরিধি ব্যাপকভাবে প্রসারিত করেন। কিন্তু হযরত ওমর (রা) বিশ্বব্যাপী আলোচিত ও নন্দিত হয়েছেন তাঁর চরিত্রের অসামান্য সরলতার জন্য। 

আরও পড়ুন :- মহানবী সাঃ এর জীবনী - রচনা ১০০, ২০০ ও ৩০০ শব্দ - PDF

তিনি থাকতেন একদম গরিবি হালে। তিনি পোশাক-পরিচ্ছদ ও খাদ্যে সর্বপ্রকার বিলাসিতা বর্জন করেন। প্রজাদের সুখ-শান্তির জন্য তিনি ছদ্মবেশে পথে পথে ঘুরে বেড়াতেন। তাদের সমস্যাদি অবগত হয়ে সেগুলোর সমাধান করতেন। তিনি ছিলেন দূরদর্শী রাজনীতিবিদ। প্রয়োজনে বজ্র কঠোর, আবার অত্যন্ত কোমল হতেন। তিনি সুষ্ঠু শাসন পরিচালনার জন্য রাষ্ট্রকে কয়েকটি প্রদেশে বিভক্ত করেন।

বিচার বিভাগকে শাসন বিভাগ থেকে আলাদা রাখেন এবং তিনিই হিজরী সন গণনার প্রবর্তন করেন। তিনি ব্যক্তিগতভাবে অবিশ্বাস্য রকমের নির্লোভ, ন্যায়পরায়ণ ও ন্যায়বিচারক শাসক ছিলেন। আপন ছেলের অপরাধও তিনি ক্ষমা করেননি । এ এক অনন্য দৃষ্টান্ত ।

ওমরের আদর্শ  

বিশ্বের যে সকল শাসকের ন্যায়পরায়ণতার দৃষ্টান্ত আমরা দেখি তার প্রতীক হযরত ওমর (রা)। তিনি বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ ন্যায়পরায়ণ ও ন্যায়বিচারক শাসক ছিলেন। আপন ছেলের অপরাধও তিনি ক্ষমা করেননি। এ দৃষ্টান্ত বিরল

উপসংহার  

হযরত ওমর (রা) ছিলেন ইসলামের খেদমতে নিবেদিতপ্রাণ। ইসলাম গ্রহণের পর পুরো জীবনটাই তিনি ইসলামের জন্য ব্যয় করেছেন। তিনি একদিকে যেমন ছিলেন ন্যায়বিচারক ও কঠিন হৃদয়ের শাসক, অন্যদিকে ন্যায়ের কাছে, ভালোবাসার কাছে তিনি ছিলেন একেবারে কোমল হৃদয়ের এক মহান ব্যক্তি। এ মহান শাসক হিজরী ২৬ সনের ২৯ যিলকদ দিবাগত রাতে ওফাত লাভ করেন।

Post a Comment

0 Comments