রচনা : স্মরণীয় যারা চিরদিন

ভূমিকা  

লাল সবুজের দেশ বাংলাদেশ, হাজার বছরের ঐতিহ্যের দেশ বাংলাদেশ। এ দেশের রক্তাক্ত ইতিহাস আছে-সেই ইতিহাস স্বাধীনতার ইতিহাস, মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস। ১৯৭১ সালে এক ভয়াবহ রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধের ভেতর দিয়ে আমাদের স্বাধীনতা এসেছে। সেজন্য জীবন দিতে হয়েছে ৩০ লক্ষ মানুষ; কৃষক, শ্রমিক, শিক্ষক, বুদ্ধিজীবীরা।

শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস  

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন আবাসস্থল থেকে পাকিস্তানি সেনা ও তাদের দোসর রাজাকাররা মিলিতভাবে দেশের মেধাবী ও পন্ডিতদের ধরে নিয়ে যায় এবং নির্মমভাবে তাঁদের হত্যা করে। তাঁদের স্বরণে প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর ‘শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস' হিসেবে পালন করা হয় ।

শহিদ বুদ্ধিজীবীদের কয়েকজন  

এ দেশকে মেধাশূন্য করার লক্ষে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানি সেনারা এদেশের মনীষীদের তালিকা করে অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতনের মাধ্যমে হত্যা করে। এ হত্যাকান্ডের শিকার উল্লেখযোগ্য কয়েকজন হলেন- মুনীর চৌধুরী, আনোয়ার পাশা, ফজলে রাব্বি, শহিদুল্লাহ কায়সার, গোবিন্দ্রচন্দ্র দেব, সেলিনা পারভীন, গিয়াস উদ্দিন আহমদ, রণদাপ্রসাদ সাহা, রাশীদুল হাসান, যোগেশচন্দ্র ঘোষ, ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত, জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা, সাংবাদিক সাবের প্রমূখ ।

আরও পড়ুন :- বীর শ্রেষ্ঠ মোস্তফা কামাল - রচনা

এম. মুনিরুজ্জামান  

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ মধ্যরাতে শহিদ হন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক এম. মুনিরুজ্জামান। প্রচণ্ড গোলাগুলির শব্দ শুনে তিনি পবিত্র কোরান পড়া শুরু করেন। কোরান পাঠরত অবস্থাতেই তাঁকে টেনে-হিঁচড়ে নামায় পাকিস্তানি সেনারা। পরে তাঁকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।

জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা  

ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষক ছিলেন জ্যোতির্ময় গুহঠাকুরতা। তাঁকে ২৫ মার্চ টেনে- হিঁচড়ে বাসা থেকে বের করে আনা হয়। তারপর গুলি করে হত্যা করা হয়।

সাংবাদিক শহিদ সাবের  

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে অন্যান্য জায়গার মতো সংবাদপত্রের অফিসগুলোও আক্রান্ত হয়। সে সময়কার প্রধান দৈনিক সংবাদের অফিসে পাকিস্তানি সেনারা আগুন লাগিয়ে দেয়। মেধাবী লেখক ও সাংবাদিক শহিদ সাবের সে রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন সেখানে। আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নেয় তাঁর প্ৰাণ ।

সাংবাদিক শহিদ সাবের  

১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ রাতে অন্যান্য জায়গার মতো সংবাদপত্রের অফিসগুলোও আক্রান্ত হয়। সে সময়কার প্রধান দৈনিক সংবাদের অফিসে পাকিস্তানি সেনারা আগুন লাগিয়ে দেয়। মেধাবী লেখক ও সাংবাদিক শহিদ সাবের সে রাতে ঘুমিয়ে ছিলেন সেখানে। আগুনের লেলিহান শিখা কেড়ে নেয় তাঁর প্ৰাণ ৷

আরও পড়ুন :-  রচনা : শিল্পী কামরুল হাসান 

অধ্যক্ষ যোগেশ চন্দ্র ঘোষ  

জীবনের বেশির ভাগ সময় রসায়ন শাস্ত্রের অধ্যাপনা ও গবেষণায় কাটিয়ে দিয়ে অধ্যক্ষ যোগেশ চন্দ্র ঘোষ দেশবাসীর স্বাস্থ্যসেবার জন্য প্রতিষ্ঠা করেন আয়ুর্বেদীয় একটি প্রতিষ্ঠান। ৮৪ বছর বয়সি এই মানুষটিকেও পাক সেনারা রেহাই দেয়নি। তাঁকে নিশংসভাবে হত্যা করা হয়।

রনদা প্রসাদ সাহা  

রনদা প্রসাদ সাহা এদেশের সাধারণ মানুষের মঙ্গল ও কল্যাণ সাধনের জন্য নিজেকে সঁপে দিয়েছিলেন। দানশীলতার জন্য তাঁকে ‘দানবীর' বলা হতো। তাঁকেও নির্মমভাবে হত্যা করে পাকিস্তানি সেনারা ।

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর যাঁরা শহিদ হন  

১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর বিভিন্ন আবাসস্থল থেকে পাক সেনারা ধরে নিয়ে যায় দেশের শক্তিমান, যশস্বী ও প্রতিভাবানদের। তাঁদের মধ্যে অন্যতম—মুনীর চৌধুরী আনোয়ার পাশা, ফজলে রাব্বি, শহিদুল্লাহ কায়সার, আ.ন.ম. গোলাম মোস্তফা প্রমুখ। এঁদের অনেকের ক্ষত- বিক্ষত লাশ পাওয়া যায়, আবার অনেকের লাশও পাওয়া যায়নি।

উপসংহার  

শহিদ বুদ্ধিজীবীরা আমাদের চেতনা। তাঁরা চিরস্মরণীয় ও বরণীয়। দেশের জন্য ত্যাগের মহান আদর্শ তাঁরা স্থাপন করে গেছেন। প্রতিবছর ১৪ ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় ভাব গাম্ভীর্যের সাথে শহিদ বুদ্ধিজীবী দিবস পালন করা হয়।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad