বিজ্ঞানের যে শাখায় জীবের গঠনপ্রকৃতি, জীবনবৃত্তান্ত, জৈবিক ক্রিয়াকলাপ প্রভৃতি দিক সম্পর্কে আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণা করা হয় তাকে জীববিজ্ঞান বা Biology বলে।
জীববিজ্ঞানের মৌলিক শাখাসমূহ :
জীবের ধরণ অনুযায়ী জীববিজ্ঞানকে দুটি প্রধান শাখায় বিভক্ত করা হয়েছে। যথা - ১. উদ্ভিদবিজ্ঞান (Botany) ২. প্রাণিবিজ্ঞান (Zoology)
উদ্ভিদবিজ্ঞান (Botany) : জীবজ্ঞিানের যে শাখায় উদ্ভিদের গঠনপ্রকৃতি, জীবনবৃত্তান্ত, জৈবিক ক্রিয়াকলাপ প্রভৃতি দিক সম্পর্কে আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণা করা হয়, তাকে উদ্ভিদবিজ্ঞান বা Botany বলে।
প্রাণিবিজ্ঞান (Zoology) : জীববিজ্ঞানের যে শাখায় প্রাণির গঠনপ্রকৃতি, জীবনবৃত্তান্ত, জৈবিক ক্রিয়াকলাপ প্রভৃতি দিক সম্পর্কে আলোচনা, পর্যালোচনা ও গবেষণা করা হয়, তাকে প্রাণিবিজ্ঞান বা Zoology বলে ।
মূল বিষয়বস্তুর ভিত্তিতে জীববিজ্ঞানকে তিনটি প্রধান শাখায় ভাগ করা হয়েছে। যথা -
ক. মৌলিক শাখা (Pure or Basic branch)
খ. ফলিত শাখা (Applied branch)
গ. বিশেষ শাখা (Special branch)
আরও পড়ুন :- জীব কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি? জীবের সাধারণ বৈশিষ্ট্য
মৌলিক জীব বিজ্ঞানের শাখা :-
জীব ও জীবদেহের কোন্ দিক নিয়ে __আলোচনা করা হচ্ছে তার উপর ভিত্তি করে জীববিজ্ঞানকে কয়েকটি মৌলিক শাখায় ভাগ করা হয়েছে।
১। অংগসংস্থানবিদ্যা বা মরফোলজি (Morphology) : জীববিজ্ঞানের এ শাখায় জীবের বাহ্যিক ও অভ্যন্তরীণ গঠন সম্পর্কে আলোচনা করা হয় ।
২। কোষবিদ্যা বা সাইটোলজি (Cytology) : এ শাখায় জীবকোষের গঠন ও কাজ নিয়ে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়।
৩। শারীরবিদ্যা বা ফিজিওলজী (Physiology) : জীবদেহের বৃদ্ধি, শ্বসন, রেচন, সালোকসংশ্লেষণ ইত্যাদি জৈৰিক প্রক্রিয়া এ শাখার আলোচনার বিষয়বস্তু ।
৪। শ্রেণীবিন্যাস বিদ্যা বা ট্যাক্সোনমি (Taxonomy) : এ শাখায় বিভিন্ন জীব সনাক্তকরণ, নামকরণ ও ভিন্ন ভিন্ন দল বা উপদলে বিভক্তিকরণ সম্পর্কে আলোচনা করা হয় ।
৫। বাস্তুবিদ্যা বা ইকোলজি (Ecology) : পরিবেশের সাথে জীবের সম্পর্ক, জীবের ওপর পরিবেশের প্রভাব এবং বিভিন্ন উদ্ভিদ ও প্রাণীর মধ্যে বিদ্যমান পারস্পরিক সমন্বয় ইত্যাদি নিয়ে জীববিজ্ঞানের এ শাখায় আলোচনা ও গবেষণা করা হয়।
৬। হিসটোলজি (Histology) বা টিস্যুতত্ত্ব : এ শাখায় জীবদেহের বিভিন্ন টিস্যুর আণুবীক্ষণিক গঠন, অবস্থান ও কাজ নিয়ে আলোচনা করা হয়।
৬। জেনেটিক্স (Genetics) বা বংশগতি বিদ্যা : জীবের বৈশিষ্ট্য কিভাবে মাতাপিতা থেকে সন্তানে উত্তরিত হয় এবং কিভাবে তা নিয়ন্ত্রণ ও উন্নয়ন করা যায় এগুলো আলোচনা ও গবেষণা করাই এ শাখার কাজ ।
৭। ইকোলজি (Ecology) বা বাস্তু বিদ্যা : এ শাখায় কোন জীব বা জীব সম্প্রদায়ের উপর তার চারপাশের পরিবেশের প্রভাব সম্পর্কে আলোচনা করা হয় ।
৮। ইভোলিউশন (Evolution) বা অভিব্যক্তি ঃ জীববিজ্ঞানের এ শাখায় জীবের উৎপত্তি ও ক্রমবিকাশ নিয়ে আলোচনা করা হয় ।
আরও পড়ুন :- জীববিজ্ঞান কাকে বলে? জীববিজ্ঞান পাঠের প্রয়োজনীয়তা
ফলিত জীববিজ্ঞানের শাখা :-
১। চিকিৎসাবিদ্যা ঃ মানবদেহের বিভিন্ন রোগ নির্ণয় ও চিকিৎসা পদ্ধতি সংক্রান্ত বিজ্ঞান ।
২। কৃষিবিজ্ঞান : আধুনিক কৃষি পদ্ধতি, উপকরণ ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার সংক্রান্ত বিজ্ঞান ।
৩। সুপ্রজননবিদ্যা ঃ জীবের কৃত্রিম প্রজনন সংক্রান্ত বিজ্ঞান ।
৪। বনবিজ্ঞান : রক্ষণাবেক্ষণ ও পরিচর্যা সংক্রান্ত বিজ্ঞান ।
৫। মৎসবিদ্যা : আধুনিক পদ্ধতিতে মৎস্য প্রতিপালন সংক্রান্ত বিজ্ঞান ।
৬। কীটতত্ত্ব : পোকা নিয়ন্ত্রণের আধুনিক পদ্ধতি, উপকরণ ও যন্ত্রপাতির ব্যবহার সংক্রান্ত বিজ্ঞান ।
৭। পশুপালনবিদ্যা : বিভিন্ন গবাদিপশু পালন সম্পর্কিত আধুনিক পদ্ধতি সংক্রান্ত বিজ্ঞান ।
জীববিজ্ঞানের বিশেষ শাখা :-
১। ফাইকোলজি : শুধুমাত্র শৈবাল সম্বন্ধে আলোচনা করা হয় ।
২। মাইকোলজি : শুধুমাত্র ছত্রাক সম্বন্ধে আলোচনা করা হয় ।
৩। ভাইরোলজি : কেবলমাত্র ভাইরাস সম্বন্ধে আলোচনা করা হয় ।
৪। হেলমিনথোলজি : কেবলমাত্র কৃমি সম্বন্ধে আলোচনা করা হয় ।
৫। এনটোমোলজিঃ কেবলমাত্র কীটপতঙ্গ নিয়ে আলোচনা করা হয় ।
উপসংহার : উপরে উল্লেখিত বিভাগগুলোর প্রতিটির মধ্যে আরো অনেক উপবিভাগ বা শাখা-প্রশাখা আছে। আগেই বলা হয়েছে জীববিজ্ঞানে গবেষণা এখন ব্যাপকভাবে হচ্ছে। তার দরুণ এর শাখা-প্রশাখাও দিনদিন বাড়ছে।