কদর শব্দের অর্থ কি? তাকদির সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের মতামত

কদর (قدر ) - এর আভিধানিক অর্থ : 

১। التعبين তথা নির্দিষ্ট করা, নির্ধারণ করা। 

যেমন বলা হয়- قدر فلان لفلان هذا

২ । الحرمه والوقار তথা মর্যাদা ও সম্মান। 

এ অর্থে কুরআন মাজীদে এসেছে- إِنَّا أَنْزَلْنَاهُ فِي لَيْلَةِ الْقَدْرِ .

৩. معان معين তথা নির্দিষ্ট স্থান। 

এ অর্থে কুরআন মাজীদে বলা হয়েছে-  وَأَنْزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بَقَدَرهَا .

8. مقدار الشيء  তথা কোনো জিনিসের পরিমাণ। 

এ অর্থে কুরআন মাজীদে এসেছে, إِنَّا كُلَّ شَيْءٍ خَلَقْنَاهُ بِقَدَرٍ .

৫. একটি বস্তু অপর একটি বস্তুর সমপরিমাণ হওয়া ।

কদর (قدر ) - এর পারিভাষিক সংজ্ঞা :- 

১. শরীয়তের পরিভাষায় তাকদীর হলো-

هُوَ تَحْدِيدُ كُلّ مَخْلُوقِ بِحَدِهِ الَّذِى يُوجَدُ مِنْ حُسْنٍ وَقَبْحٍ وَنَفْعِ وَضَرَرٍ وَمَا يَحْوِيهِ مِنْ زَمَانٍ أَوْ مَكَانٍ وَمَا يَتَرَتَبُ عَلَيْهِ مِنْ ثَوَابِ وَعِقَاب

অর্থাৎ, সৃষ্টির যাবতীয় বিষয় তথা ভালোমন্দ, উপকার অপকার ইত্যাদির স্থান-কাল এবং এসবে শুভ ও অশুভ পরিণাম পূর্ব হতে নির্ধারিত হওয়াটাই তাকদীর।

২. আল কামূসুল ফিকহী গ্রন্থকার বলেন- অর্থাৎ, মহান আল্লাহ তাঁর বান্দার ওপর যে ফয়সালা বা সিদ্ধান্ত কার্যকর করেন, তাকে কদর (قدر )  বলা হয়।

৩. ফিকহুল আকবার গ্রন্থ প্রণেতা বলেন - কদর তথা তাকদীর হচ্ছে, প্রত্যেক সৃষ্টিকে তার অবস্থানের সাথে নির্দিষ্ট করা; চাই সেটি ভালো হোক বা মন্দ হোক, উপকারী হোক বা অপকারী হোক । 

৪. কতিপয় আলেম বলেন- আল্লাহ তায়ালা আযলের মধ্যে, তার বান্দার জন্য জীবন, মৃত্যু, রিজিক এবং অন্যান্য যা নির্ধারণ করেছেন, তাকে তথা তাকদীর বলে । 

আরও পড়ুন :- সাওম অর্থ কি? সাওম কাকে বলে। সাওম কত প্রকার ও কি কি  

তাকদীর সম্পর্কে ওলামায়ে কেরামের মতামত :- 

তাকদীরের প্রতি বিশ্বাস সম্পর্কে আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াত ও কাদারিয়া সম্প্রদায়ের মাঝে মতবিরোধ রয়েছে। যেমন— 

১. কাদারিয়া সম্প্রদায়ের অভিমত : কাদারিয়া সম্প্রদায়ের মতে, তাকদীরের অস্তিত্ব বলতে কিছু নেই। কোনো বস্তু সংঘটিত হওয়ার পূর্বে আল্লাহ তায়ালা এ ব্যাপারে কোনো কিছু জানেন না। বস্তু সংঘটিত হলেই তিনি জানতে পারেন। (নাউযুবিল্লাহ)

২. আহলে সুন্নাতের অভিমত : আহলে সুন্নাত ওয়াল জামায়াতের মতে, অবশ্যই তাকদীরের অস্তিত্ব রয়েছে। তা আল্লাহ তায়ালার কুদরতি হাতেই ন্যস্ত। পৃথিবীর সবকিছুর চাবিকাঠি একমাত্র তাঁরই হাতে। আর তাকদীরের ওপর ঈমান আনয়ন করা ফরয। তাকদীরের অস্বীকারকারী নিঃসন্দেহে কাফের।

দলীল : স্বীয় মতের পক্ষে তাঁরা নিম্নরূপ দলীলগুলো পেশ করেন-

ক. মহান আল্লাহর বাণী-

 ١. ما اصاب من مصيبه الا باذن الله. ومن يؤمن بالله يهدي قلبه والله بكل شيء عليم

  ٢. يدبر الامر من السماء الى الارض

 ٣ . ما اصابك من حسنه فمن الله

খ. হাদীসের বাণী-

١. قال ابن عمر والذي يحلف به عبد الله بن عمر لو ان لاحدهم مثل احد ذهبا فانفقه ما قبل الله منه حتى يؤمن بالقدر -

 ٢. قوله عليه السلام الايمان ان تؤمن بالله وملائكته وكتبه ورسله واليوم الاخر وتؤمن بالقدر خيره وشره -  

সারকথা হলো, তাকদীরে বিশ্বাস করা কেবল আল্লাহর ইলমে আযলী তথা চিরন্তন জ্ঞানকে স্বীকার করার প্রয়োজনেই আবশ্যক নয়; বরং স্রষ্টার সাথে সৃষ্টির সম্পর্ক স্থাপনের জন্য তাকদীরে বিশ্বাস করা জরুরি। 

কেননা যারা তাকদীরে বিশ্বাসী নয় তারা হয়তো নিজেকে আল্লাহর মুখাপেক্ষী নয় বলে মনে করে অথবা আল্লাহকে এমন পর্যায়ে মনে করে যে, তাকে মানা বা না মানাতে কোনো ব্যবধান বা পার্থক্য নেই। বস্তুত তাকদীরকে অস্বীকার করা আল্লাহ তায়ালাকে অস্বীকার করারই নামান্তর। 

হযরত ইবনে আব্বাস (রা) বলেন- اِيْمَانُ بِالْقَدرِ نِظَامُ التَّوْحِيدِ فَمَنْ آمَنَ وَكَذَّبَ بالقَدْرِ فقد نقض لِلتَّوْحِيدِ . অর্থাৎ, আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাসী হওয়া তাকদীরের বিশ্বাসের ওপর নির্ভরশীল। কাজেই যে ব্যক্তি ঈমান আনল, কিন্তু তাকদীরকে অস্বীকার করল প্রকৃতপক্ষে সে একত্ববাদকেই প্রত্যাখ্যান করল ।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad