সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন প্রকারের কুফরের বর্ণনা

উপস্থাপনা : কুফর মুমিনের ঈমান বিধ্বংসী একটি মারাত্মক ব্যাধি। প্রত্যেক মুমিনের উচিত কুফরমুক্ত ঈমান লালন করা; কিন্তু অতীব দুঃখের বিষয় হচ্ছে, কুরআন, হাদীস ও দীনি সংস্কৃতি থাকা সত্ত্বেও সমাজের অনেক মুসলিম বিভিন্ন প্রকারের কুফরের মধ্যে নিপতিত রয়েছে। নিম্নে আমাদের সমাজে প্রচলিত কতিপয় কুফর সম্পর্কে আলোচনা পেশ করা হলো ।

সমাজে প্রচলিত কুফর :-

আমাদের সমাজে অনেক কুফরী আকিদা ও কার্যক্রম প্রচলিত রয়েছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কয়েকটির নমুনা নিম্নরূপ-

১. ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্য বলে বিশ্বাস করা :- 

গণক, ঠাকুর, জ্যোতিষী, রাশিচক্রবিদ, হস্তরেখাবিদ বা যে কোনো ভবিষ্যদ্বক্তার ভবিষ্যদ্বাণীকে সত্য বলে বিশ্বাস করা কুফর। 

২. পাপকে বৈধ বলে বিশ্বাস করা :- 

কোনো কর্ম যদি কুরআন হাদীসের সুনিশ্চিত বিনা ও সন্দেহাতীত দলীল দ্বারা পাপ হিসেবে সাব্যস্ত হয়, তবে সে পাপকে হালাল বা বৈধ বলে বিশ্বাস করা কুফর। অনুরূপভাবে শরীয়তের প্রমাণিত কোনো বিষয় সম্পর্কে উপহাস করা বা হাসিতামাশা করাও কুফর। 

৩. আল্লাহর বিশেষণ বা নির্দেশের সমালোচনা :- 

মহান আল্লাহর মর্যাদার অবমাননাকর কোনো বিশেষণ বা কর্ম তাঁর ওপর আরোপ করা অথবা তাঁর কোনো নাম বা নির্দেশ নিয়ে উপহাস করা কুফর।

সমাজে প্রচলিত এসব কুফরের মধ্যে রয়েছে নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত, পর্দা, ইসলামী আইন, চুরি, ব্যভিচার ও মদ্যপানের শাস্তি, মৃত্যুদণ্ড ও তালাক এসব শরয়ী বিধান সম্পর্কে উপহাস করা, তামাশা করা, অনুপযোগী বলে মনে করা ও এগুলোর প্রতি বিরক্তি অনুভব করা।

আরও পড়ুন :- কুফর কাকে বলে? কুফর শব্দের অর্থ কি।কুফর কত প্রকার ও কি কি

৪. আল্লাহর নির্দেশের ব্যতিক্রম করার বৈধতায় বিশ্বাস :- 

কেউ যদি আল্লাহর নির্দেশের বা ইসলামের বিধিবিধানের ব্যতিক্রম করা ও অবাধ্যতায় লিপ্ত হওয়াকে বৈধ বলে মনে করে, তাহলে কুফর হিসেবে গণ্য হবে। আর আল্লাহর বিধিবিধান অনুযায়ী বিচার ফয়সালা না করা কুফরী। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন- وَمَنْ لَمْ يَحْكُمْ بِمَا اَنْزَلَ اللهُ فَأُولئِكَ هُمُ الْكَافِرُوْنَ

৫. কবরবাসীর নিকট সাহায্য বা আশ্রয় প্রার্থনা করা ।

৬. আল্লাহ ছাড়া অন্য কারো নামে মান্নত করা।

৭. অলীদের নামে মান্নত করা এবং তাদের নিকট অলৌকিক সাহায্য কামনা করা। 

৮. মৌখিক ও আন্তরিকভাবে আল্লাহর একত্ববাদকে এবং রাসূল (স)-এর রিসালাতকে অস্বীকার করা। যেমন আল্লাহ তায়ালা বলেন-

وَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرى عَلَى اللهِ كَذِبًا اَوْ كَذَّبَ بِالْحَقِّ لَمَّا جَاءَهُ اليس في جهنّم مثوى للكافِرِينَ .

৯. সত্য জানা সত্ত্বেও অহংকারবশত তা অস্বীকার করা। যেমন আল্লাহ তায়ালার বাণী-

وَإِذْ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِأَدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا ابْلِيس - أبَى وَاسْتَكْبَرَ وكَانَ مِنَ الْكَافِرِيْنَ.

১০. ইসলামের বিভিন্ন বিধিবিধান অস্বীকার করা। যেমন- যাকাত, ইসলামী দণ্ডবিধি ও ইসলামী রাজনীতিকে অস্বীকার করা ।

উপসংহার :- 

কুফর সবচেয়ে জঘন্যতম অপরাধ। এগুলো মুমিনের ঈমান বিধ্বংসী উপাদান। কাজেই এসব ঘৃণ্য কার্যক্রম পরিহার করে ঈমানকে খাঁটি ও মযবুত করে দুনিয়ার শান্তি ও আখেরাতের মুক্তি অর্জন করার প্রচেষ্টায় এগিয়ে যাওয়াই মুমিন জীবনের অন্যতম লক্ষ্য হওয়া উচিত।

Post a Comment

0 Comments