রচনা : ভূমিকম্প [ Class 6, 7, 8, 9, 10 ]

ভূমিকা  

বাংলাদেশ দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার দেশ। কোনো না কোনো দুর্যোগ প্রতিবছরই বাংলাদেশের মানুষের জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করছে। বিভিন্ন সূচকের মানদণ্ডে বিজ্ঞানীরা এসবের নাম দিয়ে থাকেন। বন্যা, সাইক্লোন, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস, খরা, নদীভাঙন ইত্যাদি ব্যাপক বিধ্বংসী এ সকল অনাহুত আপদ প্রায় সময়ই এ দেশের মানুষের জীবনযাত্রাকে লণ্ডভণ্ড করে দিচ্ছে। 

তারপর আবার বাংলাদেশের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে ভূমিকম্প। তাই আমাদের ভূমিকম্পজনিত ব্যাপক ধ্বংসযজ্ঞের হাত থেকে বাঁচার জন্য জাতীয় ভিত্তিক প্রস্তুতি নিতে হবে, অন্যথায় যেকোনো মুহূর্তে জাতিকে চরমমূল্য দিতে হবে।

ভূমিকম্প কী  

ভূঅভ্যন্তরে বিপুল শক্তি উদ্‌গিরণের ফলে ভূপৃষ্ঠ ক্ষণিকের জন্য কেঁপে ওঠে এবং ভূত্বকের কিছু অংশ আন্দোলিত হয়। এই রূপ আকস্মিক ও ক্ষণস্থায়ী কম্পনকে ভূমিকম্প (Earthquake) বলে। ভূপৃষ্ঠের কম্পন তরঙ্গ থেকে যে শক্তির সৃষ্টি হয় ভূমণ্ডলে তা ভূমিকম্পের মাধ্যমে প্রকাশ পায়। 

সমুদ্রের নিচে ভূগাঠনিক কারণে সুনামি সৃষ্টি হয় এবং গভীর সমুদ্রে অবস্থানকালে এর উপস্থিতি বোঝা যায় না বলে সতর্কীকরণে বেশি সময় পাওয়া যায় না। এই তরঙ্গ ভূগর্ভের কোনো অঞ্চলে উৎপন্ন হয় এবং তা চতুর্দিকে ছড়িয়ে পড়ে । এ কম্পন মাত্র কয়েক সেকেন্ড থেকে এক/দুই মিনিট স্থায়ী হয় ।

আরও পড়ুন : বন্যা : বাংলা প্রবন্ধ রচনা

ভূমিকম্পের কারণ  

সাধারণত তিনটি প্রধান কারণে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়ে থাকে :

(ক) ভূপৃষ্ঠজনিত : 

ভূপৃষ্ঠ অনেকগুলো প্লেট-এর সমন্বয়ে গঠিত। এই প্লেটগুলো একটি আরেকটির থেকে আলাদা থাকে ফল্ট বা ফাটল দ্বারা। এই প্লেটগুলোর নিচেই থাকে ভূঅভ্যন্তরের সকল গলিত পদার্থ। কোনো প্রাকৃতিক কারণে এই গলিত পদার্থগুলোর স্থানচ্যুতি ঘটলে প্লেটগুলোরও কিছুটা স্থান চ্যুতি ঘটে। এ কারণে একটি প্লেটের কোনো অংশ অপর প্লেটের তলায় ঢুকে যায় ৷ ফলে ভূমিতে কম্পন সৃষ্টি হয়- যা ভূমিকম্পের সৃষ্টি করে।

(খ) আগ্নেয়গিরিজনিত : 

কখনো কখনো আগ্নেয়গিরির বিস্ফোরণ ও গলিত লাভা উৎক্ষিপ্ত হওয়ার কারণে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হতে পারে ।

(গ) শিলাচ্যুতিজনিত : 

কখনো কখনো শিলা তার স্থান থেকে সরে যাওয়ার ফলে ভূমিকম্পের সৃষ্টি হয়।

বাংলাদেশ ও আশপাশে সংঘটিত ভূমিকম্পসমূহ  

বাংলাদেশ ও তার পার্শ্ববর্তী এলাকায় শক্তিশালী, মাঝারি এবং মৃদু ভূমিকম্প অনেকবার আঘাত হেনেছে।

এদেশের ভিতরে ও পার্শ্ববর্তী এলাকার বিগত প্রায় ২৫০ বছরের ভূমিকম্পের নথিভুক্ত তালিকা পাওয়া যায়। এ তালিকা থেকে প্রতীয়মান হয় যে, ১৯০০ খ্রিষ্টাব্দের পর থেকে ২০০৪ পর্যন্ত বাংলাদেশের সংঘটিত হয়েছে ১০০টিরও বেশি ভূমিকম্প। তন্মধ্যে ৬৫টিরও বেশি ঘটেছে ১৯৬০ খ্রিষ্টাব্দের পরে। এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, বিগত ৩০ বছরে (পরিপ্রেক্ষিত ২০০৪) ভূমিকম্প সংঘটনের মাত্রা বেড়েছে। সংঘটনের মাত্রা বেড়েছে।

ভূমিকম্পে ক্ষতি  

ভূমিকম্পের কোনো পূর্বাভাস নেই। সে কারণে মানুষ সতর্কতামূলক কোনো পূর্ব প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারে না। ভূমিকম্পে বাংলাদেশের অসংখ্য ঘর-বাড়ি ধসে পড়বে, রাস্তা-ঘাট, ব্রিজ ভেঙে পড়বে, মানুষসহ অসংখ্য প্রাণী মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়বে, অনেক মানুষ দেয়ালচাপা পড়ে মৃত্যুর সাথে যুদ্ধ করবে। তাছাড়া জীবনধারণের প্রয়োজনীয় সকল জিনিসপত্র ধ্বংস হয়ে পড়বে। যদি কখনো বাংলাদেশে বড়ো ধরনের ভূমিকম্প হয় তাহলে সারাদেশ একটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হবে।

আরও পড়ুন :  বর্ষাকাল অথবা, বাংলার বর্ষা রচনা [  ক্লাস ৬, ৭, ৮, ৯, ১০ ]

ভূমিকম্পের সময় করণীয়  

ভূমিকম্পের সময় যা যা করণীয় তা নিচে দেওয়া হলো :

১. প্রথম ভূমিকম্পের সময় সম্ভব না হলেও পরে গ্যাস ও বিদ্যুতের মেইন সুইচ বন্ধ করে দিতে হবে।

২. ভূমিকম্প শুরু হলে ছোটাছুটি না করে স্থির থাকতে হবে। বাইরে বের হওয়া, ছাদ বা জানালা দিয়ে লাফ দেওয়া থেকে বিরত থাকতে হবে।

৩. ভূমিকম্প শুরু হলে মেঝেতে বসে পড়তে হবে। তারপর কোনো ডেস্ক বা টেবিলের নিচে প্রবেশ করতে হবে।

৪. ভূমিকম্পের সময় গাড়িতে থাকলে গাড়ি বন্ধ করে ভিতরে বসে থাকতে হবে। গাড়ির বাইরে বের হলে আহত হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে ৷

৫. ভবনে ভূমিকম্পরোধক ব্যবস্থা থাকলে ভবন ধসের সম্ভাবনা কম থাকে। সুতরাং তখন ভবনে অবস্থান করাই সবচেয়ে বেশি নিরাপদ।

৬. ভূমিকম্পের সময় এলিভেটর/লিফ্ট ব্যবহার করা সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিপূর্ণ । সুতরাং এলিভেটর/লিফ্ট ব্যবহার পরিহার করতে হবে। 

৭. ‘মেইন শক' বা মূল ভূমিকম্প হওয়ার আগে ও পরে মৃদু বা মাঝারি মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। যাকে বলা হয় ‘ফোরশক’ এবং ‘আফটার শক'। এ সময়ও সতর্ক থাকতে হবে। কেননা 'আফটার শক' বা 'ফোরশক' থেকেও বড়ো ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

উপসংহার  

মৃদু ভূমিকম্প মোকাবিলায় ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে সরকারি সতর্কতা অবলম্বন করলে বড়ো ধরনের বিপদ থেকে রক্ষা পাওয়া যায়। আমাদের শক্তিশালী ভূমিকম্পের বিপর্যয় মোকাবিলা করতে সকল প্রকার প্রস্তুতি নিয়ে রাখতে হবে। বাংলাদেশে অনেকবার বিভিন্ন মাত্রার ভূমিকম্প হয়েছে। এতে তেমন কিছু হয়নি; কিন্তু যদি বেশি মাত্রায় ভূমিকম্প আঘাত হানে তাহলে সীমাহীন ক্ষতির আশঙ্কা মোটেই উড়িয়ে দেওয়া যায় না । এজন্য এখনই উদ্যোগ নিতে হবে।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad