সংজ্ঞা : যে টিস্যু বা কলা মূল থেকে পানি ও খনিজ লবণ উদ্ভিদের পাতা পর্যন্ত পৌঁছায় তাকে জাইলেম টিস্যু বলে।
জাইলেম টিস্যুর বর্ণনা :
শিরাত্মক টিস্যু সমষ্টি বা ভাসকুলার টিস্যুর একটি প্রধান অংশ হল জাইলেম । প্রধানতঃ মৃত এই টিস্যুর কোষগুলো বৃদ্ধির সময় জটিলভাবে পরিবর্তিত হয়ে প্রাথমিক পর্যায়ে চার প্রকার উপাদানে বিভেদিত হয়।
জাইলেম যে অংশে প্রথমে বিভেদিত হয়, তাকে বলে প্রোটোজাইলেম (Protoxylem)। প্রোটোজাইলেম বাহিকাগুলো সরু ও লম্বা এবং প্রাচীর বলয়াকৃতি ও সপিটিস্যুকৃতির হয়। পক্ষান্তরে, জাইলেমের যে অংশ পরে বিভেদিত হয়, তাকে মেটাজাইলেম (Metaxylem) বলে। মেটাজাইলেম বাহিকা বেশ স্থূল এবং প্রাচীর কৃপাঙ্কিত হয়।
জাইলেম টিস্যুর গঠন :-
জাইলেম টিস্যু চার প্রকার কোষ নিয়ে গঠিত।
১) ট্রাকীড : এরা মৃতকোষ । পানি সঞ্চয় ও উদ্ভিদের দৃঢ়তা প্রদান করে ।
২) ট্রাকিয়া বা ভেসেল : এরাও মৃত। এরা খনিজ লবণ ও পানি সংবহন করে ।
৩) জাইলেম প্যারেনকাইমা : এই কোষগুলো জীবিত বা সজীব। এরা খাদ্য ও বর্জ্য্য পদার্থ সঞ্চয় করে রাখে। এছাড়া পানি ও খনিজ লবণ সংবহন ও উদ্ভিদে দৃঢ়তা প্রদান করে ।
৪) জাইলেম তন্তু বা কাস্টল তন্তু : এরা মৃতকোষ । উদ্ভিদ অঙ্গের দৃঢ়তা প্রদান করাই এর প্রধান কাজ ।
আরও পড়ুন :- ট্রাকিড ও ভেসেল এর সংজ্ঞা, বৈশিষ্ট্য, অবস্থান, কাজ ও পার্থক্য
জাইলেম টিস্যুর কাজ :-
i. জাইলেম টিস্যুস্থ ভেসেল মূল হতে পানি ও পানিতে দ্রবীভূত অন্যান্য খনিজ লবণ গাছের পাতা ও অন্যান্য সবুজ অংশে পরিবহন করে ।
ii. জাইলেম টিস্যুস্থ ট্রাকিড উদ্ভিদকে দৃঢ়তা প্রদান করা ছাড়াও মূল হতে কান্ড ও পাতায় পানি ও খনিজ লবণ পরিবহন করে থাকে ।
iii. জাইলেম টিস্যুস্থ ফাইবারসমূহ উক্ত অঙ্গকে দৃঢ়তা প্রদান করে থাকে ।
iv. জাইলেম টিস্যুস্থ প্যারেনকাইমা প্রয়োজন অনুযায়ী খাদ্য সঞ্চয় ও খাদ্য পরিবহন করে থাকে ।
ফ্লোয়েম টিস্যু
সংজ্ঞা :- যে টিস্যু সবুজ পাতায় প্রস্তুতকৃত খাদ্য উদ্ভিদ দেহের বিভিন্ন অংশে পৌঁছে দেয়, তাকে ফ্লোয়েম টিস্যু বলে।
ফ্লোয়েম টিস্যুর গঠন :-
ফ্লোয়েম টিস্যু উদ্ভিদের পরিবহনতন্ত্রের একটি অংশ। মোট চারটি কোষ বা উপাদান নিয়ে এই টিস্যু গঠিত। আর এ কোষগুলো হলো-
(১) সীভনল :
সীভনলের কোষগুলো জীবিত । পরিণত সীভনলে নিউক্লিয়াস নেই । সীভনলের কোষগুলো একটির উপর আরেকটি লম্বালম্বিভাবে বা খাড়াভাবে সাজানো থাকে বলে সবগুলো একত্রে একটা নলের মত দেখায়। কোষের মধ্যে প্রাচীরে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র ছিদ্র থাকে। ছিদ্রযুক্ত এ প্রাচীরকে সীভপ্লেট বলে। একটি কোষের সাইটোপ্লাজম সীভপ্লেটের ছিদ্রগুলোর মধ্য দিয়ে অপর একটি কোষের সাইটোপ্লাজমের সাথে যুক্ত থাকে ।
(২) সঙ্গীকোষ :
সীভনলের ঠিক পার্শ্বেই নিউক্লিয়াস বিশিষ্ট এবং ঘন সাইটোপ্লাজমপূর্ণ যে কোষগুলো থাকে, তাদেরকে সঙ্গীকোষ বলে। সঙ্গীকোষগুলো সজীব এবং আকারে লম্বাটে হয়। প্রত্যেকটি কোষে একটি করে নিউক্লিয়াস ও কতকগুলো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কোষ গহ্বর থাকে ।
(৩) ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা :
এ প্রকার প্যারেনকাইমা কোষগুলো আকারে লম্বা ও চওড়া হয়। সাইটোপ্লাজম ও নিউক্লিয়াস কোষের মধ্যে থাকে।
(৪) ফ্লোয়েম ফাইবার :
ফ্লোয়েম ফাইবার ফ্লোয়েম-এ অবস্থিত। ফ্লোয়েম ফাইবার সাধারণ ক্লেরেনকাইমা জাতীয় কোষ ।
আরও পড়ুন :- প্যারেনকাইমা, কোলেনকাইমা। প্যারেন, কোলেন, স্ক্লেরেনকাইমা পার্থক্য
ফ্লোয়েম টিস্যুর কাজ :-
i. সীভনল প্রস্তুতকৃত খাদ্যদ্রব্য সবুজ অংশ হতে দেহের বিভিন্ন সজীব অংশে পরিবহন করে ।
ii. ফ্লোয়েম ফাইবার ফ্লোয়েম টিস্যুকে তথা উদ্ভিদ অঙ্গকে দৃঢ়তা প্রদান করে।
iii. ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা প্রয়োজনে খাদ্য সঞ্চয় করে এবং পরিবহনে সাহায্য করে।
মনে রেখ :
১. জাইলেম পানি ও খনিজ লবণ মূল থেকে পাতায় পৌঁছায় ।
২. ফ্লোয়েম খাদ্য পাতা থেকে উদ্ভিদের বিভিন্ন অংশে পৌঁছায় ।
জাইলেম ও ফ্লোয়েম এর পার্থক্য:-
জাইলেম | ফ্লোয়েম |
---|---|
১। জাইলেম প্রধানত মৃত টিস্যু । | ১। ফ্লোয়েম সজীব বা জীবিত টিস্যু। |
২। জাইলেম ট্রাকিড, ভেসেল, জাইলেম ফাইবার ও জাইলেম প্যারেনকাইমা উপাদানসমূহ বিদ্যমান । | ২। ফ্লোয়েমে সিভনল, সঙ্গীকোষ, ফ্লোয়েম ফাইবার ও ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা উপাদানসমূহ বিদ্যমান । |
৩। জাইলেমে একমাত্র জীবিত উপাদান হলো উড প্যারেনকাইমা । | ৩। ফ্লোয়েমে একমাত্র মৃত উপাদান হলো ফ্লোয়েম ফাইবার । |
৪। এটি কাণ্ডের কেন্দ্রের দিকে থাকে। | ৪। এটি কাণ্ডের পরিধির দিকে থাকে। |
৫। পানি ও খাদ্যরস দেহে পরিবহন এবং উদ্ভিদ দেহকে দৃঢ়তা প্রদান করা জাইলেমের কাজ । | ৫। খাদ্য পরিবহন ও সঞ্চয় করা ফ্লোয়েমের প্রধান কাজ । |