ভূমিকা :
বর্তমান বিশ্বে আর্সেনিক একটি মারাত্মক স্বাস্থ্য সমস্যা। আর এটি বর্তমানে বাংলাদেশে প্রকট আকার ধারণ করেছে। সমগ্র জাতি আজ আর্সেনিক জ্বরে আক্রান্ত হয়ে হীনতম জীবনযাপন করছে। ভূত্বকে অবস্থিত ২০টি প্রয়োজনীয় উপাদানের একটি হচ্ছে আর্সেনিক। এটি একটি যৌগিক পদার্থ এবং ২৪০টিরও বেশি খনিজ উপাদানের সমন্বয়ে তৈরি। মাটির ওপরের চেয়ে ভূগর্ভে আর্সেনিকের পরিমাণ বেশি। দেশের প্রায় অধিকাংশ জেলার মাটির নিচে পানিতে আর্সেনিক পাওয়া গেছে।
আর্সেনিক কী :
একটি ত্রিযোজী মৌলিক পদার্থ হচ্ছে আর্সেনিক। এটি ভূগর্ভস্থ পাথরের স্তরে পাওয়া যায়। ভূগর্ভ হতে অতিরিক্ত পানি উত্তোলনের ফলে পানির স্তরে ভারসাম্য নষ্ট হচ্ছে। ফলে মাটির নিচে ভূরাসায়নিক বিক্রিয়ায় আর্সেনিক বেরিয়ে এসে পানিতে দ্রবীভূত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংখ্যা (WHO)-এর মতে, আর্সেনিকের সহনশীল মাত্রা হচ্ছে ০.০৫ মিলিগ্রাম। এর বেশি পরিমাণ আর্সেনিক মিশ্রিত পানি রান্না বা খাওয়ার কাজে ব্যবহারের অযোগ্য।
আর্সেনিকের বিষক্রিয়া ও তার ফলাফল :
০.০৫ মিলিগ্রাম এর বেশি পরিমাণ আর্সেনিক মিশ্রিত পানি দীর্ঘদিন ধরে পান করলে শরীরে আর্সেনিকের বিষক্রিয়া দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির শরীরে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা নিম্নরূপ
- ক. শরীরে বা হাতের তালুতে বাদামি ছাপ পড়তে পারে।
- খ. সাধারণত বুকে, পিঠে, বাহুতে ফোঁটা ফোঁটা দাগ দেখা দিতে পারে।
- গ. আক্রান্ত রোগীর জিহ্বা, মাড়ি, ঠোঁট ইত্যাদিতে মিউকাস মেমব্রেন, মেলানোসিস হতে পারে।
- ঘ. কোনো কোনো রোগীর সাদা ও কালো দাগ পাশাপাশি থাকতে পারে।'
- ঙ. কারো কারো হাত-পায়ের চামড়া পুরু হয়ে যায়, আঙুল বেঁকে যায় ও অসাড় হয়ে পড়ে।
আরও পড়ুন : শব্দ দূষণ ও তার প্রতিকার - বাংলা রচনা
প্রতিকারের উপায় :
আর্সেনিক দূষণের ফলে মানুষের শরীরে যে বিষক্রিয়া দেখা দেয় তার সঠিক কোনো চিকিৎসা পদ্ধতি আজও আবিষ্কৃত হয়নি। তাই বেঁচে থাকার জন্য, প্রতিকারই একমাত্র উপায়। প্রতিকারের জন্য নিচের পদক্ষেপগুলো নেয়া যেতে পারে।
- ক. ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার হ্রাস করা।
- খ. বৃষ্টির পানি, পুকুর, নদীনালা ইত্যাদির পানি ব্যবহার করা।
- গ. আর্সেনিক আক্রান্ত এলাকা সঠিকভাবে চিহ্নিত করে সেখানকার জনগণের মধ্যে সচেতনতা সৃষ্টির ব্যবস্থা করা। এসব এলাকার নলকূপের পানি আর্সেনিকমুক্ত কিনা তা পরীক্ষা করা।
- ঘ. আর্সেনিক মিশ্রিত পানি বিশুদ্ধ করার প্লান্ট স্থাপন করা।
- ঙ. আর্সেনিককবলিত এলাকায় বোরো ধানের চাষ না করে রবি ও খরিপ চাষাবাদ করলে আর্সেনিক দূষণ কম হবে।
সরকারি প্রচেষ্টা :
আর্সেনিক সমস্যা থেকে জাতিকে মুক্ত করতে বাংলাদেশ সরকার বেশ কিছু কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। প্রথমত, প্রতিটি গ্রামে আর্সেনিকের ভয়াবহতা সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলা। কী কী ভাবে এর রোগ ছড়ায় এবং এটি মানুষের শরীর কী কী সমস্যার সৃষ্টি করে সেটা বোঝানো। এছাড়া আর্সেনিকযুক্ত নলকূপ চিহ্নিতকরণ প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর্সেনিকমুক্ত নলকূপকে সবুজ রং এবং আর্সেনিকযুক্ত নলকূপকে লাল রঙে চিহ্নিত করা হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন পত্রপত্রিকা, বেতার, টেলিভিশনেও এ সম্পর্কে ব্যাপকভাবে প্রচারণা চালানো হচ্ছে জনগণকে সচেতন করার জন্য।
উপসংহার :
জীবনকে সুস্থ ও সুন্দর করে গড়ে তুলতে হলে নিরাপদ পানির বিকল্প নেই। দিনে দিনে যেভাবে এ রোগীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে তাতে ভয়াবহতার ইঙ্গিত সুস্পষ্ট। তাই এ ব্যাপারে আমাদের সকলকে সচেতন হতে হবে ।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা