চলিত ভাষা থেকে সাধু ভাষায় রূপান্তরের নিয়ম :
১. তদ্ভব শব্দকে যথাসম্ভব তৎসম শব্দে পরিবর্তিত করতে হবে।
২. প্রয়োজনবোধে সমাসের আশ্রয় নিতে হবে।
৩. ক্রিয়াপদ ও সর্বনাম পদের পূর্ণাঙ্গ রূপ দিতে হবে।
৪. চলিত ভাষায় যদি উদ্দেশ্য অংশ পরে ও বিধেয়াংশ আগে থাকে, তবে সাধু ভাষায় রূপান্তরের সময় উদ্দেশ্যাংশকে আগে বিধেয়াংশকে পরে নিতে হবে।
৫. সাধু ভাষার ভাব-গাম্ভীর্য সংরক্ষণ করতে হবে।
চলিত ভাষা থেকে সাধু ভাষা রূপান্তর :-
চলিত : আমরা এখন জরুরী কাজ করছি। অনেক সময় কাজ করে আমাদেরকে এটি শেষ করতে হবে। কাজেই আমরা এখন যেতে পারব না। এতে তোদের অসুবিধা হলে আমরা কি করতে পারি? তোরা বরং দু'দিন পরে আসিস।
সাধু : আমরা এ ন জরুরী কাজ কর্মে ব্যাপৃত আছি। দীর্ঘ সময় কাজে লিপ্ত থাকিয়া আমাদেরকে ইহা শেষ করিতে হইবে । অতএব আমরা এখন যাইতে পারিব না। ইহাতে তোমাদের অসুবিধা হইলে আমরা কি করিতে পারি? তোমরা বরং দুই দিন পরে আসিতে পার।
চলিত : আজ মাদরাসা মাঠে ফুটবল খেলা হবে। খেলাটি দেখতে এলাকার অনেক লোক আসবে। যেই বলটি খেলার জন্য ক্রয় করা হবে, সেটি ঢাকা হতে আনা হবে। বিকেল চারটা বাজে খেলা শুরু হবে।
সাধু : অদ্য মাদরাসা মাঠে ফুটবল খেলা হইবে । খেলাটি দেখিতে এলাকার বহু লোক আসিবে। যে বলটি খেলার জন্য ক্রয় করা হইবে, সেইটি ঢাকা হতে আনা হইবে । বিকেল চারটার সময় খেলা আরম্ভ হইবে ।
আরও পড়ুন :- সাধু ভাষা থেকে চলিত ভাষায় - রূপান্তর উদাহরণ
চলিত : আমার চাচা রহিম বলছিলো সেও আমার সাথে যাবে । কিন্তু গতকাল হতে তার খোঁজ পাচ্ছিনা। এ সময় আমার ভাই হঠাৎ খুব দৌড়ে আসছে। তাকে বেশ ব্যস্ত মনে হচ্ছিল।
সাধু : আমার চাচা রহিম বলিয়াছিল সেও আমার সঙগে যাইবে। কিন্তু গতকল্য হইতে তাহার খোঁজ পাইতেছি না। এই সময় আমার ভাই হঠাৎ খুব দৌড়াইয়া আসিতেছে। তাহাকে খুব ব্যস্ত মনে হইতেছিল ।
চলিত : প্রতিদিন মাদরাসা ছুটি হবার পর শিউলী বাড়ী গিয়ে তার বইগুলো পড়ার টেবিলে সাজিয়ে রেখে দেয়। বিকেলে বাড়ীর মেয়েগুলো কেমন নাচতেছে, সে তা দেখতে লাগল । ভাবী বলল, “নাচটা খুব ভালো হয়েছে।”
সাধু : প্রত্যেক দিন মাদরাসা ছুটি হইবার পর শিউলী বাড়ী যাইয়া তাহার বইগুলি পড়ার টেবিলে সাজাইয়া রাখিয়া দিল। বিকালে মেয়েগুলি কেমন নাচিতেছে । অহা সে দেখিতে লাগিল। ভাবী বলিল, “নাচটা খুব ভাল হইয়াছে।”
চলিত : তাদের সাথে চলিত ভাষায় কথা বলতে গেলাম । তারা এ ভাষা জানতে বা বলতে চাইল না। তারা সাধু ভাষা বলতে বলতে চলে গেল। তাদের একজন বলল, চলিত ভাষা কথা বলার জন্য সহজ, আর সাধু ভাষা বড়ই কঠিন।
সাধু : তাহাদের সহিত চলিত ভাষায় কথা বলিতে গিয়েছিলাম। তাহারা এই ভাষা জানিতে বা বলিতে চাহিল না। তাহারা সাধু ভাষা বলিতে বলিতে চলিয়া গেল। তাহাদের একজন বলিল, চলিত ভাষায় কথা বলিবার জন্য সহজ, আর সাধু ভাষা ভীষণ জটিল ।
আরও পড়ুন :- সাধু, চলিত ও আঞ্চলিক ভাষা কাকে বলে? এদের বৈশিষ্ট্য ও উদাহরণ
চলিত ভাষা : বহুকাল বিস্তৃত সুখস্বপ্নের মত ঐ মধুর গান কানের ভেতর প্রবেশ করল। এত মধুর লাগল কেন? এ গান যে খুব সুন্দর এমন নয়। পথিক পথ দিয়ে আপন মনে গাইতে গাইতে যাচ্ছে। চাঁদনী রাত দেখে তার মনের আনন্দ উছলে উঠেছে। স্বভাবত তার কণ্ঠ মধুর; মধুর কণ্ঠে, এ মধুমাসে, নিজের মনের সুখের মাধুর্য্য ছড়াতে ছড়াতে যাচ্ছে। তবে অনেক তার বিশিষ্ট বাদ্যের বাণীয় আঙ্গুল স্পর্শের মত, ঐ গানের সুর আমার হৃদয়কে আলোড়িত করল কেন?
সাধু ভাষা : বহুকাল বিস্তৃত সুখস্বপ্নের ন্যায় ঐ মধুর গীতি কর্ণরন্ধ্রে প্রবেশ করিল। এত মধুর লাগিল কেন? এই সঙ্গীত যে অতি সুন্দর এমন নহে। পথিক পথ দিয়া আপন মনে গাহিতে গাহিতে যাইতেছেন । জ্যোৎস্নাময়ী রাত্রি দেখিয়া, তাহার মনের আনন্দ উছলাইয়া উঠিয়াছি। স্বভাবত তাহার কণ্ঠ মধুর; মধুর কণ্ঠে, এই মধুমাসে, আপনার মনের সুখের মাধুর্য্য বিকীর্ণ করিতে করিতে যাইতেছে। তবে বহুতন্ত্রীবিশিষ্ট অঙ্গুলি স্পর্শের ন্যায়, ঐ গীতি ধ্বনি আমার হৃদয় আলোড়িত কেন?
চলিত ভাষা : বাষ্পতো হাওয়ায় ভেসে বেড়াচ্ছে, কিন্তু ফুলের পাপড়ির শীতল স্পর্শটুকু পাওয়া মাত্র জয়ে শিশির হয়ে যাচ্ছে। আকাশে বাষ্প ভেসে চলেছিল, দেখা যাচ্ছিল না; পাহাড়ের গায়ে এসে ঠেকতেই মেঘ জমে বর্ষণের বেগে নির্ঝরণী বইয়ে দিল। তেমনি গীতিকবিতায় একটি মাত্র ভাব জমে মুক্তার মতো টলমল করে উঠে।
সাধু ভাষা : বাষ্পতো হাওয়ায় ভাসিয়া বেড়াইতেছে, কিন্তু ফুলের পাপড়ির শীতল স্পর্শটুকু পাইবা মাত্র জমিয়া শিশির হইয়া দেখা দেয়। আকাশে বাষ্প ভাসিয়া চলিয়াছিল, দেখা যাইতেছিল না; পাহাড়ের গায়ে আসিয়া ঠেকিতেই মেঘ জমিয়া বর্ষণের বেগে নির্ঝরিণী বহাইয়া দিল । তেমনি গীতিকবিতায় একটি মাত্র ভাব জমিয়া মুক্তার মতো টলমল করিয়া উঠে ।