উপস্থাপনা :
ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের মধ্যে নামাজের স্থান দ্বিতীয়। এটি শ্রেষ্ঠ ইবাদত। এর আরবি প্রতিশব্দ সালাত । এর অর্থ দোয়া, ক্ষমা প্রার্থনা, আল্লাহর পবিত্রতা ও গুণাগুণ বর্ণনা করা ৷
নামাজের গুরুত্ব :
নামাজের বহুমুখী গুরুত্ব ও উপকারিতা রয়েছে। যেমন-
১। আল্লাহর নৈকট্য লাভ :
নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্য লাভ করা যায় । নামাজ মুমিনের জন্য মিরাজস্বরূপ । রাসুল (স) বলেছেন, তুমি এমনভাবে নামাজ পড়, যেন তুমি আল্লাহকে দেখছ। যদি তাঁকে তুমি দেখতে না পাও, তবে মনে রেখ আল্লাহ অবশ্যই তোমাকে দেখছেন ৷
২। নামাজ ঈমানের পরিচায়ক :
নামাজ ঈমানদার ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্যকারী। এ নামাজ ঈমানের বাহ্যিক প্রকাশ । রাসুল (স) বলেছেন, কারো ঈমান পরীক্ষা করতে হলে তার নামাজ দেখ। তিনি অন্যত্র বলেছেন, নামাজ হলো ঈমান ও কুফরের পার্থক্যকারী।
৩। পাপ হতে বিরত থাকা :
নামাজের মাধ্যমে পাপ হতে বিরত থাকা যায়। আল্লাহ বলেন, নিশ্চয় নামাজ যাবতীয় অশ্লীল ও খারাপ কাজ হতে দূরে রাখে। ফলে নামাজি আল্লাহর ভয়ে সর্বদা লোভ-লালসা ও হিংসা-বিদ্বেষসহ যাবতীয় অনাচার হতে দূরে থাকে।
আরও পড়ুন : নামাজের শিক্ষা / সমাজ সংস্কারে নামাজের ভূমিকা - রচনা
৪। সমতা ও ঐক্য সৃষ্টি :
নামাজ মানুষে মানুষে ভেদাভেদ দূর করে আমীর, ফকির, ধনী, দরিদ্র সবাইকে একই কাতারে দাঁড় করায়। এতে সামাজিক শ্রেণিবৈষম্যের দেয়াল ভেঙে সমতা ও ঐক্য সৃষ্টি হয়।
৫। ভ্রাতৃত্বের বন্ধন :
নামাজের মাধ্যমে পরস্পরের সাথে দৈনিক পাঁচবার সাক্ষাৎ হয়। এতে হিংসা ও বিদ্বেষ দূর হয়ে সবাই ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হয় ।
৬। শিষ্টাচার শিক্ষা :
নামাজ মানুষকে শিষ্টাচার শিক্ষা দেয়। তাছাড়া নামাজ মানুষকে ধৈর্যশীল ও বিনয়ী করে তোলে। রাসুল (স) বলেছেন, যে ব্যক্তির নামাজ সুন্দর তাঁর কথাবার্তা, চালচলন, আচার ব্যবহারও সুন্দর।
৭। সমাজসংস্কার :
নামাজ শুধু একটি ইবাদতই নয়; নামাজ সমাজ সংস্কারের শ্রেষ্ঠ মাধ্যম। নামাজের মাধ্যমেই মানুষ ঐক্য, শৃঙ্খলা ও সাম্যের শিক্ষা লাভ করে। তাই নামাজের মাধ্যমে আদর্শ ইসলামি সমাজ নির্মাণ সহজ হয় ।
৮। স্বাস্থ্য সুরক্ষা :
নামাজ হলো স্বাস্থ্যের জন্য সর্বোত্তম ব্যায়াম, যা রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা সৃষ্টি করে ও মানসিক প্রশান্তি আনয়ন করে।
আরও পড়ুন : ইসলাম একটি পূর্ণাঙ্গ জীবনবিধান -বাংলা প্রবন্ধ রচনা
৯। শাস্তি হতে রক্ষা :
নামাজ ভয়াবহ শাস্তি হতে বেঁচে থাকার মাধ্যম। কেননা রাসুলুল্লাহ (স) বলেছেন, “যারা আজান শুনেও নামাজের প্রতি অবহেলা করে নিজেদের ঘর হতে বের হয় না, তাদের ঘরে আগুন লাগিয়ে দিতে আমার ইচ্ছে হয়।”
১০। শৃঙ্খলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতার প্রশিক্ষণ :
নামাজের মাধ্যমে মানুষ সামাজিক শৃঙ্খলাবোধ ও নিয়মানুবর্তিতার বাস্তব প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। দৈনিক নির্দিষ্ট পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ আদায়কারীর মধ্যে শৃঙ্খলাবোধ ও সময়ানুবর্তিতার গুরুত্ব সৃষ্টি হয়। এতে তার মাঝে সামাজিক কর্তব্যবোধ সৃষ্টি এবং নেতার আনুগত্য ও নেতৃত্বদানের গুণ সম্পর্কে শিক্ষালাভ হয় ৷
১১। আল্লাহর নির্দেশ পালন :
সর্বোপরি নামাজের মাধ্যমে আল্লাহর এক মহান ও অন্যতম নির্দেশ পালন করা হয় ।
উপসংহার :
ইসলামি জীবনব্যবস্থায় নামাজের গুরুত্ব অপরিসীম। পবিত্র কুরআনের ৮২ স্থানে আল্লাহ তায়ালা নামাজ প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে নির্দেশ প্রদান করেছেন। তাই আমাদের উচিত যথাসময়ে যথাযথ নিয়মে নামাজ আদায় করা এবং অন্যকে উদ্বুদ্ধ করা।
আপনার পছন্দ হতে পারে এমন আরও পোস্টের তালিকা