Ads Area

প্রবন্ধ রচনা : একটি নদীর আত্মকাহিনী

ভূমিকা : 

আমার নাম পদ্মা। আমি দুঃখ বহন করে নিয়ে চলা এক নদী। সেই জন্মলগ্ন থেকে আমি নিরবধি বয়ে চলেছি। 

আমার উৎস : 

আমার কথাগুলো তোমরা মন দিয়ে শোন। পর্বতের তুষারাচ্ছন্ন উচ্চ চূড়ায়, যেখানে জীবজন্তু নেই, জনমানব কেউ। যেখানে যেতে পারে না, এ পৃথিবীর ধূলি কণা কিছুই যেখানে নেই সেখানে এক গুহায় আমার জন্ম। সেখানকার আকাশ ধূম্র মেঘাচ্ছন্ন। তা এক রহস্যময় স্বপ্নপুরী। তুষার বিগলিত পানিতে আমার দেহ পরিপুষ্ট। পর্বতের উচ্চ চূড়া থেকে আমি তরতর ধারায় পর্বতের গা বেয়ে গভীর নির্ঘোষে অধিত্যকা প্রদেশে নেমে আসি। সেখানে আবার অনেক নতুন পানিধারার সাথে মিলিত হই।

আমার বেড়ে ওঠা : 

তারপর দ্বিগুণ শক্তিতে উপত্যকা থেকে উপত্যকা পাড়ি দিয়ে দিয়ে সানুদেশে উপনীত হই। সমতলে নেমে আমি পৃথিবীর সাথে ঊর্ধ্বলোকের যোগসূত্র রচনা করি। এ সময় দু'দিক থেকে কতো গিরিপ্রবাহিনী আমার সাথে যোগ দেয়। তখন আমার গতি কতকটা মন্থর হয় বটে, কিন্তু আয়তন ক্রমে বর্ধিত হতে থাকে। যতই অগ্রসর হই, আমার আয়তনও তত বাড়তে থাকে। আকারে- আয়তনে আমি আরো বড় হতে থাকি।

আরও পড়ুন : প্রবন্ধ রচনা : একটি বট গাছের আত্মকাহিনী

গতিধারা : 

আমি যেদিকে নিম্নভূমি পাই সেদিকেই পথ চলি। কাজেই আমার সোজা পথে চলা হয় না। অনেক সময় এঁকে বেঁকে যেতে হয়। পথে দুরতিক্রম্য বাধা আপতিত হলে তার সাথে লড়াই করে অথবা শক্তি ব্যয় না করে তাকে এড়িয়ে ঘুরপাক দিয়ে চলতে থাকি। পথে যেসব পানিধারা পাই, সব সঙ্গে নিয়ে শক্তি বৃদ্ধি করি। তারপর কত প্রান্তর, বন, জনপদ পার হয়ে কত গ্রাম ও নগরের পাশ দিয়ে সাগরের উদ্দেশ্যে চলি, তার কি কোনো ঠিক ঠিকানা আছে?

সাগরের সাথে মিলন : 

আমার প্রবাহ কুরায় না। পর্বতের উঁচু চূড়ায় পতিত বৃষ্টিধারা ও তুষারপুঞ্জ পলে পলে শক্তি জুগিয়ে আমার প্রবাহ নিরবচ্ছিন্ন রেখেছ। সমুদ্রে মিলিত হয়েও আমার পথ চলার অবসান হয় না। অনন্ত সাগরের সাথে মিলে আমিও অনন্ত রূপ ধারণ করি। অনন্ত সাগর, অনন্ত যেপ্রবাহ, পানির অনন্ত উৎসধারার সাথে সংযোগের ফলে আমিও অনন্তরূপ ধারণ করেছি।

দেশের উপকার : 

তুমি বোধ হয় জিজ্ঞেস করবে, আমার দ্বারা দেশের কী উপকার হয়? আমি কেবল পর্বতচূড়ার সাথে সমতল এবং সাগরের সংযোগই স্থাপন করি না, এক দেশের সাথে অন্য দেশের, এক জাতির সাথে অন্য জাতির, গ্রামের সাথে গ্রামের যোগসূত্রও রচনা করি। আমার ধারা অবলম্বন করেই আমার দু'তীরে বিভিন্ন সভ্যতা গড়ে ওঠে এবং বিস্তারিত হয়। আজ রেলপথের বিস্তার হওয়ায় আমার প্রয়োজনীয়তা কমে গেছে। দু'শো বছর আগেও দেশে দেশে আমিই নগর, গঞ্জ, বাজার, হাট ইত্যাদি গড়েছি। আমিই দেশের মসজিদ, মন্দির, আশ্রম, ইবাদতখানা, বাণিজ্যকেন্দ্র ও শিক্ষা-দীক্ষার কেন্দ্র গড়েছিলাম।

আরও পড়ুন : বাংলাদেশের পুরাকীর্তি - প্রবন্ধ রচনা 

বাণিজ্য যখন নৌপথে চলত তখন আমিই ছিলাম বাণিজ্যের প্রধান সহায়। এখনো আমার সাহায্য ছাড়া অনেক স্থানে ব্যবসায়-বাণিজ্য ও যাতায়াত চলে না। দেশে কৃষির উন্নতির সাথেও আমার সম্বন্ধ অটুট। আমি কেবল কৃষিক্ষেত্রে পানি যোগান দিয়ে মৃত্তিকা সরস রাখি না, পর্বত থেকে শিলাচূর্ণ বয়ে এনে দু'তীরে বহুদূর পর্যন্ত ছড়িয়ে দেই, ভূমির উর্বরতা বৃদ্ধি করি। ফলে জনপদের ঐশ্বর্য বৃদ্ধি পায়। আমি বিশুদ্ধ পানীয় সরবরাহ করি। অবগাহনের আনন্দ দিই, বায়ূ নির্মল রাখি, জনপদের স্বাস্থ্যের উন্নতি বিধান করি। দেশের প্রাকৃতিক শোভাও বাড়াই, অন্যসব কথা আর না-ই বা বললাম।

আমার অভিমান : 

মাঝে মাঝে আমি খুব রাগ করি, অভিমান করি। তখন আমার বুকের পানিতে চারদিকে বন্যা বয়ে যায়। কৃত মানুষ, গরু-ছাগল, পশুপাখি আমি ভাসিয়ে নিয়ে যাই। এক সময় আবার আমি আপনা থেকেই শান্ত হই।

উপসংহার : 

বাংলাদেশের অন্যতম খাদ্য মৎস্য। এ মৎস্যও আমাকে জোগাতে হয়। স্বাস্থ্য ভালো রাখতে হলে আমার তীরে ভ্রমণ করতে হবে, আমার বক্ষে নৌকা বেয়ে আনন্দ উপভোগ করতে হবে; তুষারগলা, ঝরনাঝরা নির্মল পানি পান করতে হবে। তবেই আমার জীবন সার্থক হয়েছে বলে মনে করব।

Post a Comment

0 Comments