ভূমিকা :
নবী করীম (স) বলেন, এক মুসলিম অপর মুসলিমের ভাই স্বরূপ। তাই বিশ্বের প্রতিটি মানুষ একে অন্যের ভাই। ইসলামী দৃষ্টিকোণ থেকে বলা যায়, পৃথিবীর সকল মানুষ একই মর্যাদার অধিকারী। অথচ চলমান বিশ্বে জাতি, বংশ, বর্ণ ও গোত্র বিভেদের ফলে মানবিক ধর্মের ভিত চরমভাবে ভেঙ্গে পড়েছে। আর এ থেকে জন্ম নিয়েছে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের অভাব। তাই আজ এত হানাহানি, এত বিদ্বেষ।
ভ্রাতৃত্ব সংজ্ঞা :
ভ্রাতৃত্ব সম্প্রীতি মানবতাবোধের আন্তরিকতাপূর্ণ বহিঃপ্রকাশ। ভ্রাতৃত্বের পারিভাষিক সংজ্ঞা হলো পরস্পরের মধ্যে সহমর্মিতা, সুখে-দুঃখে অংশীদার হওয়া, একে অপরের জন্য নিজেকে বিলিয়ে দেয়া, পরার্থে জীবন উৎসর্গ করা।
ভ্রাতৃত্বের প্রকারভেদ :
ভ্রাতৃত্ববোধের স্বরূপ পর্যালোচনায় দেখা যায়, ভ্রাতৃত্ব দু'প্রকার। যথা— ঔরসজাত ভ্রতৃত্ব এবং আদর্শগত ভ্রাতৃত্ব। নিজের পরিবার পরিজনের সাথে যে নাড়ির সম্পর্ক, তাকে ঐরসজাত ভ্রাতৃত্ব বলে। আর জীবনের বিভিন্ন বিষয়ে নৈতিক আদর্শে গঠিত নীতিগত সমর্থন হলো আদর্শগত ভ্রাতৃত্ব ৷
আরও পড়ুন : রচনা : ইবাদত অথবা ইবাদতের তাৎপর্য
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের গুরুত্ব :
আল্লাহ তায়ালা আল কুরআনে বলেছেন, “নিশ্চয় মুমিনগণ পরস্পর ভাই ভাই।” ভ্রাতৃত্বের বিচারে বিশ্বের সকল মুসলমান সমান মর্যাদার অধিকারী। তাই সব মানুষেরই উচিত বংশ, গোত্র, বর্ণ ইত্যাদি ভুলে বিশ্ব ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া। মুসলমানগণ পরস্পরে ভ্রাতৃত্বের বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারলে সমগ্র বিশ্বে একচ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করতে পারবে। বিশ্বের বুকে ইসলামের আসন থাকবে সর্বোচ্চ অন্যকোনো বিধর্মীগোষ্ঠী আর মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবে না ।
ইসলামী ভ্রাতৃত্বের তাৎপর্য :
ইসলামী ভ্রাতৃত্ব একের সাথে অপরের সৌহার্দ্য সম্প্রীতি স্থাপন করে। এ ভ্রাতৃত্ব মুসলমানদের সকলের সাথে ঐক্য গড়ে তোলে। মুসলমানের জন্য ইসলামী ভ্রাতৃত্বের কোনো বিকল্প নেই। ইসলাম পরস্পরে মিলেমিশে থাকতে শিক্ষা দেয়।
ইসলামে ভ্রাতৃত্বের প্রসার :
বিশ্বব্যাপী সব মুসলিম ভ্রাতৃত্বের পতাকা তুলে এক হয়ে দাঁড়ালে এবং পরস্পর হিংসা, দ্বেষ ভুলে এক সাথে হাতে হাত, কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলে সুফল অনিবার্য। তাই প্রতিটি মুসলমানদের উচিত ভ্রাতৃত্ব প্রচারে ইসলামের কল্যাণ সাধন করা।
আরও পড়ুন : রচনা : ইসলাম ও মানব কল্যাণ/মানবতার মুক্তিতে ইসলাম/ইসলাম মানবতার ধর্ম
সামাজিক জীবনে ভ্রাতৃত্বের প্রভাব :
সমাজ জীবনে ভ্রাতৃত্ব বেহেশতের সুখ, সৌন্দর্য এবং সুষমা আনে। যে সমাজে মানুষের মাঝে ভ্রাতৃত্ববোধ নেই, সে সমাজে শান্তি নেই। যেখানে মানুষ পরস্পর ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ, সেখানে সুখ শান্তির স্নিগ্ধ হাওয়ায় মন-প্রাণ ভরে যাবে।
ভ্রাতৃত্বে ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ :
মানুষের পারস্পরিক ভ্রাতৃত্ব ইহকাল ও পরকালের কল্যাণ এনে দেয়। মানুষকে ভালোবাসাই আল্লাহকে ভালোবাসা আর আল্লাহকে ভালোবাসলে আল্লাহও মানুষকে ভালোবাসেন। আল্লাহ যাকে ভালোবাসেন তার উভয় জগৎ সুখের হয়। ভ্রাতৃত্ববন্ধন উন্নয়নের চাবিকাঠি : জাতীয় উন্নয়নে ভ্রাতৃত্ব বন্ধনের কোনো বিকল্প নেই। একে অপরের প্রতি ভালোবাসা, সহমর্মিতা ও সুখ দুঃখের অংশীদার হলে ব্যক্তি ও জাতীয় জীবনে সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
উপসংহার :
সমগ্র বিশ্ব মুসলিম ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ হলে আবার সমগ্র বিশ্বে ইসলামের স্বর্ণযুগের সূচনা হবে। প্রতিটি মুসলমানের কর্তব্য সমগ্র বিশ্বে একটি অখন্ড ভ্রাতৃবন্ধনের সংসার গড়ে তোলা। তাহলে মুসলিমদের প্রতি কোনো বিধর্মী জাতি আঘাত হানতে পারবে না। ইসলাম ধর্ম ধ্বংসের হীন চক্রান্ত ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে।