রচনা : জাতীয় গাছ আম গাছ

ভূমিকা : 

গাছ মানুষের পরম বন্ধু। পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গাছের গুরুত্ব অপরিসীম। গাছ মানুষকে নানাভাবে সাহায্য করে। গাছের ডালপালা মানুষ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করে, ফল খেয়ে জীবনধারণ করে। গাছ পরিবেশের জন্য ক্ষতিকারক কার্বন ডাইঅক্সাইড গ্যাস গ্রহণ করে এবং অক্সিজেন ত্যাগ করে প্রাণিজগৎকে রক্ষা করে। আমাদের বাংলাদেশে নানা প্রজাতির গাছ আছে। আম, জাম, কাঁঠাল, কলা, নারিকেল এবং বনজগাছের মধ্যে শাল, সেগুন, মেহগনি, গর্জন, গামার উল্লেখযোগ্য। 

বাংলাদেশের সর্বত্র যে গাছটি বেশি দেখা যায় তা হচ্ছে আমগাছ। আম একটি রসাল ফল। আমের মৌসুমে গ্রামের প্রতিটি পরিবারই তাদের বসতভিটায় লাগানো গাছ থেকে প্রয়োজনীয় চাহিদা মেটায়। বাংলাদেশে অন্যান্য ফলের তুলনায় আম সহজলভ্য। মৌসুমে পাকা আমের মিষ্টি গন্ধে গ্রাম ও শহর মৌ মৌ করে। দেশি গুটি আমের গাছ যেখানে সেখানে লাগানো যায়। আমগাছের অবাধ বংশবৃদ্ধি ও ফলের গুণগত মান এবং জনপ্রিয়তা বিচারে আমগাছকে জাতীয় গাছ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে ।

আকৃতি : 

আমগাছ আকৃতিতে বিভিন্ন রকমের হয়ে থাকে। এদের ডালপালা চারদিকে ছড়ানো থাকে। বড় আকৃতির আমগাছ ২০-২৫ ফুট লম্বা এবং ৫-৬ ফুট চওড়া হয়। এর গায়ের রঙ সবুজ। আমগাছের ডাল পাতায় আবৃত থাকে। এরা চিরহরিৎ বৃক্ষের অন্তর্ভুক্ত। শীতকালে গাছের পাতা ঝরে গেলেও আমগাছ সবসময় পাতায় পরিপূর্ণ থাকে। এদের পাতাগুলো সরু ও লম্বা। ছোট আকৃতির আমগাছ ঘরের সামনে বা টবের মধ্যেও লাগানো যায়। আমগাছের শরীর বেশ খসখসে। এর মূল মাটির খুব গভীরে থাকে।

আরও পড়ুন : আমাদের চারপাশের প্রকৃতি : প্রবন্ধ রচনা

প্রকারভেদ : 

আমাদের দেশে বিভিন্ন প্রকারের আম পাওয়া যায়। এদের মধ্যে- লেংড়া, গুটি, আশ্বিনি, গোপালভোগ, ফজলি, আম্রপলি, খিরশাপাতা, কাঁচামিঠালি প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য। আমের নামের সঙ্গে মিল রেখে গাছের নাম নির্ধারণ করা হয়। গুটি আমগাছ বাংলাদেশের সব জায়গায় পাওয়া গেলেও আশ্বিনি, গোপালভোগ, ফজলি, খিরশাপাতা প্রভৃতি আমগাছ নবাবগঞ্জ ও রাজশাহী জেলায় বেশি পাওয়া যায়।

বংশবিস্তার : 

আমগাছ সাধারণত বিচি থেকে বংশবিস্তার করে থাকে। তবে কলম পদ্ধতিতেও আমগাছের বংশবিস্তার সম্ভব। সাধারণত পাকা আমের বিচি স্যাঁতসেঁতে মাটিতে হালকা পুঁতে রাখলে ২০-২৫ দিন পর বিচি থেকে অঙ্কুর বের হয়ে আসে। প্রথমে দুটি কচি পাতা কাণ্ডে ধারণ করে বীজ থেকে অঙ্কুর বের হয়ে আসে। পরে আস্তে আস্তে তা বৃদ্ধি পেতে থাকে।

অর্থনৈতিক গুরুত্ব : 

আমগাছ অন্যান্য গাছের তুলনায় অতি সাধারণ বলে বিবেচিত হলেও এর অর্থনৈতিক গুরুত্ব কম নয়। বাংলাদেশের ফলের চাহিদার সিংহভাগ আসে আমগাছ থেকে। একটি উচ্চ ফলনশীল আম গাছ থেকে বছরে ২০-২৫ মণ আম পাওয়া যায়। জাতীয়গাছ আমগাছের কাঠ মূল্যবান না হলেও এর ফল অত্যন্ত মিষ্টি ও রসালো হওয়ায় দেশে ও বিদেশে এই ফলের বেশ কদর রয়েছে। 

আমগাছের কাঠ জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। গ্রামাঞ্চলের প্রায় বাড়িতে কমবেশি আমগাছ থাকে। একটি পরিবার তাদের বাড়ির পাশে ও বাড়ির খোলা জায়গায় আম গাছ লাগিয়ে নিজেরা অর্থনৈতিকভাবে স্বাবলম্বী হতে পারে। বসতবাড়ির গাছে উৎপাদিত আম নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করে অর্থনৈতিকভাবেও স্বাবলম্বী হওয়া যায়।

আরও পড়ুন : প্রবন্ধ রচনা : আমাদের দেশ / বাংলাদেশ

সামাজিক বনায়ন সৃষ্টিতে আমগাছ : 

একটি দেশের প্রাকৃতিক ভারসাম্য রক্ষা করার জন্য ঐ দেশের মোট ভূমির শতকরা ২৫ ভাগ বনভূমি থাকা প্রয়োজন। আর এই বনভূমি সৃষ্টিতে সামাজিক বনায়ন বিশেষ ভূমিকা পালন করে আসছে। বিশেষ করে গ্রামের মানুষ তাদের বসতবাড়ির চারপাশে পুকুর পাড়ে, রাস্তার ধারে বিভিন্ন প্রকার গাছ লাগিয়ে থাকে। এসব গাছের মধ্যে আমগাছের সংখ্যা বেশি। 

গ্রামের মানুষ আমগাছের চারা বাড়িতেই উৎপাদন করতে পারে।ফলে চারা উৎপাদনে তাদের তেমন কোনো খরচের প্রয়োজন হয় না। গ্রামের সাধারণ মানুষ অতি অল্প খরচে যে গাছটি তাদের বসতবাড়িতে লাগাতে পারে তাহলো আমগাছ। এজন্য নতুন বাড়ি তৈরি করার পর প্রথমেই বাড়িতে আমগাছ লাগানো হয়। দেশি গুটি আমের চারা যেখানে সেখানে লাগিয়ে দিলেই হয়। 

এর জন্য বিশেষ কোনো পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। তাই গ্রামের মানুষ পুকুরের পাড় ও বসতবাড়িতে ব্যাপকহারে আমগাছ লাগিয়ে সামাজিক বনায়ন তৈরি করে। গ্রামাঞ্চলে যে সবুজ বেষ্টনী দেখা যায় তার অধিকাংশই আমগাছ। তাই বলা যায় সামাজিক বনায়ন সৃষ্টিতে জাতীয় গাছ আমগাছের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

উপসংহার : 

আমগাছ আমাদের দেশের একটি অতিপরিচিত বৃক্ষ। এদেশের গ্রামে-গঞ্জে সর্বত্রই আমগাছ দেখতে পাওয়া যায়। সামাজিক বনায়ন ও গ্রামের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে আমগাছের ভূমিকা অনেক। আমের মৌসুমে আমের মুকুল ও পাকা আমের মিষ্টি গন্ধে চারদিক মৌ মৌ করে। গ্রামের মানুষের অর্থনৈতিক উন্নতিতেও আমগাছ বিশেষ ভূমিকা পালন করে।

বসতবাড়িতে উৎপাদিত আম গ্রামের মানুষ নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে বাজারে বিক্রি করতে পারে। আমগাছের গুণগত ও অর্থনৈতিক গুরুত্ব বিবেচনা করে এ গাছকে জাতীয় গাছ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়া হয়েছে। আমাদের ব্যক্তিগত, সামাজিক ও জাতীয় জীবনে আমগাছের ভূমিকা উল্লেখযোগ্য।

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad