রচনা : পরীক্ষায় দুর্নীতি ও তার প্রতিকার

উপস্থাপনা : 

বাংলাদেশের শিক্ষা ক্ষেত্রে অন্যতম বড় সমস্যা পরীক্ষায় দুর্নীতি । পরীক্ষা ক্ষেত্রে দুর্নীতির কারণে গোটা শিক্ষা ব্যবস্থা আজ কলুষিত। পরীক্ষার দুর্নীতি রোধ করা না গেলে একটি সুশীল ও সুশিক্ষিত জাতির প্রত্যাশা করা যাবে না।

পরীক্ষায় দুর্নীতি শুরু : 

স্বাধীনতা পূর্ব বাংলাদেশে পরীক্ষায় তেমন অসাধুতা ছিল না। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে । সদ্য স্বাধীনতাপ্রাপ্ত দেশের দুর্বল প্রশাসনিক কাঠামোর ভেতর ১৯৭২ সালে বিভিন্ন পর্যায়ে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। প্রকৃতপক্ষে এ বছর পরীক্ষার নামে চলে নির্লজ্জ নকলবাজি। এরপর থেকে পরীক্ষায় নকলবাজি, টোকাটুকি তথা দুর্নীতি প্রবণতা গোটা জাতিকে পেয়ে বসেছে।

নকল প্রবণতা ও বাংলাদেশ :

পরীক্ষা কেন্দ্রে বাংলাদেশের মতো নকল প্রবণতা পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। এ সকল প্রবণতার কারণেই এদেশের লোক কর্ম ক্ষেত্রে অযোগ্য। চাকুরীর ক্ষেত্রে নিজস্ব ধ্যান-ধারণা, চিন্তা-চেতনার বড় অভাব। পরীক্ষাকেন্দ্র থেকেই দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে কর্মক্ষেত্রেও এর আশ্রয়ে প্রবেশ করে। নকল প্রবণ লোক সর্বক্ষেত্রেই দুর্নীতির আশ্রয় করে চলে । এ সকল লোক দেশটাকে প্রতিনিয়ত ধ্বংসের দিকে ঠেলে দিচ্ছে।

আরও পড়ুন : বাংলা প্রবন্ধ রচনা : বাংলাদেশে দুর্নীতির কারণ ও প্রতিকার 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নকল :

পরীক্ষায় নকল ও অন্যান্য দুর্নীতি প্রবেশ করিয়ে শিক্ষার প্রকৃত উদ্দেশ্য মাটি করে দিচ্ছে । জীবন গঠনে যেখানে শিক্ষার গুরুত্ব অনস্বীকার্য সেখানে পরীক্ষাটি অন্তত দুর্নীতিমুক্ত থাকা আবশ্যক । আমাদের দেশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বড় ন্যাক্কারজনক অবস্থা বিরাজ করছে। এখানে প্রাথমিক পর্যায় থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত নকল প্রবণতার মহামারী বিস্তার করে আছে।

নকলের কারণ :

১। ছাত্রদের অবহেলা : বর্তমানে ছাত্ররা লেখাপড়ায় প্রতি অবহেলা করে ফলে, পরীক্ষা পাসের জন্য নকল করে।

২। অভিভাবকের উদাসীনতা : ছেলেমেয়ের প্রতি অভিভাবকের নজর না থাকার কারণে ছেলে মেয়েরা বাহিরে আড্ডা মারে লেখা পড়া করে না ।

৩। শিক্ষকদের অবহেলা : শিক্ষকগণ ঠিকমত নিজেদের কর্তব্য পালন করে না, অনেক ক্ষেত্রে নিজেরাই ছাত্রদের নকল করার সুযোগ করে দেয়।

৪। ত্রুটিযুক্ত শিক্ষাপদ্ধতি : আমাদের দেশের শিক্ষাপদ্ধতি ত্রুটিযুক্ত । এতে ছাত্র-ছাত্রীদের মনের খোরাক নেই, অনেকটা তাদের মনের বিরুদ্ধে পড়তে হয় ।

Advertisement Advertisement

আরও পড়ুন : সড়ক দুর্ঘটনা, কারণ ও তার প্রতিকার – বাংলা প্রবন্ধ রচনা  

নকল প্রতিরোধের উপায় : 

প্রচলিত ভ্রান্ত শিক্ষা ব্যবস্থার পরিবর্তে আধুনিক ও যুগোপযোগী শিক্ষা ব্যবস্থার প্রচলন করতে হবে। পরীক্ষা দুর্নীতি মুক্ত করতে হলে শিক্ষাঙ্গনের সুস্থ পরিবেশ, পরীক্ষা কেন্দ্র পরিবর্তন, পাঠ্যসূচী পরিবর্তন, অভিভাবক, শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রীদের সচেতন হতে হবে । আর সরকার তথা প্রশাসন যদি সদিচ্ছা পোষণ করে তাহলে পরীক্ষায় দুর্নীতি চলতে পারে না। দেশে বর্তমানে যে শিক্ষা ব্যবস্থা তাতে শুধু সার্টিফিকেট অর্জন হয় আর কিছু নয়। তাই বলা যায় যে দেশের ঘুষ সন্ত্রাস কালো টাকার ছড়াছড়ি বন্ধ হয়ে গেলে দেশের শিক্ষার উন্নয়ন হবে আর তাতে দুর্নীতি প্রতিরোধ করা যাবে ।

পরীক্ষায় দুর্নীতির পরিণতি :

পরীক্ষায় নকল করে পাস করা জাতির জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। কেননা, যে পাস করে সে তো নিজের ক্ষতি করেই; আবার যারা পড়াশুনা করে তাদের মনোবলও নষ্ট করে। তারা পড়াশুনার প্রতি আগ্রহ হারিয়ে ফেলে । এ অবস্থা দীর্ঘদিন ধরে চলতে থাকলে জাতি এক সময় মেধাশূন্য হয়ে পড়বে। তখন দেশের ধ্বংস অনিবার্য। তাই দেশ ও জাতির স্বার্থে পরীক্ষায় নীতি রোধ করা একান্ত অপরিহার্য ।

উপসংহার :

শিক্ষা ব্যবস্থায় যদি দুর্নীতি থাকে তাহলে একটি জাতির ভবিষ্যৎ নিয়ে আশঙ্কা করার যথেষ্ট কারণ রয়েছে । আমাদের অস্তিত্বের স্বার্থে, সুন্দর ভবিষ্যতের স্বার্থেই পরীক্ষা থেকে সকল প্রকার দুর্নীতিকে নির্মূল করতে হবে।

আমার মূল লক্ষ্য একটাই (Sikkhagar-শিক্ষাগার) ওয়েবসাইটের হাত ধরে “শিক্ষা হবে উন্মুক্ত ও বাণিজ্যমুক্ত”। এই প্লাটফর্মে থাকবে একাডেমিক প্রস্তুতি, ভর্তি প্রস্তুতি, চাকরি প্রস্তুতি, স্পেশাল স্কিল এবং ধর্মীয় শিক্ষাসহ নানাবিধ বিষয়ে জ্ঞান অর্জনের সুবর্ণ সুযোগ।

Leave a Comment

Advertisement Advertisement
error: Content is protected !!