তৎপুরুষ সমাস কাকে বলে? কত প্রকার ও কি কি উদাহরণ সহ বিস্তারিত

তৎ' অর্থ তার।  তৎপুরুষ অর্থ তার সম্পর্কিত পুরুষ। 'তৎপুরুষ' সমাস পরপদ প্রধান সমাস। তবে পূর্বপদটি পরপদের সাথে কোন কারক সম্বন্ধে যুক্ত থাকে। এই সমাসের পূর্বপদে দ্বিতীয়া থেকে সপ্তমী পর্যন্ত যে কোন বিভক্তি থাকতে পারে; আর পূর্বপদের বিভক্তি অনুসারে সমাসের নামকরণ করা হয়। 

(toc) Table Of Contens

সংজ্ঞা : যে সমাসে পূর্বপদের বিভক্তি লোপ পায় এবং পরপদের অর্থ প্রধানরূপে প্রতিয়মান হয়, তাকে তৎপুরুষ সমাস বলে। 

যেমন- মন দ্বারা গড়া = মনগড়া, ছাত্রের জন্য আবাস = ছাত্রাবাস, বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন ইত্যাদি ।

তৎপুরুষ সমাসের শ্রেণীবিভাগ : 

তৎপুরুষ সমাস নয় প্রকার। যথা-
  1. দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস। 
  2. তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস। 
  3. চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস। 
  4. পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস।  
  5. ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস। 
  6. সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস। 
  7. নঞ তৎপুরুষ সমাস।  
  8. উপপদ তৎপুরুষ সমাস। 
  9. অলুক তৎপুরুষ সমাস ।

দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস : 

পূর্বপদের দ্বিতীয়া বিভক্তির (কে, রে, এ, য়, তে ইত্যাদি ) লোপ হয়ে যে সমাস গঠিত হয়, তাকে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে।

👉প্রাপ্ত, অতীত, গত, আশ্রিত, আপন্ন, সংক্রান্ত, প্রবিষ্ট, আরূঢ় প্রভৃতি শব্দযোগে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন :

  • দুঃখকে প্রাপ্ত = দুঃখপ্রাপ্ত
  • ক্ষমতাকে প্রাপ্ত = ক্ষমতাপ্রাপ্ত
  • দুঃখকে অতীত = দুঃখাতীত
  • লোককে অতীত = লোকাতীত
  • শরণকে গত = শরণাগত
  • ব্যক্তিকে গত = ব্যক্তিগত
  • পদকে আশ্রিত = পদাশ্রিত
  • দেশকে আশ্রিত = দেশাশ্রিত
  • ক্ষমতাকে আপন্ন = ক্ষমতাপন্ন
  • বিপদকে আপন্ন = বিপদাপন্ন
  • ধর্মকে সংক্রান্ত = ধর্মসংক্রান্ত
  • রাজনীতিকে সংক্রান্ত = রাজনীতিসংক্রান্ত
  • গৃহকে প্রবিষ্ট = গৃহপ্রবিষ্ট
  • অশ্বকে আরূঢ় = অশ্বারূঢ়

আরও পড়ুন : সমাস নির্ণয়ের উপায়। সন্ধি ও সমাসের মধ্যে পার্থক্য - PDF

👉ব্যাপ্তি অর্থেও কালবাচক পদের সঙ্গে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন :
  • চিরকাল ব্যাপিয়া বঞ্চিত = চিরবঞ্চিত
  • ক্ষণকাল ব্যাপিয়া স্থায়ী = ক্ষণস্থায়ী
  • দীর্ঘকাল ব্যাপিয়া স্থায়ী = দীর্ঘস্থায়ী
  • জীবন ব্যাপিয়া আনন্দ = জীবনানন্দ
  • চিরকাল ব্যাপিয়া হরিৎ = চিরহরিৎ
  • চিরকাল ব্যাপিয়া সুন্দর = চিরসুন্দর
  • চিরকাল ব্যাপিয়া সুখী = চিরসুখী
  • চিরকাল ব্যাপিয়া বসন্ত = চিরবসন্ত
👉পূর্বপদটি বিশেষণের বিশেষণ কিংবা ক্রিয়া বিশেষণ হলে পরবর্তী কৃদন্ত পদের সঙ্গে দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়ে থাকে। এরূপ ক্ষেত্রে ব্যাসবাক্য ‘যথা’, ‘তথা’, ‘রূপে’, ‘ভাবে’ ইত্যাদি শব্দের ব্যবহার হয়। যেমন : 
  • অবশ্য যথা তথা কর্তব্য = অবশ্যকর্তব্য
  • ধীর যথা তথা গামী = ধীরগামী
  • দ্রুত যথা তথা গামী = দ্রুতগামী
  • অর্ধ রূপে মৃত = অর্ধমৃত
  • আধ রূপে পাকা = আধপাকা
  • নিমভাবে রাজি = নিমরাজি

তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস :

পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তির লোপ পেয়ে যে সমাস হয়, তাকে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন :
  • স্নেহ দ্বারা অন্ধ = স্নেহান্ধ। 
  • বস্ত্র দ্বারা আচ্ছাদিত = বস্ত্রাচ্ছাদিত।
  • মন দ্বারা গড়া = মনগড়া।
  • ঢেঁকি দ্বারা ছাঁটা = ঢেঁকিছাঁটা। 
  • অস্ত্র দ্বারা উপচার = অস্ত্রোপচার। 
  • বিনয় দ্বারা অবনত = বিনয়াবনত।
  • লাঠি দ্বারা খেলা = লাঠিখেলা।

সাধারণ নিয়ম : 

১। উন, হীন, শূন্য, কম  প্রভৃতি শব্দ উত্তর পদ হলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন :
  • জ্ঞানে শূন্য = জ্ঞানশূন্য
  • বিদ্যা দ্বারা হীন = বিদ্যাহীন
  • এক দ্বারা উন = একোন
  • পাঁচ দ্বারা কম = পাঁচ-কম
২। উপকরণবাচক বিশেষ্যপদ পূর্বপদে বসলেও তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস হয়। যেমন :
  • চন্দন দ্বারা চর্চিত = চন্দনচর্চিত
  • স্বর্ণ দ্বারা মণ্ডিত = স্বর্ণমণ্ডিত
৩। দ্বারা, দিয়ে, কর্তৃক, দের দ্বারা, দিকের দ্বারা ইত্যাদি শব্দ ব্যাসবাক্যে যুক্ত হয়ে তৃতীয়া তৎপুরুষ সমাস গঠিত হয়। যেমন :
  • শান দ্বারা বাঁধান = শানবাঁধান
  • তেল দিয়ে মাখা = তেলমাখা
  • মহিলা দ্বারা পরিচালিত = মহিলা – পরিচালিত
  • সোনা দ্বারা মোড়ান = সোনামোড়া
  • সুকান্ত কর্তৃক রচিত = সুকান্ত-রচিত
৪। পূর্বপদে তৃতীয়া বিভক্তি (দ্বারা, দিয়ে কর্তৃক, এ, য়, তে ইত্যাদি) লোপ না পেলে অলুক তৎপুরুষ সমাস হয়।
যেমন :
  • তেলে ভাজা = তেলেভাজা
  • তাঁতে বোনা = তাঁতবোনা
  • কলে ছাঁটা = কলেছাঁটা
  • মায়ে খেদানো = মায়েখেদানো

আরও পড়ুন : সমাস কাকে বলে?সমাসের অংশ কয়টি ও সমাসের প্রয়োজনীয়তা

চতুর্থ তৎপুরুষ সমাস : 

পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তি (কে, রে, এর, জন্য, তরে, নিমিত্ত, উদ্দেশ্য ইত্যাদি) লোপ পেয়ে যে সমাস হয়, তাকে চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন :
  • শিশুর জন্য সাহিত্য = শিশুসাহিত্য
  • ছাত্রের জন্য বাস = ছাত্রাবাস
  • গুরুকে ভক্তি = গুরুভক্তি
  • আরামের জন্য কেদারা = আরামকেদারা। 
  • বসতের নিমিত্ত বাড়ি = বসতবাড়ি। 
  • জীয়নের নিমিত্ত কাঠি = জীয়নকাঠি। 
  • মরণের নিমিত্ত কাঠি = মরণকাঠি। 
  • শান্তির নিমিত্ত নিকেতন = শান্তিনিকেতন।
👉 অলুক চতুর্থী তৎপুরুষ সমাস পূর্বপদে চতুর্থী বিভক্তি ‘র' বা ‘এর’ লোপ না হলে অলুক সমাস হয়। যেমন :
  • মাথার (নিমিত্ত) কাঠ = মাথারকাঠ। 
  • ঘানির (নিমিত্ত) বলদ = ঘানিরবলদ। 
  • মুড়ির (নিমিত্ত) পানি = মুড়িরপানি
  • চায়ের (নিমিত্ত) বাটি = চায়েরবাটি

পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস :

পূর্বপদে পঞ্চমী বিভক্তি (হতে, থেকে, চেয়ে অপেক্ষা ইত্যাদি) লোপ পেয়ে যে সমাস হয়, তাকে পঞ্চমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন :
  • প্রাণের চেয়ে অধিক = প্রাণাধিক
  • সত্য থেকে ভ্রষ্ট = সত্যভ্রষ্ট
  • প্রাণের চেয়ে প্রিয় = প্রাণপ্রিয়
  • বিলাত হতে ফেরত = বিলাতফেরত
  • সর্প হতে ভয় = সর্পভয়
  • জেল থেকে খালাস = জেলখালাস

আরও পড়ুন : বাগধারা অর্থ কি?কাকে বলে।বাগধারার গঠন,ব্যবহার,প্রয়োজনীয়তা

ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস :

পূর্বপদে ষষ্ঠী বিভক্তি (র, এর) লোপ পেয়ে যে সমাস হয়, তাকে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন :
  • কবিদের গুরু = কবিগুরু
  • খেয়ার ঘাট = খেয়াঘাট
  • ঠাকুরের বাড়ি = ঠাকুরবাড়ি
  • চায়ের বাগান = চাবাগান 
  • জাতিদের সংঘ = জাতিসংঘ

সাধারণ নিয়ম :

১। পূর্বপদের ঈ-কার যুক্ত শব্দ ই-কার যুক্ত হয়। যেমন :
  • স্বামীর গৃহ = স্বামিগৃহ
  • প্রাণীর বিদ্যা = প্রাণিবিদ্যা
২। রাজা' স্থলে 'রাজ' হয়। যেমন :
  • রাজার পুত্র = রাজপুত্র
  • দিল্লির রাজা = দিল্লিরাজ
৩। পরপদে সহ, তুল্য প্রায়, সম, নিভ, প্রতিম ইত্যাদি শব্দ ঠিক থাকে।
  • সহোদরের প্রতিম = সহোদরপ্রতিম
  • যেমন : কন্যার সহ = কন্যাসহ
৪।  পিতা, মাতা, ভ্রাতা, এ সকল শব্দের পরিবর্তে পিতৃ, মাতৃ, ভ্রাতৃ এসব শব্দ হয়। যেমন :
  • পিতার ধন = পিতৃধন
  • ভাতার প্রেম = ভ্রাতৃপ্রেম
৫। ‘রাজা’ শব্দ পরে থাকলে আগে বসে। যেমন :
  • পথের রাজা = রাজপথ
  • হাঁসের রাজা = রাজহাঁস
৬। ‘অর্ধ' শব্দ পরে থাকলে আগে বসে। যেমন :
  • পথের অর্ধ = অর্ধপথ
  • টাকার অর্ধ = অর্ধটাকা
৭। শিশু, দুগ্ধ ইত্যাদি শব্দ পরে থাকলে স্ত্রীবাচক পূর্বপদ পুরুষবাচক হয়। যেমন :
  • ছাগীর দুগ্ধ = ছাগদুগ্ধ
  • মৃগের শিশু= মৃগশিশু
৮। বৃন্দ, গণ, গ্রাম, রাজি, যুথ ইত্যাদি সমষ্টিবাচক শব্দ পরে থাকলে ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস হয়। যেম
  • ছাত্রের বৃন্দ = ছাত্রবৃন্দ
  • গুণের গ্রাম = গুণগ্রাম।
৯। কালের কোন অংশবোধক শব্দ পরে থাকলে তা আগে বসে। যেমন :
  • রাত্রির মধ্যভাগ = মধ্যরাত
  • অহ্নের (দিনের) পূর্বভাগ = পূর্বাহ্ন

সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস :

যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের সপ্তমী বিভক্তি (এ, য়, তে) লোপ পায়, তাকে সপ্তমী তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন :
  • পূর্বে ভূত = ভূতপূর্ব
  • নামাজে রত = নামাজরত
  • গোলায় ভরা = গোলাভরা
  • ভোজনে পটু = ভোজনপটু
  • বস্তাতে পচা = বস্তাপচা
  • অকালে মৃত্যু = অকালমৃত্যু
  • বাক্সতে বন্দী = বাক্সবন্দী
  • মনে মরা = মনমরা

নঞ তৎপুরুষ সমাস :

না, নেই, নাই, নয় ইত্যাদি নঞ অব্যয় যে তৎপুরুষ সমাসের পূর্বপদে বসে, তাকে নঞ তৎপুরুষ সমাস বলে। এ সমাসে পরপদের অর্থের প্রাধান্য থাকে। যেমন :
  • ন আচার = অনাচার
  • ন কাতর = অকাতর
  • নাই হায়া = বেহায়া
  • নাই বৃষ্টি = অনাবৃষ্টি
  • নয় ম্লান = অম্লান
  • নয় অতি দীর্ঘ = নাতিদীর্ঘ
  • নেই বিশ্বাস = অবিশ্বাস
👉অভাব, অল্পতা, ভিন্নতা বিরোধ, অতীত, অপ্রশস্ত, মন্দ ইত্যাদি অর্থে নঞ অব্যয় ব্যবহৃত হয়। যেমন :
  • অভাব : ন আদর = অনাদর 
  • ভিন্নতা : ন লৌকিক = অলৌকিক
  • অতীত : ন সাধ্য = অসাধ্য
  • মন্দ : ন ঘাট = অঘাট
  • অল্পতা : ন কেশা = অকেশা
  • বিরোধ : ন সুর = অসুর
  • অপ্রশস্ত : ন কাল = অকাল/ আকাল
👉সংস্কৃত ন ঞ অব্যয়ের বাংলা প্রতিরূপ : অ, অন, আনা, গর, বে, বি, ন, না, নি। যেমন :
  • অ : নাই সীমা = অসীম
  • অনা : নয় সৃষ্টি = অনাসৃষ্টি
  • বে : নয় মানান = বেমানান
  • ন : নয় অতি দূর = নাতিদূর
  • অন : নাই আহার = অনাহার
  • গর : নয় হাজির = গরহাজির
  • বি : নয় জোড় = বিজোড়
  • না : নয় বালক = নাবালক।

উপপদ তৎপুরুষ সমাস :

যেসব পদের পরবর্তী ধাতুর সঙ্গে কৃৎপ্রত্যয় যুক্ত হয় তাকে বলে উপপদ। আর উপপদের সঙ্গে কৃদন্ত পদের যে সমাস হয় তাকে উপপদ তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন :
  • ইন্দ্রিয়কে জয় করেছে যে = ইন্দ্ৰজিৎ
  • পঙ্কে জন্মে যে = পঙ্কজ
  • স্থলে চরে যে = স্থলচর
  • ছেলে ধরে যে = ছেলেধরা 
  • জাদু করে যে = জাদুকর
  • পকেট মারে যে = পকেটমার

অলুক তৎপুরুষ সমাস : 

যে তৎপুরুষ সমাসে পূর্বপদের দ্বিতীয়াদি বিভক্তির চিহ্ন লোপ হয় না, তাকে অলুক তৎপুরুষ সমাস বলে। যেমন— 
  • গায়ে পড়া = গায়েপড়া
  • কলে ছাঁটা = কলেছাঁটা
  • ঘোড়ার ডিম = ঘোড়ার ডিম 

FAQs


১। তৎপুরুষ সমাসে কোন পদ প্রধান ?
উত্তর : পরপদ প্রধান। 

২। বিপদাপন্ন কোন তৎপুরুষ সমাস ?

উত্তর : দ্বিতীয়া তৎপুরুষ সমাস। 

৩। রাজপুত্র কোন তৎপুরুষ সমাস ?

উত্তর : ষষ্ঠী তৎপুরুষ সমাস। 

Post a Comment

0 Comments

Bottom Post Ad