ছাত্রজীবন/ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য রচনা- ২০ পয়েন্ট

(toc) Table Of Contens

উপস্থাপনা : 

ছাত্রজীবন হচ্ছে মানুষের ভবিষ্যত জীবনের উদ্যোগ পর্ব। মাদরাসা-মহাবিদ্যালয়-বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণের সময়কালকেই সাধারণত ছাত্রজীবন বলা হয় । জীবনের ভবিষ্যৎ নির্মাণের জন্য ছাত্রজীবনই সর্বোৎকৃষ্ট সময় । ভিত্তি সুদৃঢ় না হলে যেমন ইমারত মজবুত ও দীর্ঘস্থায়ী হয় না তেমনি ছাত্রজীবন বৃথায় নষ্ট করলে বাকী জীবন মূল্যহীন হয়ে পড়ে।

ছাত্র কথাটির তাৎপর্য : 

ছাত্র কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Student. এ শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় S দিয়ে Study (অধ্যয়ন), T দিয়ে Truthfulness, (সত্যবাদিতা), U দিয়ে Unity, (একতা), D দিয়ে Discipline, (নিয়মানুবর্তিতা), E দিয়ে Economy (মিতব্যয়িতা), N দিয়ে Nationality (জাতীয়তা), T দিয়ে Training (প্রশিক্ষণ) শব্দগুলো পাওয়া যায়। শব্দটি বিশ্লেষণে ছাত্রদের দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে।

ছাত্রজীবনের গুরুত্ব : 

ছাত্রজীবনের গুরুত্ব অপরিসীম। ছাত্রজীবনই ছাত্রদের উৎকৃষ্ট সময়। এ সময় ভবিষ্যৎ জীবনের প্রস্তুতির ক্ষেত্র । ছাত্রজীবনের খুঁটি সুদৃঢ় হলে ভবিষ্যৎও সুদৃঢ় হবে।

ছাত্রজীবনের লক্ষ্য : 

একজন মানুষ জীবনে কি করবে, তা স্থির করা হয় ছাত্রজীবনেই । প্রত্যেক ছাত্রকেই এ সময়ে জীবনের লক্ষ্য স্থির করে নিতে হবে । লক্ষ্যহীন জীবন মাঝিহীন নৌকার মত অথৈ সাগরে ঘুর পাক খায় ।

আরও পড়ুন : অধ্যবসায় - রচনা : ২০ পয়েন্ট | সাথে pdf

ছাত্রজীবনের রূপ : 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়নের সময়টুকুই ছাত্রজীবন। জীবনের যে সময়ে বিদ্যালয়ে শিক্ষা গ্রহণ করে সে সময়টি খুবই মূল্যবান। তারা প্রচলিত কুসংস্কারকে পিছনে ফেলে জ্ঞান-বিজ্ঞানের জগতে এগিয়ে যায়। এ সময় তাদের সুপ্ত প্রতিভা জাগ্রত হয়। তাই ছাত্রজীবন প্রস্তুতির জীবন। কেননা বিশ্বকে এগিয়ে নিতে হবে তাদেরই। তাই এ সময় তার সারাজীবনের মধ্যে সবচেয়ে মূল্যবান সময়।

ছাত্রদের দায়িত্ব ও কর্তব্য : 

নিজেকে যোগ্য করে গড়ে তোলাই ছাত্রজীবনের প্রধান দায়িত্ব। ভবিষ্যতে দেশ পরিচালনার গুরু দায়িত্ব ছাত্রদেরকেই নিতে হবে। জাতির সমস্যা সমাধান করা, বিশ্ব সমাজে জাতির মর্যাদা বৃদ্ধি করার দায়িত্বও ছাত্রদের।

শাস্ত্রে আছে, ‘ছাত্র নং অধ্যয়ন তপঃ'। অর্থাৎ অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা। ছাত্রজীবনের মূল কর্তব্য হচ্ছে পড়াশোনা করা। এটি জ্ঞান আহরণের সময়। পক্ষান্তরে, জ্ঞান আহরণের পাশাপাশি গুরুজন ও শিক্ষককে সম্মান প্রদর্শনও ছাত্রদের অন্যতম কর্তব্য।

চরিত্র গঠন : 

মানুষের সর্বশ্রেষ্ঠ সম্পদ চরিত্র। ছাত্রজীবনই চরিত্র গঠনের উৎকৃষ্ট সময়। এ সময়ে যদি ছাত্ররা সচ্চরিত্র গঠন না করে তবে এদেশের উন্নতি ভুলুণ্ঠিত হবে, অসৎ চরিত্রের পদভারে দেশে ঘুষ, লুটতরাজ ও কালোবাজারীতে ছেয়ে যাবে । কথায় বলে, সমাজে চলার জন্য মানুষের যত ভাল পোশাক আছে তাদের মধ্যে অন্যতম শ্রেষ্ঠ পোশাক হলো তার মধুর মেজাজ বা মধুর ব্যবহার।

স্বাস্থ্য গঠন : 

স্বাস্থ্যই সকল সুখের মূল, স্বাস্থ্য ভাল না থাকলে কোন কাজ-কর্মই ভাল লাগে না। সুস্থ লোকের মস্তিষ্ক থেকেই সুস্থ পরিকল্পনা বের হয় । তাই প্রতিটি ছাত্রের কর্তব্য বিদ্যা শিক্ষার পাশাপাশি, নিজেদের সুস্বাস্থ্য গড়ে তোলা এবং দেশের জনগণের সুস্বাস্থ্য রক্ষা করা তাদের কর্তব্য।

আরও পড়ুন : সময়ানুবর্তিতা / সময়ের মূল্য - রচনা (২০ পয়েন্ট )। PDF

শ্রমশীলতা : 

“পরিশ্রম হচ্ছে সৌভাগ্যের প্রসূতি।” কথায় আছে-

“পরিশ্রম ধন আনে, কর্মে আনে সুখ;

আলস্যে দারিদ্র্য আনে, পাপে আনে দুঃখ।"

আল্লাহ্ বলেন- “পরিশ্রম ছাড়া মানুষের ভাগ্য উন্নয়নের বিকল্প কোন পথ নেই।” অতএব ছাত্রদেরকে কঠোর পরিশ্রমী হতে হবে । শ্রমের সঙ্গে অধ্যবসায়ের সংযোগ থাকাও অপরিহার্য। কারণ, অধ্যবসায় না থাকলে মানুষ জীবনযুদ্ধে জয়ী হতে পারে না ।

নিয়ামনুবর্তিতা : 

ছাত্রজীবন থেকে নিয়মানুবর্তিতার প্রতি সজাগ থাকতে হবে। বর্তমানে অনেক ছাত্র-ছাত্রী নিয়মানুবর্তিতার প্রতি যাদের শ্রদ্ধাবোধ আছে। যারা এটি রক্ষা করে তারাই ভাল ছাত্র হতে পারে।

দেশের উন্নয়নে ভূমিকা : 

দেশের উন্নয়ন মানে জনগণের উন্নয়ন । প্রতিটি ছাত্রকে দেশ সেবার মাধ্যমে দেশের উন্নয়ন করতে হবে। দেশ থেকে নিরক্ষরতা দূর করা, সমবায় পদ্ধতির প্রবর্তন, জনকল্যাণমূলক বিভিন্ন কাজ করা, প্রতিটি মানুষের মধ্যে একতা স্থাপন করে বন্ধুত্ব স্থাপন করা এসব কাজে ছাত্ররা অগ্রণী ভূমিকা পালন করবে।

বন্ধু নির্বাচন :

প্রতিটি মানুষের প্রকৃত বন্ধু পরম আত্মীয় । বন্ধুহীন জীবন অসার। তাই সাথী নির্বাচন করতে সচেতনতা অবলম্বন করতে হবে । খারাপ উচ্ছৃঙ্খল ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করাতো যাবেই না, তাদের কাছ থেকে সবসময় দূরে থাকতে হবে। ভাল ছাত্র ও সচ্চরিত্রবান ছেলেদের সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে।

আরও পড়ুন : স্বদেশ প্রেম - রচনা : [ ২০ পয়েন্ট ]

দেশ রক্ষায় : 

দেশ রক্ষার কাজেও উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রয়েছে ছাত্র সমাজের। জাতীয় সংকটময় মুহূর্তে ছাত্রদেরকে পড়ার টেবিল ছেড়ে বেরিয়ে পড়তে হবে মাঠে-ময়দানে, বনে-বাদাড়ে। বজ্রকণ্ঠে আওয়াজ তুলতে হবে—
“যায় যাবে যাক প্রাণ, তবু দেব না দেশের মান।”

প্রয়োজনবোধে সামরিক ও আধা-সামরিক বাহিনীতে যোগদান করে প্রয়োজনীয় ট্রেনিং ও দীক্ষা গ্রহণ করতে হবে তাদেকে । কবিও তাদের আহবান জানিয়ে বলছেন-
“অজস্র মৃত্যুৱে লঙ্ঘি হে নবীন চল অনায়াসে,  
মৃত্যুঞ্জয়ী জীবন উল্লাসে।”

শৃঙ্খলাবোধ : 

শৃঙ্খলাবোধ, নিয়মানুবর্তিতা, সময়ানুবর্তিতা এ সকল মহৎ গুণের চর্চা ছাত্রজীবনে করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এবং এর পারিপার্শ্বিক পরিবেশের শৃঙ্খলা বজায় রাখার দায়িত্ব ছাত্রদের।

পরোপকার : 

ছাত্রদের পরোপকারী হতে হবে। লোভ-লালসা, সংকীর্ণতা ইত্যাদি পরিহার করে নিজের সামর্থ্য অনুযায়ী জনকল্যাণ করতে হবে। পরোপকারও ছাত্রদের কর্তব্য এ কথা মনে রাখতে হবে।

দেশাত্মবোধ : 

দেশাত্মবোধ ছাত্রদের অন্যতম কর্তব্য। দেশের প্রতি ছাত্রদের ভালোবাসা জন্মাতে হবে। আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধে ছাত্রসমাজ যে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছিল তা স্মরণ করে ছাত্রদের দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হতে হবে। জাতিকে উন্নতির পথে পরিচালনা করার দায়িত্ব ছাত্রদের।

আরও পড়ুন : সততা / সত্যবাদিতা রচনা - (২০ পয়েন্ট)

পরিবারের প্রতি কর্তব্য : 

প্রত্যেক ছাত্রকেই পিতামাতার প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে সচেতন হতে হবে। ভাইবোন আত্মীয় স্বজন, প্রতিবেশী সমাজ সবার প্রতি সৌজন্য প্রকাশ করে সুন্দর পরিবেশ সৃষ্টি করতে হবে। 

শিক্ষকদের প্রতি কর্তব্য : 

মাতাপিতা ও শিক্ষকদের প্রতি শ্রদ্ধাভক্তি প্রদর্শন করা ছাত্রদের আরেকটি প্রধান কর্তব্য। তারা যা আদেশ বা নিষেধ করেন তা প্রত্যেক ছাত্রকে সানন্দে পালন করা উচিত। মাতাপিতা আছেন বলেই পৃথিবীতে তাদের আবির্ভাব ঘটেছে। মাতাপিতা ও শিক্ষকদের মাধ্যমেই ছাত্ররা খুঁজে পায় ভবিষ্যৎ জীবনের পথ।

সমাজের প্রতি কর্তব্য : 

সমাজসেবায়ও ছাত্ররা অশেষ অবদান রাখতে পারে। ছাত্ররা সমাজেরই অংশ। তাই সমাজের কল্যাণ সাধন ও অজ্ঞ মানুষকে আলোর পথে আহ্বান করা তাদের কাজ। আত্মসচেতন নাগরিক হিসেবে ছাত্রদের উচিত মানুষের মনে দেশপ্রেম জাগিয়ে তোলা। শিক্ষার আলো ছড়ানোর কাজেও তাদের আত্মনিয়োগ করার যথেষ্ট অবকাশ আছে। নিপীড়িত মানুষের পাশে বিপদের দিনে ছাত্ররা দাঁড়াতে পারে। তাছাড়া সমাজ উন্নয়ন ও দেশ গঠনের কাজে ছাত্ররা এগিয়ে আসতে পারে।

উপসংহার : 

ছাত্ররাই জাতির ভবিষ্যৎ এ কথা মনে রেখে ছাত্রদের জীবন গঠন করতে হবে। ছাত্রজীবন ভবিষ্যৎ জীবনের ভিত। তাই জ্ঞানার্জন, চরিত্র গঠন, সমাজসেবামূলক কাজ ইত্যাদির মাধ্যমে নিজেকে আদর্শ মানব হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই নিজের জীবনের পূর্ণাঙ্গ বিকাশ সাধন হবে, গড়ে উঠবে আমাদের কাঙ্ক্ষিত স্বদেশ।

আরও পড়ুন : রচনা : শিষ্টাচার ( ২০ পয়েন্ট )। SSC, HSC

Post a Comment

0 Comments