ভূমিকা :
ছাত্রজীবন সমগ্র জীবনের প্রস্তুতি গ্রহণের সময়। এ সময়টিকে জীবনের উজ্জ্বলতম সময় হিসেবে বিবেচনা করা হয়ে থাকে। ছাত্রজীবনেই একটি সফল জীবনের বীজবপনের উপযুক্ত সময় হিসেবে বিবেচিত হয় বলে এ সময়টির রয়েছে বিশেষ তাৎপর্য।
ছাত্রজীবনের স্বরূপ :
ছাত্রজীবনে জ্ঞান ও বিদ্যার্জনের জন্যে কঠোর পরিশ্রম করতে হয়। এ সময় মেনে চলতে হয় শৃঙ্খলা, গ্রহণ করতে হয় অধ্যবসায়ের মূলমন্ত্র। কঠোর অধ্যবসায়ী হতে পারার মধ্যেই ছাত্রজীবনের প্রধান লক্ষণ প্রকাশ পায়। ছাত্রজীবনে অর্জিত জ্ঞান ও বুদ্ধি-বিবেচনা পরবর্তীতে কর্মজীবনে ব্যাপকভাবে প্রয়োগ হয় বলে ছাত্রজীবনই জীবনের শ্রেষ্ঠ সময় হিসেবে বিবেচিত।
দায়িত্ব ও কর্তব্য :
ছাত্রজীবনের সর্বপ্রথম এবং সর্বপ্রধান দায়িত্ব হচ্ছে অধ্যয়ন করা। কারণ পরিশ্রম ও অধ্যবসায় ব্যতীত কোনো ছাত্র তার জীবনকে আলোকিত করতে পারে না। পৃথিবীর বুকে যাঁরা বিজ্ঞান, শিল্পকলা, সাহিত্য ও অন্যান্য বিষয়ে খ্যাতির শীর্ষে আসীন হয়েছেন তাঁদের জীবন পর্যালোচনা করলে দেখা যায়, তাঁরা ছাত্রজীবনে ছিলেন কঠোর অধ্যবসায়ী।
অর্থাৎ তাঁদের ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য নিয়ে তাঁরা ছিলেন সদা সচেতন। ছাত্রজীবনের সমস্ত সঞ্চয়ই সকল পদক্ষেপে কাজে লাগে। তাই সৎ চরিত্রবান হতে হলে সততার চর্চা করা, সত্যবাদী হওয়া, নিজ কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হওয়া অতি জরুরি। ছাত্রজীবনে স্বাস্থ্যের প্রতি যত্নবান হওয়া ছাত্রছাত্রীদের কর্তব্য। কেননা সুস্বাস্থ্যের অধিকারী না হলে তার পক্ষে অধ্যয়ন অনুশীলন কোনোটাই সম্ভব নয় ।
আরও পড়ুন :- ছাত্র জীবন - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]
ছাত্রজীবনের মূল উদ্দেশ্য :
প্রত্যেক মানুষের কাজই একটি লক্ষ্য নিয়ে সামনের দিকে অগ্রসর হওয়া। তেমনই ছাত্রজীবনেরও একটি লক্ষ্য থাকা প্রয়োজন । শুধু পরীক্ষার পর পরীক্ষা উত্তীর্ণ হয়ে এক গাদা সনদ অর্জন ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য হতে পারে না। ছাত্রজীবনের প্রধান লক্ষ্য হবে জ্ঞানার্জন । জ্ঞানার্জন না হলে মানুষ মুক্তচিন্তার অধিকারী হতে পারে না।
ফলে সংকীর্ণ ও অনুদার দৃষ্টিভঙ্গি হয় তাদের। যা কি না কোনো সুশিক্ষিত মানুষের ভূষণ হতে পারে না। তাই ছাত্রজীবনের উদ্দেশ্য হবে নিজেকে জ্ঞানে গুণে বিকশিত করে একজন পূর্ণাঙ্গ মানুষ হিসেবে গড়ে তোলা ।
দেশের কর্ণধার হিসেবে দায়িত্ব :
আজকের ছাত্রছাত্রীরা আগামী দিনে জাতির নেতৃত্ব দান করবে। এ নেতৃত্ব দান নিছক দায়িত্ব মাত্র নয়। এ গুরুদায়িত্ব পালনে সক্ষম হতে হলে আজকের ছাত্রকে কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে যথাযথ যোগ্যতা অর্জন করতে হবে । তাদের নৈতিক চরিত্র হতে হবে সর্বগ্রাহ্য ।
ছাত্রদের কাছে জাতির প্রত্যাশা অনেক। জাতিকে সঠিক এবং উন্নয়নের পথে পরিচালনা করার জন্যে তাদের হাতেই একদিন দায়িত্ব বর্তাবে। তাই ছাত্রদের দেশের ভবিষ্যৎ কর্ণধার হিসেবে নিজেকে প্রস্তুত করতে হবে ।
সমাজ সচেতনতা :
একজন ছাত্রকে সমাজ সচেতন হতে হবে। ছাত্র যদি তার দেশ, কাল, সমাজ সম্পর্কে সচেতন না হয় তাহলে তার দ্বারা সমাজের উন্নয়ন কাজ অসম্ভব। সমাজ ও রাষ্ট্রীয় জীবনে কোনো অন্যায়, অনাচার দুর্নীতি যদি প্রকট আকার ধারণ করে তখন ছাত্রদের বসে থাকলে চলবে না। এর প্রতিকার প্রতিরোধের জন্যে সোচ্চার প্রতিবাদ করাও ছাত্রদের দায়িত্ব।
আরও পড়ুন :- আমাদের বিদ্যালয় - রচনা : ষষ্ঠ, ৭ম এবং ৮ম শ্রেণি
পিতামাতা ও গুরুজনদের প্রতি কর্তব্য :
পিতামাতা ও গুরুজনদের প্রতি যথাযথ সম্মান প্রদর্শন করা ছাত্রদের একটি গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্ব । শ্রদ্ধা জ্ঞাপনের মনোভাব তাদের নৈতিক দিক থেকে আদর্শবান করে তোলে। গুরুজনের আদেশ-নিষেধ মেনে না চললে জীবনে উন্নতি অসম্ভব। তাই তাদের দিক নির্দেশনা যথাযথ পালনে ছাত্রদের ব্রতী হতে হবে। পিতামাতা ও গুরুজনদের প্রতি সম্মান ও কর্তব্য সম্পাদনের মধ্য দিয়ে ছাত্ররা শিষ্টাচার চর্চার সুযোগও লাভ করে।
রাজনৈতিক দায়িত্ব :
ছাত্ররা একটি দেশের শক্তিশালী অংশ। তাদের কখনো কখনো রাজনৈতিক দায়িত্ব পালন করতে হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে তাদের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় ছাত্রদের দেখা গেছে অগ্রণী ভূমিকায়। আমাদের বাংলাদেশের বেলায়ও এর ব্যতিক্রম ঘটেনি। অধিকার আদায়েও ছাত্রদের থাকে একটি বড় ভূমিকা ।
আমাদের মাতৃভাষা হবে আমাদের রাষ্ট্রভাষা— এ অধিকার আদায়ে ‘রাষ্ট্র ভাষা বাংলা চাই' স্লোগানে একদিন কেঁপে উঠেছিল দেশ। ছাত্ররা অধিকার আদায়ে প্রাণ দিয়েছিল। এটি পৃথিবীর একটি উল্লেখযোগ্য ঘটনা। তাই ছাত্রদের রাজনীতি সচেতন হতে হবে, প্রয়োজনে যেন তারা রাজনৈতিক কর্তব্য পালন করতে পারে।
উপসংহার:
আজ যারা বিদ্যালয়গামী শিশু, কিশোর, তরুণ, তারাই আগামী দিনের দেশের পরিচালক। দেশ ও জাতি তাদের কাছে প্রত্যাশা করে অনেক । তাই ছাত্রজীবনের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হয়ে ছাত্রদেরকেই হতে হবে অগ্রণী, তাদের হাতেই দেশের ভবিষ্যৎ।