ছাত্র জীবন - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]

উপস্থাপনা : 

জ্ঞানের কোনো সীমা নেই, শিক্ষার কোনো শেষ নেই। সারা জীবনই মানুষকে শিখতে হয়। তবুও অজানার মর্মব্যথা নিয়ে দুনিয়া ছেড়ে একদিন চলে যেতে হয়। এতদসত্ত্বেও মানুষ তার জীবনের একটি অংশ বিশেষভাবে শুধু লেখাপড়ার জন্য ব্যয় করে। জীবনের যে সময়টুকু বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জ্ঞান অর্জনের জন্য ব্যয় করা হয়, সে সময়কে ছাত্রজীবন বলা হয়।

ছাত্র কথাটির তাৎপর্য : 

ছাত্র কথাটির ইংরেজি প্রতিশব্দ Student. এ শব্দটি বিশ্লেষণ করলে দেখা যায় S দিয়ে Study (অধ্যয়ন), T দিয়ে Truthfulness, (সত্যবাদিতা), U দিয়ে Unity, (একতা), D দিয়ে Discipline, (নিয়মানুবর্তিতা), E দিয়ে Economy (মিতব্যয়িতা), N দিয়ে Nationality (জাতীয়তা), T দিয়ে Training (প্রশিক্ষণ) শব্দগুলো পাওয়া যায়। শব্দটি বিশ্লেষণে ছাত্রদের দায়িত্বের কথা বলা হয়েছে।

ছাত্রজীবনের মূল্য : 

ছাত্রজীবনের মূল্য অত্যধিক। এ সময়টা মানবজীবনের গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়। ছাত্রজীবনকে বীজ বপনের সময় বলা হয়। এ সময় যে যেমন বীজ বপন করবে সে তেমন ফল পাবে। এ সময় যে ছাত্র নিয়মতান্ত্রিকভাবে লেখাপড়া করবে তার জীবন হবে সুন্দর, ভবিষ্যৎ হবে উজ্জ্বল ।

আরও পড়ুন :- অধ্যবসায় - বাংলা রচনা ১০ পয়েন্ট - [ PDF ৪টি রচনা ]

ছাত্রজীবনের গুরুত্ব : 

ছাত্রজীবনের গুরুত্ব অপরিসীম। এ সময় প্রত্যেক ছাত্রের অভিভাবককে সঠিক দিকনির্দেশনা দিতে হয়। এ সময়টি জীবনের সর্বোৎকৃষ্ট সময়। এ সময় যারা গুরুত্বসহকারে জীবন গঠনে ব্রতী হবে তাদের জীবন সার্থক হবে। সে ছাত্র হবে দেশ ও জাতির কর্ণধার ।

ছাত্রজীবনের লক্ষ্য : 

ছাত্রজীবনের মূল লক্ষ্য হবে অধ্যয়ন। সংস্কৃতে আছে- “ছাত্রনং অধ্যয়নং তপঃ” অর্থাৎ অধ্যয়নই ছাত্রদের তপস্যা। এ সময়ে সঠিক জ্ঞানার্জনের মাধ্যমে জীবনের লক্ষ্য বাস্তবায়ন করা যায়। যারা সঠিক জ্ঞান আহরণ করবে তারা নিজ পরিবার, সমাজ ও দেশ গঠনে যথার্থ ভূমিকা পালন করতে পারবে।

জীবনের লক্ষ্য স্থিরীকরণ : 

প্রত্যেক জীবনেরই একটি লক্ষ্য থাকতে হবে। লক্ষ্যহীন জীবন ঠিকানাবিহীন চিঠির মতো। ছাত্রজীবনেই জীবনের লক্ষ্য নির্ধারণ করতে হয় এবং সে লক্ষ্য বাস্তবায়ন করার উপযোগী লেখাপড়া চালিয়ে যেতে হয়। লক্ষ্য স্থিরীকরণের ক্ষেত্রে ঝোঁকপ্রবণতার দিকে খেয়াল রাখতে হবে। কারণ, চাপিয়ে দেয়া লক্ষ্য অর্জন খুবই কঠিন

নিয়মানুবর্তিতা : 

ছাত্রজীবনে সঠিকভাবে জ্ঞান অর্জন করতে হলে সুনির্দিষ্ট নিয়মে সুশৃঙ্খলভাবে অধ্যয়ন করতে হবে। ছাত্রজীবনে নিয়মানুবর্তিতা ও শৃঙ্খলাবোধের শিক্ষা নিতে হবে। জীবনের প্রতিটি পদক্ষেপে সফলতার জন্য এ গুণগুলো অত্যাবশ্যক। এজন্য শিক্ষার্থীদেরকে পাঠ-পরিকল্পনা প্রণয়ন এবং তা বাস্তবায়নে সচেষ্ট হতে হবে।

আরও পড়ুন :- বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষা - বাংলা প্রবন্ধ রচনা 

চরিত্র গঠন : 

চরিত্র মানবজীবনের সর্বশ্রেষ্ঠ অলঙ্কার। ছাত্রজীবনে চরিত্র গঠন করতে হবে। একটি প্রবাদ আছে, “যে অর্থ হারাল সে কিছুই হারাল না, যে স্বাস্থ্য হারাল সে সামান্য কিছু হারাল, আর যে চরিত্র হারাল সে সবকিছুই হারাল।” এ প্রবাদটি একশতে একশ ভাগই পরীক্ষিত। ছাত্রজীবনে যে যেভাবে চরিত্র গঠন করবে, কর্মজীবন সেভাবেই পরিচালিত হবে। 

সুচরিত্র গঠনের জন্য ছাত্রদেরকে সৎসঙ্গ, ভালো বই, ধর্মচর্চা, মনুষ্যত্ববোধ, পরোপকার, ত্যাগ ইত্যাদি ভালো গুণে গুণান্বিত হতে হবে। মহৎ লোকদের জীবনচরিত পাঠ এবং তা অনুসরণ করতে হবে। লেখাপড়ার পাশাপাশি ছাত্রদেরকে বিনয়ী, শিষ্টাচারী ও সত্যবাদী হতে হবে।

ছাত্রজীবনে শিষ্টাচার : 

শিষ্টাচার ও সৌজন্য আচরণ ছাত্রজীবনের ভূষণ। আর এতেই ছাত্র হয় বিনয়ী ও ভদ্র। বিনয়ী ও ভদ্র ছাত্র শুধু শিক্ষকের স্নেহ-ই কেড়ে নেয় না, সে পায় শিক্ষকের আশীর্বাদ ও সাহায্য। পক্ষান্তরে, সৌজন্য ও শিষ্টাচারের অভাব ছাত্রকে অবিনীত, স্বার্থপর ও নিষ্ঠুর করে।

গুরুজন ও বয়োজ্যেষ্ঠদের মান্য করা : 

নীতি বাক্যে রয়েছে-

মাতা গুরু, পিতা গুরু, গুরু বড় ভাই- 

তাদের চেয়ে শ্রেষ্ঠ গুরু দুনিয়াতে

স্রষ্টা ছাড়া কেউ নাই ।

প্রত্যেক ছাত্রকে মাতাপিতার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে। শিক্ষককে শ্রদ্ধা করতে হবে। তাদের আদেশ উপদেশ মান্য করতে হবে। বড়দের সম্মান এবং ছোটদের স্নেহ করতে হবে।

সমাজের প্রতি কর্তব্য : 

ছাত্রদের লেখাপড়ার পাশাপাশি সমাজের প্রতিও দায়িত্ব পালন করতে হবে। বর্তমানের ছাত্র ভবিষ্যতের নাগরিক। আগামী দিনে দেশ পরিচালনার দায়িত্ব তাদেরকেই নিতে হবে। তাই ছাত্রজীবন থেকেই সমাজকর্মের অভ্যাস করতে হবে ছাত্ররা সমবায় সমিতি, নিরক্ষরতা দূরীকরণ কর্মসূচি, দুঃখী-দরিদ্রকে সাহায্য ইত্যাদি সেবামূলক কাজ-কর্ম করতে পারে।

আরও পড়ুন :- শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড - বাংলা রচনা [ Class - 6, 7, 8 ,9 ,10]

আদর্শিক শিক্ষা গ্রহণ : 

আদর্শ শিক্ষায় শিক্ষিত হয়ে আদর্শবান হওয়া ছাত্রদের একটি মহান দায়িত্ব। আদর্শহীন জ্ঞান অর্জন কখনোই কাঙ্ক্ষিত ফল দেবে না ।

ছাত্রসমাজের উচ্ছৃঙ্খলতা : 

ছাত্রসমাজ অগ্রযাত্রীর দল। তারা স্বভাবতই অগ্রসর হতে চায়, চায় কর্মব্যস্ততা। কিন্তু আজ তাদের সামনে অগ্রসর হওয়ার সকল পথ রুদ্ধ। দেশব্যাপী আদর্শ ও আশাহীনতা তাদের নিক্ষেপ করেছে এক গভীর নৈরাশ্যের অন্ধকারে। ফলে ছাত্রসমাজ উচ্ছৃঙ্খল পথে পরিচালিত হচ্ছে। আর এজন্য তাদের তিরস্কার করেই সমস্যার সমাধান হবে না ।

বর্জনমূলক কর্মগুলো : 

ছাত্রদেরকে নাশকতামূলক সকল কর্ম বর্জন করতে হবে। তাদের কোনো অসামাজিক কর্মে লিপ্ত হওয়া যাবে না। মিথ্যা বলা, পরনিন্দা করা, অত্যাচারীকে সাহায্য করা ইত্যাদি ত্যাগ করতে হবে। যে দেশ ও জাতিকে হতাশ করে, দেশের স্বার্থ-সম্পদ নষ্ট করে, সে রাজনীতিতে জড়িত হতে পারবে না ।

উপসংহার : 

ছাত্রজীবন জীবনের উৎকৃষ্ট সময়। এ সময় ছাত্রদেরকে আদর্শ নাগরিক গুণগুলো অর্জন করে ভবিষ্যৎ কর্মসূচি বাস্ত বায়নের দীপ্ত শপথ নিতে হবে। কারণ তারাই আগামীদিনের দেশরক্ষক।

Post a Comment

0 Comments